মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলন ডেকেছে বিএনপি
চলমান পরিস্থিতি নিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটি সংবাদ সম্মেলন ডেকেছে।
মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১২টায় গুলশানে বিএনপি চেয়ারপার্সনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে।
বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সংবাদ সম্মেলন ডাকা হয়েছে। এতে বক্তব্য রাখবেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য হাফিজ উদ্দিন আহম্মদ (বীর বিক্রম)।
মন্তব্য করুন
বিএনপি নেতা দুলুকে কারণ দর্শানোর নোটিশ
গণমাধ্যম নিয়ে বিভ্রান্তিকর বক্তব্য দেওয়ায় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে দলটি।
শনিবার (১৭ আগস্ট) বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত নোটিশে এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়, গত শুক্রবার ‘শেখ হাসিনার ছবি প্রচার করলে টিভি-পত্রিকা জ্বালিয়ে দেওয়া হবে’ মর্মে আপনি যে বক্তব্য দিয়েছেন তা প্রথম আলো, ডেইলি স্টার, ইত্তেফাক, বাংলাদেশ প্রতিদিন, বিডি নিউজ, ঢাকা পোস্ট, জাগো নিউজ, বাংলা ট্রিবিউনসহ দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। আপনার এই বক্তব্য বিএনপির নীতি ও আদর্শের চরম পরিপন্থি।
‘বিএনপি দেশের একটি উদার ও বৃহত্তম গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল। দলটি কখনই দখল ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড প্রশ্রয় দেয় না। গত ১৫-১৬ বছর ধরে গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করতে গিয়ে বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা স্বৈরাচারী সরকারের ভয়াবহ নিপীড়ন ভোগ করেছে। সম্প্রতি কোমলমতি শিক্ষার্থী ও জনতা নিজেদের জীবন দিয়ে রক্তঝরা আন্দোলনে ফ্যাসিবাদী আওয়ামী সরকারের পতন ঘটিয়ে বর্তমানে দেশে গণতন্ত্রের যে জাগরণ সৃষ্টি করেছে, আপনার বক্তব্য সেটিকেও কালিমালিপ্ত করেছে।’
নোটিশে আরও বলা হয়, আপনার (দুলু) বক্তব্যটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, অনভিপ্রেত এবং বিএনপির গণতান্ত্রিক চেতনার প্রতি কুঠারাঘাত। বিএনপির একজন কেন্দ্রীয় নেতা হিসেবে আপনার এই বক্তব্য গত দেড় দশক ধরে রক্তস্নাত পথে বিএনপির নিরবচ্ছিন্ন গণতান্ত্রিক সংগ্রামের মহিমামণ্ডিত অবদানকে হেয়প্রতিপন্ন করার শামিল।
এ অবস্থায় আপনার উল্লিখিত বক্তব্যের কারণে কেন আপনার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, তার কারণ দর্শিয়ে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দলের নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে একটি লিখিত জবাব জমা দেওয়ার জন্য নির্দেশ প্রদান করা হলো।
জানা গেল শেখ পরিবারের কে কোথায়
জুলাইয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে দেশ। শিক্ষার্থীরা সরকারি চাকরিতে এই প্রথা বাতিলের বিরুদ্ধে রাজপথে নেমে আসে। কিন্তু তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার তাদের দাবি না মেনে বল প্রয়োগ করতে থাকে। এক পর্যায়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি করে। এতে শত শত মানুষের প্রাণহানি ঘটে। এরপর তৎকালীন সরকার তাদের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসলেও শিক্ষার্থীরা নয় দফা দাবি জানায়। এরপর সরকারের বল প্রয়োগ অব্যাহত থাকলে শিক্ষার্থীদের দাবি আস্তে আস্তে সরকার পতনের এক দফায় রূপান্তরিত হয়। অবশেষে গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার রোষানলে পদত্যাগ করে দেশ থেকে ভারতে পালিয়ে গেছেন শেখ হাসিনা। এর পর দলের মন্ত্রী-এমপি ও বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা কেউ দেশ ছেড়েছেন কেউ আছেন আত্মগোপনে।
এমন অবস্থায় আওয়ামী লীগের দলীয় মন্ত্রী-এমপি এবং শেখ পরিবারের সদস্যরা কে কোথায় আছেন এই জিজ্ঞাসা অনেকের।
জানা গেছে, রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট শেখ পরিবারের বেশির ভাগ সদস্যই এখন আর দেশে নেই। ৫ আগস্টের আগে-পরে তারা দেশ ছেড়ে গেছেন। গত ৫ আগস্ট সামরিক বিমানে দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা ও তার ছোট বোন শেখ রেহানা। ওই দিন শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা ছাড়া পরিবারের আর কোনো সদস্য দেশে ছিলেন না। শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। তার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার আঞ্চলিক পরিচালক হিসেবে দিল্লিতে কর্মরত। সরকারের পতনের সময় তিনি দিল্লিতেই ছিলেন। দিল্লিতে যাওয়ার পর তার মা এবং খালার সঙ্গে সায়মার সাক্ষাৎ হয়। শেখ রেহানার মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিক বৃটিশ মন্ত্রী, তিনি লন্ডনে বসবাস করা। শেখ রেহানার ছেলে রেদওয়ান সিদ্দিক সরকার পতনের সময় দেশে ছিলেন না।
গত ৩ আগস্ট ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে দেশ ছাড়েন বঙ্গবন্ধু পরিবারের আরেক সদস্য ঢাকা দক্ষিণ সিটি মেয়র শেখ ফজলে নুর তাপস। শেখ ফজলে নূর তাপসের বড়ভাই শেখ ফজলে শামস পরশ আওয়ামী যুবলীগের চেয়ারম্যান। তিনি দেশে আছেন নাকি বিদেশে এ নিয়ে সংগঠনের কারও কাছে তথ্য নেই। যুবলীগের একজন নেতা জানিয়েছেন, ফজলে শামস পরশ আন্দোলন চলাকালে কোনো এক সময় তিনি বিদেশে গেছেন।
এদিকে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম দেশ ছাড়তে পারেনি বলে জানা গেছে। বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্য হিসেবে বরিশালে প্রভাবশালী নেতা আবদুল হাসানাত আব্দুল্লাহ ছোট ছেলেকে নিয়ে ভারতে চলে গেছেন। তার আরেক ছেলে বরিশাল সিটির সাবেক মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ এবং আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর ছোট ভাই সিটির বর্তমান মেয়র সেরনিয়াবাত আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ দেশেই আত্মগোপনে আছেন।
বাগেরহাট-১ আসনের সাবেক এমপি শেখ হেলাল সরকার পতনের আগেই দেশ ছেড়ে গেছেন। তবে তার ছেলে বাগেরহাট-২ আসনের সাবেক এমপি শেখ সারহান নাসের তন্ময় দেশ ছাড়তে পারেননি। তিনি দেশেই আত্মগোপনে আছেন। শেখ হেলালের ভাই খুলনা-২ আসনের সাবেক এমপি শেখ সালাউদ্দীন জুয়েলকে সরকার পতনের পর টুঙ্গিপাড়ায় আছেন বলে জানা গেছে।
সুন্দরী স্ত্রীকে ভাগিয়ে নিতে ব্যবসায়ীকে জেলে পাঠান সালমান এফ রহমান
স্বামীকে জেলে পাঠিয়ে সুন্দরী টিভি উপস্থাপক জাকিয়া তাজিনকে ভাগিয়ে নেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান।
বুধবার (২১ আগস্ট) ভুক্তভোগী ইনডেক্স গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শফিউল্লা আল মুনির দেশের শেয়ারবাজার কারসাজির মূলহোতা সালমান এফ রহমানকে নিয়ে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য ফাঁস করেন।
শফিউল্লা আল মুনির বলেন, ‘আমার স্ত্রী শেয়ারবাজার নিয়ে টিভিতে অনুষ্ঠান করতেন। সেই সূত্রে সালমান এফ রহমানের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। একটা পর্যায়ে তাদের মধ্যে সম্পর্ক তৈরি হয়। তারপর সালমান এফ রহমান আমাকে ডেকে নিয়ে তাজিনকে তালাক দিতে হুমকি দেয়। আমার কাছ থেকে জোরপূর্বক আটটি শর্তে তিনশ টাকার স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেন সালমান এফ রহমান।’
তিনি বলেন, ‘শর্তগুলোর মধ্যে ছিল, আমি কখনোই আমার কোম্পানির মালিকানা দাবি করতে পারব না; আমার স্ত্রীকে ডিভোর্সের বিষয়ে কাউকেই কিছু বলতে পারবো না; এমনকি আমার ছেলের কাস্টডিও চাইতে পারব না। তবে আমি যখন রাজি হলাম না, তখন এ বিষয়টি অনেকেই জানতে পারে। এক পর্যায়ে আমি এক মাস গুম হওয়ার মতো ছিলাম। হামলা-মামলার ভয়ে তটস্ত থাকতাম সবসময়। পরে ২০২০ সালের দিকে আমার স্ত্রীর সঙ্গে ডিভোর্স হয়ে যায়।’
প্রসঙ্গত, জনরোষে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যান। এরপর আওয়ামী লীগের সব নেতা ও মন্ত্রী-এমপিদের মতো সালমান এফ রহমানও আত্মগোপন করেন । এরপর গত ১৩ আগস্ট দেশ ছেড়ে পালানোর সময় তাকে ঢাকার সদরঘাট এলাকা থেকে গ্রেপ্তারের কথা জানায় ঢাকা মহানগর পুলিশ। ছাত্র আন্দোলন চলাকালে হকার নিহত হওয়ার ঘটনায় নিউমার্কেট থানায় করা হত্যা মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। পরে তাকে ১০ দিনের রিমান্ড দেন আদালত।
আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিষিদ্ধ নিয়ে যা বলছে জামায়াত
জনরোষে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশের দায়িত্ব নিয়েছেন নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন ২১ সদস্যের অন্তর্বর্তী সরকার। আর এই সরকারকে প্রশাসন, বিচার বিভাগ এবং অর্থনীতি ও ব্যাংক খাতের প্রয়োজনীয় সংস্কারের জন্য সময় দিতে চায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। সেই সঙ্গে নির্বাচন কমিশন সংস্কার করে পুনর্গঠনের কথাও জানিয়েছে রাজনৈতিক দলাটি।
রোববার (২৫ আগস্ট) বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব তথ্য জানিয়েছেন জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান।
জামায়াতের আমির বলেন, ‘যারা ব্যক্তিগতভাবে অপরাধ করেছে, তাদের বিচার অবশ্যই হতে হবে। তারা অপরাধী হলে অবশ্যই শাস্তি পাওয়া উচিত। এটা হচ্ছে ব্যক্তির বিচারের ক্ষেত্রে। আর দল হিসেবে পুরো দলটাই হত্যায় শরীক হয়ে গিয়েছিল।’
তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের মন্ত্রী বলেছেন, ছাত্রদের আন্দোলন দমনের জন্য ছাত্রলীগই যথেষ্ট। তাহলে বিষয়টা কী দাঁড়াল? একটা দল পুরো দায়িত্ব নিয়ে নিল সন্ত্রাস করার এবং সেটিই হলো। অনেক প্রাণ ঝরে গেল। সন্ত্রাসীদের যখন বাহিনী হিসেবে দলীয় ব্যানারে নামিয়ে দেওয়া হলো, তখন বিশ্বের বহু দেশে এমন নজির আছে যে, এমন গণহত্যা যারা করে, তাদের আর সেদেশে রাজনীতি করার অধিকার থাকে না।’
জামায়াতের আমির বলেন, ‘এখনো দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবি জানাননি তারা। এ বিষয়ে দলীয় কোনো সিদ্ধান্তও হয়নি।’
এ ছাড়া আন্দোলনে নিহতের ঘটনায় আইনি বিচারের ওপরও গুরুত্ব দিচ্ছে দলটি।
আশা করেছিলাম ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা একটা রোডম্যাপ দেবেন: ফখরুল
দেশবাসীর উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ভাষণে সন্তোষ প্রকাশ করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘আমরা আশা করেছিলাম প্রধান উপদেষ্টা একটা রোডম্যাপ (রূপরেখা) দেবেন। আমরা গণতন্ত্রে উত্তরণের সেই রোডম্যাপ তার বক্তব্যের মধ্যে পাইনি।’
সোমবার (২৬ আগস্ট) দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে জাতীয় পার্টির (জাফর) প্রতিষ্ঠাতা কাজী জাফর আহমদের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনাসভায় এ প্রতিক্রিয়া জানান বিএনপি মহাসচিব।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘কবে নির্বাচন হবে, এটা রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত’—প্রধান উপদেষ্টা ঠিকই বলেছেন। অবশ্যই রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত হবে। এই রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য তো রাজনৈতিক নেতা, রাজনৈতিক দল, রাজনৈতিক ব্যক্তিদের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। আমি আশা করব, আমাদের প্রধান উপদেষ্টা খুব দ্রুত সে প্রক্রিয়াটার দিকে যাবেন এবং তিনি রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কথা বলবেন।’
‘আমাদের এখন অত্যন্ত ধৈর্য ধরে সতর্কতার সঙ্গে পা বাড়াতে হবে’ মন্তব্য করে ফখরুল বলেন, এই সরকার অবশ্যই কাজ করার জন্য এসেছে। সেই কাজ করার সুযোগ তাদের দিতে হবে। এ কথা আমরা বারবার বলছি, যৌক্তিক সময় অবশ্যই তাদের দিতে চাই।’
‘বাংলাদেশকে যেন কেউ পুলিশি রাষ্ট্র বানাতে না পারে, সেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে’ প্রধান উপদেষ্টার এমন কথাকে সাধুবাদ জানিয়ে ফখরুল বলেন, অত্যন্ত ভালো কথা। আমরা সবসময় এটাই চাই। আমরা পুলিশি রাষ্ট্রে পরিণত হতে চাই না। আমাদের নিয়ন্ত্রণ করবে, প্রতি মুহূর্তে বলে দেবে যে এটা করা যাবে, এটা করা যাবে না, অথবা আমাদের মিথ্যা মামলা দিয়ে তুলে নিয়ে গিয়ে আমাদের থেকে টাকা নেবে, আমাদের ছেলেদের গুলি করবে...এটা আমরা আর দেখতে চাই না। এটা করতে আমরা সর্বোচ্চ সহযোগিতা করব।’
মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘গতকাল আনসার এবং কিছু লোকজন যে সচিবালয় ঘেরাও করেছে, সেটা কিন্তু অশনিসংকেত, এটা ভালো লক্ষণ নয়। এ বিজয়কে নস্যাৎ করে দেওয়ার জন্য চক্রান্ত চলছে।’
স্বাধীনতাই বিশ্বাস করে না, এ ধরনের দলকে সমর্থন নয়: মির্জা ফখরুল
বাংলাদেশের স্বাধীনতাই বিশ্বাস করে না, এ ধরনের দলকে সমর্থন করা যাবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বুধবার (২৮ আগস্ট) রাজধানীর গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ মন্তব্য করেন তিনি।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আমার বাংলাদেশের স্বাধীনতাই বিশ্বাস করে না, সে ধরনের দলকে তো সমর্থন করা যাবে না। তবে আমরা মনে করি মানুষের অধিকার আছে একটা সংগঠন তৈরি করার, রাজনীতি করার।’
সরকার জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করার আদেশটি প্রত্যাহার করে নিচ্ছে, এ প্রসঙ্গে একজন সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমরা কোনও রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধের পক্ষে নই, সে যে দলই হোক। আমাদের সংবিধানে যেকোনও ব্যক্তির অধিকার রয়েছে সংগঠন করার। কিন্তু স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের পক্ষে থাকতে হবে।’
বিএনপি মহাসচিব মনে করেন, ছাত্র-জনতার আন্দোলনে অর্জিত বিপ্লবকে নস্যাৎ করার জন্য এবং বিএনপির অবদানকে খাটো করতে পরিকল্পিতভাবে প্রচারণা চালানো হচ্ছে।
মির্জা ফখরুলের দাবি, ‘ছাত্র-জনতার বিপ্লবকে ব্যর্থ করতে গভীর ষড়যন্ত্র চলছে। আপনারা দেখবেন, বিদেশ থেকে, বিশেষ করে ভারত থেকে এমন কতগুলো প্রচারণা চালানো হচ্ছে- যা বাংলাদেশে যে বিপ্লব, সেটাকে তারা নস্যাৎ করতে চায়। কতগুলো রাজনৈতিক ইস্যুকে তারা সাম্প্রদায়িক ইস্যু বানাতে চায়। যেটা একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়।’
বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, ‘প্রথম দিকে তারা যে সংখ্যালঘু নির্যাতনের প্রচার চালিয়েছিল, এটা বোধহয় এক-দুই পারসেন্টও সঠিক নয়। দ্বিতীয়ত হচ্ছে দখলদারি। এগুলো কিন্তু একটা ক্যাম্পেইন। আমি বলতে বাধ্য হচ্ছি, আবারও আগের মতো, এক-এগারোর মতো বিএনপিকে লক্ষ্য করে এ কাজগুলো করা হচ্ছে। এটা অত্যন্ত অন্যায়। আমরা ১৫ বছর ধরে সংগ্রাম করেছি গণতন্ত্রের জন্য, ভোটের অধিকারের জন্য। মনে রাখতে হবে, গণতন্ত্রে নির্বাচিত সংসদ ছাড়া কোনও সমস্যার সমাধান হয় না।’
২০০৭ সালের সেনা-সমর্থিত এক-এগারোর সরকারের প্রসঙ্গ তুলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমরা তো ভুলে যাইনি এক-এগারোর সময় কারা চেষ্টা করেছিল বিরাজনীতিকীকরণের। এমনকি ওই সময়ে আমাদের দলকে পর্যন্ত পুরোপুরি বাতিল, নিশ্চিহ্ন করার চেষ্টাও হয়েছিল। এ কথাগুলো তো আমরা ভুলতে পারি না।’
অন্তর্বর্তী সরকারকে রাষ্ট্র মেরামতের জন্য বিএনপি ‘যৌক্তিক’ সময় দেওয়ার কথা বলেছে, এমনটি উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এই জন্যই আলোচনা দরকার। যৌক্তিক সময়ের ধারণা নির্ভর করবে পারস্পরিক আলোচনার মাধ্যমে। আমরা কী চাই, ওনারা কী চান, জনগণ কী চায়, একটা আলাপ–আলোচনা তো হতে হবে। সে জন্য বলেছি, বর্তমান সরকারের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর অতি দ্রুত আলোচনা হওয়া দরকার। খুব জোর দিয়ে বলেছি, আজকেও বলছি। নইলে ভুল বোঝাবুঝি তৈরি হয়।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমি যদি মনে করি একজন ব্যক্তি একেবারে স্বর্গ বানিয়ে দিতে পারবে, আমার ওই চিন্তাটা সঠিক হবে না। জনগণ সিদ্ধান্ত নেবে দেশ কীভাবে চলবে। সংস্কারের দাবি তো আমরাই তুলেছি। আমরা ৩১ দফা দিয়েছি। ৩১ দফা থেকে কমিয়ে ১০ দফা হয়েছে, ১০ দফা থেকে এক দফা হয়েছে। এটা নিয়ে আমরা আন্দোলন করেছি, সারা বাংলাদেশ চষে বেড়িয়েছি। আমরা তো সংস্কার চাই। তবে সেই সংস্কারটা অবশ্যই হতে হবে জনগণের সমর্থন নিয়ে।’
তিনি বলেন, ‘মানুষ এখানে একটা ডেমোক্র্যাটিক সেটআপ চায়, গণতন্ত্র চায়। মানুষ নির্বাচন চায়। এই বিষয়গুলো মাথায় রাখতে হবে।’
বর্তমান সরকারের মধ্যেও বিরাজনীতিকীকরণের কোনও লক্ষণ দেখছেন কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘না, আমি এমন লক্ষণ দেখছি না। আমি সতর্ক করছি। আমার একটা সতর্কের কথা আছে। কিছু চেহারা আছে তো? এই চেহারাগুলোকে দেখলে আমরা ভয় পাই।’
এ সময় যাদের কোনও দিন দেখা যায়নি, তারা সামনে চলে আসছেন বলেও উল্লেখ করেন মির্জা ফখরুল।
তিনি বলেন, ‘হঠাৎ করে তারা মিডিয়াতে ফ্রন্ট পেজে চলে আসছেন। তাদের বক্তব্য, থিওরি প্রচার করছেন। আমি কারও নাম বলতে চাই না। আমার মনে হয়, এটা সুস্থ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার জন্য ভালো বিষয় নয়।’
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান।
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক শেষে যা বললেন ফখরুল
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ তিন নেতা।
বৃহস্পতিবার (২৯ আগস্ট) বিকেলে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
সোয়া এক ঘণ্টার বৈঠক শেষে মির্জা ফখরুল সাংবাদিকদের বলেন, প্রধান উপদেষ্টা আলোচনার জন্য ডেকেছিলেন। প্রায় সোয়া এক ঘণ্টার আলোচনা অত্যন্ত ফলপ্রসূ হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আমরা আশাবাদী ড. ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তাদের আন্তরিকতা, দেশপ্রেম এবং যোগ্যতা দিয়ে খুব দ্রুত বাংলাদেশকে স্টেবল (স্থিতিশীল) অবস্থায় নিয়ে আসতে পারবেন এবং প্রয়োজনীয় সংস্কার করে নির্বাচনের দিকেও যেতে পারবেন।
বিএনপির এই নেতা বলেন, নির্বাচনের সম্ভাব্য তারিখ নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। আমরা কোনো তারিখ বলব না। এটা উনারা বলবেন।
এর আগে, এদিন বিকেল ৪টায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় পৌঁছান। অপর দুজন হলেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও সালাহউদ্দিন আহমেদ।
এ ছাড়া বৈঠকে পরিকল্পনা ও শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ ও আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল ছিলেন।
উল্লেখ্য, ড. ইউনূস প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেওয়ার পর গত ১২ আগস্ট বিএনপি মহাসচিবের নেতৃত্বে ৭ সদস্যের স্থায়ী কমিটি যমুনা প্রথম বৈঠক করেন।