ভিন্ন রূপে রাবি ক্যাম্পাস
দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিদ্যাপীঠ। ঘাস, লতা-পাতায় ছেয়ে গেছে তার আড্ডাস্থলগুলো। গাছে গাছে গজিয়েছে নতুন পাতা। গোলাপ, জবা, কৃষ্ণচূড়া ফুল ছড়াচ্ছে মন মাতানো সৌরভ। চারদিক থেকে ভেসে আসছে পাখিদের কিচিরমিচির শব্দ। চলার পথে হুট করেই সাক্ষাৎ মিলছে শেয়াল মামাদের সাথে। ঝোপ-ঝাড়ে বাসা বেঁধেছে দোয়েল, ঘুঘু, শালিক, ডাহুকসহ হাজারো পাখি। গাছের ডালগুলোতে খেলা করছে কাঠবিড়ালি। পুকুরগুলোতে ফুটেছে লাল শাপলা। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্জন ক্যাম্পাসের পুরোটা যেন সবুজে ভরে গেছে। চিরচেনা ক্যাম্পাস যেন ভিন্ন রূপ ধারণ করেছে।
গত ১৮ মার্চ করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে বন্ধ হয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখরিত মতিহারের সবুজ চত্বরে এখন সুনসান নীরবতা।
দীর্ঘ সাত মাসের ছুটিতে ক্যাম্পাসের চিরচেনা রূপ-ই যেন পরিবর্তন হয়ে গেছে। গাছে গাছে কচিপাতা। সবুজ আর সবুজ। সেই সবুজের আড়াল থেকে উঁকি দিচ্ছে কাঠবিড়ালি আর রং-বেরংয়ের পাখি। কান পাতলে কেবল পাখিদের কিচিরমিচিরই শোনা যায়। মানুষের অনুপস্থিতে প্রকৃতি যেন নিজের মতো সেজেছে।
ক্যাম্পাস ঘুরে দেখা যায়, ফাঁকা প্যারিস রোডের গগণ শিরিষ গাছগুলো যেন আরও সজীব হয়ে উঠেছে। শিক্ষার্থীদের প্রিয় নীল-সাদা বাসগুলো সারিবদ্ধ হয়ে পরিবহণ চত্বরে দাঁড়িয়ে আছে। ড. মুহাম্মদ শহিদদুল্লাহ ও মমতাজউদ্দিন কলা ভবনের ধার ঘেঁষে রাস্তায় সুভাষ ছড়াচ্ছে নানা প্রজাতির ফুল। শিক্ষার্থীদের প্রাণের আড্ডাস্থল টুকিটাকি চত্বর এখন পাখিদের দখলে। সেখানে আর কেউ চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে হারিয়ে যাচ্ছে না অতীত স্মৃতিচারণে। গিটারে সুরও তুলছে না কেউ। আম গাছগুলোর গায়ে খেলা করছে কাঠবিড়ালি।
শহীদ শামসুজ্জোহা হল সংলগ্ন পুকুর পাড়ে গিয়ে দাঁড়াতেই চোখে পড়লো লাল শাপলা। হবিবুর রহমান হল থেকে একটু পশ্চিমে যেতেই শোনা গেলো কিচিরমিচির শব্দ। সেই শব্দ ফাঁকা ক্যাম্পাসকে আরও প্রাণবন্ত করে তুলেছে। পাশেই বোটানিক্যাল গার্ডেনের গাছগুলোতে বসে আছে ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি। নিচেই ফিশারিজ বিভাগের গবেষণা পুকুরের স্বচ্ছ সবুজ পানিতে হাজারো পাখির ঝাঁপাঝাঁপি।
পড়ন্ত বিকেলে বোটানিক্যাল গার্ডেনের ধার ঘেঁষে চারুকলার রাস্তা ধরে এগুতেই দেখা গেলো দুটো শেয়াল পাশের ঝোপে প্রবেশ করে নিজেদের আড়াল করে নিলো। চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থীদের কাছে 'নিউজিল্যান্ড' নামে পরিচিত এই ঝোপের উপরে তাকাতেই দেখা গেলো উঁচু মেহগনি গাছগুলোতে ঝুলে আছে বাদুড়ের দল। নির্ভয়ে তাঁরা ডানা ঝাপটাচ্ছে। গাছপালা আর পশু-পাখিতে তৈরি হয়েছে মধুর মেলবন্ধন। যেন পুরো ক্যাম্পাস পশু-পাখিদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে।
এদিকে ক্যাম্পাসে পশুপাখি শিকার রোধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সর্বদা বদ্ধপরিকর বলে জানান প্রক্টর। প্রক্টর ও ছাত্র উপদেষ্টা (অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত) অধ্যাপক লুৎফর রহমান জানান, বন্ধ ক্যাম্পাসে পশুপাখির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তারা তৎপর রয়েছেন।
বন্ধ ক্যাম্পাসে অবাধ বিচরণ করতে পারায় পশুপাখিরা সহজেই বংশবৃদ্ধি করতে পারছেন বলে মনে করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহা। তিনি বলেন, ক্যাম্পাসের পশুপাখিদের অবাধ বিচরণের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিগত তিন বছরে প্রায় চার হাজার বৃক্ষ রোপণ করা হয়েছে। রোপণ করা ফলজ, বনজ ও ঔষধি প্রায় ২২ থেকে ২৩ প্রজাতির মতো উদ্ভিদ যা ক্যাম্পাসকে আরও সজীব করে তুলেছে। এসব উদ্ভিদের ফল খেয়ে পশুপাখিগুলো সহজে জীবন-ধারণ করতে পারবে।
পশুপাখিদের অবাধ বিচরণ নিয়ে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহা বলেন, যেখানে জনসমাগম বেশি সেখানে স্বাভাবিকভাবেই বন্যপ্রাণীদের চলাচল বাধাগ্রস্ত হয়। বর্তমানে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে অবস্থান না করায় ক্যাম্পাসের পশুপাখিগুলো স্বাচ্ছন্দ্যে বিচরণ করতে পারছে। প্রজননেও তেমন কোনো বাধার সম্মুখীন হচ্ছে না। ক্যাম্পাসের ঘুঘু ও বকগুলো তুলনামূলকভাবে ভীত প্রাণী হওয়ায় আগে তেমন জনসমক্ষে আসতো না। বর্তমানে অবাধ বিচরণের ফলে এরা সহজেই বংশবিস্তার করতে পারছে।
জিএ
মন্তব্য করুন