• ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
logo

তারুণ্য এখন কাগজে শিক্ষিত মগজে নয়

মো. গোলাম মোস্তফা (দুঃখু)

  ১৩ অক্টোবর ২০২০, ১৪:৪২
তারুণ্য

শিক্ষা মোর দেশের বল, মেধা হবে সোনার ফল। এমন ভাবনা ছোটবেলা থেকে ভেবে এসেছি। স্কুল শিক্ষক থেকে অভিভাবকরাও এমনটি সবসময় বলেছে। যেহেতু আমি গ্রামের ছেলে। সে কারণে আমার মানসিকতার সাথে গ্রামের একটা মিল রয়েছে। আর এই বিষয়টি আমি নিজেও রাখতে চাই। নাজিরাবাদ উচ্চবিদ্যালয় থেকে আমার স্কুল জীবন শুরু। স্কুলটিতে বড় একটা লাইব্রেরী আছে। সেখানে নানান রকমের বই পাওয়া যেত। তবে আমার মন বেশি টানতো পত্রিকার দিকে। সহপাঠীদের বই পড়ার আগ্রহ দেখে আমার বই পড়ার আগ্রহ খুব ভালো করে পেয়ে গেলো।

সকালে স্কুলে গিয়ে সবার আগে লাইব্রেরীতে যেতাম। সh পত্রিকা পড়া শেষ করে ক্লাসে যাওয়া হতো, বিরতির সময় গিয়ে গল্পের বই পড়তাম। বলে রাখা ভালো লাইব্রেরীটিতে এক পাশে স্কুল শিক্ষকদের জন্য আলাদা একটি টেবিল রাখা ছিল। সেখানে শিক্ষকগণ নিয়মিতভাবে বই পড়তো। হুমায়ূন আহমেদ এর বইয়ের সাথে পরিচয় সেখানে থেকে, তবে নিয়মিতভাবে চেষ্টা করতাম বই পড়ার। কিন্তু দেখা যেত তেমন করে কোন বই ভালো করে শেষ করতে পারতাম না। তার পরেও বইয়ের প্রতি যে আগ্রহ ছিল তা এখন লিখে বা বর্ণনা দিয়ে প্রকাশ করা কঠিন।

কলেজে যখন পড়ি, তখন হুমায়ুন আজাদের লাল নীল দীপাবলি বা বাঙলা সাহিত্যের জীবনী পড়তে হলো। শিক্ষক যখন ক্লাসে এই বইটি পড়াতেন তখন হুমায়ুন আজাদের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে তেমন কিছু উত্তর পায়নি। তার পর তেমন করে আর জিজ্ঞাসা করা হয়নি। অন্যদিকে ব্যাকরণ বইটি পড়ার কারণে, লেখকের বিষয়ে জানার আগ্রহ টা একটু বেশি জাগলো। যদিও তখন পড়ার চাপের কারণে হুমায়ুন আজাদের অন্য বই গুলো পড়া হয়নি।

বিশ্ববিদ্যায়ে পড়ার কারণে পরিচয় হলো আর কিছু নতুন বইয়ের সাথে। বলে রাখা ভালো সবাই অনেক জনপ্রিয় লেখক। আমি যেহেতু তাদের বই আগে পড়ি নাই। তাই তারা আমার কাছে নতুন লেখক হিসেবে পরিচিত। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসে এক সহপাঠী আলোচনা করছিল আহমদ ছফা নিয়ে , সেদিন প্রথম উনার নামটি শুনার পর আগ্রহ হলো এই লেখকের বই নিয়ে ।

পরের দিন লাইব্রেরীতে গিয়ে আহমদ ছফার গাভী বৃত্তান্ত কিনে আনলাম। মজার বিষয় হলো এই বইটি একদিনে পড়ে শেষ করেছিলাম। রাতে যখন পড়তে বসেছিলাম, তখন মনে হচ্ছিলো বাস্তবতা আমার চোখের সামনে চলাচল করছে। তাই বইটি রেখে অন্য কাজ করার আগ্রহ হয়নি । আহমদ ছফার বই পড়তে ভালো লাগাতে এখন নিয়মিত ভাবে উনার বই পড়া হয়।

ক্লাস শেষে লাইব্রেরীতে নিয়মিত ভাবে যাওয়া হয়। সুতরাং সেখান থেকে হুমায়ুন আজাদের অনেকগুলো বই কিনলাম। তার মাঝে উল্লেখ্য যোগ্য বইগুলো হলো , মানুষ হিসেবে আমার অপরাধ সমূহ, ছাপ্পান্নো হাজার বর্গ মাইল, পাক সার জমিন সাদ বাদ, নারী, আমার বিশ্বাস। বই গুলো আনার পর, নিয়ম করে না পড়ে। যখন যেটা চোখের সামনে দেখতাম সেটাই পড়তাম। এই ভাবে হুমায়ূন আজাদের কিছু বই পড়া হলো এবং সাথে সাথে উনার জীবন বৃত্তান্ত খুব ভালো করে জানা হয়ে গেলো।

এখন আসি বর্তমান শিক্ষার্থীদের বই পড়ার অবস্থা নিয়ে। আমি স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগে পড়ার কারণে, আমাদের ক্লাস হয় ধানমন্ডি ক্যাম্পাসে। ক্লাস শেষ করে, নীলক্ষেত হয়ে তার পর টিএসসিতে যাওয়া হয় নিয়মিতভাবে। কারণ ঢাকার সবচেয়ে প্রিয় জায়গার মধ্যে একটি হলো টিএসসি। আড্ডার পাশাপাশি বই পড়া চলছে নিয়ম করে। মূল ঘটনায় আসা যাক, বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস না থাকার কারণে আগ্রহ নিয়ে ঘর থেকে বের হলাম লাইব্রেরীতে গিয়ে বই পড়বো।

বই পাঠ করার একটি সুন্দর স্থান হলো শাহবাগ কেন্দ্রীয় লাইব্রেরী। এটি সকলের মুখে প্রচলিত শব্দ। সেখানে যাওয়ার পর ঘটনার চিত্র এবং মানসিক ভাবনা পাল্টাতে সময় লাগে মাত্র এক মিনিট। যে লাইব্রেরীতে সাধারণ মানুষ বই পড়ার কথা, সেখানে এখন বিসিএস পড়ার মেলা বসে প্রতিদিন। একজন কে জিজ্ঞাসা করাতে তিনি বলেন , এখানে বই পড়ার জন্য এখন তেমন কেউ আসে না। সবাই চাকরির পড়ার জন্য আসে! আর যদি আপনি বই পড়তে আসতে চান তাহলে সকাল ছয়টার মধ্যে আসতে হবে লাইন ধরার জন্য। আর যদি ওই সময় না আসেন তাহলে বসার সিট পাবেন না।

শহরের কেদ্রীয় লাইব্রেরীগুলোতে এখন মানুষ বই পড়তে যায় না। কারণ বাজারে সরকারি চাকরির দাম অনেক বেশি।সুতরাং জীবনের প্রয়োজনে হোক বা শিক্ষাব্যবস্থার কারণে হোক চিত্রটি এখন পালটে গেছে সবার চোখের সামনে।

মানুষ স্বাধীন! তাই সে তার ভাবনা কে কিভাবে পরিচালিত করবে তার নিজস্ব বিষয়। বর্তমান প্রজন্ম যদি জ্ঞানহীনভাবে বড় হতে থাকে, তাহলে এমন একদিন আসবে মেধা শূনতায় ভুগবে দেশ। প্রথম বর্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশি ভাগ শিক্ষার্থী বিসিএস পরীক্ষার পড়া নিয়ে ব্যস্ত থাকে। কারণ তারা ও দেখছে সিনিয়রা এভাবে তাদের পড়াশুনা চালিয়ে যাচ্ছে বা গিয়েছে।

একজন শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি হওয়ার পর থেকে, তার জ্ঞানের ভাণ্ডার দিয়ে নিজেকে সর্বোচ্চ শিখরে নিয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু মাঠের চিত্র তা বলছে না! এই দায় কে নেবে? জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ড. মীজানুর রহমান স্যার একটি বেসরকারি টেলিভিশনে অভিমান করে বলে ফেলেন ‘বর্তমান শিক্ষার্থীদের জন্য বিসিএস বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি করা দরকার’ একজন শিক্ষক কখন এমন কথা বলেন? যখন দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যায়।

প্রথম আলোর প্রতিবেদনে সংবাদ প্রকাশ ৪১তম বিসিএসে আবেদনকারী ৪ লাখ ৭৫ হাজার। নিয়োগ পাবে ২ হাজার ১৩৫ জন ব্যক্তি। তাহলে অন্যদের কি হবে? এই বিষয়ে কারো জানা আছে বলে মনে হয় না। অথচ রাত দিন মুখস্ত বিদ্যার পেছনে সময় খরচ করে যখন বিসিএস না হয় তখন বেশির ভাগ শিক্ষার্থী হতাশা নামক কালো মেঘের আড়ালে থাকেন। মুখস্ত বিদ্যা কখনো মেধার পরিচয় হতে পারে না!

আরও পড়ুনঃ

ঝাড়খন্ডের উৎসবে সেরা 'জলঘড়ি'

নিক্সনের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা: সিইসি

তারুণ্যের জয় ধ্বনি দিয়ে ভাষা আন্দোলন হয়েছিল। তারুণ্যের শক্তির কারণে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হয়েছে। তাহলে এই তারুণ্য আজ এমন মানসিক রোগে ভুগছে কেন? এর দায় ভার কে নিবে? অন্যদিকে দুর্নীতির ভয়ানক থাবা প্রতিটি সেক্টরে। এর কারণ কি কখনও কেউ ভেবেছেন? জ্ঞানহীন সমাজে কখনও দুর্নীতি বন্ধ হবে না! এই সমাজের তারুণ্য এখন কাগজে শিক্ষিত মগজে নয়।

জিএম/ এমকে

মন্তব্য করুন

daraz
  • মুক্তমত এর পাঠক প্রিয়
X
Fresh