মালয়েশিয়ায় অবৈধদের জরিমানা দিয়ে দেশে ফেরার সুযোগ
মালয়েশিয়ায় কর্মরত অবৈধ অভিবাসীদের জরিমানা দিয়ে নিজ নিজ দেশে ফেরার সুযোগ দিয়েছে দেশটির সরকার।
বুধবার (৫ আগস্ট) এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন মালয়েশিয়ার ইমিগ্রেশনের ডিজি খায়রুল জায়মি দাউদ।
খায়রুল জায়মি দাউদ বলেন, অভিবাসীদের মধ্যে যাদের ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে তারা জরিমানা দিয়ে নিজ নিজ দেশে ফিরে যেতে পারবেন। যারা ১ বছর পর্যন্ত অবৈধ তারা ১ হাজার রিঙ্গিত আর ১ বছরের বেশি অবৈধ হলে ৩ হাজার রিঙ্গিত জরিমানা দিয়ে ইমিগ্রেশন থেকে স্পেশাল পাস সংগ্রহ করতে হবে।
তবে লকডাউনের মধ্যে পর্যটক ভিসায় এসে যাদের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে তারা সরাসরি বিমান টিকিট কেটে দেশে যেতে পারবেন বলে মন্তব্য করেন দেশটির সিনিয়র মন্ত্রী সেরি ঈসমাইল সাবরি ইয়াকুব।
এসএস
মন্তব্য করুন
মালয়েশিয়ায় কাজ না পেয়ে প্রবাসীর মৃত্যু
গেলো বছরের ৫ আগস্ট পেত্রা জেহরা বারহাদ নামে একটি কন্সট্রাকশান কোম্পানিতে কাজ নিয়ে মালয়েশিয়ায় আসেন ৭১ জন বাংলাদেশী। স্বপ্নের মালয়েশিয়ায় আসার পরপরই স্বপ্ন ভঙ্গ হয় তাদের। প্রায় পাঁচ মাস কাজ না পেয়ে ক্ষুধা আর চিকিৎসার অভাবে মানবেতর জীবন যাপন করছে এসব প্রবাসীরা। কষ্টের অভিযোগ তুলে ধরতে গেলেই শিকার হতে হয় নির্মম নির্যাতনের।
এদেরই একজন পাবনা প্রবাসী মো. শফিকুল ইসলাম (৩৩)। শুক্রবার সকাল সাড়ে নয়টায় মারা যান তিনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রত্যক্ষদর্শী বলছেন, সে অসুস্থ ছিলো, চিকিৎসা হয়নি, প্রতিদিনের মতো রাতে ঘুমাতে গেলেও আর ঘুম থেকে ওঠেনি।
সেখানে অবস্থানরত বাকি বাংলাদেশীদের অবস্থাও ভালো নয়। ভয় আর আতঙ্কে সময় কাটে তাদের। নিয়োগকর্তার নিয়োগকৃত লোকের দ্বারা নিয়মিতই নির্যাতনের শিকার হতে হয় এসব প্রবাসীদের। ৫ অক্টোবর মালয়েশিয়ায় আসলেও এখনও মেলেনি ভিসা কিংবা কাজ।
কাজ না পাওয়ার অভিযোগ নিয়ে মালয়েশিয়াস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনেও যান এদের মধ্যে বেশ কয়েকজন। আশ্বাস মিললেও চূড়ান্ত কোন সুরাহা করতে পারিনি হাইকমিশন।
এ বিষয়ে মালয়েশিয়াস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনের লেবার কাউন্সিলর, সৈয়দ শরিফুল ইসলাম বলেন, পেত্রা জেহরা বারহাদ কোম্পানির বিরুদ্ধে অভিযোগ অনেক, তাদের বিরুদ্ধে আমরা ইতোমধ্যে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। ভবিষ্যতে এই কোম্পানি যাতে নতুন কোন কর্মী না আনতে পারে সে বিষয়ে পদক্ষেপ নিয়েছে হাইকমিশন। এখনও কাজ না পাওয়া কর্মীদের সমস্যা সমাধানে হাইকমিশন কাজ করছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
নিহত শফিকুল ইসলামে’র মরদেহ কোম্পানির মাধ্যমে দেশে পাঠাতে কাজ করছে হাইকমিশন। একই সঙ্গে বৈধভাবে আসায় তার পরিবার ক্ষতিপূরণ পাবে বলেও জানান এ কর্মকর্তা।
এদিকে, এ বিষয়ে কথা হয় পেত্রা জেহরা বারহাদ কোম্পানি’তে কর্মরত ইফতেকার নামে এক বাংলাদেশীর সঙ্গে। তিনি বলেন, ভুক্তভোগীদের অভিযোগ সঠিক নয়, তাদের গায়ে হাত তোলা হয়নি, কোম্পানি থাকা খাওয়ারও সু-ব্যবস্থা করেছে। ট্যাক্স জটিলতার কারনে পাঁচ মাস ধরে তাদের বসিয়ে রাখতে হয়েছে। তবে ৪/৫ মার্চের মধ্যে সমস্যা সমাধান হয়ে সবাই ভিসা পাবে বলেও জানান তিনি।
ইফতেখার আরো জানান, মারা যাওয়ার খবর পাওয়ার পর শফিকুল ইসলামকে সেপাং হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করে।
কলিং ভিসায় এসে কাজ না পাওয়া কর্মীদের অনেকেই মানবেতর জীবন যাপন করছে। মালয়েশিয়ার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নিয়মিতই এমন অভিযোগ আসছে হাইকমিশনে। এ বিষয়ে মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত হাইকমিশনার সম্প্রতি সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, যারা এমন কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত তাদের কোন ছাড় নেই। অভিযোগ রয়েছে এমন কোম্পানিকে পরবর্তীতে কর্মী নিয়োগের অনুমোদন দিতে চিন্তা করবে হাইকমিশন।
বাংলাদেশিকে ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা এফবিআইয়ের
যুক্তরাষ্ট্রে রুহেল চৌধুরী নামে এক বাংলাদেশিকে ধরিয়ে দিতে ২০ হাজার ডলার পুরস্কার ঘোষণা করেছে দেশটির কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই)। তার বিরুদ্ধে নিউইয়র্কে দুজনকে অপহরণ, নির্যাতন এবং মুক্তিপণের জন্য হুমকি দেওয়ার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে।
এ বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে পোস্ট করেছে এফবিআই। পরে বিষয়টি নিয়ে নিউইয়র্ক ডেইলি নিউজের প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, গত বছর কুইন্সের রাস্তা থেকে দুজনকে অপহরণের ঘটনায় জড়িত সাতজন সন্দেহভাজনের মধ্যে ৩৪ বছর বয়সী রুহেল চৌধুরী হলেন শেষ ব্যক্তি। তাকে ধরিয়ে দিতে গত ১ মার্চ এফবিআই একটি পোস্টারও প্রকাশ করে।
ফেডারেল প্রসিকিউটরদের অভিযোগ, গত বছরের ২৭ মার্চ জ্যামাইকার হিলসাইড এভিনিউয়ের কাছে ১৮১তম সেন্ট থেকে অপহরণকারীরা এক ব্যক্তিকে একটি হোন্ডা এসইউভিতে জোর করে তুলে নেন। পরে গাড়ির ভেতরেই তাকে মারধর করা হয়। পরে অপহরকারী দলটির সঙ্গে থাকা রুহেল চৌধুরী সারারাত ভিকটিমকে মারধর করার পাশাপাশি হুমকিও দেন।
এ ঘটনায় অপহরকারী চক্রের সদস্য আবু চৌধুরী এবং তার স্ত্রী ইফফাত লুবনাসহ আরও ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তবে রুহেল চৌধুরী এখনও অধরা রয়ে গেছেন। তাদের বিরুদ্ধে আরও বেশকয়েকটি অপহরণ, অপহরণের পর মুক্তিপণ দাবি এবং নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে।
এফবিআইয়ের নোটিশে রুহেল চৌধুরীকে বাংলাদেশের বাসিন্দা বলে উল্লেখ করে কুইন্সের হলিস, কুইন্স ভিলেজ এবং জ্যামাইকা এলাকায় তার যাতায়াত রয়েছে বলে জানানো হয়। তার উচ্চতা ৫ ফুট ৭ ইঞ্চি, ওজন ১৫০ পাউন্ড এবং চোখের রঙ বাদামী বলে উল্লেখ করা হয়েছে। কেউ তাকে দেখলে সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় এফবিআই অফিস বা নিকটস্থ আমেরিকান দূতাবাস বা কনস্যুলেটে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।
প্যারিসে ভাষা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ‘পাঠশালা’র যাত্রা
প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে ফরাসি ভাষা শিক্ষাদানের প্রত্যয় জানিয়ে ‘পাঠশালা’র যাত্রা শুরু হয়েছে।
শনিবার (১মার্চ) আনুষ্ঠানিকভাবে ফিতা ও কেক কেটে পাঠশালার উদ্বোধন করা হয়।
প্রতিষ্ঠানের পৃষ্টপোষক আব্দুল্লাহ আল হাসানের সভাপতিত্বে ও হাসান আহমদের পরিচালনায় উদ্বোধনী সভার শুরুতে কোরআন তেলাওয়াত করেন রায়হান উদ্দিন।
প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান উবায়দুল্লাহ কয়েছ জানান, পাঠশালাটি ফ্রান্সে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের কাছে আস্থার প্রতিষ্ঠান হবে।
এ ছাড়া অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ এসোসিয়েশনের সভাপতি সালেহ আহমদ চৌধুরী, ফ্রান্স আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সুব্রত ভট্রাচার্য শুভ, বিডি ফার্ণিচারের সত্বাধিকারী মিয়া মাসুদ, বাংলা অটো ইকুলের পরিচালক হোসেন সালাম রহমান, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ধর্ম বিষয়ক সদস্য আলী হোসেন, কবি ও ছড়াকার লুকমান আহমদ আপনসহ অনেকেই উপস্থিত ছিলেন।
এ সময় বক্তারা বলেন, ফ্রান্সে বসবাস করতে হলে ফ্রেঞ্চ ভাষা শিক্ষার বিকল্প কিছুই নেই। ফ্রান্সে নিয়মিত হওয়া থেকে শুরু করে জাতীয়তা অর্জন সব ক্ষেত্রেই এখন ফরাসি ভাষা পড়া ও লেখার বাধ্যতামূলক আইন জারি করা হচ্ছে।
মালয়েশিয়ায় ৩ বাংলাদেশি নিহত
মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরের অদূরে কাজাং কেটিএম পুনকাক উতামা জেড হিল ট্র্যাকে ট্রেনের ধাক্কায় তিন বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন।
রোববার (৩ মার্চ) রাতে এ দুর্ঘটনা ঘটে। মালয়েশিয়ার সংবাদমাধ্যম দ্য স্টারের প্রতিবেদনে এ খবর জানানো হয়েছে।
দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে নিহতদের বাংলাদেশি বলা হয়েছে। তবে তাদের বিস্তারিত পরিচয় তাৎক্ষণিকভাবে পাওয়া যায়নি। তিনজনের মরদেহ রেল ট্র্যাকের পাশে পড়েছিল। তাদের বয়স ৩০ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে।
সেলাঙ্গর ফায়ার অ্যান্ড রেসকিউ ডিপার্টমেন্টের (জেপিবিএম) পরিচালক ওয়ান মো. রাজালি ওয়ান ইসমাইল বলেন, খবর পাওয়ার পর দ্রুত কাজাং স্টেশন থেকে একটি উদ্ধারকারী দল ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়। রাত সোয়া ১২টার দিকে তিনজনের মরদেহ উদ্ধার করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
‘ফারাক’ বইটি হতে পারে জীবন রক্ষার হাতিয়ার
কানাডার টরেন্টো শহরের স্থানীয় একটি হোটেলে প্রবাসী লেখক মোস্তফা আকন্দ ও নেসার আহমেদ প্রণীত ফারাক গ্রন্থটির মোড়ক উন্মোচন করেছেন অন্টারিওর প্রভিন্সিয়াল পার্লামেন্টের বিরোধীদলীয় উপনেতা বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত এমপিপি ডলি বেগম।
শনিবার (২ মার্চ) আলোচনা অনুষ্ঠানটির সঞ্চালনা করেন গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব ও কানাডা প্রবাসী আসমা আহমেদ।
ডলি বেগম তার বক্তৃতায় বলেন, টরেন্টোতে বাংলাদেশীদের মধ্যে প্যারিন্টং একটি জটিল সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ‘ফারাক’ বইটির লেখকদের আমি ব্যক্তিগতভাবে চিনি। তারা কমিউনিটির জন্য নীরবে কাজ করে যাচ্ছেন। টরেন্টোতে বাঙালী যুবকদের আত্মহত্যা বিষয়ে তারা গবেষণা করেছেন কয়েক বছর আগে। খুব ভালো কাজ ছিলে সেটা।
তিনি আরও জানান, সম্পূর্ণ বাংলায় লিখিত ফারাক বইটি টরেন্টো বাঙালী কমিউনিটির প্যারেন্টসদের প্যারেন্টিং সমস্যা সমাধানে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে। কমিউনিটির সবাইকে বইটি পড়া উচিত।
ফারাক গ্রন্থটির ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে বাংলাদেশের জনপ্রিয় দৈনিক প্রথম আলোর প্রাক্তন সাংবাদিক ও টরেন্টো ভিত্তিক অনলাইন পত্রিকা নতুন দেশের সম্পাদক শওগাত আলী সাগর বলেন, ফারাক গ্রন্থটি লেখকদ্বয়ের প্যারেন্টিং বিষয়ের ওপর লিখিত একটি গবেষণামূলক গ্রন্থ যেখানে আমাদের প্যারেন্টিং এর চ্যালেঞ্জগুলোকে গল্পের ঢংয়ে সন্নিবেশিত করা হয়েছে। গল্পগুলো সুখপাঠ্য। পড়তে পড়তে মনে হবে আমি এই শহরেরই কোন গল্পের মধ্যে ঢুকে যাচ্ছি আর মানসিক স্বাস্থ্য ও প্যারেন্টিং বিষয়ে শিখছি। এই শিক্ষণটা আমাদের ও আমাদের সন্তানদের মধ্যকার দূরত্ব কমাতে সাহায্য করবে।
টরেন্টো প্রবাসী কবি, গল্পকার ও টরেন্টো ডিসট্রিক্ট স্কুল বোর্ডের স্পেশাল নিডস্ শিশুদের শিক্ষিকা সঙ্গীতা ইয়াসমিন বইটির ওপর আলোচনা করতে গিয়ে বলেন, শুধু সন্তান জন্ম দিলেই বাবা-মা হওয়া যায়না। বাবা-মা হতে গেলেও কিছু দক্ষতা ও প্রশিক্ষণ থাকা দরকার হয়। ‘ফারাক’ অনেকটা গবেষণা-ধর্মী তথ্য সম্বলিত এবং বাস্তব ঘটনার প্রতিচ্ছবি নিয়ে রচিত গ্রন্থ। সেসব ঘটনা বিশ্লেষণ করলেই আমাদের মত হাজারো বাবা-মা অন্তত নিজেদেরকে প্রশ্ন করতে শিখবেন। এই গ্রন্থ পাঠে যদি নিজে থেকেই আমরা কিছু শিক্ষণ নিতে পারি সেটা আমাদের সবার জন্য মঙ্গল। না-ও যদি পারি, তবুও আমরা আমাদের মুদিত চক্ষুকে মুক্ত করতে পারি! সুস্থ থাক জগতের সব সন্তান। সুখি হোক পরিবার। ঘুচে যাক সব দূরত্ব! যেখানে আছে 'ফারাক'।
টরেন্টোর আইনজীবী ব্যারিস্টার জাকির হোসেন বলেন, কোন বই যে এভাবে লেখা যায়, আমি কখনো দেখিনি। বইটি প্যারেন্টিং এর ওপর লিখিত বই। কিন্তু লেখকদ্বয় গল্প বলেছেন আর প্যারেন্টিং শিখিয়েছেন। শেষে প্যারেন্টিংয়ের ওপর একাডেমিক আলোচনাও করেছেন। বইটি পড়া শুরু করলে আপনি শেষ না করে ছাড়তে পারবেন না। কমিউনিটির মানুষদের বইটি পড়া উচিৎ।
টরেন্টোর চিকিৎসক নিলান্জনা দত্ত বলেন, মোস্তফা আকন্দর লেখা আমার খুবই ভালো লাগে। তিনি আমাদের সমাজের সমস্যাগুলোকে এমন সুন্দরভাবে তার লেখা গল্পে তুলে ধরেন যে, মনেই হয়না এটা কোন তথ্যবহুল আলোচনা। আর বইটির সহ-লেখক নেসার আহমেদের প্রফেশনাল লেবেল অনেক উঁচু। ফারাক বইটি সবাইকে পড়ার আহবান করছি।
অন্টারিওর গুয়েলফ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ডক্টর মাহতাব শাওন বলেন, ফারাক নামটাই একটা সার্থক নাম। আপনারা বইটি পড়লেই বুঝতে পারবেন যে কেন এই নামটি রাখা হয়েছে? বইটির পটভূমি আমার জানা। যে গবেষণা লেখকদ্বয়কে বই লিখতে উৎসাহ যুগিয়েছে সেই গবেষণাটির সঙ্গে আমার সম্পৃক্ততা ছিল। কয়েক বছর আগের টরেন্টোর বাঙালী তরুণদের আত্মহত্যার কাড়ন অনুসন্ধানের গবেষণার মুল ফলাফল ছিল মা-বাবার সাথে সন্তানের যোগাযোগের অভাব’ বা প্যারেন্টিং ইস্যু। এ বিষয়টি কখনো আমাদের কমিউনিটিতে এড্রেস করা হয়নি। তিনি সবাইকে বইটির অষ্টম অধ্যায়টি ভালোভাবে পড়ার অনুরোধ করেন।
সমাজসেবা মূলক কাজের উদ্যোক্তা ড্যানিয়েল হাকিম সবাইকে ফারাক বইটি পড়তে অনুরোধ করে বলেন, সময় পরিবর্তনের সাথে সাথে আমাদের প্যারেন্টিং স্টাইল চেঞ্জ হয়নি। বাবা-মা ও সন্তানদের মধ্যে সম্পর্ক এর ফারাক তৈরিতে এটাই ভূমিকা রাখছে। বইটা আমাদের মধ্যে বিদ্যমান সেই দূরত্ব পুরনে সহায়তা করতে পারে।
প্রথম আলোর প্রাক্তন সাংবাদিক ও কানাডা প্রবাসী লেখক সুব্রত নন্দী বলেন, আমরা আগে জানতামই না যে প্যারেন্টিং বলে একটি বিষয় আছে। যাদের ক্ষতি হয়ে গেছে তাদেরতো গেছেই। আর আমাদের যাদের এখনো সুযোগ আছে, তারা যদি গুড প্যারেন্টিং করতে পারি তাহলে আমাদের বাচ্চাদের ক্ষতি হবেনা। আমি মনে করি, সবাইকে বাচ্চাদেরকে সময় দিতে হবে। আমাদেরকে চাপিয়ে দেয়ার মানসিকতা পরিহার করতে হবে।
টরেন্টোর বিশিষ্ট সমাজকর্মী মোস্তফা কামাল বলেন, বাবা মা হিসেবে আমাদের চিন্তার জায়গায় পরিবর্তন আনতে হবে। তারা যেভাবে চায় সে মোতাবেক সহায়তা করতে হবে। তাহলেই দূরত্ব কমবে।
টরেন্টো ভিত্তিক অলাভজন দাতব্য সংস্থা বেঙ্গলী ইনফরমশেন এন্ড এমপ্লয়মেন্ট সার্ভিসের (বিআইইএস) নির্বাহী পরিচালক ইমাম উদ্দিন বলেন, ‘ফারাক’ বইটিতে যে বিষয়গুলো তুলে আনা হয়েছে তার গুরুত্ব অপরিসীম। আমরা যত টাকা পয়সার মালিকই হয়না কেন, বাচ্চারা যদি ঠিকমত বেড়ে না ওঠে তাহলে সব সম্পদ অর্জন বৃথা হয়ে যাবে। নিজের সন্তানদেরকে লালনপালন করতে গিয়ে তিনি কী কী চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছেন, এবং তা তিনি কীভাবে মোকাবেলা করেছেন- তার বিবরণ তুলে ধরেন।
সমাজকর্মী বদিউজ্জামান মুকুল বলেন, ‘এলিফ্যান্ট ইন দ্য রুম’ এখন আমাদের ঘরের মধ্যে হাতি। এটাকে আর গুরুত্বহীনভাবার অবকাশ নেই। সন্তানরা বাবা-মাকে হত্যা করছে। কেন? একটু ভাবুন। যেভাবে সন্তান লালন-পালন করছেন ঠিক আছে তো ? আপনি বাচ্চাদের নিয়ে সমস্যায় থাকলে ‘ফারাক’ বইটি আপনাকে সহায়তা করতে পারে। কারণ বইটির গল্পগুলো খুবই বাস্তব এবং আমার প্রফেশনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।
টরেন্টোর নারী উদ্যোক্তা সাবিনা শারমিন বলেন, ‘ফারাক’ হতে পারে কারো কারো জন্য জীবন রক্ষার হাতিয়ার। আপনি আপনার ঘরের মধ্যে কোন দানবকে বড় করে তুলছেন নাতো? ঢাকার ঔশি মেয়েটি কেন তার বাবামাকে হত্যা করল? মুল কারণ প্যারেন্টিং। তার বাবা-মা তাকে কীভাবে মানুষ করেছেন। তাকে কতটুকু সময় দিয়েছেন? তা নিয়ে কী আমরা ভেবেছি? ফারাক কেন সৃষ্টি হল? অনেক প্রশ্ন। নিজেকে প্রশ্ন করুন।
টরেন্টো ডিসট্রিক্ট স্কুল বোর্ডের শিক্ষক ডঃ ফখরুদ্দীন, লেবানিজ-আমেরিকান কবি ও দার্শনিক কাহলিল জিবরানের একটি কবিতার উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, তোমাদের সন্তানেরা তোমাদের নয়। তারা সময়ের সন্তান। তারা তোমাদের মাধ্যমে পৃথিবীতে এসেছে। তোমরা তোমাদের সন্তানদের নিজের সম্পত্তি মনে করিও না। অর্থাৎ সন্তান হলেই যে সব কিছু তাদের ওপর চাপিয়ে দিতে হবে তাদের মতামতের কোন দাম দেয়া যাবেনা-এটা ঠিক নয়। তারা ছোট হতে পারে কিন্তু তারাও সব বোঝে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
অন্টারিওর নিবন্ধিত সমাজকল্যাণ কর্মী ও উপন্যাসিক জাকারিয়া মুইনুদ্দিন বলেন, আমাদের বাঁচতে হলে জানতে হবে, অনুশীলন করতে হবে। মেন্টাল হেলথ খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। প্যারেন্টিং আমাদের শিখতে হবে। ফারাক প্যারেন্টিং শিখতে সহায়তা করবে নিশ্চয়ই।
বইটির সহ-লেখক নেসার আহমেদ উপস্থিত অতিথিদের প্রশ্নের উত্তরে বলেন, ‘ফারাক’ বইটি সময়োপযোগী বই। বইটি গল্প সমৃদ্ধ হলেও সবগুলো গল্পই সত্য ঘটনার ওপর ভিত্তি করে লেখা। সময়ের সাথে সাথে আমাদের নিজেদের প্যারেন্টিং স্টাইলে পরিবর্তন আনতেই হবে। বইটি আমাদের সেই পরিবর্তন আনতে সহায়কের ভূমিকা পালন করবে।
মোস্তফা আকন্দ বইটির ওপর প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেন, আমরা সবাই আমাদের বাচ্চাদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ চাই। কিন্তু নতুন দেশ নতুন সময়ের চাহিদারে সাথে তাল মিলিয়ে আমরা নিজেরা নিজেদের পরিবর্তন করতে ইস্ততঃবোধ করি। ফলে আমাদের সাথে আমাদের সন্তানদের ফারাক তৈরি হয়। নতুন দেশের রীতিনীতি ও সংস্কৃতির সাথে নিজেদের খাপ খাওয়াতে না পারলে আমরা পিছিয়ে পড়ব। বিদেশী সংস্কৃতি ও আমাদের সংস্কৃতির চাপে আমাদের বাচ্চারা স্যান্ডউইচ বেবি হিসেবে বেড়ে উঠবে অথবা হারিয়ে যাবে। আমাদেরকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে আমরা কী করবো।কারণ বাচ্চাদের দোষ দিয়ে লাভ নেই। বইটি বাবা-মায়েদের পয়েন্টিং চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সহায়ক হবে সন্দেহ নেই।
আলোচনা অনুষ্ঠানে আরো মতামত ব্যক্ত করেন, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টর এডভোকেট ও কানাডা প্রবাসী আক্তার মোসাম্মাৎ, ক্যানবাংলা টেলিভিশনের কর্নধর ড, মো. হুমায়ন কবির চৌধুরী, পিল ডিসট্রিক্ট স্কুল বোর্ডের সিনিয়র শিক্ষক এমডি হাসান তারিক, বিশিষ্ট নারী উদ্যোক্তা সেলিমা আহমেদ, আবাসন ব্যবসায়ী নাসিমা পারভীন ও মেফিল্ড হাইস্কুলের নবম শ্রেণীর ছাত্রী মেহরীন মুস্তারীসহ অনেক।
সৌদিতে বাংলাদেশির হাতে বাংলাদেশি খুন
সৌদি আরবের জেদ্দায় সাব্বির হোসেন (২৬) নামের এক বাংলাদেশি খুন হয়েছেন। খুনিও অপর এক বাংলাদেশি।
রোববার (৩ মার্চ) বিকেল ৪টার দিকে সৌদি আরবের জেদ্দায় এই ঘটনা ঘটে।
নিহত সাব্বির কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর উপজেলার সিদলা ইউনিয়নের গড়মাছুয়া গ্রামের বাবুল ফকিরের ছেলে।
পারিবারিক সূত্র জানায়, সৌদিতে পাশের কক্ষে থাকা অন্য বাংলাদেশিদের সঙ্গে সাব্বিরের কথা-কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে কিল-ঘুষির শিকার হন সাব্বির। পরে এ ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে বিচার দিতে তিনি কফিলের (মালিক) কাছে যাচ্ছিলেন। এতে প্রতিপক্ষের লোকজন আরও ক্ষিপ্ত হয়ে তার গলা চেপে ধরেন। এতে মৃত্যু হয় সাব্বিরের।
নিহতের চাচাতো ভাই আব্দুল্লাহ আল মামুন ও সিদলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান কাঞ্চন প্রবাসী সাব্বির মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
রিয়াদে স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে সংবর্ধনা
মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে সৌদি আরবের রিয়াদে এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
রিয়াদস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের আয়োজনে সোমবার (৪ মার্চ) সন্ধ্যায় ডিপ্লোম্যাটিক কোয়ার্টারে অবস্থিত কালচারাল সেন্টারে এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত হয়।
এতে প্রধান অতিথি হিসেবে রিয়াদের ডেপুটি গর্ভনর ড. ফয়সাল বিন আব্দুল আজিজ আল সুদাইরী উপস্থিত ছিলেন।
এ ছাড়া সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রটোকল বিভাগের ডেপুটি মিনিস্টার আব্দুল মাজিদ বিন রাশিদ আল সামারী, সৌদি বাংলাদেশ সংসদীয় ফ্রেন্ডশিপ কমিটির চেয়্যারম্যান খালেদ মোহাম্মদ আল বাওয়ার্দীসহ শুরা কাউন্সিলের সদস্যবৃন্দ, সৌদি আরবের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও চেম্বার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
সংবর্ধনায় রিয়াদের বিভিন্ন মিশনের রাষ্ট্রদূত, কূটনীতিক, বাংলাদেশ কমিউনিটির চিকিৎসক, প্রকৌশলী, শিক্ষক, ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন পেশার শতাধিক অভিবাসীও যোগ দেন।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রদূত ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী গভীর শ্রদ্ধায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্মরণ করেন। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে দীর্ঘ ৯ মাসের সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে আমরা বাংলাদেশ নামক একটি স্বাধীন রাষ্ট্র পেয়েছি।
সৌদি আরবে বাংলাদেশীর কর্মসংস্থানের জন্য সৌদি বাদশাহ ও ক্রাউন প্রিন্সকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে জাবেদ পাটোয়ারী বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে সৌদি আরবের সম্পর্ক আজ এক নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে যা আগামী দিনে ব্যবসা, বিনিয়োগ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, মানবসম্পদ, পরিবেশসহ বিভিন্ন খাতে উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাবে।
রাষ্ট্রদূত এ সময় সৌদি আরবের শান্তি ও স্থিতিশীলতার প্রতি বাংলাদেশের সমর্থন এবং এর ভাতৃপ্রতিম জনগণের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের সংহতি পূনর্ব্যক্ত করেন।
জাবেদ পাটোয়ারী বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের মহাসড়কে অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে চলেছে। ইতোমধ্যে ভবিষ্যতের বাংলাদেশ গঠনের জন্য ডেল্টা প্ল্যান গ্রহণ করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত ও স্মার্ট বাংলাদেশে পরিণত হওয়ার লক্ষ্যে কাজ চলছে।
অনুষ্ঠানের শুরুতে সৌদি আরব ও বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত বাজানো হয়। পরে প্রধান অতিথি ও বিশেষ অতিথিদের নিয়ে স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে জাবেদ পাটোয়ারী কেক কাটেন।
অনুষ্ঠানে রিয়াদস্থ বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে একটি মনোমুগ্ধকর দলীয় নৃত্য এবং বাংলাদেশি কারুপণ্য নিয়ে একটি প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়।