• ঢাকা বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১
logo

মহাশূণ্যে নতুন স্টেশন স্থাপনে তিন নভোচারী পাঠালো চীন

আরটিভি নিউজ

  ১৮ জুন ২০২১, ১৪:১২

চীনে ঘড়ির কাটায় তখন সকাল ৯টা বেজে ২২ মিনিট। সদ্যই হাজার বছরের ঐতিহ্যপূর্ণ ড্রাগনবোট ফেস্টিভ্যাল উদযাপন শেষে কাজে ফেরা চীনে রাজ্যের কর্মব্যস্ততায় মগ্ন হওয়ার কথা থাকলেও পুরো চীন জুড়েই সুনসান নিরবতা। সবার নজর টেলিভিশনের পর্দায়। ঘরে বাইরে থাকা মানুষ মগ্ন হয়ে চোখ বুলাচ্ছেন মোবাইলে, কানে হেডফোন লাগিয়ে বেতার শুনছেন কেউ কেউ। মুহুর্তেই উচ্ছ্বাস, আলিঙ্গন আর আনন্দ উদযাপনে একাকার পুরো চীন। এই উচ্ছ্বাস, এই উদযাপন গৌরবের। নিজেদের স্পেস স্টেশন তৈরিতে চীনের তিন নভোচারীকে নিয়ে সফলভাবে যাত্রা শুরু করেছে শেন-চৌ ১২ নামের মহাকাশযান। এতে আনন্দ উদযাপনে মেতে উঠে পুরো চীন।

প্রায় সাড়ে ছয় ঘন্টার যাত্রা শেষে চীনের স্থানীয় সময় আজ বৃহস্পতিবার বিকেল ৩ টা ৫৪ মিনিটে মহাশূণ্যে অবস্থিত থিয়ান হে মূল মডিউলের সঙ্গে শেন-চৌ সফলভাবে সংযোগ স্থাপন করেছে বলে জানায় চায়না ম্যানড স্পেস এজেন্সি (সিএমএসএ)।

চীনের মানববাহী মহাকাশযান প্রকল্পের ১৯তম এই অভিযানে পৃথিবীর সবার দৃষ্টি ছিল চীনের চিউ ছুয়ান স্যাটেলাইট উৎক্ষেপন কেন্দ্র থেকে উতক্ষেপিত এই স্বর্গীয় তরীর দিকে। সর্বাধুনিক প্রযুক্তি সম্বলিত লংমার্চ ২-এফ মডেলের পরিবাহক রকেটে যাত্রা করে শেন-চৌ। এতে মহাকাশচারী হিসেবে এই যাত্রায় অংশ নিয়েছেন নিয়েই হাই শেং, লিউ বো মিং ও থাং হুং বো। চীনের থিয়েন হ্যে স্পেস স্টেশন তৈরির কাজে সেখানে তিন মাস থাকবেন তারা।

এর আগে গত ২৯ এপ্রিল নিজস্ব স্পেস মডিউল থিয়ান হে এবং গত ২৯ মে কার্গো মহাকাশযান থিয়ান চৌ-২ উৎক্ষেপন করে চীন। কক্ষপথে প্রবেশের পর তিন নভোচারী ওই স্পেস মডিউল ও কার্গো মহাকাশযানে জটিল কাজ সম্পন্ন করবেন যা চীনের নিজস্ব স্পেস স্টেশন তৈরিতে খুবই তাত্পর্যপূর্ণ ও গুরুত্বপূর্ণ কাজ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। দীর্ঘ সময়ে অবস্থানের জন্য মহাকাশচারীদের সুস্বাস্থ্য, প্রয়োজনীয় খাবারসহ সার্বিক সব ব্যবস্থা নিশ্চিত করেছে চায়না ন্যাশনাল স্পেস স্টেশন -সিএনএসএস।

বেইজিং এরোস্পেস কন্ট্রোল সেন্টারে শেন-চৌ ১২’র উৎক্ষেপনের সরাসরি সম্প্রচারটি দেখেছেন চীনের কমিউনিস্ট পার্টি অব চায়না-সিপিসির রাজনৈতিক ব্যুরোর স্থায়ী কমিটির সদস্য ও চীনের উপ প্রধানমন্ত্রী হান চেং এবং চীনের কেন্দ্রীয় সামরিক কমিশনের ভাইস চেয়ারম্যান সু ছিলিয়াংসহ চীনের উর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

অসীম মহাশুন্যে প্রাণের অস্তিত্ব খুঁজে বেড়ানো কিংবা বসবাসযোগ্য গ্রহের সন্ধ্যান; অজানাকে জয়ের অদম্য ইচ্ছার কারণেই দীর্ঘদিন ধরে মহাকাশ সম্পর্কিত গবেষণা ও অনুসন্ধ্যানে ব্যাপক সফলতা অর্জনের মাধ্যমে মহাকাশ গবেষণায় সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছে চীন।

চলতি মাসেই বিশ্বের দ্বিতীয় দেশ হিসেবে সম্প্রতি মঙ্গল গ্রহে থিয়েন-ওয়েন ১ নামের মহাকাশযানের সফল অবতরণ ঘটায় চীন যা ইতোমধ্যে মঙ্গল নিয়ে গবেষণার গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহ শুরু করেছে। এছাড়াও ২০৩০ সাল নাগাদ মঙ্গলের নমুনা সংগ্রহে যান পাঠানোর কাজও শুরু হয়েছে দেশটি। সম্প্রতি ছ্যাং-এ-৫ এর মাধ্যমে চাঁদের নমুনা সংগ্রহের পর এবার চাঁদের সম্পদ ও পরিবেশ পর্যবেক্ষণে ছ্যাং-এ-৬ এবং ৭ নামে আরও দুইটি চন্দ্রাভিযানের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে চীন।

চীনের এই অগ্রগতি মহাকাশ গবেষণায় আন্তর্জাতিক সহায়তার ক্ষেত্রকে আরও প্রসারিত করবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

এ প্রসঙ্গে চায়না স্পেস সায়েন্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি করপোরেশন –সিএসএসআইসি এর গবেষক অধ্যাপক ড. ইয়াং ইয়ু কুয়াং এ প্রসঙ্গে চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিভিশন সিসিটিভিকে বলেন, ‘আমি বহুবার উল্লেখ করেছি যে চীনের মহাকাশ কর্মসূচী অন্যান্য দেশের সঙ্গে প্রতিযোগিতা নয়, বরং নিজেদের প্রয়োজনীয়তার ব্যবহার। মঙ্গল গ্রহ এবং এই গ্রহের বিকাশ ও ইতিহাস নিয়ে পড়াশুনা ও গবেষণা সমস্ত পৃথিবীকে উপকৃত করবে যা মানবজাতির ভাগ্য নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।’ মহাকাশ নিয়ে চীনের গবেষণায় নতুন এই স্পেস স্টেশন অনেক ভূমিকা রাখবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

নিজস্ব স্পেস স্টেশন তৈরির এই উদ্যোগ চীনকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি মহাকাশ অনুসন্ধ্যানে মানবজাতির জন্য নতুন দ্বারের উম্মোচন করবে বলেও মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

তানজিদ বসুনিয়া, সিএমজি বাংলা।

মন্তব্য করুন

daraz
  • মুক্তমত এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
৫০ বছর পর ফের চাঁদের পিঠে নামছে মার্কিন মহাকাশযান
১৪ জানুয়ারি : ইতিহাসে আজকের এই দিনে
X
Fresh