• ঢাকা শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
logo

নারীর অগ্রযাত্রায় বঙ্গবন্ধু

আফরোজা নাইচ রিমা

  ১০ আগস্ট ২০২০, ২১:৫১
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান
সত্তরের নির্বাচনের ফলাফল শুনছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। পাশে তাজউদ্দিন আহমেদ এবং আওয়ামী লীগের সাত নারী নেত্রী

বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি সমাজকে দেখতে চেয়েছিলেন সমতার ভিত্তিতে।নারী ও পুরুষকে এক এবং সমান চোখে দেখাই ছিল তাঁর মহানুভবতা। আর এভাবেই নারীর অগ্রযাত্রা ও বঙ্গবন্ধু ওতোপ্রোতভাবে মিশে আছে। নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে জাতিসংঘ কর্তৃক গৃহীত হয়েছে সর্বজনীন মানবাধিকারের ঘোষণা-১৯৪৮।জাতিসংঘ ঘোষিত এর মূল কথা হল-প্রতিটি মানুষের সম্মানজনকভাবে বেঁচে থাকার জন্মগত অধিকার। মানুষ হিসেবে এই অধিকার প্রত্যেকের সমানভাবে প্রাপ্য। মানবাধিকারের প্রতি বঙ্গবন্ধুর প্রত্যয় ছিল দৃঢ় ও অবিচল।

সর্বজনীন মানবাধিকারের ঘোষণাপত্রে যে ৩০ টি অনুচ্ছেদ রয়েছে, লক্ষ্য করলে দেখা যায় যে এর প্রতিটিরই প্রতিফলন রয়েছে আমাদের সংবিধানে। উল্লেখ্য, জাতিসংঘ কর্তৃক নারীর প্রতি সব ধরনের বৈষম্য বিলোপ (সিডও)সনদ -১৯৭৯ গ্রহণের ফলে অনেক আগেই বঙ্গবন্ধু গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানে নারী-পুরুষের সমঅধিকারের স্বীকৃতি দিয়েছেন। সিডও সনদের ১৬ টি অনুচ্ছেদে নারীর প্রতি বৈষম্য বিলোপে যেসব অনুশাসন দেওয়া হয়েছে, তার প্রতিটি অনুশাসনই বঙ্গবন্ধুর সংবিধানে বিদ্যমান।

সংবিধানের প্রস্তাবনায়, দ্বিতীয় অধ্যায়ের মূলনীতিতে, সংবিধানের তৃতীয় ভাগে, ২৭ নং অনুচ্ছেদে, ২৮(২) অনুচ্ছেদে, ২৮(৪)উপ-অনুচ্ছেদে, ৬৫(৩) অনুচ্ছেদে নারীর জন্য জাতীয় সংসদের আসন সংরক্ষিত রাখা হয়। সংরক্ষিত আসনে ১৫ জন নারী সদস্য নিয়ে প্রথম সংসদের যে যাত্রা শুরু, পরবর্তীকালে তা পর্যায়ক্রমে বৃদ্ধি পেয়ে ৫০ জনে উন্নীত হয়।সংরক্ষিত আসনের ব্যবস্থা থাকলেও ৬৫(২)অনুচ্ছেদের অধীনে প্রত্যক্ষভাবে ৩০০ আসনে ও নারীর অংশগ্রহণের সমান সুযোগ রয়েছে।

ছয় দফা আন্দোলনে গ্রেফতার হওয়ার আগে আমেনা বেগমকে (১৯২৫-১৯৮৯) দলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের পদে মনোনয়ন দেন বঙ্গবন্ধু। এই সময় আওয়ামী লীগের কোনো কোনো বয়োজ্যেষ্ঠ নেতা আপত্তি তুলেছিলেন।বঙ্গবন্ধু তখন বলেছিলেন, "নারীদের ও পুরুষদের মতো সমান অধিকার এবং তা রাজনীতির ক্ষেত্রেও। আওয়ামী লীগ যেমন অসাম্প্রদায়িকতায় বিশ্বাস করে, তেমনি নর-নারীর সমান অধিকারে ও বিশ্বাস করে। আওয়ামী লীগেও নারী নেতৃবৃন্দ গড়ে তোলা দরকার। ১৯৭৩ সালে মন্ত্রিসভায় শিক্ষামন্ত্রী অধ্যক্ষ বদরুন্নেসা এবং সমাজকল্যাণ মন্ত্রী অধ্যাপিকা নুরজাহান মোরশেদ কৃতিত্বের পরিচয় দিয়েছিলেন। এবং ১৯৭৪ সালে একজন নারীকে বাংলা একাডেমীর মহাপরিচালক নিয়োগ করা হয়।

বাংলার নারীদের সম্মান ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় বঙ্গবন্ধু স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম নারী সংগঠন মহিলা সংস্থার ভিত্তি রচনা করেন।শিশু ও কিশোরীদেরকে আত্মমর্যাদাবোধ প্রতিষ্ঠা, দেশপ্রেম ও নৈতিকতার শিক্ষায় শিক্ষিত করে বঙ্গবন্ধু পূর্ব পাকিস্তান গার্লস গাইড এসোসিয়েশনকে ঢেলে সাজান।স্বাধীন দেশে বাংলাদেশ গার্লস গাইড এসোসিয়েশনকে পুনর্গঠিত করার জন্য বঙ্গবন্ধু বর্তমান সংসদ উপনেতা ও বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীকে দায়িত্ব দেন।

বীরাঙ্গনা ও যুদ্ধশিশুদের পুনর্বাসনে বঙ্গবন্ধুর অবদান ইতিহাস শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে।সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধে নির্যাতিত নারীদের সামাজিক স্বীকৃতি ও সম্মান প্রতিষ্ঠায় বঙ্গবন্ধু তাঁদের দিয়েছিলেন "বীরাঙ্গনা " উপাধিটি।স্বাধীনতার দীর্ঘ ৪৪ বছর পর ২০১৫ সালের অক্টোবরে এসে বীরাঙ্গনারা মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের বিশেষ স্বীকৃতস্বরুপ মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি পান।বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা জাতির কলঙ্ক মোচনের আরেকটি ধাপ সম্পন্ন করেন নিজের স্বভাবজাত আন্তরিকতায়। বীরাঙ্গনা ও যুদ্ধশিশুদের পুনর্বাসনে বঙ্গবন্ধু গঠন করেন বাংলাদেশ পুনর্বাসন বোর্ড ঢাকার ধানমন্ডিতে যে পুনর্বাসন কেন্দ্রটি ছিল তা পরিচালনা করতেন বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব।

তাঁদের জন্য আশ্রয় ও ভাতার ব্যবস্থা, কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ প্রদান, নারীদের উৎপাদনমুখী কর্মকাণ্ডে নিয়োজিত করা যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত নারীদের চিকিৎসায় ব্যবস্থা করা, তাদের ছেলেমেয়েদের পড়ালেখার জন্য বৃত্তিপ্রথা চালুসহ নানাবিধ কাজ করার জন্য ঢাকার বেইলী রোডে চালু করা হয় সেক্রেটারিয়েল কোর্স, মোহাম্মদপুরে ব্যবস্থা করা হয় সেলাই ও কারুশিল্প প্রশিক্ষণের,সাভারে খোলা হয় পোলট্রি ফার্ম।

বাংলাদেশের পরিবার পরিকল্পনা সমিতি, বাংলাদেশ সেন্ট্রাল অর্গানাইজেশন ফর রিহ্যাবিলিটেশন, মাদার তেরেসার মিশনারিজ অভ্ চ্যারিটির মাধ্যমে বহু যুদ্ধশিশুকে বিদেশে দত্তক দেওয়া হয়। তবে দত্তক হয়নি এমন শিশুদের বিভিন্ন শিশুসদনে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হয়। এর জন্য ১৯৭২ সালে ইধহমষধফবংয অনধহফড়হবফ ঈযরষফৎবহ (ঝঢ়বপরধষ চৎড়ারংরড়হং) ঙৎফবৎ, ১৯৭২(চ.ঙ.ঘড়.১২৪ ড়ভ ১৯৭২) জারি করা হয়।

তিনি ওইসব নির্যাতিত নারীর পুনর্বাসনের জন্য ১৯৭২ সালেই গঠন করেন 'নারী পুনর্বাসন বোর্ড '', বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ তারা দিনরাত পরিশ্রম করে খুঁজে খুঁজে বের করে নির্যাতনের শিকার নারীদের তালিকা করেন।তাদের জন্য বৃত্তিমূলক কাজের এবং পারিবারিক ও সামাজিকভাবে তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করেন। অধ্যাপক নীলিমা ইব্রাহিম, এডভোকেট মমতাজ বেগমের মতো তৎকালীন ১১জন প্রখ্যাত শিক্ষক -নারী নেত্রী ও রাজনৈতিক কর্মী ওই বোর্ডের সদস্য ছিলেন। নির্যাতিত বিপুলসংখ্যক নারীর পুনর্বাসনে এই বোর্ড অক্লান্ত পরিশ্রম করেছে।এই সময়ে বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিবের প্রচেষ্টায় ১০ জন বীরযোদ্ধা নারীকে বিবাহ দেওয়া হয়েছিল।

বঙ্গবন্ধু প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় (১৯৭৩-১৯৭৮)স্বাধীনতা যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত নারীদের বিষয়টি প্রাধান্য দেন।তাদের জন্য শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা ও সমাজ কল্যাণমূলক কিছু কর্মসূচি গৃৃহীত হয়।শহীদের স্ত্রী ও কন্যাদের জন্য চাকরি,ভাতার ব্যবস্থা করা হয়।

১৯৭৪ সালে নারী উন্নয়ন বোর্ডকে পুনর্গঠন করে সংসদে আ্যক্টের মাধ্যমে নারী পুনর্বাসন ও কল্যাণ ফাউন্ডেশনে রুপান্তর করা হয়।এই ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের পথটি তৈরি হয়।এই সময় নারী উন্নয়নের জন্য বেশ কিছু পদক্ষেপ গৃৃহীত হয়।এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে - ১। জেলা ও থানা পর্যায়ে ভৌত অবকাঠামো গড়ে তোলা। ২।বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে নারীর ব্যাপক কর্মসংস্থানের পথ প্রশস্ত করা। ৩। নারীকে উৎপাদনমুখী কর্মকাণ্ডে নিয়োজিত করে তাদের পণ্যের বিক্রয় ও প্রদর্শনী র ব্যবস্থা এবং দিবাযত্ন কেন্দ্র চালু করা। ৪।ক্ষতিগ্রস্ত নারীদের চিকিৎসাসেবা চালু করা এবং তাদের ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার জন্য বৃত্তিপ্রথা চালু।এটি বর্তমানে মহিলা বিষয়ক অধিদফতরের আওতায় 'দুস্থ মহিলা 'ও 'শিশু কল্যাণ তহবিল 'নামে পরিচালিত হচ্ছে।
বঙ্গবন্ধু উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন নারীর সামাজিক সম্মান ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠার গুরুত্ব।

বঙ্গবন্ধুর শৈশব থেকেই স্বপ্নের সাথী হয়েছেন বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব। খুব অল্প বয়সেই তাঁর চাচাতো বোন ফজিলাতুন নেছার সাথে বিয়ে হয়।একটি স্বাধীন দেশের জন্মের পেছনে বঙ্গবন্ধুর নামের সঙ্গে যে নামটি উচ্চারিত হয় তা হচ্ছে ফজিলাতুন নেছা মুজিব। তিনি ছিলেন বঙ্গবন্ধুর প্রতিটি কাজের প্রেরণার উৎস।তিনি পর্দার অন্তরালে থেকে নিয়মিত স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রেরণা যুগিয়েছেন।

বঙ্গবন্ধু উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন নারীর সামাজিক সম্মান ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠার গুরুত্ব। ব্যক্তিজীবনেও তিনি বেগম মুজিবকে অত্যন্ত সম্মানের চোখে দেখতেন।বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিবের নানা পরামর্শ গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করতেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ২৬ মার্চ ১৯৭২,রাজধানীর আজিমপুর বালিকা বিদ্যালয়ে মহিলা ক্রীড়া সংস্থানের অনুষ্ঠানে বলেন,"আমার জীবনেও আমি দেখেছি যে গুলির সামনে আমি এগিয়ে গেলেও কোনো দিন আমার স্ত্রী আমাকে বাধা দেয় নাই।এমনও আমি দেখেছি যে অনেকবার আমার জীবনের ১০/১১ বছর টানা জেল খেটেছি, জীবনে কোনো দিন মুখ খুলে আমার ওপর প্রতিবাদ করে নাই।তাহলে বোধ হয় জীবনে অনেক বাধা আমার আসত।এমন সময়ও দেখেছি যে আমি যখন জেলে চলে গেছি,আমি এক আনা পয়সাও দিয়ে যেতে পারি নাই আমার ছেলে মেয়ের কাছে।আমার সংগ্রামে তার দান যথেষ্ট আছে। পুরুষের নামে ইতিহাস লেখা হয়,মহিলার নাম ইতিহাসে বেশি লেখা হয় না। সেজন্য আজকে আপনাদের কাছে কিছু ব্যক্তিগত কথা বললাম। যাতে পুরুষ ভাইরা আমার,যখন কোনো রকমের সংগ্রাম করে নেতা হন,তাদের মনে রাখা উচিত, তাদের মহিলাদেরও যথেষ্ট দান রয়েছে এবং তাদের স্থান দিতে হবে। তিনি বাংলাদেশে প্রথম নারী সংগঠন জাতীয় মহিলা সংস্থার ভিত্তি রচনা করেন। বঙ্গবন্ধু নারীর সার্বিক উন্নয়ন ও তাদের অবস্থার পরিবর্তনের লক্ষ্যে একটি সাংগঠনিক কাঠামো তৈরি র জন্য সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেন।এরই পরিপ্রেক্ষিতে গঠিত হয় জাতীয় মহিলা সংস্থা।

বঙ্গবন্ধু নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের ওপর জোর দিয়ে বলতেন,নারীর নিজস্ব আয় থাকলে পরিবারেও সম্মান বাড়ে।যদি তার সামান্য কিছু টাকাও থাকে পরিবারে তার গুরুত্ব বাড়ে এবং পরিবার তাকে সম্মানের চোখে দেখে।বঙ্গবন্ধু উপলব্ধি করেছিলেন পরিবার থেকেই নারীর ক্ষমতায়ন শুরু করতে হবে।নারীর অর্থনৈতিক স্বাধীনতার জন্য তার উপার্জনের লক্ষ্যে স্বাধীনতার পর নারীকে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত করার জন্য প্রয়োজন হয়ে পড়ে বিভিন্ন প্রশিক্ষণের।এই প্রেক্ষাপটে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে চালু করা হয় বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কর্মসূচী। গ্রামীণ নারীরা কৃষিকাজে যুক্ত ছিলেন বলেই তাদের প্রাতিষ্ঠানিকভাবে কৃষিকাজে সম্পৃক্ত করার কথা ভাবেন। এই লক্ষ্যে ১৯৭৩ সালে সাভারে মহিলা বিষয়ক অধিদফতরের ৩৩ বিঘা জমির ওপর চালু করা হয় কৃষিভিত্তিক কর্মসূচি। অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক মুক্তির মূল ভিত্তি নারীর শিক্ষা। নারী শিক্ষায় গুরুত্ব দিয়ে জাতির পিতা চালু করেন স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন মন্ত্রণালয়ের অধীনে গণশিক্ষা কার্যক্রম। নারীরা ব্যাপকভাবে এতে অংশ নেন।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মনে প্রাণে নারী-পুরুষের সমঅধিকারে বিশ্বাস করতেন।নারী-পুরুষ সমানভাবে এগিয়ে না এলে কোনো দেশের উন্নতি সম্ভব নয়,তিনি তা উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন।'আমার দেখা নয়াচীন' গ্রন্থে তিনি লিখেছেন-'নয়াচীনের মেয়েরা আজকাল জমিতে, ফ্যাক্টরিতে,কল-কারখানাতে, সৈন্য বাহিনীতে দলে দলে যোগদান করছে।সত্য কথা বলতে গেলে, একটি জাতির অর্ধেক জনসাধারণ যদি ঘরের কোনে বসে শুধু বংশবৃদ্ধির কাজ ছাড়া আর কোনো কাজ না করে তাহলে সেই জাতি দুনিয়ায় কোনো দিন বড় হতে পারে না।নয়াচীনে পুরুষ ও নারীর সমান অধিকার কায়েম হওয়াতে আজ পুরুষ জাতি অন্যায় ব্যবহার করতে পারে না নারী জাতির ওপর।তিনি আরও লিখেন, 'নয়াচীনের উন্নতির প্রধান কারণ পুরুষ ও মহিলা আজ সমানভাবে এগিয়ে এসেছে দেশের কাজে, সমানভাবে সাড়া দিয়েছে জাতি গঠনমূলক কাজে,তাই জাতি আজ এগিয়ে চলেছে উন্নতির দিকে'।(আমার দেখা নয়াচীন, শেখ মুজিবুর রহমান, বাংলা একাডেমি)।

নারীর উন্নয়নে, ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ সরকার ইতিমধ্যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। দৃশ্যমান অনেক পরিবর্তন হয়েছে। এত কিছুর পরও কথা থেকে যায়,বন্ধ হয়নি নারীর প্রতি সহিংসতা, এখানো নারী ঘরে বাইরে নির্যাতিত হচ্ছে। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলায় এখনো নারী ধর্ষণের শিকার হচ্ছে। কর্মক্ষেত্রে, শিক্ষা -প্রতিষ্ঠানে, গণপরিবহনে, এমনকি রাস্তাঘাটে নারী যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছে, নারীর প্রতি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্ত ন হয় না।এখনো নারীকে দেখা হয় পুরুষের অধস্তন হিসেবে, এখনো সবক্ষেত্রে অর্জিত হয়নি নারী পুরুষের সমতা। জাতির পিতার স্বপ্ন সেদিন সার্থক হবে যেদিন জীবনের সর্বক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত হবে নারী -পুরুষের সমতা আর একটি ও নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটবে না।নারীর ক্ষমতায়নে আমাদের যেতে হবে আরও বহুদূর। বঙ্গবন্ধু যে তার আত্মজীবনী ও কারারুদ্ধ দিনগুলোর বিষদ বর্ণনা দিয়ে দুইখানি গ্রন্থ রচনা করেছেন তা কেবল স্ত্রীর পুনঃপুনঃ তাগাদা এবং জেলে থাকাকালীন তাকে খাতা -কলম কিনে দিয়ে বারবার উৎসাহ দেওয়ার ফলেই সম্ভব হয়েছে। বঙ্গবন্ধু দুই কন্যা ও তিন পুত্রের জনক হওয়া সত্ত্বে ও জ্যেষ্ঠ কন্যা শেখ হাসিনার সঙ্গেই বেশি নৈকট্য বোধ করতেন এবং রাজনীতি, তার স্বপ্ন ও দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে তাঁর সঙ্গেই বেশি আলাপ করতেন।ভাই বোনের মধ্যে ও তিনি তার মেজ আপার সঙ্গেই সবচেয়ে নৈকট্য অনুভব করতেন। ওই সত্তরের দশকেও তিনি সাগ্রহে বাড়ির জ্যেষ্ঠ পুত্রবধূ হিসেবে ঘরে বরণ করে নিয়েছিলেন তখনকার দিনের মস্ত বড় খেলোয়াড় ও সাঁতারু সুলতানা কামালকে।

আফরোজা নাইচ রিমা, সিনিয়র তথ্য অফিসার, তথ্য অধিদফতর

এসজে

মন্তব্য করুন

daraz
  • মুক্তমত এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
বশেমুরবিপ্রবি অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের নেতৃত্বে হিরা-মনিরুল
আওয়ামী লীগের আলোচনাসভা আজ
রোববার টুঙ্গিপাড়া যাচ্ছেন রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী
বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন উপলক্ষে আ.লীগের কর্মসূচি
X
Fresh