• ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
logo

সাংবাদিক তোফাজ্জলের ছেলের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি

আরটিভি নিউজ

  ০৬ ডিসেম্বর ২০২১, ১৮:৪৫
মানববন্ধন

ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাবেক যুগ্ম সম্পাদক তোফাজ্জল হোসেনের ছেলে আহসান হাবিব নাহিদের নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে প্রতিবাদ সমাবেশ করা হয়েছে। আজ সোমবার (৬ ডিসেম্বর) ডিআরইউ চত্বরে ‘সচেতন সাংবাদিকের ব্যানারে’ এ প্রতিবাদ সমাবেশ করা হয়। সমাবেশে উপস্থিত সাংবাদিকরা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা ও নাহিদের নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানান।

ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির বহুমুখী সমবায় সমিতির সম্পাদক মো. বদরুল আলম চৌধুরীর সঞ্চলনায় সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সাধারণ সম্পাদক মো. শহিদুল ইসলাম, বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরামের (বিএসআরএফ) সহ-সাধারণ সম্পাদক মেহেদী আজাদ মাসুম, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির আপ্যায়ন সম্পাদক মুহাম্মদ আখতারুজ্জামান, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাবেক অর্থ-সম্পাদক শফিকুল ইসলাম, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির বহুমুখী সমবায় সমিতির পরিচালক মো. রেজাউর রহিম, সিনিয়র সাংবাদিক আশিষ কুমার দে, সিনিয়র সাংবাদিক আবু আলী ও রাশিম মোল্লা প্রমুখ।

সমাবেশে ডিইউজে সাধারণ সম্পাদক মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘ডিআরইউ’র নির্বাচনের আগের দিন একজন সাধারণ সম্পাদক প্রার্থীর ছেলেকে র‌্যাব-৮ এর তুলে নিয়ে যাওয়াটা সাংবাদিকদের জন্য সুখকর নয়। এ নিয়ে সাংবাদিকরা আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে। ডিআরইউ নির্বাচনে প্রার্থীকে চাপের মধ্যে রাখতে এ ধরনের ঘটনা ঘটানো হয়ে থাকতে পারে’।

তিনি আরও বলেন, ‘বরিশালের র‌্যাব-৮ মাদারীপুরের রাজৈর থানা এক মামলায় অজ্ঞাতনামা হিসেবে নাহিদকে গ্রেপ্তার করেছে। নাহিদের গ্রামের বাড়ি গাইবান্ধ। কখনই মাদারীপুরে যায়নি। অথচ র‌্যাব তাকে ঢাকা মোহাম্মদপুর আদাবর থেকে অফিসমুখী নাহিদকে গ্রেপ্তার করে মাদারীপুরের মামলায় জড়ানো হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে বুঝতে পারি এখানে রহস্য রয়েছে। এই রহস্য উদঘাটন করতে হবে। এই ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত তাদের মুখোশ উন্মোচন করতে হবে। এই দায়িত্ব ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সব সদস্যকে নিতে হবে’।

তিনি বলেন, ‘নাহিদের বয়স মাত্র ২৩ বছর। কিছুদিন আগেই অনার্স শেষ করেছে। সে কোনো অপরাধের সঙ্গে জড়িত নয়। তার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও ছাত্ররা এর প্রতিবাদে এবং তার নিঃশর্তে মুক্তির দাবিতে গণ স্বাক্ষর করেছে।

বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরামের (বিএসআরএফ) সহ-সাধারণ সম্পাদক মেহেদী আজাদ মাসুম বলেন, ‘বরিশাল র‌্যাব-৮ শেখ ইয়াছিন আলী ঢাকা থেকে একজন সাংবাদিকের ছেলেকে গ্রেপ্তার করে মাদারীপুরে নিয়ে গেছেন। সেই ইয়াছিন আলীকে ফোন দিলে তিনি বলেন, এই বিষয়ে তিনি কিছু বলতে পারবেন না। ঊধ্বর্তন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ইয়াছিনের কথার প্রেক্ষিতে র‌্যাব-৮-এর অধিনায়ক (সিও) এডিশনাল ডিআইজি জামিল হাসানকে ফোন দিলে তিনি র‌্যাব-৮ এর মেজর জাহাঙ্গীরের কথা বলেন। মেজর জাহাঙ্গীর কীভাবে ২০২০ সালের ১৫ জুনে মাদারীপুরের মামলায় অজ্ঞাতনামা হিসেবে একজন সাংবাদিকের ছেলেকে ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করে মাদারীপুর নিয়ে যায়। বিষয়টি অত্যন্ত প্রশ্নবিদ্ধ।’

তিনি বলেন, ‘২০২০ সালে মাদারীপুরে রাজৈর থানার মামলায় চার থেকে পাঁচজন আসামির নাম রয়েছে। সেখানে মামলায় অজ্ঞাতনামা আসামি ১০ থেকে ১২ জন। অজ্ঞাতনামা মামলা বলতেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এক ধরনের অস্ত্র। কার নির্দেশনায় তিনি এই অস্ত্র ব্যবহার করে নাহিদকে আটক করেছেন তা আমাদের বের করতে হবে।’

সিনিয়র সাংবাদিক আশিষ কুমার দে বলেন, ‘আবহাওয়া খারাপ থাকায় আজকের এই প্রতিবাদ সভায় গণমাধ্যমকর্মীরা ঠিকমত উপস্থিত হতে পারেননি। তবুও এই বৃষ্টির মধ্যে যারা এসেছেন তাদের ধন্যবাদ জানাই। আমি রাতেই একাত্তর টেলিভিশনের শিরোনাম প্রতিবাদ সমাবেশের তথ্য দেখতে পেয়ে উপস্থিত হয়েছি। আমার বিশ্বাস আগামীতে আমাদের সহকর্মীরা এই প্রতিবাদ সভায় অংশ নিয়ে আরও জোরদার করবেন’।

তিনি বলেন, ‘নাহিদের বিরুদ্ধে যে অন্যায় করা হয়েছে, সেই অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছি। আমার বিশ্বাস এই প্রতিবাদ সমাবেশ সরকারকে জানান দেবে, সাংবাদিক সমাজ অন্যায়ের বিরুদ্ধে সব সময় সোচ্চার থাকবে। নাহিদের নিঃশর্তে মুক্তি চাই। একইসঙ্গে তাকে যে বেআইনিভাবে গ্রেপ্তার করা হয়েছে সেটিরও সুষ্ঠুতদন্ত হোক’।

তিনি আরও বলেন, ‘আজকে যারা দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার অজুহাত দেখিয়ে এই প্রতিবাদ সমাবেশে অংশ নেননি, তারাও কিন্তু নিরাপদ নন। নাহিদের মুক্তি যতদিন না হবে ততদিন পর্যন্ত আমি এ ধরনের প্রতিবাদ সমাবেশে থাকবো’।

ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাবেক অর্থ-সম্পাদক শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘২০২০ সালের ১৫ জুনের মামলায় অজ্ঞাতনামা হিসেবে মাদারীপুরের একটি মামলায় গত ২৯ জুন ঢাকা থেকে নাহিদেকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে মাদারীপুর যায় র‌্যাব-৮। কোন রহস্যের কারণে তাকে গ্রেপ্তার করে মাদারীপুরে নেওয়া হয়েছে, সেটি খুঁজে বের করতে হবে। অজ্ঞাতনামা হিসেবে র‌্যাব যাকে-তাকে গ্রেপ্তার করবে এভাবে চলতে দেওয়া যায় না’।

সরকারকে আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এ ধরনের অরাজগতা এখনই থামাতে হবে সরকারকে। নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে আজ যেমন তোফাজ্জলের ছেলে নিরাপদ নয়, আগামীতে আপনিও নিরাপদ থাকবে না। ডিআরইউ’র সকল সদস্যকে এই প্রতিবাদে অংশগ্রহণের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, নাহিদকে যতদিন পর্যন্ত নিঃশর্তে মুক্তি না দেওয়া হবে, ততদিন পর্যন্ত এই প্রতিবাদের সঙ্গে থাকবো। কারণ একজন সন্তানের বাবা হিসেবে, একজন সন্তানের অভিভাবক হিসেবে, একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে এটি আমার দায়িত্ব ও কর্তৃব্য’।

ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির আপ্যায়ন সম্পাদক মুহাম্মদ আখতারুজ্জামান বলেন, ‘আজকে সাংবাদিক তোফাজ্জলের ছেলেকে র‌্যাব গ্রেপ্তার করেছে। আগামীতে আপনার-আমার ছেলেকে র‌্যাব গ্রেপ্তার করবে। সেই কারণে ডিআরইউ সকল সদস্যের উচিত হবে এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার প্রতিবাদ জানান’।

ডিআরইউ’র সাবেক কল্যাণ সম্পাদক খালিদ সাইফুল্লাহ বলেন, ‘ডিআরইউ নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদক প্রার্থীর ছেলেকে নির্বাচনের আগের দিন র‌্যাব-৮ মাদারীপুরে তুলে নিয়ে যাওয়ার ঘটনাটি গভীর ষড়যন্ত্র। এই ষড়যন্ত্র শুধু ডিআরইউ’র সদস্যের ছেলের বিরুদ্ধে নয়, গোটা ডিআরইউ বিরুদ্ধে। নাহিদের নিঃশর্তে মুক্তি দাবিতে এই আন্দোলন বেগবান করতে হব’।

ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির বহুমুখী সমবায় সমিতির সম্পাদক মো. বদরুল আলম চৌধুরীর সঞ্চলনায় প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়। তিনি বলেন, ‘নাহিদের বিরুদ্ধে যদি কোনো ধরনের মামলা না থাকে তাহলে নিঃশর্তে মুক্তি দেওয়া হোক। নাহিদকে তার মা-বাবার কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হোক’।

তিনি আরও বলেন, ‘ডিআরইউ একটি অরাজনৈতিক সংগঠন। আমি প্রত্যাশা করে ছিলাম, ডিআরইউ এর পক্ষ থেকে একটি বিবৃতি দেওয়া হবে। কিন্তু আমরা জানি না কোন অদৃশ্য শক্তির কারণে ডিআরইউ বিবৃতি দেওয়া থেকে বিরত রয়েছে। আমি বিশ্বাস করি এই সংগঠনের সকল সদস্য একই ছাতার নিচে থাকবে। আসুন আমরা সকলে এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াই। নাহিদের মুক্তির জন্য আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রতিবাদ জানাই। একই সাথে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক রিয়াজ চৌধুরীর ওপর হামলাকারীদের খুঁজে বের করে অপরাধীদের শাস্তি দেওয়া হোক’।

এফএ/এসকে

মন্তব্য করুন

daraz
  • মিডিয়া এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
ডিজিটাল সুরক্ষা প্রশিক্ষণে সনদ পেলেন ২৫ নারী সাংবাদিক ও রাজনীতিবিদ
সৎ ও সাহসী সাংবাদিক ছিলেন ইহসানুল করিম
ভোলায় সাংবাদিকের নামে মিথ্যা মামলা
ডিআইইউতে সাংবাদিক সমিতি বন্ধ করতে টিউশন ফি মওকুফের প্রলোভন!
X
Fresh