• ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
logo

করোনায় সর্বস্ব হারানো একজন আলম

শেফাউল করিম

  ০৫ মে ২০২১, ১৬:৫১

আলম সরকার। পুরান ঢাকার ইসলামপুরের এক দোকান ব্যবসায়ী। মাসে আয় ছিল তার ৪০ হাজার টাকার বেশি। স্ত্রী, এক ছেলে ও দুই মেয়ে নিয়ে পুরান ঢাকায় ১২ হাজার টাকায় তিন রুমের একটি ফ্ল্যাট নিয়ে থাকতেন। সাপ্তাহিক মার্কেট বন্ধ থাকলে স্ত্রী ও ছেলে মেয়ে নিয়ে ঘুরতে যেতেন, রেস্টুরেন্টে ভালোমন্দ খেতেন। সব কিছু মিলে সুখেই চলছিল সংসার। তবে করোনা যেন এলো কালো মেঘের মতো। উড়িয়ে দিলো তার আনন্দ।

দেশে প্রথম করোনা শনাক্ত হয় ৮ মার্চ। করোনার মহামারি নিয়ন্ত্রণে ২৬ মার্চ থেকে সাধারণ ছুটি ঘোষণা হয়। এরপর বিভিন্ন দফায় বাড়ানো হয় লকডাউন বা বিধি-নিষেধের মেয়াদ। এই সময়ে কাজ হারায় অনেক মানুষ। কারও কারও আয় কমে যায়। দেখা দেয় অভাব অনটন। ফলে বহু পেশার লোক স্বপ্নভঙ্গের কষ্ট নিয়ে ছাড়ে ঢাকাও।

স্বপ্নভাঙ্গে ক্ষুদ্র কাপড় ব্যবসায়ী আলম সরকারেরও। বছর দুয়েক আগেও যার জীবন চলছিল ঠিকঠাক। করোনার কারণে আলমের ব্যবসায় বেচাকেনা কমতে থাকে। একপর্যায়ে লকডাউনে তার ব্যবসাও বন্ধ হয়ে যায়। এর আগে ব্যবসা ভালো চলায় একটি বেসরকারি ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে সেটি আরেকটু বড়ও করেন।

আয় বন্ধ হওয়ায় এখন বিপাকে তিনি। নিজেদেরও খাওয়া তো যেমন তেমন, ছোট বাচ্চার খাওয়া এবং বাকি ছেলে মেয়ের পড়াশোনার খরচ চালাতে হিমসিম খাচ্ছেন তিনি। তাছাড়া বাড়িভাড়া, ব্যাংকের ঋণের কিস্তি পরিশোধ না করে কোনও উপায় নেই। সেটা যেভাবে হোক তাকে চালাতেই হচ্ছে। প্রথম চার মাসেই যা কিছু সঞ্চয় ছিল, সেও সব শেষ আলমের।আলম জানান, তার মাথা চক্কর দেয়। আত্মীয়স্বজন, বন্ধুদের কাছে চেয়েচিন্তে চলতে হচ্ছে। যা তিনি এর আগে চিন্তাও করেনি সেসবই এখন তিনি করছেন।

আলমের মধ্যে সীমাহীন লজ্জা। সেই লজ্জা মাঝেমধ্যে তার মনে হয় দড়ি নিয়ে ঝুলে পরতে। শুধু ছেলে মেয়ের কারণে এ চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে সে। যাদের কাছে তিনি ধার চাইতে লাগলেন তাদেরও আয় বেশি না। তাই করোনায় তাদের অবস্থাও ভালো না। ফলে ধার তিনি পান কিন্তু যেটা পান সেটা অনেক কম।

পাঁচ মাসের মাথায় আলম বুঝলেন এভাবে আর সম্ভব হবে না। তাকে ভাড়া বাড়ি ছেড়ে দিতেই হবে। প্রশ্ন হলো তিনি কোথায় যাবেন? কুমিল্লা তার গ্রামের বাড়ি তাকে কম বেশি সবাই চিনে কারণ ব্যবসা ভালো চলাকালে তিনি অনেক গরিব অসহায় মানুষকে দান খয়রাত করতেন। সে হিসাবে তার গ্রামে একটা আলাদা সম্মান আছে। তাছাড়া তিনি চিন্তা করতে পারে নাই যে তার এমন দুরবস্থা হবে। তাই আলম গ্রামে কোনও ঘর করেনি। সেখানে যাওয়া যাবে না। এছাড়া মানুষের কাছে তার এই ভিখারি অবস্থা দেখাবেন কি করে। এই চিন্তা করে আলমের চার দিক অন্ধকার হয়ে আসে। এদিকে বাড়ি ভাড়া দিতে না পারলে বাড়ির মালিক তাকে বের করে দিবেন। এখন তিনি যাবেন কোথায়?

আলমের শ্বশুর-শাশুড়ি দুই ছেলে-মেয়ে নিয়ে নারায়ণগঞ্জে একটি বাড়িতে থাকেন। সেখানে বউ ও সন্তানদের হয়তো পাঠিয়ে দেওয়া যাবে। কিন্তু পুরান ঢাকা বাসায় এত আসবাবপত্র সব নিয়ে যাওয়া সম্ভব না। তাই কিছু বিক্রয় করে শ্বশুরের বাসায় গিয়ে উঠেন আলম। শ্বশুরের বাড়িতে তার একটা আলাদা কদর ছিল। এখন তিনি শ্বশুর বাড়িতেই থাকছেন। সবকিছু মিলিয়েই আলম অনেকটা মানসিক রোগে ভুগছেন।

আলমের এই লেখা কোনও কাহিনী নয়। করোনাকালের বাস্তব ঘটনা। অনেকটা মন খারাপের গল্পের মতো। করোনা এবং লকডাউনে কবলে পরে আলমের মতো অনেকর জীবনে এই রকম ঘটনা ঘটছে। কেউ টিকে আছে নিজের আস্থায় আবার কেউ ডুবে যাচ্ছে হতাশায়।

এসএস

মন্তব্য করুন

daraz
  • মুক্তমত এর পাঠক প্রিয়
X
Fresh