টেকসই উত্তরণ ও এজেন্ডা ২০৩০ বাস্তবায়নের অর্থসংস্থানে প্রবেশাধিকার অবারিত ও সহজ করার আহ্বান
উন্নয়নশীল দেশ অভিমুখে উত্তরণের পথে থাকা দেশগুলোর টেকসই উত্তরণ ও এজেন্ডা ২০৩০ বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থসংস্থানে প্রবেশাধিকার অবারিত ও সহজ করার ব্যবস্থা গ্রহণে জাতিসংঘের প্রতি আহ্বান জানালেন বাংলাদেশের অর্থ সচিব আব্দুর রউফ তালুকদার। জাতিসংঘ সদরদপ্তরে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণকালীন অর্থসংস্থানে প্রবেশাধিকার বৃদ্ধি বিষয়ক বিশেষজ্ঞ দলের সভায় এ কথা বলেন তিনি। জাতিসংঘের স্বল্পোন্নত দেশ, ভূ-বেষ্টিত স্বল্পোন্নত দেশ ও উন্নয়নশীল ক্ষুদ্র দ্বীপরাষ্ট্রসমূহের উচ্চ প্রতিনিধির কার্যালয় এবং উন্নয়ন নীতি কমিটি (সিডিপি) আয়োজিত দুই দিনব্যাপী এই সভার মঙ্গলবার ছিল শেষ দিন।
সভাটিতে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেন অর্থ সচিব আব্দুর রউফ তালুকদার। রূপকল্প ২০২১ বাস্তবায়নের মাধ্যমে মধ্যম আয়ের দেশ এবং রূপকল্প ২০৪১ বাস্তবায়নের মাধ্যমে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ অভিমুখে বাংলাদেশের অদম্য অগ্রযাত্রার নানা তথ্য-চিত্র তুলে ধরেন তিনি। উঠে আসে প্রথমবারের মতো এলডিসি থেকে বিপুল মার্জিন নিয়ে উত্তরণের যোগ্যতা অর্জন; দারিদ্র্য ও অতি-দারিদ্র্য হার হ্রাস, গড় আয়ু বৃদ্ধি, শিশু ও মাতৃমৃত্যু হার হ্রাস, বয়স্ক শিক্ষাসহ শিক্ষার হার বৃদ্ধি, খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি, জিডিপি ও মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি; জিডিপিতে শিল্প, কৃষি ও সেবা খাতের অবদান, ব্যষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা; বাজেটের মূলভাগে জলবায়ু পরিবর্তন রোধ বিষয়ক কর্মসূচি অন্তর্ভুক্তি, দেশব্যাপী সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি ও দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচি বাস্তবায়ন, ১০০ অর্থনৈতিক অঞ্চল ও ২৮টি আইটি পার্ক স্থাপনের মাধ্যমে ১০ মিলিয়ন কর্মসংস্থান সৃষ্টি, লিঙ্গ সমতা অর্জন, নারী শিক্ষা ও নারীর ক্ষমতায়ন এবং ডেল্টা পরিকল্পনা ২১০০ এর উন্নয়ন এজেন্ডার মতো বিষয়গুলো। বাংলাদেশ বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য যে উদার ও অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করেছে তাও তুলে ধরেন তিনি।
অর্থ সচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশের সফলতার সঙ্গে এমডিজি বাস্তবায়ন করেছে, আর এসডিজি বাস্তবায়নেও শেখ হাসিনা সরকার দৃঢ় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। টেকসই উত্তরণ নিশ্চিত ও সফলভাবে এসডিজি বাস্তবায়ন- উভয় ক্ষেত্রে বাংলাদেশ যে সকল চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে তা উল্লেখ করে তিনি। জলবায়ু পরিবর্তন ও সাম্প্রতিক রোহিঙ্গা সমস্যাকে বাংলাদেশের উন্নয়নের জন্য একটি বড় হুমকি বলে মন্তব্য করেন অর্থ সচিব। বাংলাদেশের উন্নয়ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বার্ষিক অতিরিক্ত ৬৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্থসংস্থান প্রয়োজন মর্মে উল্লেখ করেন অর্থ সচিব। উত্তরণকালীন সময়ে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা পদক্ষেপসমূহ (আইএসএমএস), প্রাতিষ্ঠানিক উন্নয়ন সহযোগিতা (ওডিএ) এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সহযোগিতার পূর্ণ সমর্থন অব্যাহত রাখার জন্য উন্নয়ন সহযোগী দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থাসমূহের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
সভাটিতে আরও অংশগ্রহণ করেন জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন। প্রদত্ত বক্তব্যে তিনি উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সক্ষমতা, অভিজ্ঞতা ও পরিকল্পনা বিভিন্ন বিষয় সংক্ষেপে তুলে ধরেন। রোহিঙ্গা ইস্যুর কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এর ফলে শুধু আর্থিক ক্ষতিই নয়, সার্বিকভাবে নিরাপত্তা, পরিবেশ ও সামাজিক বিন্যাসে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।
এই বিশেষজ্ঞ পর্যায়ের সভায় ‘জলবায়ু অর্থায়নে অধিক প্রবেশাধিকার’ শীর্ষক প্যানেল আলোচনার আওতায় বাংলাদেশের পাশাপাশি ভুটান ও সলোমন আইল্যান্ড উত্তরণকালীন অর্থসংস্থান বিষয়ক কেস স্টাডি তুলে ধরেন। প্যানেল আলোচনার মডারেটর ছিলেন বাংলাদেশের সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ এর পরিচালক ড. দেবপ্রিয় ভট্টচার্য।
এদিকে সোমবার সভাটির উদ্বোধনী পর্বে বক্তব্য রাখেন জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক বিষয়াবলী বিভাগের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল লিউ জেনমিন, জাতিসংঘে নিযুক্ত নরওয়ের রাষ্ট্রদূত সুসান এক্কি, জাতিসংঘের স্বল্পোন্নত দেশ, ভূ-বেষ্টিত স্বল্পোন্নত দেশ ও উন্নয়নশীল ক্ষুদ্র দ্বীপরাষ্ট্রসমূহের উচ্চ প্রতিনিধির কার্যালয়ের পরিচালক হেইদি ফক্স এবং জাতিসংঘ মহাসচিবের টেকসই উন্নয়ন ইউনিটের পরিচালক মিশেল গাইলেজ্- ম্যাকডোননোফ। উন্নয়ন দেশ অভিমুখে উত্তরণ বিষয়ক খসড়া রিপোর্ট উপস্থাপন করেন সিডিপি’র সেক্রেটারি রোনান্ড মোলেরাস ও ফাইনান্সিং ফর সাসটেইন্যাবল ডেভেলপমেন্ট অফিসের চিফ পলিসি অ্যানালিস্ট সারি স্পাইজেল। সভাটির প্রথম দিনে ‘ওডিএ প্রেক্ষিত’ এবং ‘বহুপাক্ষিক উন্নয়ন ব্যাংকসমূহের ভূমিকা’ শীর্ষক আরও দুটি প্যানেল আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। এ সকল আলোচনার বিভিন্ন পর্যায়ে ও প্রশ্নোত্তর পর্বে আলোচক ও প্রশ্নকারীগণ বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রাকে অনুকরণীয় বলে অভিমত ব্যক্ত করেন। সভাটিতে অন্যান্যদের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ মিশনের ইকোনমিক মিনিস্টার ইকবাল আব্দুল্লাহ হারুন।
এ
মন্তব্য করুন