• ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
logo

ভুলতে চাইনা তোমায়

আরটিভি অনলাইন ডেস্ক

  ০২ নভেম্বর ২০১৬, ১৪:০৯

দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে পাকিস্তান সৃষ্টির বিরোধিতা করেছিলেন। কিন্তু তা ঠেকাতে পারেননি। তবে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি করে তাতে সফল হয়েছেন। বলছি সংগ্রামী নেতা ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের কথা। ১৮৮৬ সালের ২ নভেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের উত্তরে রামরাইল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত। ছেলেবেলা থেকে সামাজিক, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয় ছিলেন এ নেতা। রাজনীতিতে তার হাতেখড়ি হয় ১৯০৫ সালের পর বঙ্গভঙ্গবিরোধী আন্দোলনে অংশ নেয়ার মধ‌্য দিয়ে।

১৯৪৮ সালে উর্দুকে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা ঘোষণার পর গণপরিষদে ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার প্রস্তাব সাম্প্রদায়িক সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভোটে নাকচ হয়। কিন্তু এজন্য পূর্ব বাংলায় তিনি বীরের মর্যাদা পান। বাংলা ভাষার দাবি, বাঙালির স্বাধীকারের দাবির আন্দোলনে প্রথম ফুলকি জ্বেলেছিলেন তিনিই। শুরু হয় ভাষার দাবিতে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে আন্দোলন। বাংলাকে গণপরিষদের ভাষা, রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ সারা প্রদেশে ছাত্র ধর্মঘট হয়। সেই আন্দোলন থেকে গ্রেপ্তার হন তখনকার ছাত্রনেতা শেখ মুজিবুর রহমান ও অলি আহাদ।

এক পর্যায়ে বাংলা পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি পায়। ভাষা আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ১৯৭১ সালে সশস্ত্র সংগ্রামের মধ্য দিয়ে আসে বাংলাদেশের স্বাধীনতা। ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর ইউনেস্কোর ঘোষণায় ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসাবে স্বীকৃতি পায়। কিন্তু যার জন্য বাংলা আজ বিশ্ব দরবারে, তাকে ভুলতে বসেছে বাঙালি জাতি। তার জন্ম ও মৃত্যু দিবসেও হয়না স্মরণ।

১৯১১ সালে কুমিল্লা বারে শিক্ষকতার মাধ্যমে কর্মজীবন শুরু সংগ্রামী এ নেতার। ১৯১৫ সালের বন্যায় ব্যাপক ত্রাণ তৎপরতা চালিয়ে আলোচিত হন। পরে মহাত্মা গান্ধীর আদর্শে সমাজকল্যাণমূলক সংস্থা ‘মুক্তি সংঘ’ গঠন করেন।

১৯৩৬ সালে ধীরেন্দ্রনাথ ত্রিপুরা জেলা বোর্ডের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৪৩ সালের দুর্ভিক্ষেও তিনি ত্রাণ তৎপরতা চালান। পরের বছর যোগ দেন ‘ভারত ছাড়’ আন্দোলনে।

ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে থাকায় কয়েকবার গ্রেপ্তার হন ধীরেন্দ্রনাথ। ধর্মের ভিত্তিতে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করলেও তখনকার ত্রিপুরা জেলার বিভক্তির পর জন্মভূমিতেই থেকে যান।

১৯৪৬ সালের নির্বাচনে কংগ্রেসের পক্ষে বঙ্গীয় ব্যবস্থাপক সভার সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। ওই বছর ডিসেম্বরে পূর্ববঙ্গ থেকে পাকিস্তান গণপরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন।

১৯৫৬ সালে গঠিত আওয়ামী লীগের আতাউর রহমান খানের প্রাদেশিক সরকারের মন্ত্রিসভায় পূর্ব পাকিস্তানের স্বাস্থ্য ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত।

শেরে বাংলা একে এম ফজলুল হক, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও অন্যান্যদের সাথে ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত

পাকিস্তানে সামরিক শাসন জারি হবার পর ১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সময় ধীরেন্দ্রনাথকে গৃহবন্দি করা হয়। এরমধ‌্য দিয়ে তাকে সক্রিয় রাজনীতি থেকে নিষ্ক্রিয় করার চেষ্টা হয়।

১৯৭১ সালের ২৯ মার্চ রাতে ছেলে দিলীপকুমার দত্তসহ ধীরেন্দ্রনাথ দত্তকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয় ময়নামতী সেনানিবাসে। সেখানেই তাকে নির্যাতন করে শহীদ করা হয়।

এমকে/এফএস

মন্তব্য করুন

daraz
  • ফিচার এর পাঠক প্রিয়
X
Fresh