• ঢাকা বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১
logo

জাতিসংঘ সদরদপ্তরে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালিত

আব্দুল হামিদ, নিউইয়র্ক প্রতিনিধি

  ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ১৩:৫৩

জাতিসংঘ সদরদপ্তরে যথাযোগ্য মর্যাদায় চতুর্থবারের মতো আন্তর্জাতিক আবহে পালন করা হলো আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। দিবসটিতে ভাষার শক্তিকে কাজে লাগিয়ে সংঘাত, অসহিষ্ণুতা ও সামাজিক উদ্বেগ মোকাবিলা করার আহ্বান জানালো আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। বাংলাদেশ, অস্ট্রেলিয়া, ক্যামেরুন, মেক্সিকো, ত্রিনিদাদ ও টোব্যাকো মিশন এবং জাতিসংঘ সচিবালয় ও ইউনেস্কো নিউইয়র্ক অফিসের যৌথ উদ্যোগে স্থানীয় সময় বিকেল ৪টায় জাতিসংঘ সদরদপ্তরে অনুষ্ঠানটির আয়োজন করা হয়। এতে সার্বিক তত্ত্বাবধানের দায়িত্বে ছিল জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন।

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সভাপতি অনুষ্ঠানটিতে অংশগ্রহণ করেন। জাতিসংঘ সদস্য দেশসমূহের উচ্চ পর্যায়ের কূটনীতিক, জাতিসংঘের কর্মকর্তা, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব, সমাজকর্মীসহ উপস্থিতিতে আয়োজিত এ অনুষ্ঠান ছিল কানায় কানায় পূর্ণ। অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত ভাষণ দেন জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা।

আলোচনা পর্বে অংশ নেন জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সভাপতি তিজানি মোহাম্মাদ বান্দে, ত্রিনিদাদ ও টোব্যাকোর স্থায়ী প্রতিনিধি পেনিলোপি আলথিয়া বেকলেস, অস্ট্রেলিয়ার চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স টিগান ব্রিঙ্ক, ক্যামেরুনের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স জাকাইরি সারজে রাউল নাইয়ানিদ, মেক্সিকোর চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স হুয়ান স্যানডোভাল মেনডিওলিয়া, জাতিসংঘ মহাসচিবের পক্ষে জাতিসংঘের বৈশ্বিক যোগাযোগ বিভাগের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল মেলিছা ফ্লেমিং, জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ ও কনফারেন্স ব্যবস্থাপনা বিভাগের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেলের পক্ষে পরিচালক সিসিলিয়া এলিজালদে। এছাড়া ইউনেস্কোর মহাপরিচালকের পক্ষে নিউইয়র্কস্থ ইউনেস্কো অফিসের পরিচালক মারিয়ে পাওলি রোউডিল মহাপরিচালকের বাণী পড়ে শোনান। বরাবরের মতোই নিউইয়র্ক সিটি মেয়র বিল ডি ব্লাসিও এ অনুষ্ঠানটিতে বাণী প্রদান করেন যা পাঠ করা হয়।

স্বাগত বক্তব্যে রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা বলেন, বাংলাদেশই বিশ্বের একমাত্র দেশ যারা মাতৃভাষার জন্য প্রাণ দিয়েছে। ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষা বাংলা রক্ষার জন্য যে সকল ভাষা শহীদগণ প্রাণ দিয়েছিলেন তাদের প্রতি সত্যিকারের সম্মান দেখানো হয়েছে ইউনেস্কো কর্তৃক ১৯৯৯ সালে একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার মাধ্যমে। স্বীকৃতি দানের এই পদক্ষেপে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অগ্রণী ভূমিকা ও বিচক্ষণ নেতৃত্ব নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবি রাখে। স্থায়ী প্রতিনিধি জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, জাতির পিতা ১৯৫২ ভাষা আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন আর এই ভাষা আন্দোলনের পথ ধরেই ১৯৭১ সালে আমরা অর্জন করেছি মহান স্বাধীনতা।

এবছর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের প্রতিপাদ্য ভাষার কোনও সীমানা নেই উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত ফাতিমা বলেন, ভাষার শক্তি সীমান্ত অতিক্রম করে যায় এবং ভিন্ন ভিন্ন মানুষ ও তাদের সংস্কৃতিসমূহকে সংযুক্ত করে। লুপ্ত প্রায় ভাষা সংস্কৃতিসহ বিশ্বের সকল ভাষা ও সংস্কৃতির সুরক্ষার জন্য তিনি সদস্য রাষ্ট্রসহ সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের প্রতি আহ্বান জানান।

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সভাপতি তিজানি মোহাম্মাদ বান্দে বলেন, উল্লেখযোগ্য হারে যখন বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের ভাষাসমূহ হারিয়ে যাচ্ছে ঠিক তখন ভাষা বৈচিত্র্য ও বহুপক্ষবাদ টেকসই উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য মর্মে উল্লেখ করে ২০১৮ সাল থেকে তা এগিয়ে নিতে জাতিসংঘ নেতৃত্বশীল ভূমিকা রেখে যাচ্ছে। মাতৃভাষাকে সমুন্নত রাখতে বিশ্ব সম্প্রদায়কে অবশ্যই দ্বিগুণ প্রচেষ্টা গ্রহণ করতে হবে।

অন্যান্য আলোচকগণও ভাষা ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য এবং বিশ্বের মানুষের মাতৃভাষায় কথা বলার ন্যায় সঙ্গত অধিকার সমুন্নত রাখার প্রতি জোর দেন। মাতৃভাষাকে কাজে লাগিয়ে সমঝোতা, সহিষ্ণুতা, সংলাপ ও সামাজিক অন্তর্ভুক্তিকে এগিয়ে নেওয়ার মাধ্যমে অ্যাজেন্ডা ২০৩০ অর্জনের উপরও জোর দেন আলোচকগণ।

অনুষ্ঠানের শুরুতে ভাষা শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। আলোচনা পর্ব শেষে এবং সাংস্কৃতিক পর্বের আগে ২১ ফেব্রুয়ারি ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের উপর একটি প্রামাণ্য ভিডিও চিত্র পরিবেশন করা হয়।

বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক পর্বের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্রের শ্রী চিন্ময় গ্রুপ ও যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশি কমিউনিটির যুব শিল্পীগণ কালজয়ী সংগীত ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ পরিবেশন করেন। এরপর ইউএন চেম্বার মিউজিক সোসাইটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গীতাঞ্জলী থেকে নেয়া ইংরেজি কবিতা ‘স্ট্রিম অব লাইফ’সহ বাংলা, নবজা, ক্রিয়ল, সংস্কৃত এবং সোহেলী ভাষায় সংগীত ও যন্ত্র সংগীত এর সুর-মূর্ছনার মাধ্যমে উপস্থিত সুধীজনকে মুগ্ধ করে।

অনুষ্ঠানটিতে নিউইয়র্ক প্রবাসী বাংলাদেশের বিশিষ্ট নাগরিক, মুক্তিযোদ্ধা, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগসহ আওয়ামী পরিবার, জাতিসংঘে কর্মরত বাংলাদেশী কর্মকর্তাগণ এবং অন্যান্য সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বগণ অংশগ্রহণ করেন।

মন্তব্য করুন

daraz
  • প্রবাস এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
মালয়েশিয়ায় শোষণের শিকার হচ্ছেন বাংলাদেশি শ্রমিকরা
জাতিসংঘে ফিলিস্তিনের সদস্যপদ আটকে দিল যুক্তরাষ্ট্র
মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা, জাতিসংঘের সতর্কবার্তা
মুখ খুলল রাশিয়া
X
Fresh