• ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
logo

এক লাখ ছেলে-মেয়েকে আমার গল্প শোনাতে চাই: আসমা

কামরুজ্জামান হেলাল যুক্তরাষ্ট্র

  ০৬ মার্চ ২০২০, ১০:৩৭
কাজী আসমা আজমেরি

গত দশ বছর ধরে তিনি বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের সংস্কৃতি, প্রকৃতি, দেশের মানুষ সম্পর্কে জানাচ্ছেন। ১১৫তম দেশ গ্রিসে লাল-সবুজের পতাকা উড়িয়ে কিছু দিন আগে দেশে ফিরেছেন কাজী আসমা আজমেরি।

এই নারী বিশ্বপর্যটকের লক্ষ্য চলতি বছরের ২৫ ডিসেম্বরের মধ্যে এক লাখ ছেলে-মেয়েকে তার গল্প শোনাবেন।

তার সেই পরিকল্পনার কথা বলেছেন আরটিভি অনলাইনের সঙ্গে। সাক্ষাতকার নিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্র প্রতিনিধি কামরুজ্জামান হেলাল।

কাজী আসমা আজমেরি বলেন, আমি বাংলাদেশের পাসপোর্ট নিয়েই পৃথিবীর সব দেশে আমার পায়ের চিহ্ন রাখতে চাই।

২০১০ সালে ভিয়েতনাম গিয়েছিলাম ইচ্ছে ছিল সেখান থেকে কম্বোডিয়া যাবো। রিটার্ন টিকিট করি নাই এবং বাংলাদেশের পাসপোর্ট দেখে আমাকে সেই দেশের ইমিগ্রেশনের লোকেরা অনুমতি দেননি। সেদেশের ইমিগ্রেশন আমাকে ২৩ ঘণ্টা জেলে বন্দি করে রেখেছিল।

সেদিন আমি খুব কান্নাকাটি করেছিলাম। ওই ২৩ ঘণ্টা জেলে থাকার সময় আমি আমার নিজের সাথে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম যে, আমাকে এমন কিছু করতে হবে যাতে বাইরের দেশের মানুষগুলো বাংলাদেশের পাসপোর্টকে সম্মানের চোখে দেখবে, আমার মতো কাউকে হয়রানি করবে না। সেই চিন্তা থেকেই বাংলাদেশি পাসপোর্ট নিয়ে বিশ্বভ্রমণের চিন্তা মাথায় আসে।

আসমা বলেন, ছোটবেলা থেকেই আমি খুব দুরন্ত ছিলাম। ঘুরে বেড়ানোর স্বপ্ন ছিল আমার। ছোটবেলা স্কুল জীবন কেটেছে খুলনাতে এর পর ঢাকার নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিবিএ করেছি।

২০০৭ সালে প্রথম দেশ হিসেবে থাইল্যান্ড যাত্রা করি আর ২০১৮ সালে তুর্কমেনিস্তানের মাটিতে পা দিয়ে শততম দেশ সফরের আশা পূরণ করে রেকর্ড সৃষ্টি করি।

আসমা আজমেরি বলেন, প্রথম দিকে ভ্রমণটা ছিলো শখের তবে এখন অনুভব করি ভ্রমণের মাধ্যমে নিজ দেশকে বিশ্বের বুকে তুলে ধরতে পারব। এখানেই আমার আনন্দ।

কাজী আজমেরি বলেন, আমার ইচ্ছে ছিল বাংলাদেশি পাসপোর্ট নিয়ে ১০০টি দেশ ভ্রমণ করব, সেই ১০০টি দেশ ভ্রমণ করার পর আবার মনে হলো আমার মানুষের জন্য কিছু করা উচিত। যেটা সবসময়ই আমার ছোটবেলা থেকে একটি তাগিদ অনুভব করতাম। সেখান থেকে আবার ইচ্ছে হলো একটি সমাজ পরিবর্তন করার জন্য। ১০ থেকে ১৯ বছরের শিশুদের নিয়ে কাজ করছি।

তিনি বলেন, সমাজের এই শিশুদের যদি আমি নতুন কিছু শেখাতে পারি এবং পরিবর্তন করতে পারি তাহলে আমাদের সমাজে পরিবর্তন আসবে। সেই চিন্তা মাথায় রেখে আমি ২০১৮ সাল থেকে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে চেঞ্জ মেকার এবং মোটিভেটর স্পিকার হিসেবে কাজ করে যাচ্ছি। আমার লক্ষ্য ২৫ ডিসেম্বর ২০২০ এর ভেতর এক লাখ ছেলে-মেয়েকে আমার গল্প শোনাবো এবং আমার গল্পের মাধ্যমে তাদের জীবনকে পরিবর্তন এবং মোটিভেটেড করার চেষ্টা করবো।

আসমা বলেন, আমি বিশ্বাস করি, আজকের শিশুরাই আগামী দিনের বাংলাদেশকে তাদের নতুন চিন্তা ভাবনা দিয়ে পরিবর্তন আনতে পারবে। আর তাদেরকে সুষ্ঠু শিক্ষা দেওয়ার দায়িত্ব সরকার এবং আমাদের সকলের।

বাংলাদেশি নারী বিশ্বপর্যটক আসমা আজমেরি বলেন, আমার মনে হয় আমি ১৭ কোটি মানুষের চোখ দিয়ে পৃথিবীকে দেখি, এখন বিদেশে হাঁটি তখন আমি একজন ১৭ কোটি মানুষের প্রতিনিধিত্ব করি, নিজের Responsibility বেড়ে যায়, কারন অন্য দেশের মানুষ একজনকে দিয়ে সেই দেশ কিংবা জনগোষ্ঠীকে বিচার করে।

তিনি বলেন, আমি অনেক দেশে গিয়েছি যেখানে বাংলাদেশকে চিনে না, ইন্ডিয়ার মানুষ মনে করে তখন তাদের কে বলতে হয় আমি স্বাধীন বংলাদেশ এর মেয়ে আমাদের ও লাল সবুজের একটি পতাকা আছে ! আর ইন্ডিয়া আমার পার্শ্ববরতী দেশ।

ভ্রমণের খরচ প্রসঙ্গে তিনি জানান, এ জন্য পড়াশোনার পাশাপাশি চাকরি করতে হয় তাকে। তিনি ২০১২ সালে নিউজিল্যান্ডে ছিলেন, তখন সেখানেও চাকরি করে ভ্রমণের টাকা জমিয়েছেন। 'দুই বছর চাকরি করেন আর ছয় মাস ঘুরেন।

ভ্রমণ যেন তার জীবনের একটি সংগ্রাম। তিনি প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করেছেন বিভিন্ন প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে কখনো বা সামাজিকভাবে কখনো বা পরিবারের দিক থেকে অথবা কখনো বা অর্থনৈতিক কখনো বা ভিসার দিক থেকে।

মাঝে মাঝে তার দিন শুরু হয় নতুন স্বপ্ন নিয়ে ।ভিসার জন্য দৌড়াতে হয় অ্যাম্বাসি থেকে অন্য অ্যাম্বাসিতে । তিনি আর দশটা বিদেশিদের মতো না। ইচ্ছা করলেই অনেক জায়গায় যেতে পারেন না। যেখানে সুইডিশ পাসপোর্টে ১৭৯টি দেশ ভ্রমণ করা যায় সেখানে বাংলাদেশি পাসপোর্টে ২৬টি দেশ ভ্রমণ করা যায়। তারপরও তিনি কখনো থেমে থাকেননি। সংগ্রাম করেছেন অজানাকে দেখার উদ্দেশ্যে এবং সংগ্রাম করেছেন নিজের স্বাধীনতার জন্য একজন নারীর স্বাধীনতার জন্য।

বিশ্ব ভ্রমণে আনন্দময় ঘটনার পাশাপাশি আসমা আজমেরী নিরানন্দময় ঘটনারও সম্মুখীন হয়েছেন অনেকবার।

তিনি বলেন, আমি মনে করি ট্রাভেলিং ইজ ফান ওয়ে টু লার্ন ট্রাভেলিং ম্যাক ইউ মোর ওয়াইজার এন্ড এক্সপেক্টেবল এভরিথিং ভ্রমণের মাধ্যমে পৃথিবীর সৌন্দর্য দেখে যে কোনো মানুষের মন বিশাল আকাশের মত বড় হয় এবং মানুষকে অনেক উদার করে। হিংসার মত সংকীর্ণতা দূর করবে। ভ্রমণকারী পারে পৃথিবীতে পরিবর্তন আনতে।

বিশ্ব নারী দিবসে সবাই কে অনেক অনেক ভালবাসা ও শুভেচ্ছা ।

এমকে

মন্তব্য করুন

daraz
  • প্রবাস এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
তিন মাসে ১৪৩ রোহিঙ্গার হাতে বাংলাদেশের পাসপোর্ট, গ্রেপ্তার ২৩
শেখ হাসিনাকে সফরের আমন্ত্রণ ভিয়েতনামের
X
Fresh