• ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
logo

সুপারশপ-এটিএম বুথের স্লিপে ছড়াচ্ছে মরণব্যাধি

আরটিভি নিউজ

  ২৯ আগস্ট ২০২১, ১৮:৫৮
সুপারশপ-এটিএম বুথের স্লিপে ছড়াচ্ছে মরণব্যাধি
ফাইল: ছবি।

সুপারশপে বাজার বা এটিএম বুথে লেনদেন করলেই দেয়া হচ্ছে একটি স্লিপ বা রশিদ। প্রয়োজনের তাগিদেই সেটি পকেটে পুরে নিচ্ছেন সবাই। কিন্তু ক’জনই বা জানেন সেই কাগজে করে ঘরে নিয়ে যাচ্ছেন নিজের জন্য ভয়াবহ রোগ?

সম্প্রতি একটি গবেষণায় দেখা গেছে, অর্থ লেনদেনের সময় অত্যাধুনিক পদ্ধতির মেশিনে দেয়া থার্মাল পেপারের রশিদে অস্বাভাবিক মাত্রায় ব্যবহার করা হচ্ছে মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর কেমিক্যাল বিপিএ বা বিসপেনল এ। এই ভয়াবহ কেমিক্যাল ছড়াচ্ছে মরণব্যাধি।

এনভায়রনমেন্ট এন্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (এসডো) নামের সংস্থাটি বলছে, দীর্ঘ এক বছরজুড়ে ঢাকার বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে সংগৃহীত ৩৬টি রশিদ তারা পাঠিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের মিনেসোটা দালাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানে ল্যাব পরীক্ষায় রশিদ ভেদে ০ দশমিক ৮ শতাংশ থেকে ৩ দশমিক ৮ শতাংশ পর্যন্ত বিপিএ-এর উপস্থিতি পাওয়া গেছে। যদিও ইউরোপীয় ইউনিয়ন বলছে, যে কোনও পণ্যে সর্বোচ্চ বিপিএ ব্যবহার করা যাবে ০ দশমিক ২ শতাংশ। এর বেশি হলে তা মানুষের জন্য ভয়ঙ্কর বিপদ বয়ে আনতে পারে বলে দাবি গবেষকদের।

গবেষক দলের প্রধান এসডো’র মহাসচিব ড. শাহরিয়ার হোসেন একটি বেসরকারি টেলিভিশনকে দেয়া সাক্ষাৎকারে জানান, গবেষণাকালে আমরা স্লিপ টেস্ট করানোর পাশাপাশি সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথাও বলেছি। এমন কাউকেই পাইনি যারা বিপিএ-এর ক্ষতি সম্পর্কে জানেন। অথচ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এই কেমিক্যাল ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করেছে। আমাদের দেশে এটি আসছে দেশের বাইরে থেকে। তাই এর আমদানি বন্ধে সরকারকেই উদ্যোগ নিতে হবে।

তিনি আরও জানান, শুধু থার্মাল পেপারের রশিদেই নয়, প্লাস্টিকের বিভিন্ন সামগ্রীতেও বায়োসপেনল এ ব্যবহার হচ্ছে। বিশেষ করে শিশুদের খেলনা, পানির বোতলে ব্যবহার হচ্ছে এই কেমিক্যাল। এটি বন্ধে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।

স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদের ডিন, পরিবেশবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, বিপিএ বা বিসপেনল এ মানুষের শরীরে তিনভাবে প্রবেশ করে। এটি স্পর্শ করে মুখে হাত দিলে কেমিক্যালটি মুখে প্রবেশ করতে পারে। মুখ দিয়ে না গেলে লোমকূপের মাধ্যমেও শরীরে প্রবেশ করতে পারে বিপিএ। আপনারা অবশ্যই লক্ষ্য করেছেন, সুপার শপের রশিদগুলো কয়েকদিন রেখে দিলে এর কালি উঠে যায়। এই কারণে বিপিএযুক্ত রশিদ স্পর্শ না করে ঘরে রেখে দিলেও বিপদ। এটি বাষ্প হয়ে বাতাসে মিশে গিয়ে নিঃশ্বাসের সঙ্গে পেটে প্রবেশ করে নানান ক্ষতি করতে পারে। এছাড়া, স্যানিটাইজার ব্যবহারের পর এটি স্পর্শ করলে আরও দ্রুত বিক্রিয়া হতে পারে।

তিনি জানান, থার্মাল পেপারের রশিদে বিসপেনল এ মূলত ব্যবহার হচ্ছে কালি হিসেবে। এখানে আমাদের দেশীয় কাগজ ব্যবহার করলে এই কেমিক্যালযুক্ত কালি ব্যবহার করতে হতো না। কিন্তু আমাদের দেশীয় কাগজ অনেক মোটা হয় বলে সহজে ব্যবহার করার জন্য থার্মাল পেপার ব্যবহার করা হচ্ছে। ইচ্ছা করলেই এর সমাধান সম্ভব।

বিকল্প না আসা পর্যন্ত আপাতত অনলাইন বা মোবাইল এসএমএস-এর মাধ্যমে রশিদ লেনদেনের পরামর্শও দেন এই পরিবেশ বিজ্ঞানী।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারি অধ্যাপক, ক্লিনিক্যাল টক্সিকোলজিস্ট ডা. ফজলে রাব্বী চৌধুরী বলেন, বিভিন্ন কেমিক্যাল মানবদেহে প্রবেশ করলে কিডনিতে গিয়ে ডিসপোজ হয়ে যায়। কিন্তু বিপিএ শরীরে থেকে যায়। বিভিন্ন চিকিৎসা সংক্রান্ত গবেষণায় দেখা গেছে, বিপিএ সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করছে শিশুদের মানসিক বিকাশে।

এছাড়া বয়স্কদের ক্ষেত্রে ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ, হৃদরোগ, ক্যানসারের মতো রোগ ছড়াতে পারে। এতে পুরুষের প্রজনন ক্ষমতাও কমতে পারে।

এসজে/পি

মন্তব্য করুন

daraz
  • তথ্যপ্রযুক্তি এর পাঠক প্রিয়
X
Fresh