• ঢাকা শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
logo

চলমান যু'দ্ধ থেকে হামাসের কি অর্জন?

জুয়েল এইস

  ১৮ মে ২০২১, ০৯:৪০
ফাইল ছবি

ইজরায়েলি আক্রমণে প্রায় দুইশ’র বেশি ফিলিস্তিনি শহীদ হয়েছে। অ্যাডভান্স টেকনোলজির বিরুদ্ধে হামাসের এখন পর্যন্ত রেসিস্ট করে আসছে।

অনেকেই অতিমাত্রায় লিবারেল সাজতে গিয়ে বলেন "হামাস কেনো রকেট মারে। তাইলে তো ইজরায়েল কিছু বলতো না।"

সেই ভাইদের জানিয়ে রাখি, হামাস রকেট না মারলেও হাজার হাজার ফিলিস্তিনদের বাড়ি থেকে যখন তখন গ্রেফতার করে নিয়ে যায় জায়োনিস্টদের সেনারা। বাড়িঘর দখল করে নেয়। বাচ্চাদেরকে আঘাত করে।

সে যাই হোক। এবারের যুদ্ধে হামাসের বেশ কিছু অ্যাচিভমেন্ট রয়েছে। খোলা চোখে ফিলিস্তিনিদের মৃত্যু আমাদেরকে আন্দোলিত করলেও আমাদের পজিটিভ দিক গুলো নিয়েও অ্যানালাইসিস করা উচিৎ।

ভিয়েতনাম যুদ্ধে আমেরিকার সাতান্ন হাজারের মত সেনা নিহত হয়। যেখানে ভিয়েতনামিজ মারা যায় এক মিলিয়নেরও উপরে। কিন্তু যুদ্ধে কিন্তু ভিয়েতনামই জয়ী।

আফগান রাশান যুদ্ধে রাশানদের চেয়ে তালিবানের ক্ষয়ক্ষতি বেশি হলেও যুদ্ধে তালিবানরাই জিতে। একই কথা খাটে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ব্যাপারেও। আমাদের ক্ষয়ক্ষতি বেশি হলেও আমরা জিতেছি।

যুদ্ধে ক্ষয়ক্ষতির চেয়েও যুদ্ধে কে জিতেছে সেটা বুঝতে দেখতে হবে কার উদ্দেশ্য হাসিল হয়েছে। আফগানে এখন তালিবানদের পঞ্চাশ শতাংশের মত নিয়ন্ত্রণ আছে। আমেরিকা চলে যাওয়া মাত্রই বাকিটাও দখল করে নিবে। ফলে আমেরিকা যতই বলুক যে তারা জিতেছে, আসলে তালেবানই জিতেছে। কারণ তাদেরকে ক্ষমতা থেকে সরাতে পারে নাই।

হামাসের এবারের অর্জন-

১, আয়রন ডোমকে একটু বাজিয়ে দেখা হলো। যদি একসাথে অনেক বেশি রকেট বা মিসাইল ছোড়া হয় তবে সেটা আয়রন ডোম প্রোপারলি ডিটেক্ট করতে পারে না। হামাসের তিন হাজারের উপরের রকেট থেকে ডিটেক্ট করতে পেরেছে ৬০% এর মত। আয়রন ডোমের এ দুর্বলতা জানা গেলো।

২. এতোদিন একচেটিয়া পশ্চিমা ন্যারেটিভ মানুষ গোগ্রাসে গিলতো। সিএনএন, নিউ ইয়র্ক টাইমস, গার্ডিয়ান, রয়টার্স ইত্যাদি। আল জাজিরা, টিআরটি, আনাদলু এজেন্সি সবাইকে একদম ন্যাংটা করে দিছে। ফলে প্রথম দিকে ইজরায়েলের নাম না নিলেও এখন মোটামুটি সব পশ্চিমা মিডিয়াই ইজরায়েলের নাম নিচ্ছে।

মিডিয়া যুদ্ধে হেরে যাওয়ার ফলেই মূলত আল জাজিরার বিল্ডিং ধসিয়ে দেয় ইজরায়েল। এপি না থাকলে হয়তো আল জাজিরার টিমকে মেরে ফেলতেও দ্বিধা করতো না।

৩. ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস, কিন্তু এ যুদ্ধে মাহমুদ আব্বাসের খুব একটা গুরুত্ব নেই। জো বাইডেন মাহমুদ আব্বাসকে কল দিলেও উনিও জানেন যে এ যুদ্ধ আবু মাজেন থামাতে পারবে না। হামাসের গুরুত্ব প্যালেস্টাইন তো বটে, মুসলিম অমুসলিম সব রাষ্ট্রের কাছেই বৃদ্ধি পাবে।

৪. এবারের যুদ্ধে অভূতপূর্ব সাপোর্ট পেয়েছে প্যালেস্টাইন, আইরিশ এমপি, অস্ট্রিয়ান এমপি, মার্ক রাফালো, ইমরান খান, খোমেনি, এরদোয়ান, শেখ হাসিনা সহ বেশিরভাগ বিশ্ব নেতারাই এর পক্ষে ছিলেন। লন্ডন, যুক্তরাষ্ট্র, প্যারিস, তুরস্ক, কাতারসহ মোটামুটি সব দেশেই ক্ষুদ্র বা বৃহৎ র্যালি হয়েছে।

প্যালেস্টািন ও হামাসের গ্রহণযোগ্যতা বাড়ানোর পাশাপাশি যোদ্ধাদের মোটিভেট করতেও ভূমিকা রাখবে।

৫. পশ্চিমারা হামাসকে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসেবে দাড় করানোর যে প্রজেক্ট হাতে নিয়েছে সেটা মুখ থুবড়ে পড়েছে। সারা বিশ্ব দেখেছে সন্ত্রাসী কারা।

৬. সবচেয়ে বড় অর্জন হচ্ছে হামাসসহ প্রতিটা মুসলিম বিশ্ব দেখেছে কারা মুসলমানদের বন্ধু আর কারা শত্রু। মানবতার বুলি আওড়িয়ে কারা নিরপরাধ শিশুদের হত্যায় উৎসাহ দেয়। প্রতিটা রাষ্ট্রকে দেখতে হবে প্যালেস্টাইনিদের চোখ দিয়ে। তারা যাদেরকে ভালো বলবে তারা ভালো আর যাদেরকে খারাপ বলবে তারা খারাপ। সেভাবেই সম্পর্ক পুনর্গঠন হবে।

৭. ইজরায়েলকে যতটা অপরাজেয় বা অপ্রতিরোধ্য হিসেবে দেখানো হয় আসলে তারা ততটা না। তারা প্রচণ্ড ভীতু একটা দেশ। ভালো রেঞ্জের কিছু মিসাইল হলেই ইজরায়েলকে থামানো সম্ভব।

৮. হামাসকে টেকনোলজি দিয়ে সাহায্য করেছে ইরান, গোয়েন্দা টিম দিয়ে সাহায্য করছে আরো কয়েকটা মুসলিম দেশ। ট্রেনিং দিচ্ছে সিরিয়ায়। ফলে এদেশ গুলোর মাঝে প্যালেস্টাইনের কারণে একটা কানেকশন তৈরি হবে। এক হয়ে গাযা উদ্ধারে সর্বাত্মক সহায়তা করতে পারে যেভাবে তার্কি আজারবাইজানকে করেছে।

৯. এখন থেকে হয়তো মুসলিম শিশুরা ফিলিস্তিনি শিশুদের মত সাহসী হতে চাইবে। হয়তো এই প্যালেস্টাইন ইস্যু সারা বিশ্বের মুসলিমদের এক করে তুলতে পারে।

হয়তো ফিলিস্তিনের বিজয় আমরাই দেখে যেতে পারবো ইনশাআল্লাহ।

আরটিভি’র সর্বশেষ নিউজ পেতে ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে সঙ্গে থাকুন...

https://www.facebook.com/rtvnews247

মন্তব্য করুন

daraz
  • মুক্তমত এর পাঠক প্রিয়
X
Fresh