• ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
logo

শবে বরাতকে অস্বীকার করা যাবে না: ফরীদ উদ্দিন মাসঊদ

মাজহার খন্দকার

  ০১ মে ২০১৮, ২০:২৩

শবে বরাত বা মধ্য শাবানের রজনি নিয়ে ইরান, ইরাক এবং উপমহাদেশের মুসলমানদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা লক্ষ্য করা যায়। যদিও এই রাতের ফজিলতের মহাগুরুত্ব নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা আছে। মুফাসসিরে কুরআনদের একটি পক্ষ মনে করেন যেহেতু সহিহ হাদিস সিহাহ সিত্তায় শবে বরাত বা ভাগ্য রজনি সম্পর্কে কিছু বলা নেই, সেহেতু শবে বরাত পালন করা যাবে না। আরেকটি অংশ মনে করেন কুরআনে লাইলাতুম মুবারাকাহ বলতে মধ্য শাবানের রজনিকেই বলা হয়েছে। তাই শবে বরাতকে গুরুত্ব দিয়েই পালন করতে হবে।

বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠের প্রধান ইমাম মাওলানা ফরীদ উদ্দিন মাসঊদ আরটিভি অনলাইনকে বলেন, সিহাহ সিত্তায় শবে বরাত সম্পর্কে কিছু বলা নেই। তবে অপেক্ষাকৃত দুর্বল হাদিসে বলা আছে। এই হাদিস সহিহ। তাই শবে বরাতকে অস্বীকার করা যাবে না।

তিনি বলেন, কুরআনে বলা হয়েছে লাইলাতুম মুবারাকাহ। অধিকাংশ মুফাসসিরে কুরআন মনে করেন লাইলাতুম মুবারাকাহ মনে শবে বরাত। কিন্তু আরেকটি অংশ মনে করেন লাইলাতুম মুবারাকাহ মানে শবে কদরকে বোঝানো হয়েছে। যেহেতু কুরআনে শবে কদর সম্পর্কে সরাসরি বলা হয়েছে এবং একটি সুরাও আছে তাই লাইলাতুম মুবারাকাহ শবে কদর নয় শবে বরাত বা শাবানের মধ্য রজনিকেই বোঝানো হয়েছে।

ফরীদ উদ্দিন মাসঊদ বলেন, যারা সালাফি বা আহলে হাদিস তারা সিহাহ সিত্তার বাইরের হাদিস সঠিক বলে মনে করে না। তাই শবে বরাতও তারা মানে না। কিন্তু হানাফি মাজহাবের অনুসারীরা সিহাহ সিত্তার বাইরে যেসব সহিহ হাদিস আছে তা মানে এবং মনে করে ফরজ ও বিধানের ক্ষেত্রে না হলেও আমলের ক্ষেত্রে এসব হাদিস মানা উচিত।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে ইসলাম ধর্মের প্রবর্তন হয়েছে ইরান দেশ থেকে। তাই এখানে ফার্সি শব্দের প্রাধান্য আছে। আর সে কারণেই লাইলাতুম মুবারাহ ফার্সি শব্দ অনুসারে শবে বরাত হয়েছে। ইরান, ইরাক, পাকিস্তান, ভারত ও তার আশেপাশের দেশগুলোতে শবে বরাত গুরুত্ব দিয়ে পালন করা হয়। কিন্তু সৌদি আরব ও অন্যান্য আরব দেশে গুরুত্ব না পাওয়ার কারণ হচ্ছে সেখানে সালাফিদের প্রাধান্য বেশি বলেই যুগ যুগ ধরে সেসব দেশে শবে বরাত পালন করা হয় না।

শিয়া মাজহাবের অনুসারীরা মনে করে, ১৪ শাবানের দিনগত রাত ১২ ইমামের শেষ ইমাম হজরত ইমাম মাহদির জন্মদিন। তাই শিয়ারা এদিন আনন্দ উল্লাস করে হালুয়া রুটি ও আতশবাজী পোড়ায়। আর ইরান, ইরাকের শিয়াদের সেই ধারণাই উপমহাদেশে প্রচলন হয়েছে।

এই সম্পর্কে মাওলানা ফরীদ উদ্দিন মাসঊদ বলেন, এটি অস্বভাবিক না। তবে আমি অস্বীকার করি না, আবার স্বীকারও করি না। শিয়ারা যদি ১২ ইমামের শেষ ইমামের জন্মদিন হিসেবে পালন করে করতে পারে। এটি আমাদের এখানে হয়তো অনেকেই জানেই না। আমাদের এখানে হালুয়া রুটির প্রচলন অনেকটা সামাজিক আচার অনুষ্ঠানের মতোই পালন করা হয়। যদিও এটি হাদিসে নেই এবং ইসলাম তা সমর্থন করে না।

উপমহাদেশের প্রখ্যাত আলেমে দিন আল্লামা আশরাফ আলি থানবি (রহ.) বলেন, অধিকাংশ তাফসিরকারকই ‘লাইলাতুম মুবারাকাহ’কে লাইলাতুল কদর বলে তাফসির করেছেন এবং এই সম্বন্ধে যথেষ্ট হাদিসও রয়েছে। আর কেউ কেউ ‘লাইলাতুম মুবারাকাহ’র তাফসির করেছেন শবে বরাত। যেহেতু শবে বরাতে কুরআন নাজিল হয়েছে বলে কোনো রেওয়ায়াত নেই এবং শবে কদরে নাজিল হয়েছে বলে আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে, সেহেতু শবে বরাত বলে লাইলাতুম মুবারাকাহ’র তাফসির করা শুদ্ধ নয় বলে মনে হয়।

ইবনে মাজাহর ১৩৮৮ নম্বর হাদিসে উল্লেখ করা হয়েছে, রাসুল (সা.) বলেছেন, যখন মধ্য শাবানের রজনি আসে, তখন তোমরা রাতে দণ্ডায়মান থাকো এবং দিবসে সিয়াম পালন করো। কারণ, এদিন সূর্যাস্তের পর মহান আল্লাহ দুনিয়ার আকাশে অবতরণ করেন এবং বলেন, কোনো ক্ষমা প্রার্থনাকারী আছে কি? আমি তাকে ক্ষমা করে দেব। কোনো রিজিক তালাশকারী আছে কি? আমি তাকে রিজিক প্রদান করব। কোনো দুর্দশাগ্রস্ত ব্যক্তি আছে কি? আমি তাকে মুক্ত করব। এভাবে সুবহে সাদিক উদয় পর্যন্ত চলতে থাকে। হাদিসের ইমামদের মত অনুযায়ী, এটি অত্যন্ত দুর্বল হাদিস।

কিন্তু বুখারি ও মুসলিম শরিফে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন যে আমাদের প্রতিপালক প্রতি রাতের শেষ এক-তৃতীয়াংশ বাকি থাকতে দুনিয়ার আকাশে অবতরণ করে বলেন, আমাকে ডাকার কেউ আছে কি? আমি তার ডাকে সাড়া দেব। আমার কাছে চাওয়ার কেউ আছে কি? আমি তাকে তা প্রদান করব। আমার কাছে ক্ষমা চাওয়ার কেউ আছে কি? আমি তাকে ক্ষমা করব।

বুখারি ও মুসলিমের এই হাদিস দ্বারা বোঝা যাচ্ছে যে, মুমিনের প্রতি রাতই ফজিলতপূর্ণ।

এমকে/কে

মন্তব্য করুন

daraz
  • ধর্ম এর পাঠক প্রিয়
X
Fresh