জেনে নিন আজ ইফতার ও কাল সেহরির শেষ সময়
গত ২৫ এপ্রিল থেকে শুরু হয়েছে মুসলমানদের সিয়াম সাধনার মাস পবিত্র রমজান। একইসঙ্গে পবিত্র রমজান (১৪৪১ হিজরি) মাসের সেহরি ও ইফতারের সময়সূচি প্রকাশ করেছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন।
আজ ২১ রমজান (১৫ মে) শুক্রবার ইফতারের সময় ৬টা ৩৭ মিনিট। ২২ রমজান (১৬ মে) শনিবার সেহরির শেষ সময় ৩টা ৪৭ মিনিট।
এদিকে, আগামী ২০ মে বুধবার দিনগত রাতে (রমজানের ২৭তম রাত) পবিত্র লাইলাতুল কদর পালিত হবে।
দেশের কিছু জেলায় ঢাকার সময়ের সঙ্গে সেহরি এবং ইফতারের সময়ের মিল রয়েছে। তবে বেশিরভাগ জেলার সাথে ঢাকা জেলার ইফতার এবং সেহরির সময়ের কিছুটা পার্থক্য আছে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের প্রকাশিত ইফতার ও সেহরির সময়সূচি দেখতে ক্লিক করুন এখানে...
এস
মন্তব্য করুন
সেহরিতে মসজিদের মাইকে অনবরত ডাকাডাকি, যা বললেন আহমাদুল্লাহ
মহান রব্বুল আল-আমিনের অধিকতর নৈকট্য লাভের শ্রেষ্ঠ সময় ও পরকালীন পাথেয় অর্জনের অভাবনীয় মাস রমজান। ধর্মপ্রাণ মুসুল্লিরা গভীর রাতে উঠে সেহরি খাওয়ার মধ্য দিয়ে রোজা পালন শুরু করেন। সেহরিতে পাড়ামহল্লার মসজিদের মাইকের ডাক মুসুল্লিদের ঘুম ভাঙাতে সাহায্য করে। তবে কারও কারও জন্য এই ডাক মারাত্মক বিরক্তিকরও। গভীর রাতে ঘণ্টাব্যাপী মসজিদের মাইকে ইসলামী সংগীত পরিবেশন, কিছুক্ষণ পরপর মুসুল্লিদের সতর্ক করা, সময় বলে দেওয়া প্রভৃতি শিশু, বৃদ্ধ, ঋতুবতী নারী, অসুস্থ ব্যক্তি কিংবা অমুসলিমদের জন্য মারাত্মক ঘুমের ব্যাঘাত। সামাজিকমাধ্যমে এ নিয়ে ব্যাপক আলাপ-আলোচনাও হচ্ছে। এবার এ বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলেছেন জনপ্রিয় ইসলামিক স্কলার শায়েখ আহমাদুল্লাহ। তার ফেসবুক পোস্টটি হুবহু তুলে ধরা হলো—
‘ভোররাতে সাহরির সময় মসজিদের মাইকে অতিরিক্ত ডাকাডাকি এবং গজল গাওয়ার প্রথা বন্ধ হওয়া উচিত।একটা সময় মানুষের প্রয়োজনেই হয়তো ডাকাডাকির এই প্রথা চালু হয়েছিল। কিন্তু এখন প্রতিটা বাড়িতেই ঘুম ভাঙানোর মতো দু-চারটা এলার্ম ঘড়িবিশিষ্ট মোবাইল ফোন আছে। এ সময়ে এসে ঘুম ভাঙানোর জন্য মাইকের মাত্রারিক্ত ডাকাডাকি নিষ্প্রয়োজন; বরং বিরক্তিকর।
কারণ, সাহরির ওই সময়টা তাহাজ্জুদ এবং দোয়া কবুলের সময়। ওই সময় মাইকের আওয়াজ ইবাদতকারীদের ইবাদতে ব্যাঘাত সৃষ্টি করে। তাছাড়া ঋতুবতী নারী, অসুস্থ, শিশু এবং অমুসলিমদের ঘুমেরও ব্যাঘাত সৃষ্টি করে মাইকের আওয়াজ।
যেখানে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটিয়ে উচ্চস্বরে কোরআন তেলাওয়াত করতে নিষেধ করেছেন স্বয়ং রাসুল (সা.), সেখানে অনেক সময় ধরে মাইক বাজানো কতটা যুক্তিসঙ্গত এবং ইসলাম-সঙ্গত? হ্যাঁ, সাহরির শুরুতে এবং শেষে এক-দুবার ডেকে দেওয়া যায়। কিন্তু লাগাতার ডাকাডাকি, গজল, হামদ-নাত গাওয়া মোটেও কাম্য নয়। আমাদের এইসব কর্মকাণ্ডের জন্য অনেকে ইসলামের প্রতি বিতৃষ্ণ হয়ে যায়।
অনেকে হয়তো আজানের কথা বলবেন— ফজরের আজানের কারণেও তো ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে। আসলে আজান এবং সাহরির ডাকাডাকি দুটো ভিন্ন জিনিস।
আজান ইসলামের শিআর। তাছাড়া আজান খুবই সংক্ষিপ্ত সময় নিয়ে হয় এবং ফজরের আজান গভীর রাতেও দেওয়া হয় না। এ কারণে দুটোকে এক করে দেখার সুযোগ নেই। ইসলাম পরিমিতিবোধের ধর্ম। ইসলামের এই পরিমিতিবোধ সমাজের সকল স্তরে প্রয়োগ হলে আমাদের জীবন সহজ এবং সাবলীল হবে।’
২ বার রমজান ও ৩টি ঈদ হবে যে বছর
ইংরেজি বর্ষপঞ্জি ও চন্দ্র বছরের মাসগুলোর পার্থক্যের কারণে আগামী ২০৩০ ও ২০৩৩ সালে দুই মাস রোজা পালন ও তিনটি ঈদ হতে পারে মুসলিমদের। এর মধ্যে একটি রমজান ৩৬ দিনের হবে।
দুবাই অ্যাস্ট্রোনমি গ্রুপের চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার হাসান আহমেদ আল হারিরি সম্প্রতি এমন তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি জানান, ইংরেজি বর্ষপঞ্জি ও চন্দ্র বছরের মাসগুলোর পার্থক্যের কারণে ২০৩০ সালে দুটি রমজান হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। চন্দ্র বছরের মাসগুলো ২৯ অথবা ৩০ দিনে নির্ধারিত হয়। অন্যদিকে, ইংরেজি বছরের মাসগুলো ৩০ অথবা ৩১ দিনে নির্ধারিত থাকে। ফলে ইংরেজি বছর শেষে চন্দ্র বছর ১১ দিন কমে যায়। এই পার্থক্যের কারণেই ২০৩০ সালে মুসলিমরা দুবার রমজান মাস পাবেন।
দুই মাস রোজা পালন ও তিনটি ঈদের বিষয়ে ২০৩০ সালের গ্লোবাল ইসলামিক ক্যালেন্ডারেও সত্যতা পাওয়া গেছে। ২০৩৩ সালেও দুবার পূর্ণ রমজান মাস আসবে এবং ওই বছরও মোট তিনটি ঈদ হবে।
এ বিষয়ে সৌদি আরব বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল বিভাগের জলবায়ুর অধ্যাপক ড. আবদুল্লাহ আল মুসনাদ জানান, ২০৩০ সালের ৫ জানুয়ারি ১৪৫১ হিজরির পবিত্র রমজান মাস শুরু হয়ে ফেব্রুয়ারির ৩ তারিখে শেষ হবে। এটি ৩০ দিনের হবে। একই বছর ১৪৫২ হিজরির দ্বিতীয় রমজান মাসটি শুরু হবে ২৬ ডিসেম্বর, যা শেষ হবে ২০৩১ সালের ২৪ জানুয়ারি। সুতরাং, অপর রমজানের ঈদুল ফিতর ঈদটি অনুষ্ঠিত হবে ২০৩১ সালে।
জুমাতুল বিদার গুরুত্ব ও ফজিলত
রমজান মাসের শেষ দশকের বিদায়কালীন শুক্রবার তথা শেষ জুমার দিন মুসলিম বিশ্বে ‘জুমাতুল বিদা’ নামে পরিচিত। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন মুমিন বান্দার জন্য বিশেষ দিন হিসেবে জুমার দিনকে নির্ধারণ করেছেন এবং বিশেষ মাস হিসেবে রমজান মাসকে নির্ধারণ করেছেন। আর ‘জুমা’ এবং ‘রমজান’ যদি একত্র হয়ে যায়, তাহলে এর দ্বিগুণ মর্যাদা যোগ হয়। তন্মধ্যে শেষ জুমা বা বিদায়ী জুমা বিশেষ গুরুত্ববহ।
পবিত্র রমজানের শেষ জুমার দিনটি আমাদের সমাজে ‘জুমাতুল বিদা’ নামে পরিচিত। যদিও পরিভাষাটি কোরআন বা হাদিসের প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষ কোনো বর্ণনায় পাওয়া যায় না। তারপরও মোবারক মাস রমজানের শেষ জুমার দিন হিসেবে এর গুরুত্ব কম নয়। রমজান আর জুমা একত্রে মিলিত হয়ে দিনটিকে করে তুলেছে সীমাহীন মহিমাময়। তাই জুমাতুল বিদায় প্রত্যেক মুমিন মুসলমানের বিশেষ তৎপরতা লক্ষ করা যায়। মসজিদে জামাতের সঙ্গে জুমার নামাজ আদায় করা এবং বিশেষ মোনাজাতের মাধ্যমে মহান আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করা ও নিজের আত্মার আকুতি দয়াময় প্রভুর দরবারে পেশ করাই যেন এদিনে সব মুসলমানের পরম আগ্রহের বিষয়।
রমজান মাস সীমাহীন ফজিলতের মাস এবং এটি উম্মতে মোহাম্মাদীর জন্য মহান আল্লাহর বিশেষ উপহারস্বরূপ। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত এক হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, নিশ্চয়ই তোমাদের রব বলেছেন, বনি আদমের প্রতিটি আমল দশ থেকে সাতশো গুন বৃদ্ধি করা হয়, কিন্তু রোজা ভিন্ন (অর্থাৎ রোজার সওয়াবের কোন সীমা নেই)। কেননা রোজা শুধুই আমার জন্য, আর আমি নিজেই এর প্রতিদান দেব। আর নিশ্চয়ই রোজাদারের মুখের গন্ধ আল্লাহর কাছে মেশক আম্বারের চেয়েও বেশি প্রিয়। তোমাদের কারও রোজা থাকা অবস্থায় যদি কেউ তার সঙ্গে জাহেলের মতো আচরণ করে তাহলে সে বলে দেবে, আমি একজন রোজাদার। (বোখারি, হাদিস: ৫৯২৭)।
আর জুমার দিনের মাহাত্ম্য সম্পর্কে হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণিত এক হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, সূর্যোদয়ের মাধ্যমে যে দিনগুলো হয় তার মধ্যে সর্বোত্তম দিন হলো জুমার দিন। এই দিনে হজরত আদম (আ.)-কে সৃষ্টি করা হয়েছিল এবং এই দিনেই তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হয়েছিল এবং এই দিনেই তাকে পৃথিবীতে পাঠানো হয়েছিল। আর এদিনের মধ্যে এমন একটি সময় আছে, যখন কোনো মুসলমান নামাজরত অবস্থায় দোয়া করলে অবশ্যই তার দোয়া কবুল করা হয়। (তিরমিজি, হাদিস: ৪৯১)। রমজান মাসে রোজা অবস্থায় জুমার দিনের নিশ্চিত দোয়া কবুলের শেষ সুযোগ হিসেবে জুমাতুল বিদা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
জুমার দিনের কিছু সুন্নত আমল রয়েছে। যেমন (১) সাবান দিয়ে ভালো করে গোসল করতে হবে (২) নতুন বা উত্তম জামাকাপড় পরতে হবে (৩) আতর তথা সুগন্ধি ব্যবহার করতে হবে (৪) হেঁটে মসজিদে যেতে হবে (৫) আগে আগে মসজিদে প্রবেশ করতে হবে (৬) ইমামের কাছাকাছি জায়গায় বসতে হবে। (৭) ইমামের খুতবা মনোযোগসহকারে শুনতে হবে (৮) বেশি বেশি দরুদ শরিফ পাঠ করতে হবে (৯) কাউকে কষ্ট দেওয়া যাবে না, কোনো অনর্থক কাজ করা যাবে না।
হজরত আওস ইবনে আওস আস-সাকাফি (রা.) থেকে একটি হাদিস বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা.)কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি জুমার দিনে ভালো করে গোসল করবে এবং আগে আগে হেঁটে মসজিদে যাবে এবং ইমামের কাছাকাছি বসে খুতবা মনোযোগসহকারে শুনবে আর কোনো রকম অনর্থক কাজ করবে না তাকে তার প্রতিটি কদমের বিনিময়ে লাগাতার এক বছর নামাজ ও রোজার সওয়াব দান করা হবে। (সুনানে ইবনে মাযা, হাদিস : ১০৮৭)।
ইতিহাস থেকে জানা যায়, রমজান মাসের শেষ শুক্রবার হজরত সুলায়মান (আ.) জেরুজালেম নগরী প্রতিষ্ঠা করেন এবং মুসলমানদের প্রথম কিবলা ‘মসজিদ আল-আকসা’ প্রতিষ্ঠা করেন। এ জন্য প্রতি বছর সারা বিশ্বের মুসলমান রমজান মাসের শেষ শুক্রবারকে ‘আল কুদস’ দিবস হিসাবে পালন করেন।
শবেকদরের নামাজের নিয়ম ও দোয়া
আজকে পবিত্র লাইলাতুল কদরের রাত, মর্যাদাপূর্ণ রাত। এ রাত হাজার মাসের চেয়েও শ্রেষ্ঠ। ইসলামের দৃষ্টিকোণে শবেকদরের গুরুত্ব অপরিসীম, কারণ এ রাতে মানবতার মুক্তির মানুষের জীবন-বিধান মহাগ্রন্থ পবিত্র কোরান নাজিল হয়। পবিত্র কোরানে এই রাতকে ঘিরে পূর্ণাঙ্গ একটি সুরা নাজিল হয়েছে। এ রাতে সকল ধর্মপ্রাণ মুসলমানগণ ইবাদত বন্দেগির মাধ্যমে কাটিয়ে থাকে। এ জন্য অনেকেরই শবেকদরের রাতের নামাজের নিয়ম, কীভাবে পড়তে হয়, কোন দোয়া দিয়ে পড়তে হয় এবং পাশাপাশি এই রাতের ফজিলত সম্পর্কে জানতে চায়।
জেনে নিন কদর রাতের নামাজের নিয়ম, দোয়া ও ফজিলত সম্পর্কে-
‘শবেকদর’ ফারসি ভাষা আর কোরআনের ভাষায় এ রাতের নাম ‘লাইলাতুল কদর’ অর্থ অতিশয় সম্মানিত ও মহিমান্বিত রাত বা পবিত্র রজনী। আরবি ভাষায় ‘লাইলাতুল’ অর্থ হলো রাত্রি বা রজনী এবং ‘কদর’ শব্দের অর্থ সম্মান, মর্যাদা বা মহাসম্মান। এ ছাড়া এর অন্য অর্থ হলো- ভাগ্য, পরিমাণ ও তাকদির নির্ধারণ করা। যেহেতু এ রাতের মাধ্যমে আমাদের ভাগ্য নির্ধারিত হয়ে থাকে তাই আমাদের সকল মুসলমানদের উচিত ইবাদত বন্দেগির মাধ্যমে কাটিয়ে দেয়া।
শবে কদরের নামাজের নিয়ম:
শবেকদরের নফল নামাজ দু‘রাকাত করে যত বেশি পড়া যায় তত বেশি ছওয়াব। নামাজের প্রতি রাকাতে সুরা ফাতিহা পড়ার পর সুরা ইখলাছ, সুরা ক্বদর, আয়াতুল কুরছী বা সুরা তাকাছুর ইত্যাদি মিলিয়ে পড়া অধিক ছওয়াবের কাজ। এইভাবে কমপক্ষে ১২ রাকাত নামাজ আদায় করা উত্তম। এর বেশি যত রাকাত আদায় করা যায় ততই ভালো।
কেউ যদি উপরে উল্লেখিত সুরাগুলো না পারেন তাহলে সুরা ফাতিহা পড়ার পর যে সুরাগুলো আপনি পারেন তার মধ্য থেকে প্রতি রাকাতে একটি করে সুরা মিলিয়ে নিতে হবে। এছাড়া সালাতুল তাওবা, সালাতুল হাজত, সালাতুল তাসবিহ নামাজও আপনি পড়তে পারেন। পাশাপাশি রাতের শেষভাগে কমপক্ষে ৮ রাকাত তাহাজ্জুদ পড়ার অবশ্যই চেষ্টা করবেন।
>> সঠিক পদ্ধতিতে কেবলামুখী হয়ে দাঁড়াতে হবে।
>> শবেকদরের জন্য দুই রাকাত নফল নামাজের জন্য নিয়ত করতে হবে। (বাংলা অথবা আরবিতে)
>> আল্লাহু আকবার বলে সানা পাঠ করতে হবে।
>> তারপর সুরা ফাতিহা পাঠ করার পর এর সাথে কুরআনের কোন আয়াত অথবা যে কোন সুরা সংযুক্ত করে পড়তে হবে। (সুরা ইখলাছ, সুরা >> ক্বদর, আয়াতুল কুরছী বা সুরা তাকাছুর ইত্যাদি মিলিয়ে পড়া অধিক ছওয়াবের কাজ)
>> এভাবে সাধারণ নামাযের মত করে সুরা পাঠ করার পর রুকু এবং সেজদা দিতে হবে।
>> তারপর প্রথম রাকাতের মতো দ্বিতীয় রাকাত নামাজ আদায় করে তাশাহুদ, দুরুদ শরীফ এবং মাসুরা পাঠ করে সালাম ফেরাতে হবে।
শবেকদরের নামাজের নিয়ত:
শবেকদরের নামাজ পড়ার সময় আপনি যদি আরবি ভাষা জেনে থাকেন তাহলে আপনি আরবিতে নিয়ত করবেন এবং আপনার যদি আরবি ভাষা না জানা থাকে তাহলে আপনি বাংলাতে শবেকদরের নামাজের নিয়ত করতে পারেন।
তাহলে চলুন আমরা এখন শবেকদরের নামাজের নিয়ত বাংলা ভাষা এবং আরবি ভাষায় জেনে নিই-
শবে কদরের নামাজের নিয়ত আরবি: ‘নাওয়াইতুআন্ উছল্লিয়া লিল্লা-হি তা‘আ-লা- রাক‘আতাই ছালা-তি লাইলাতুল কদর-নাফলি, মুতাওয়াজ্জিহান ইলা-জিহাতিল্ কা‘বাতিশ্ শারীফাতি আল্লা-হু আকবার। শবে কদরের নামাজের বাংলা নিয়তঃ “আমি ক্বেবলামূখী হয়ে আল্লাহ্ এর উদ্দেশ্যে শবে কদরের দু‘রাক‘আত নফল নামাজ আদায়ের নিয়ত করলাম- আল্লাহু আকবার।’
পবিত্র শবেকদরের নামাজের সুরা:
শবেকদরের নামাজের কোন সুরা নেই। কিন্তু নামাজের প্রতি রাকাতে সুরা ফাতিহা পড়ার পর সুরা ইখলাছ, সুরা ক্বদর, আয়াতুল কুরছী বা সুরা তাকাছুর ইত্যাদি মিলিয়ে পড়া অধিক ছওয়াবের কাজ। এছাড়া পবিত্র শবে কদরের রাত আমাদের ভাগ্য নির্ধারণী রাত। এই রাতে ইবাদত বন্দেগির মাধ্যমে মহান আল্লাহ তা’আলার নিকট সন্তুষ্টি অর্জন করা যায়। তাই আমাদেরকে বেশি বেশি ইবাদত করতে হবে এবং এর পাশাপাশি দোয়া করতে হবে। যদি কেউ এ সকল সুরাগুলো না জেনে থাকেন তাহলে আপনার ইচ্ছামত যে সুরাটি আপনি পারেন সেটি দিয়ে নামাজ আদায় করতে পারেন।
শবেকদরের দোয়া:
পবিত্র শবেকদরের রাত আমাদের ভাগ্য নির্ধারণী রাত। এই রাতে ইবাদত বন্দেগির মাধ্যমে মহান আল্লাহ তা’আলার নিকট সন্তুষ্টি অর্জন করা যায়। তাই এই রাতে আমাদেরকে বেশি বেশি ইবাদত করতে হবে এবং এর পাশাপাশি দোয়া করতে হবে।
হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেন, একবার আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলাম- হে আল্লাহর রাসুল! (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আপনি বলে দিন, আমি যদি লাইলাতুল কদর কোন রাতে হবে তা জানতে পারি, তাতে আমি কী (দোয়া) পড়বো?
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তুমি বলবে:-
اللَّهُمَّ إِنَّكَ عُفُوٌّ تُحِبُّ الْعَفْوَ فَاعْفُ عَنِّي
উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুয়্যুন; তুহিব্বুল আফওয়া; ফাফু আন্নি।’
অর্থ: হে আল্লাহ! আপনি ক্ষমাশীল; ক্ষমা করতে ভালোবাসেন; অতএব আমাকে ক্ষমা করে দিন। (মুসনাদে আহমাদ, ইবনে মাজাহ, তিরমিজি, মিশকাত)
এ ছাড়াও আল্লাহ তাআলার ক্ষমা লাভে কুরআনুল কারিমে তিনি বান্দার জন্য অনেক দোয়া তুলে ধরেছেন। যা নামাজের সেজদা, তাশাহহুদসহ সব ইবাদত-বন্দেগিতে পড়ার জন্য তাগিদ দিয়েছেন। আর তাহলো-
رَبِّ اغْفِرْ وَارْحَمْ وَأَنْتَ خَيْرُ الرَّاحِمِيْنَ
উচ্চারণ: ‘রাব্বিগফির ওয়ারহাম ওয়া আংতা খাইরুর রাহিমিন।’
অর্থ: ‘হে আমার প্রভু! (আমাকে) ক্ষমা করুন এবং (আমার উপর) রহম করুন; আপনিই তো সর্বশ্রেষ্ঠ রহমকারী।’ (সুরা মুমিনুন : আয়াত ১১৮)
رَبَّنَا آمَنَّا فَاغْفِرْ لَنَا وَارْحَمْنَا وَأَنتَ خَيْرُ الرَّاحِمِينَ
উচ্চারণ: ‘রাব্বানা আমান্না ফাগফিরলানা ওয়ারহামনা ওয়া আংতা খাইরুর রাহিমিন।’
অর্থ: ‘হে আমাদের পালনকর্তা! আমরা বিশ্বাস স্থাপন করেছি। অতএব তুমি আমাদেরকে ক্ষমা কর ও আমাদের প্রতি রহম কর। তুমি তো দয়ালুদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ দয়ালু।’ (সুরা মুমিনুন : আয়াত ১০৯)
رَبِّ إِنِّيْ ظَلَمْتُ نَفْسِيْ فَاغْفِرْ لِيْ
উচ্চারণ: ‘রাব্বি ইন্নি জ্বালামতু নাফসি ফাগফিরলি।’
অর্থ: ‘(হে আমার) প্রভু! নিশ্চয়ই আমি নিজের উপর জুলুম করে ফেলেছি, অতএব আপনি আমাকে ক্ষমা করুন।’ (সুরা কাসাস : আয়াত ১৬)
رَبَّنَا إِنَّنَا آمَنَّا فَاغْفِرْ لَنَا ذُنُوْبَنَا وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ
উচ্চারণ: ‘রাব্বানা ইন্নানা আমান্না ফাগফিরলানা জুনুবানা ওয়া ক্বিনা আজাবান নার।’
অর্থ: হে আমাদের রব! নিশ্চয়ই আমরা ঈমান এনেছি, সুতরাং তুমি আমাদের গোনাহ ক্ষমা করে দাও এবং আমাদেরকে জাহান্নামের আযাব থেকে রক্ষা কর।’ (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ১৬)
رَبَّنَا ظَلَمْنَا أَنْفُسَنَا وَإِنْ لَّمْ تَغْفِرْ لَنَا وَتَرْحَمْنَا لَنَكُونَنَّ مِنَ الْخَاسِرِيْنَ
উচ্চারণ: ‘রাব্বানা জ্বালামনা আংফুসানা ওয়া ইল্লাম তাগফিরলানা ওয়া তারহামনা লানাকুনান্না মিনাল খাসিরিন।’
অর্থ: ‘হে আমাদের প্রভু! আমরা নিজেদের প্রতি জুলুম করেছি। যদি আপনি আমাদেরকে ক্ষমা না করেন এবং আমাদের প্রতি দয়া না করেন, তবে আমরা অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভূক্ত হয়ে যাবো।’ (সুরা আরাফ : আয়াত ২৩)
رَبَّنَا اغْفِرْ لِيْ وَلِوَالِدَيَّ وَلِلْمُؤْمِنِيْنَ يَوْمَ يَقُوْمُ الْحِسَابُ
উচ্চারণ: ‘রাব্বানাগফিরলি ওয়া লিওয়ালিদাইয়্যা ওয়া লিলমুমিনিনা ইয়াওমা ইয়াকুমুল হিসাব।’
অর্থ: হে আমাদের প্রভু! যেদিন হিসাব কায়েম হবে, সেদিন তুমি আমাকে, আমার বাবা-মাকে ও মুমিনদেরকে ক্ষমা কর।’ (সুরা ইবরাহিম : আয়াত ৪১)
سَمِعْنَا وَأَطَعْنَا غُفْرَانَكَ رَبَّنَا وَإِلَيْكَ الْمَصِيْرُ
উচ্চারণ: ‘সামিনা ওয়া আত্বানা গুফরানাকা রাব্বানা ওয়া ইলাইকাল মাছির।’
অর্থ: ‘আমরা (আপনার বিধান) শুনলাম এবং মেনে নিলাম। হে আমাদের রব! আমাদের ক্ষমা করুন। আপনার দিকেই তো (আমাদের) ফিরে যেতে হবে।’ (সুরা আল-বাকারাহ : আয়াত ২৮৫)
رَبَّنَا وَلاَ تُحَمِّلْنَا مَا لاَ طَاقَةَ لَنَا بِهِ وَاعْفُ عَنَّا وَاغْفِرْ لَنَا وَارْحَمْنَا أَنتَ مَوْلاَنَا
উচ্চারণ: ‘ওয়াফু আন্না ওয়াগফিরলানা ওয়ারহামনা আংতা মাওলানা ফাংছুরনা আলাল ক্বাওমিল কাফিরিন।’
অর্থ: ‘হে আমাদের রব! যে বোঝা বহন করার সাধ্য আমাদের নেই, সে বোঝা আমাদের উপর চাপিয়ে দিয়ো না। আমাদের পাপ মোচন করুন। আমাদের ক্ষমা করুন এবং আমাদের প্রতি দয়া করুন। তুমিই আমাদের প্রভু।’ (সুরা বাকারাহ : আয়াত ২৮৬)
رَبَّنَا اغْفِرْ لَنَا وَلِإِخْوَانِنَا الَّذِيْنَ سَبَقُوْنَا بِالْإِيْمَانِ
উচ্চারণ: ‘রাব্বানাগফিরলানা ওয়ালি ইখওয়ানিনাল্লাজিনা সাবাকুনা বিল ঈমানি।’
অর্থ: ‘হে আমাদের প্রভু! আমাদের ক্ষমা করুন এবং যারা আমাদের আগে যারা ঈমান নিয়ে মৃত্যুবরণ করেছে, তাদেরকেও ক্ষমা করুন।’ (সুরা হাশর : আয়াত ১০)
رَبَّنَا اغْفِرْ لَنَا ذُنُوْبَنَا وَإِسْرَافَنَا فِيْ أَمْرِنَا وَثَبِّتْ أَقْدَامَنَا وَانْصُرْنَا عَلَى الْقَوْمِ الْكَافِرِيْنَ
উচ্চারণ: ‘রাব্বানাগফিরলানা জুনুবানা ওয়া ইসরাফানা ফি আমরিনা ওয়া ছাব্বিত আক্বদামানা ওয়াংছুরনা আলাল ক্বাওমিল কাফিরিন।’
অর্থ: ‘হে আমাদের প্রভু! আমাদের ভুল-ত্রুটিগুলো ক্ষমা করে দিন। আমাদের কাজের মধ্যে যেখানে তোমার সীমালঙ্ঘন হয়েছে, তা মাফ করে দিন। আমাদের কদমকে অবিচল রাখুন এবং অবিশ্বাসীদের মোকাবেলায় আমাদের সাহায্য করুন।’ (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ১৪৭)
رَبَّنَا فَاغْفِرْ لَنَا ذُنُوْبَنَا وَكَفِّرْ عَنَّا سَيِّئَاتِنَا وَتَوَفَّنَا مَعَ الْأَبْرَارِ
উচ্চারণ: ‘রাব্বানা ফাগফিরলানা জুনুবানা ওয়া কাফফির আন্না সায়্যিআতিনা ওয়া তাওয়াফফানা মাআল আবরার।’
অর্থ: ‘হে আমাদের প্রভু! সুতরাং আমাদের গোনাহগুলো ক্ষম করুন। আমাদের ভুলগুলো দূর করে দিন এবং সৎকর্মশীল লোকদের সাথে আমাদের শেষ পরিণতি দান করুন।’ (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ১৯৩)
লাইলাতুল কদরে যা করণীয়
লাইলাতুল কদর অর্থ অতিশয় সম্মানিত ও মহিমান্বিত রাত। আরবি ভাষায় লাইলাতুল অর্থ হলো রাত্রি বা রজনী এবং কদর শব্দের অর্থ মর্যাদা বা সম্মান। এ ছাড়াও এর অন্য অর্থ ভাগ্য, পরিমাণ ও তাকদির নির্ধারণ করা। এ রাতের মাধ্যমে মুসলমানদের ভাগ্য নির্ধারিত হয়ে থাকে।
লাইলাতুল কদর বা শবেকদর হচ্ছে বছরের শ্রেষ্ঠ রাত। এ রাত হাজার বছরের চেয়ে উত্তম। শবেকদরের রাতে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে কাটিয়ে থাকেন।
এ রাতে ইবাদতের সৌভাগ্য লাভ হলে আল্লাহতায়ালা অতীতের সব গুনাহ মাফ করে দেন। আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি ঈমান ও বিশ্বাসের সঙ্গে এবং সওয়াবের আশায় রমজানের রোজা রাখে, শবেকদরের রাত্রে দাঁড়ায়, তার আগেকার সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়। (বুখারি)।
গোনাহ থেকে মাফ চাওয়া : মহান আল্লাহর কাছে গোনাহ থেকে মাফ চাইতে হবে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হজরত আয়িশা রাদিয়াল্লাহু আনহুকে আল্লাহর কাছে গোনাহ মাফের দোয়া শিখিয়েছিলেন। রমজানের শেষ দশকে এ দোয়া বেশি বেশি পড়তে হবে-
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আ’ফুওয়ুন; তুহিব্বুল আ’ফওয়া; ফা’ফু আন্নি।’
অর্থ : হে আল্লাহ! আপনি ক্ষমাশীল; ক্ষমা করতে ভালোবাসেন; অতএব, আমাকে ক্ষমা করে দিন। (মুসনাদে আহমাদ, ইবনে মাজাহ, তিরমিজি, মিশকাত)
জামাতে এশা ও ফজর নামাজ আদায় : কদরের রাতের ফজিলত ও বরকত লাভের জন্য বেশির ভাগ মুসলিম সারারাত জেগে নফল নামাজ পড়েন, ইবাদত করে থাকেন। সেক্ষেত্রে জামাতে ফজরের নামাজ পড়া জরুরি। কেননা নফল ইবাদতের চেয়ে ফজরের নামাজ জামাতের সঙ্গে আদায় করা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। শবে কদরে এশা ও ফজরের নামাজ জামাতে আদায় করতে হবে। কোনোভাবেই যেন জামাতের নামাজ ছুটে না যায়।
কাজা নামাজ পড়া : সারাবছর নানা কারণে অনেক নামাজ কাজা হয়ে যায়। অনেকে সফরে থাকার সময় নামাজ আদায় করতে পারে না। তাই রমজানের শেষ ১০ দিন ফরজ নামাজের কাজা আদায় করা উত্তম।
কোরআন তেলাওয়াত করা : লাইলাতুল কদর রাতেই পবিত্র কোরআন নাজিল হয়েছে। আল কোরআনের বিধান পালনের মাধ্যমে এ রাত অতিবাহিত করা উচিত। কোরআন-সুন্নাহর অনুসরণে ইবাদত-বন্দেগিতে রমজানের শেষ দশক অতিবাহত করা।
ঝগড়া বিবাদ থেকে বিরত থাকা : কদরের রাতে ঝগড়া বিবাদ থেকে বিরত থাকা উচিত। এ রাতটি নির্দিষ্ট নয়, সেহেতু রমজানের শেষ দশকের পুরোটা সময় বিশেষ করে বেজোড় রাতগুলোতে ঝগড়া-বিবাদ থেকে বিরত থাকা উচিত। বিবাদে লিপ্ত থাকলে অতীতের সব গুনাহ মাফ থেকে বঞ্চিত হতে পারেন।
দোয়া করা : লাইলাতুল কদরের রাত হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম রাত। এ রাতে আল্লাহর নৈকট্য লাভের পাশাপাশি দুনিয়ার জীবনে সুখ-শান্তির আবেদন-নিবেদন আল্লাহর দরবারে পেশ করা জরুরি। যেন আল্লাহতাআলা বান্দার জন্য সর্বোত্তম ভাগ্য নির্ধারণ করেন এ রাতে।
হাদিস পড়া : লাইলাতুল কদরের রাতে জ্ঞানার্জনের জন্য কোরআন ও হাদিসের পেছনে কিছু সময় ব্যয় করা। যে সামান্য সময়ের মর্যাদা অনেক বেশি।
কম ঘুমানো : রমজানের শেষ দশকের ইবাদাত-বন্দেগি ও ইতিকাফের জন্য বিশ্বনবী ইবাদতে মগ্ন থাকতেন। কারণ একটাই- লাইলাতুল কদর তালাশ করে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন। কারণ শেষ দশকের যে কোনো বিজোড় রাতেই লাইলাতুল কদর নিহিত থাকে। তাই কম ঘুমিয়ে ইবাদতে মগ্ন থাকতে হবে।
কম খাবার গ্রহণ : রাত জেগে ইবাদাত-বন্দেগি করতে সুস্থ দেহ ও মন প্রয়োজন। বেশি খাওয়া হলে ঘুম ও ক্লান্তিতে ইবাদতে বিঘ্ন ঘটতে পারে। তাই অতিরিক্ত খাবার গ্রহণ করলে লাইলাতুল কদরের ফজিলত ও তাৎপর্য থেকে বঞ্চিত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। তাই কম খেতে হবে।
পবিত্র শবে কদর / মসজিদে মসজিদে ইবাদতে মগ্ন মুসল্লিরা
পবিত্র লাইলাতুল কদর আজ। রমজানুল মুবারকের ২৬ তারিখ দিবাগত রাতটি আমাদের দেশে শবে কদর হিসেবে পালিত হয়ে থাকে।
লাইলাতুল কদরের মহিমাম্বিত রাতে মসজিদে মসজিদে সারা রাত জেগে মুসল্লিরা আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগিতে মগ্ন রয়েছেন। জেগে নফল নামাজ, জিকির-আসগার, কোরআন তিলাওয়াত, তওবাহ-তাহলিল ও দ্বীনি আলোচনায় মশগুল থেকে পার করবেন পুরো রাত। চোখের পানি ফেলে রাব্বুল আলামিনের দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা করছেন ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা।
শবে কদর উপলক্ষে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমসহ রাজধানী প্রায় প্রতিটি মসজিদেই মুসল্লিদের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। এছাড়া সারাদেশের মসজিদগুলোতেই এদিন বাড়তি ভিড় থাকে। এশার আজানের আগ থেকেই মুসল্লিরা মসজিদে আসা শুরু করেন।
পবিত্র রমজানে যেসব মসজিদে খতমে তারাবি হচ্ছে সেগুলোতে কোরআনে পাকের খতম সম্পন্ন হয়। এরপর অনুষ্ঠিত হয় বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত।
হাজার মাসের ইবাদতের চেয়েও এই রাতের ইবাদত উত্তম বলে কোরআনে কারিমে আল্লাহ তায়ালা লাইলাতুল কদরকে অনন্য মর্যাদা দিয়েছেন।
লাইলাতুল কদর রাতে করুণাময় আল্লাহর অশেষ রহমত ও নেয়ামত বর্ষিত হয়। ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা সর্বশক্তিমান মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভের আশায় ইবাদত-বন্দেগি করে থাকেন।
পবিত্র রমজান মাসের লাইলাতুল কদরে পবিত্র কোরআন নাজিল হয়। তাই মহান আল্লাহর প্রতি শুকরিয়া আদায়ে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা বাসা-বাড়ি ও মসজিদে ইবাদত বন্দেগিতে মশগুল থাকেন।
সারাদেশের মুসলমানরা আজ নফল নামাজ আদায়, পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত, জিকির-আসকার, দোয়া ও মোনাজাতের মধ্য দিয়ে পবিত্র এই শবে কদরের রজনী কাটাবেন।
এদিকে পবিত্র লাইলাতুল কদর উপলক্ষে পৃথক বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
কদর উপলক্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশন, বেসরকারি স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেল, বাংলাদেশ বেতার ও বেসরকারি রেডিও বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার করছে। শবে কদর উপলক্ষে রোববার সরকারি ছুটি থাকবে।
এদিকে পবিত্র শবে কদর ১৪৪৫ হিজরি উদযাপন উপলক্ষে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে সন্ধ্যা পৌনে ৭টায় (বাদ মাগরিব) ‘পবিত্র শবে কদরের ফজিলত ও তাৎপর্য’শীর্ষক এই আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিব মু. আ. হামিদ জমাদ্দার।
আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন যাত্রাবাড়ীর কুতুবখালী জামেয়া ইসলামিয়া জামে মসজিদের মুফতি মাওলানা সাকিবুল ইসলাম। সভাপতিত্ব করেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) ড. মহা. বশিরুল আলম।
যেদিন হতে পারে ঈদ
দেখতে দেখতে বিদায়ের পথে পবিত্র রমজান। বিশ্বজুড়ে মুসলিমরা ঈদুল ফিতর উদযাপনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
জ্যোতির্বিজ্ঞানের হিসাব অনুযায়ী, এ বছর রমজান মাস ৩০ দিনের হতে পারে। ফলে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরব ও তার প্রতিবেশী অনেক দেশে আগামী ১০ এপ্রিল (বুধবার) পবিত্র ঈদুল ফিতর অনুষ্ঠিত হতে পারে। খবর আলজাজিরার।
সাধারণত মধ্যপ্রাচ্যের দেশে ঈদ অনুষ্ঠিত হওয়ার পরদিন বাংলাদেশ ও এশিয়ার অন্যান্য দেশে ঈদ উদযাপন করা হয়। সেই হিসেবে আগামী ১১ এপ্রিল ঈদুল ফিতর অনুষ্ঠিত হতে পারে বাংলাদেশসহ এশিয়ার অন্যান্য দেশে।
সোমবার (৮ এপ্রিল) মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে পালন করা হবে ২৯তম রোজা। ওই দিন শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখার জন্য নাগরিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সৌদি আরবসহ বিভিন্ন দেশ।
সোমবার শাওয়ালের নতুন চাঁদ দেখা গেলে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে পরদিন মঙ্গলবার (৯ এপ্রিল) পবিত্র ঈদুল ফিতর অনুষ্ঠিত হবে। চাঁদ দেখা না গেলে আরও একদিন রোজা রাখবেন মুসলমানরা। সেক্ষেত্রে মধ্যপ্রাচ্যে ঈদুল ফিতর অনুষ্ঠিত হবে ১০ এপ্রিল।
ইসলামিক ক্যালেন্ডার অনুযায়ী, প্রত্যেক আরবি মাস ২৯ নাকি ৩০ দিনের হবে, তা নির্ভর করে চাঁদ দেখতে পাওয়ার ওপর। সৌদি আরবের আকাশে সোমবার চাঁদ দেখা গেলে দেশটিতে পবিত্র রমজান মাস ২৯ দিনের হবে। পরদিন (মঙ্গলবার) দেশটিতে পবিত্র ঈদুল ফিতর পালন করা হবে।
বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদপ্তর বলেছে, এ বছর বাংলাদেশে রমজান মাস ৩০ দিনের হতে পারে। তবে দক্ষিণ এশিয়ার আরেক দেশ পাকিস্তানের আবহাওয়া অফিস বলছে ভিন্ন কথা, এবার পাকিস্তানে রোজা ২৯টি হতে পারে। কারণ ৯ এপ্রিল রাতেই দেশটির আকাশে ঈদের চাঁদ দেখা যাবে।
প্রসঙ্গত, ঈদুল ফিতর চাঁদ দেখার ওপর নির্ভর করে। চাঁদ দেখার মধ্য দিয়ে ইসলামি (হিজরি) ক্যালেন্ডারের দশম মাস শাওয়ালের শুরু হয়। চন্দ্র মাস ২৯ বা ৩০ দিনের হয়ে থাকে। যে কারণে পবিত্র ঈদের তারিখ জানার জন্য ঈদের আগের রাত পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয় মুসলমানদের।