• ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
logo

মানিকগঞ্জ-১ : মাঠ কাঁপাচ্ছেন প্রার্থীরা

জাহাঙ্গীর আলম বিশ্বাস, মানিকগঞ্জ

  ১১ অক্টোবর ২০১৭, ১৮:৩৬

শিবালয়, ঘিওর ও দৌলতপুর উপজেলা নিয়ে মানিকগঞ্জ-১ আসন গঠিত। প্রথম থেকে অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মানিকগঞ্জের আসন ছিল ৪টি। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আসন পুনর্বিন্যাস করায় মানিকগঞ্জের আসন সংখ্যা চার থেকে কমে তিনটি হয়। ফলে মানিকগঞ্জ-১ আসনে ঘিওর ও দৌলতপুর উপজেলার সঙ্গে শিবালয় উপজেলাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। প্রথম ও দ্বিতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনটি ছিল ঢাকা-১ আসন। ১৯৮৪ সালে মহকুমা থেকে জেলায় উন্নীত হলে আসনটি মানিকগঞ্জ-১ আসন হয় যা জাতীয় সংসদের ১৭২ নম্বর আসন।

১৯৭৩ সালে প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এ এম সায়েদুর রহমান। ১৯৭৯ সালে দ্বিতীয় সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য হন বিএনপির প্রয়াত মহাসচিব খন্দকার দেলোয়ার হোসেন। ১৯৮৬ সালে তৃতীয় সংসদ ও ১৯৮৮ সালে চতুর্থ সংসদ নির্বাচনে এই আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন জাতীয় পার্টির নেতা মোহাম্মদ সিদ্দিকুর রহমান। ১৯৯১ সালে পঞ্চম, ১৯৯৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ষষ্ঠ ও ১৯৯৬ সালের জুন মাসে সপ্তম ও ২০০১ সালে অনুষ্ঠিত অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পুনরায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন খন্দকার দেলোয়ার হোসেন। অর্থাৎ এই আসনে তিনি মোট পাঁচবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন।

খন্দকার দেলোয়ার ১৯৯১ ও ২০০১ সালে জাতীয় সংসদের সরকার দলীয় এবং ১৯৯৬ সালে বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ ছিলেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি বিএনপির মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করেন তিনি।

২০০৮ সালে নবম সংসদ নির্বাচনে তাকে পরাজিত করে এই আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের প্রার্থী এবিএম আনোয়ারুল হক। ২০১৪ সালের ১০ম সংসদ নির্বাচনে তাকে বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেয়া হয় জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক ও বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালক এ এম নাঈমুর রহমান দুর্জয়কে। তিনি জাসদ প্রার্থী আফজাল হোসেন খান জকিকে পরাজিত করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। আসন্ন একাদশ সংসদ নির্বাচনেও দলের মনোনয়ন চাইবেন তিনি। তবে তার দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার ক্ষেত্রে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক এবং মানিকগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের নির্বাহী সদস্য সালাউদ্দিন মাহমুদ জাহিদ (এস এম জাহিদ), জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, বঙ্গবন্ধু পরিষদ জেলা শাখার আহ্বায়ক ও মানিকগঞ্জ জজ কোর্টের পিপি অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম এবং এই আসনের প্রাক্তন সংসদ সদস্য এবিএম আনোয়ারুল হক।

তবে অনেকের দাবি জনসংযোগে এগিয়ে আছেন এস এম জাহিদ। তিনি ব্যক্তিগত উদ্যোগে তার নির্বাচনী এলাকা ঘিওর, দৌলতপুর ও শিবালয় উপজেলার বিভিন্ন স্থানে নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্তদের আর্থিক সহায়তা, বন্যাকবলিত এলাকায় ৫০ হাজার পরিবারকে ত্রাণ সহায়তা, রাস্তা-ঘাট, মসজিদ, মন্দির, মাদরাসা, স্কুল, হাট-বাজার সংস্কারে আর্থিক সহায়তার পাশাপাশি দরিদ্র ও অসহায় পরিবারকে নানাভাবে সহায়তা দিয়ে যাচ্ছেন। তার কর্মসূচিতে দলীয়-নেতাকর্মীদের পাশাপাশি হাজার হাজার নারী-পুরুষ অংশগ্রহণ করেন।

গেলো ১৫ আগস্ট তিনটি উপজেলায় পৃথক শোকসভা, শোক মিছিল, দোয়া মাহফিল ও দরিদ্রদের মধ্যে খাবার বিতরণ এবং সেইসব অনুষ্ঠানে দলীয় নেতাকর্মীসহ হাজার হাজার নারী-পুরুষের সমাবেশ ঘটিয়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন এস এম জাহিদ। রাজনৈতিক কর্মসূচির পাশাপাশি সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে দলীয় নেতাকর্মী ও নির্বাচনী এলাকার জনগণের কাছে প্রিয় হয়ে উঠেছেন তিনি। এর জন্য মনোনয়ন পাওয়ার ক্ষেত্রে তিনি শতভাগ আশাবাদী।

এদিকে, গেলো নির্বাচনে জাসদ প্রার্থী আফজাল হোসেন খান জকিকে পরাজিত করে সংসদ সদস্য হওয়ার পর থেকে এ এম নাঈমুর রহমান দুর্জয় জনগণের মধ্যে সরকারি অনুদান ও সহায়তা নিয়ে যাচ্ছেন। তিনিও জনসংযোগ করে যাচ্ছেন। তার উদ্যোগে ঘিওর যুব কমপ্লেক্স নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে এবং প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত আন্তর্জাতিক মানের ক্রিকেট স্টেডিয়াম করার জন্য তিনি পাটুরিয়ার অদূরে সম্ভাব্য স্থান যাচাইসহ নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করছেন। মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে তিনিও আশাবাদী।

অন্যদিকে এই আসনের আরেক গুরুত্বপূর্ণ প্রার্থী হচ্ছেন অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম। তিনি অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে দলীয় মনোনয়ন পেয়ে বিএনপির প্রয়াত মহাসচিব খন্দকার দেলোয়ার হোসেনের কাছে হেরে যান। তিনিও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন চাইবেন। এছাড়া এ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এবিএম আনোয়ারুল হকও মনোনয়ন চাইবেন বলে জানিয়েছেন।

এছাড়া জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং ঘিওর উপজেলা পরিষদের দুই বারের চেয়ারম্যান আফজাল হোসেন খান জকি মহাজোটের পক্ষে মনোনয়ন চাইবেন। মানিকগঞ্জ পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য সুভাষ চন্দ্র সরকার দলীয় মনোনয়ন চাইবেন বলে জানিয়েছেন।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের ব্যাপারে দলীয় সিদ্ধান্ত না থাকলেও বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীরা নির্বাচনী এলাকায় দলীয় কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি সামাজিক, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যোগদান করে প্রার্থী হওয়ার কথা জানান দিচ্ছেন।

এই আসনে বিএনপি থেকে যারা মনোনয়ন চাইবেন তারা হলেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সাবেক শিশু বিষয়ক সম্পাদক এবং জিয়া শিশু কিশোর সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সিরাজুল ইসলাম সেলিম, বিএনপির প্রয়াত মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনের দুই ছেলে বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট খন্দকার আব্দুল হামিদ ডাবলু ও জেলা বিএনপির কৃষিবিষয়ক সম্পাদক ড. খন্দকার আকবর হোসেন বাবলু, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক এস এ জিন্নাহ কবীর।

এছাড়া দৌলতপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান তোজাম্মেল হক তোজাও এই আসনে বিএনপি থেকে মনোনয়ন চাইবেন বলে জানিয়েছেন। খন্দকার দেলোয়ার হোসেনের মৃত্যুর পর এই আসনে বিএনপি থেকে কে মনোনয়ন পাচ্ছেন তা জানান জন্য বাড়তি আগ্রহ আছে দলীয় নেতাকর্মীসহ মানিকগঞ্জবাসীর।

এই আসনে বিএনপি প্রয়াত মহাসচিব দেলোয়ার খন্দকার হোসেনের পরিবারের কাউকে মনোনয়ন দেয়া হবে, নাকি প্রয়াত মন্ত্রী হারুণার রশীদ খান মুন্নুর বড় মেয়ে আফরোজা খান রিতাকে মানিকগঞ্জ-৩ আসনের পাশাপাশি এই আসনের মনোনয়ন দেয়া হবে এই নিয়ে ভোটারদের মধ্যে চলছে জোর আলোচনা-সমালোচনা।

জেবি/এসএস/এসজে

মন্তব্য করুন

daraz
  • রাজনীতি এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
কৃষককে অফিস থেকে বের করে দেওয়ায় দুই কর্মকর্তাকে বদলি
হাসপাতাল থেকে চুরি হওয়া নবজাতক উদ্ধার
X
Fresh