• ঢাকা বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৪ বৈশাখ ১৪৩১
logo

এমন বন্ধুর বিদায় বেদনা দুঃসহ

দুরুল হক

  ২৬ নভেম্বর ২০১৬, ১৭:০৯

‘আমি হিমালয় দেখিনি, দেখেছি শেখ মুজিবকে। ব্যক্তিত্ব এবং সাহসিকতায় তিনিই হিমালয়।’ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে প্রথম দেখায় এমনটাই উচ্চারিত হয়েছিল সমাজতান্ত্রিক বিশ্বের প্রাণপুরুষ ফিদেল কাস্ত্রোর কণ্ঠে। তিনি এ মন্তব্য করেছিলেন বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিত্ব ও সাহসিকতায় মুগ্ধ হয়ে। হিমালয়ের মতো সেই নেতার ডাকে মুক্তি সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়া বাঙালির প্রতিও সহানুভূতিশীল ছিলেন কাস্ত্রো। যার প্রমাণ মেলে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়ায়। আসলে বিশ্বের যে প্রান্তেই শোষিত-নিপীড়িত মানুষ, প্রমিথিউসের মতো সেখানেই ছিল এ বিপ্লবীর দীপ্তিমান উপস্থিতি।

স্বাধীনতাকামী বহু দেশের পক্ষে দাঁড়িয়ে জাতীয়তাবাদী আন্দোলনকারীদের কাছেও শ্রদ্ধার পাত্র ফিদেল। যুক্তরাষ্ট্রের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে সমাজতান্ত্রিক কিউবা প্রতিষ্ঠাকারী এ বিশ্বনেতা সারাদুনিয়ায় সমাজতন্ত্রের আন্দোলনকারীদের চোখে ছিলেন বীর। আর নিজ দেশের মানুষের চোখে ফিদেল হচ্ছেন ‘দেশের মানুষের কাছে দেশ ফিরিয়ে দেয়ার মহানায়ক’। দেরিতে হলেও তার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে ভুলেনি বাংলাদেশ। একাত্তরে মুক্তিকামী বাঙালির পক্ষে দাঁড়ানোয় ২০১৩ সালে ফিদেল কাস্ত্রোকে ‘মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননা’ ভূষিত করে আওয়ামী লীগ সরকার।

১৯২৬ সালের ১৩ আগস্ট কিউবার পূর্বাঞ্চলে বিরান জেলায় স্পেনীয় বংশোদ্ভূত অভিবাসী পরিবারে জন্ম নেন ফিদেল কাস্ত্রো। তার বাবা ছিলেন কৃষক। মাত্র ২১ বছর বয়সে বামপন্থি রাজনীতিতে যুক্ত হন তিনি। বিশ্বব্যাপী পুঁজিবাদী আগ্রাসনের বিপরীতে ১৯৫৯ সালে সমাজতান্ত্রিক কিউবার গোড়াপত্তন করেন এ বিপ্লবী। যুক্তরাষ্ট্রের মদদপুষ্ট কিউবার একনায়ক ফুলগেন্সিও বাতিস্তাকে সরিয়ে গণবান্ধব শাসনকাঠামো গড়ে তোলেন তিনি। স্নায়ুযুদ্ধ এবং বিশ্বব্যাপী পুঁজিবাদের আগ্রাসী বিস্তারের বিপরীতে সমাজতান্ত্রিক কিউবাকে অটল রাখেন ইতিহাসের এ প্রবাদপুরুষ।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে ও স্বাধীনতা-উত্তর দেশ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন ফিদেল কাস্ত্রো। বিশেষ করে স্বাধীনতা যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রসহ কয়েকটি পুঁজিবাদী রাষ্ট্র অসহযোগিতা করলে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের পাশে এসে দাঁড়ায় কিউবা। দেশটির নায়ক হিসেবে বাংলাদেশকে দেন কূটনৈতিকসহ নানা পরামর্শ। যা বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের নায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গেও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল এ কমিউনিস্ট নেতার। ১৯৭৪ সালে আলজিয়ার্সে জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনের সম্মেলনে বৈঠক হয় তাদের। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্ব, দৃঢ়তা, তার সিদ্ধান্ত নেয়ার অবিচলতায় অভিভূত হয়েছিলেন কাস্ত্রো।

জরাজীর্ণ দেশকে গড়ে তুলতে বঙ্গবন্ধু যখন বিশ্ব দরবারে সাহায্যের আবেদন জানান, তাতে স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন দেন ফিদেল কাস্ত্রো। তবে কিউবার সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখার জন্য বঙ্গবন্ধুকে সইতে হয় নানা যাতনা। গভীর ষড়যন্ত্র করে তাজউদ্দীন আহমদের মতো যোগ্য নেতাকেও তার পাশ থেকে নিভৃতে সরিয়ে দেয়া হয়। পরে তিনি নৃশংসভাবে সপরিবারে নিহত হন।

১৯৭৫ সালে ১৫ আগস্ট যখন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে পরিবারসহ হত্যা করা হয়, তখন ফিদেল কাস্ত্রো বেশ দুঃখ নিয়ে বলেন- ‘শেখ মুজিবের মৃত্যুতে বিশ্বের শোষিত মানুষ হারালো তাদের একজন মহান নেতাকে, আমি হারালাম একজন অকৃত্রিম বিশাল হৃদয়ের বন্ধুকে।’

বিদায় নিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সেই অকৃত্রিম বন্ধু। দুনিয়ার বঞ্চিত মানুষের নেতা, বাঙালির মুক্তিসংগ্রামের সুহৃদ ফিদেল কাস্ত্রো আর সরব হবেন না কোনো বৈষম্য নিয়ে, কোনো অধিকার আদায়ের প্রশ্নে। কিন্তু ন্যায়ের পক্ষে তার ইস্পাতকঠিন অবস্থান, তার অনমনীয়তা চিরকাল উৎস হয়ে থাকবে অনুপ্রেরণার।

এস/এসজেড

মন্তব্য করুন

daraz
  • ফিচার এর পাঠক প্রিয়
X
Fresh