• ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
logo

মাথা ব্যথার অত্যাধুনিক চিকিৎসা

প্রফেসর আলতাফ হোসেন সরকার

  ০২ জুন ২০১৮, ১২:৫৮

মাথা ব্যথা মেডিকেল কন্ডিশনের একটি অন্যতম অসুস্থতা। এমন কোনও পরিবার খুঁজে পাওয়া যাবে না, যে পরিবারে মাথা ব্যথা নেই। বৈশ্বিক জনগোষ্ঠীর প্রায় ১৮ ভাগ লোক মাথা ব্যথায় ভুগে থাকেন। এর মধ্যে ১৫-২০% সার্ভিকোজেনিক হেডেক-এ ভুগেন। সার্ভিকোজেনিক হেডেক এমনি একটি মাথা ব্যথা যার উৎপত্তি ঘাড় থেকে। এক্ষেত্রে ঘাড়ের মাংসপেশি যেমন- ট্রাপিজিয়াস মাসেলের উপরের অংশ, লিভেটর স্ক্যাপুলি, অক্সিপিটালিস মাসেল খাট হয় ও ঘাড়ের ফ্ল্যাক্সর গ্রুপের মাংসপেশি যেমন- লঙ্গাস ক্যাপিটাস ও লঙ্গাস কোলাই দুর্বল হয়। মাথার এক্স-রে, সিটিস্ক্যান, এমআরআই-এ সাধারণত কোনও অসুবিধা পাওয়া যায় না। কারণ কষ্ট থাকে ঘাড়ের উপরিভাগে। ঘাড়ের অন্যান্য স্ট্রাকচার যেমন- আপার সার্ভাইক্যাল ফ্যাসেট জয়েন্ট, আপার সার্ভাইক্যাল মাসেল, সি২-৩ ইন্টারভার্টিব্রাল ডিস্ক, কেরোটিড আর্টারি, ডুরামেটার, আপার স্পাইনাল কর্ড, ঘাড়ের পেছনে ক্রেনিয়াল ফোছা এ ধরনের মাথা ব্যথা তৈরির সাথে সংশ্লিষ্ট। এছাড়া উইফ্লাস ইনজুরি, ঘাড়ের ওপর অতিরিক্ত স্ট্রেস, অসঠিক ভঙ্গিতে পড়াশোনা, কম্পিউটার ব্যবহার, মোবাইল ফোন ব্যবহার, অফিসওয়ার্ক ও সামনের দিকে ঘাড় বাঁকা করে দীর্ঘ সময় কাজ করা থেকেও সার্ভিকোজেনিক হেডেক হয়।
সার্ভিকোজেনিক মাথা ব্যথার রোগীর, ঘাড়ের ফিজিক্যাল এক্সামিনেশন করলে তার আপার ক্রস সিনড্রম পাওয়া যায়। এছাড়া রোগীর ফরওয়ার্ড হেড পোশ্চার থাকে ও রোগীর জয়েন্ট মবিলিটি কমে যায়। ঘাড়ের ও কাঁধের বিভিন্ন মাংসপেশি শক্ত বা টাইট হয়ে যায়। মাথা ব্যথার সাথে অনেকের চোখ, কপাল, কানের পাশে ও থুথনিতে ব্যথা হয়ে থাকে। তরুণ-তরুণী থেকে বৃদ্ধ-বৃদ্ধা পর্যন্ত মাথা ব্যথায় ভুগে থাকেন। মহিলারা পুরুষের চেয়ে ৪ গুণ বেশি এই মাথা ব্যথায় ভুগে থাকেন। আপনারা অবশ্যই জানেন, যুগ যুগ ধরে মানুষ মাথা ব্যথায় ভুগে আসছেন। এই মাথা ব্যথা থেকে আমরা সবাই মুক্তি পেতে চাই।
গেলো ৪০ বছরের অভিজ্ঞতায় দেখেছি, যারা এ ধরনের মাথা ব্যথার কষ্ট নিয়ে আসেন তাদের মধ্যে অনেকেই ৫-১০ বছর এমনকি ২০ বছর ধরে এই কষ্টে ভুগে থাকেন। তার কারণ ব্যথার উৎপত্তি ঘাড় থেকে সুতরাং চিকিৎসা ঘাড়ের যে স্ট্রাকচার মাথা ব্যথা তৈরি করছে সে স্ট্রাকচারে করতে হবে। তবে এ চিকিৎসায় দীর্ঘ অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, দীর্ঘ দিনের বা ১০-২০ বছরের মাথা ব্যথার অধিকাংশ রোগীই বলে থাকেন যে, তারা ২-৩ সপ্তাহের মধ্যে কষ্ট মুক্ত হন।
মাথা ব্যথার অত্যাধুনিক চিকিৎসার মধ্যে রয়েছে- চিন টাক এক্সারসাইজ, ৬টি পয়েন্টে ডিপফ্রিকশন, ঘাড়ের সফট টিস্যু মোবালাইজেশন, স্ট্রেসিং, স্ট্রেন্দেনিং ও মায়োফেসিয়াল রিলিজ । তার সাথে লো-লেভেল লেজার থেরাপি, আল্ট্রাসাউন্ড থেরাপি, হট বা কোল্ড থেরাপি (অ্যাসেসমেন্ট অনুযায়ী) ব্যবহার করতে হবে। খাদ্য তালিকায় পরিবর্তন আনতে হবে যেমন- আদার রস খালি পেটে দিনপ্রতি ১ চা-চামচ (যদি ডায়াবেটিস এবং হাইপার টেনশন বা ব্লাড প্রেশার বেশি না থাকে), আনারসের মাঝের অংশ, কালো আঙ্গুর বা জাম, পাকা পেঁপে, পাকা কলা, পাতাকপি, গাজর, টমেটো খাদ্য তালিকায় যোগ করুন। প্রচুর পানি পান করুন। ব্যথা থাকলে- লবণ, সাদা খাবার (যেমন- সাদা আটা, চাল, ব্রেড ইত্যাদি), লাল ও প্রক্রিয়াজাত গরু ও খাসির মাংস, দুধের তৈরি খাবার ও চিনি পরিহার করুন। ধূমপান বর্জন করুন। মাথা ব্যথার কষ্ট থেকে মুক্ত থাকুন।

প্রফেসর ডা. আলতাফ সরকার
মাস্কুলোস্কেলিটাল ডিসর্ডারস বিশেষজ্ঞ

লেজার ফিজিওথেরাপি সেন্টার
৪৪/৮, পশ্চিম পান্থপথ, ঢাকা, ০১৭৮৫৯৯৯৯৭৭

মন্তব্য করুন

daraz
  • স্বাস্থ্য এর পাঠক প্রিয়
X
Fresh