• ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
logo

কঠিন বাস্তবতার মাঝেও মানুষ আশা নিয়ে বেঁচে থাকে

মো: গোলাম মোস্তফা (দুঃখু)

  ২৭ অক্টোবর ২০২০, ১৫:২২
পথিক তুমি মানুষ হবে তো

প্রতিটি রাতে স্বপ্ন নিয়ে ঘুমোতে যায় বেনামি কতগুলো মানবপ্রাণী। ছোট আশা নিয়ে এরা সবাই রাতে ঘুমোতে যায় সকালের আলো দেখবে বলে। কিন্তু প্রতিটি সকালই তাদের কাছে বিষাক্ত হয়ে আবির্ভূত হয়। এভাবেই কাটছে পথবাসী ও পথশিশুদের প্রতিটি দিন।

পৃথিবীতে এত কঠিন বাস্তবতার মাঝেও মানুষ আশা নিয়ে হয়তো বেঁচে থাকে। ভালোবাসা অনেক রকম হয়ে থাকে, মা-বাবার সঙ্গে সন্তানের, প্রিয়তমার কাছে প্রিয় মানুষটির, এমন অনেক উদাহারণ আছে ভালোবাসার। কিন্তু এই সমাজে কিছু ভালোবাসার নাম নেই হয়তো তাদের পরিচয়গুলো আড়ালে হারিয়ে যায় না বলা গল্পের মতো করে।

বর্তমানে রাতের ঢাকাতে আলো আছে, কিন্তু মানুষ নেই! সকালের পাখির ডাক আছে, তবে মানবতার সুর নেই। সবাই বাঁচার আশায় ঘরের চার দেয়ালের মাঝে বন্দী হয়ে আছে, কিন্তু নিয়মের কাছে হার মেনে বসে আছে নাম না থাকা ও বেনামি মানুষগুলো। সেই মানুষগুলোর খবর কি আমরা কেউ রাখি? না রাখি না। কারণ, আমাদের চিন্তা এমনভাবে পরিচালিত হচ্ছে, যা দেখে মনে হতেই পারে আমরা মানুষ হওয়া থেকে অনেক দূরে।

রাতের শহরে মায়া আছে, যদিও ছন্দ মাতন শহর কল্পনার মতো করে মাতাল করে রাখে মানুষগুলোকে। অন্যদিকে রাস্তার পথশিশুগুলো অনাহারে শুয়ে আছে দিনের আলোর অপেক্ষায়। আরেক দিকে সাহেবরা খাবারের প্যাকেট নিয়ে এসে খাবার দিয়ে চলে যাবে সঙ্গে সেলফিত আছে। কিন্তু আমরা কি কখনো তাদের মনের কথা জানতে চেয়েছি? না চাইনি কারণ আমাদের কার্যক্রম লোক দেখানোর জন্য। কখনো কি জিজ্ঞেস করেছি তোমার বাড়ি কোথায়? না করিনি। কারণ, আমাদের সময় নেই তাদের জন্য।

তবে মাঝে মাঝে কঠিন বাস্তবতার মাঝে কিছু ভালো মানুষ হয়তো তাদের গল্প শুনেন, কিন্তু এটা নেহায়েত কম। কিছু দিয়ে তো আশার গল্প হয় না! সবাই বলি আমার সন্তান, আমার মা, আমার বাবা, আমার ভাই অথবা আমার বোন। কিন্তু একবার কি আমরা ভেবেছি, যাদের রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখি তারা কারা? তাদের কি পরিচয়? আমরা ভাবিনি! কারণ তাদের নিয়ে ভাবনার কারণ নেই।

নিজ ছেলেমেয়ের সঙ্গে সময় কাটাচ্ছি! নিজের সন্তানদের মুখে খাবার তুলে দিচ্ছি। আর হাসির মাতন সুরে ভাবছি। সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে ভেবে রাতের ঘুম হারাম করছি। পৃথিবীর কঠিনতম সত্য হলো এমন গল্প, যখন সমাজের সামনে আসে মুখের ভাষার ছন্দ-মাতন শুরু হয়। কারণ সম্মান বলে একটি কথা আছে সবার নজরে থাকার জন্য। এভাবেই চলছে সার্কাস পর্দার আড়ালে। আর কতো অভিনয় চলবে ভালো মানুষ হয়ে থাকার!

তবে ধারণা করা হয় যে বাংলাদেশে ৬ লাখের বেশি পথশিশু বসবাস করছে এবং এদের ৭৫% ই রাজধানী ঢাকায় বসবাস করে। মানব উন্নয়ন সূচকে ১৩৮ তম স্থানে থাকা একটি দেশ, যেখানে জনসংখ্যার অর্ধেক মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে সেখানে এই শিশুরা সামাজিক স্তরগুলোর মধ্যে সর্বনিম্ন স্তরের প্রতিনিধিত্ব করে। দেশের জনসংখ্যা এখন বেড়েছে, আর রাস্তার শিশুর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে আনুমানিক ৪০ লাখ।

আমাদের কিছু চোখ নেশার তালে ঘুরপাক খাচ্ছে প্রতিনিয়ত, মানুষ দেখানোর কর্মসূচি নিয়ে এক প্যাকেট খাবার নিয়ে সেলফি তুলে আবার হারিয়ে যাওয়া। অন্যদিকে পথ শিশুরা খাবারের আশায় রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে প্রতিদিন। হয়তো কেউ আসবে তাদের জন্য খাবার নিয়ে, যদি না আসে তাহলে না খেয়ে হয়তো কোনও এক রাস্তায় ঘুমিয়ে পড়বে। কারণ, এটাই তাদের জীবন।

পথিক তুমি মানুষ হবে তো?

যদি একবার বলো মানুষ হবে,

বিশ্ব আবার নতুন করে সাজবে!

রাস্তায় পরে থাকা শিশুটির স্বপ্ন আছে, তবে কেউ না থাকার আকাঙ্খা। সে জানে ময়লা তার বিছানা! পচা খাবার তার স্বাদের বাহার। তার পরেও সে স্বপ্নের জালে ঘুমোতে যায় প্রতিটি রাতে। সে ভাবনায় থাকে কোন একদিন মা আসবে খোকা বলে ডাকবে। বাবা ফিরবে খেলনা নিয়ে। ভাই আসবে নতুন জামা নিয়ে। পরিচয় না থাকার আশাগুলো এমন ভাবে প্রাণ পেয়ে থাকে অদৃশ্য ভাবে।

পথিক তুমি ঘরে ফিরে চলো, আমি তোমাকে রাস্তা দেখিয়ে দেবো। রাতের ঢাকার আসমান নীরবতার সুর নিয়ে একা একা গল্প বলছে তাদের কাছে, যারা ঘরে ফিরতে চায়। নাম না থাকার মানুষগুলো হয়তো কোনও একদিন পরিচয় পাবে, সেই আশায় মানবতা বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখে।

জিএম/ এমকে

মন্তব্য করুন

daraz
  • ফিচার এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
শ্রদ্ধা-ভালোবাসায় শহীদদের স্মরণে প্রস্তুত জাতীয় স্মৃতিসৌধ
আরটিভিতে আজ যা দেখবেন
ব্যর্থ প্রেমের দুঃখ ভুলে ঘুরে দাঁড়ানোর দিন
আজ নারীর পক্ষ থেকে পুরুষকে বিশেষ প্রস্তাব পাঠানোর দিন, জানেন?
X
Fresh