পাওনা টাকা আনতে যাওয়াই কাল হলো আয়শার

কুষ্টিয়ায় সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয়ে ২২ দিন পর মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে মারা যায় আয়শা সিদ্দিকা ঝড়া (৩০)। রোববার রাত সাড়ে ১২টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আয়শা সিদ্দিকা ঝড়ার মৃত্যু হয় বলে কর্তব্যরত চিকিৎসক নিশ্চিত করেন। পাওনা টাকা আনতে গিয়ে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান ঝড়া। এই ঘটনায় গত ২১ জুন ঝড়ার মা লিপি খাতুন কুষ্টিয়া মডেল থানায় চারজনের বিরুদ্ধে হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ করেন।

এজাহার সূত্রে জানা যায়, গত ১১ জুন পাওনা টাকা ফেরত আনতে শহরের পুনাক ফুড পার্কে যান ঝড়া ও তার মা লিপি। সেখানে যাওয়ার পর দেনাদার রাশেদ আহমেদসহ আরও ৪ জন সেখানে ছিলেন। গিয়ে দেখি যুবলীগ নেতা মিজানুর রহমান মিজু, আনিসুর রহমান বিকাশ, বিপুল আহমেদ ও জাকির হোসেনসহ আরও ২-৩ জন সেখানে উপস্থিত। পূর্ব কথামতো রাশেদ পাওনা টাকা ফেরত দিতে অস্বীকার করে এবং ঝড়ার সঙ্গে ঝগড়া, তর্কাতর্কি ও কথা কাটাকাটিতে লিপ্ত হয়। ঘটনার এক পর্যায় সেখান থেকে রাত সোয়া ১০টার দিকে বেড়িয়ে মিজানুর রহমান মিজু, আনিসুর রহমান বিকাশ, বিপুল আহমেদসহ আমরা একটি সাদা রংয়ের গাড়িতে উঠে বাসার উদ্দেশে রওনা হই। বাসার সামনে হাউজিং এলাকায় পৌঁছা মাত্রই ৪ জন লোক আমাদের উপর হামলা করে। হামলার সময় গাড়িতে বসে থাকা মিজু ও বিকাশ বাইরে বের হননি। মিজু, বিকাশ, বিপুল ও রাশেদের যোগসাজশেই এই হামলা হয়েছে।

হামলায় গুরুতর রক্তাক্ত জখম অবস্থায় ওই নারীকে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। পরে অবস্থার অবনতি হলে রাতেই তাকে ঢাকাস্থ পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। তিনি ডা. নাজিম উদ্দিনের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন ছিলেন। রোববার রাত সাড়ে ১২টায় চিকিৎসাধীন আয়শা সিদ্দিকা ঝড়ার মৃত্যু হয় বলে কর্তব্যরত চিকিৎসক নিশ্চিত করেন।

কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. তাপস কুমার সরকার জানান, গত ১১ জুন রাত ১১টায় আয়শা সিদ্দিকা ঝড়া (৩০) নামে এক নারী রক্তাক্ত জখমে গুরুতর আহতাবস্থায় জরুরি বিভাগে আসেন। তার পিছন দিক থেকে ধারালো অস্ত্রের আঘাতে দুই পায়ের লিগামেন্টসহ রক্ত নালী বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ায় তার উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়। ওই রাতেই তারা রোগীকে অ্যাম্বুলেন্সযোগে ঢাকার উদ্দেশ্যে চলে যায়।

অভিযোগের বিষয়ে রাশেদ আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, আমার উপর অভিযোগটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। এর কোনো সত্যতা নেই। রাজনৈতিকভাবে আমাকে হেয় প্রতিপন্ন করতে একটি পক্ষ আমার বিরুদ্ধে উঠেপড়ে লেগেছে।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কুষ্টিয়া মডেল থানার পরিদর্শক তাপস কুমার পাল জানান, তদন্ত শুরু করেছি। কিছু প্রাসঙ্গিক আলামতসহ ঘটনাস্থলের আশপাশে থাকা ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করেছি। সেগুলি বিশ্লেষণ ও পর্যালোচনা চলছে। আশা করি খুব শিগগিরই জড়িদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনতে পারব।

এ ঘটনায় কুষ্টিয়া মডেল থানায় নিহতের মা বাদী হয়ে ২১ জুন ৫ জনের নাম উল্লেখসহ হত্যা চেষ্টার অভিযোগে করা মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেন ওসি সাব্বিরুল ইসলাম। তিনি জানান, গভীর রাতে শহরের হাউজিং এলাকায় নারীর উপর হামলা ও গুরুতর জখমের অভিযোগে করা মামলাটির তদন্ত চলছে। যারাই এ ঘটনায় জড়িত থাক তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।

এসআর/