• ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
logo

বেতন-বোনাস না দেয়ায় এশিয়ান ইউনিভার্সিটির কথিত ভিসিকে ‘শোকজ’  ইউজিসির

আরটিভি অনলাইন রিপোর্ট

  ২৩ মে ২০২০, ১৯:২৩
UGC showcase to alleged VC Asian University for not paying salary-bonus directed
ছবি সংগৃহীত

নির্দেশ অনুযায়ী এবং আর্থিক সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন ও বোনাস না দেয়ায় ভুক্তভোগীদের লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ এর কথিত ভিসি ড. আবুল হাসান মুহাম্মদ সাদেককে নোটিশ দিয়ে ৭ কর্ম দিবসের মধ্যে ব্যাখ্যা চেয়েছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিভাবক প্রতিষ্ঠান ইউজিসি। ভুক্তভোগীরা ড. সাদেকের সীমাহীন দুনীতির কথাও অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেন।
ইউজিসি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয় বরাবর অভিযোগপত্রে বলা হয়- ‘গত ৭ মে সর্বোচ্চ ৮২% বেতন-ভাতা কেটে মাত্র ১৮% বেতন হিসেবে সর্বোচ্চ ১২ হাজার টাকা দিয়েছে; যা দিয়ে মাসিক খরচ তো দূরের কথা বাসা ভাড়াই আমরা দিতে পারছি না, মানবেতর জীবনযাপন করছি। আর পার্ট টাইম শিক্ষকদের কোনো বেতনই দেয়নি। গত ১৮ মার্চ আপনারা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করলেও আবুল হাসান সাদেক (যিনি রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত ভিসি নন কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের সব কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করেন এবং আড়াই লাখ টাকা বেতন নেন) আমাদের বাধ্য করেছেন ২৫ মার্চ পর্যন্ত খোলা রাখতে। এরপর বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করা হলেও ইউজিসির নির্দেশনা মোতাবেক অনলাইনে রাতদিন খেটে আমরা নিজস্ব খরচে (বিদ্যুৎ বিল, ইন্টারনেট বিল, মোবাইল/কম্পিউটার ডিভাইস কিনে) ক্লাস নিয়েছি। উল্লেখ্য, এখানকার নিয়ম অনুসারে শিক্ষার্থীরা সম্পূর্ণ বেতন না দিলে মিডটার্ম দিতে দেয়া হয় না। আমরা ছাত্রদের বেতন উত্তোলন নিশ্চিত করে মিডটার্ম নিয়ে ফলাফলও দিয়ে দিয়েছি বন্ধের আগে। প্রায় শতভাগ শিক্ষার্থী এই সেমিস্টারের বেতনও পরিশোধ করেছে। বরং এই বিভিন্ন বকেয়ায় প্রায় ১ কোটি টাকার মতো দেখিয়ে আমাদের বেতন বন্ধ করেছে সাদেক প্রশাসন। তিনি বর্তমানে পরিকল্পনা করছেন সকল শিক্ষক স্টাফ বাদ দিয়ে পার্ট টাইম শিক্ষকদের দিয়ে অনলাইন ভিত্তিক বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করবেন আর শিক্ষার নামে ছাত্রদের কাছে শুধু সার্টিফিকেট বিক্রি করবেন। বর্তমানে ৫টি বিভাগে পূর্ণকালীন শিক্ষক মাত্র একজন এবং কোনো হেল্পিং হ্যান্ড পিয়ন বা অফিসারও নেই।’
অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়- ‘এখনও তিনি প্রতিদিন শুধু স্বাক্ষর করে সার্টিফিকেট বিক্রি করে ৫-১০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন।’
গত ৭ মে বৃহস্পতিবার ইউজিসির বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিভাগের পরিচালক ড. মো. ফখরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত কার্যালয় স্মারকের মাধ্যমে এক নির্দেশনায় বলা হয়- ‘করোনা পরিস্থিতি চলাকালীন সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষক/কর্মকর্তা/কর্মচারীদের বেতন ভাতাদি পূর্বের ন্যায় নিয়মিতভাবে পরিশোধ করতে হবে’।
কিন্তু এই নির্দেশ অমান্য করে আর্থিক সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও শিক্ষক-স্টাফদের ঠিকমত বেতন-ভাতা প্রদান না করায় কথিত ভিসি ড. আবুল হাসান মুহাম্মদ সাদেককে চিঠি দিয়ে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়।
এদিকে, গত ১১ মে সোমবার বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ফোরামের প্রধান সমন্বয়ক কামরুল হাসান মামুন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে করোনা পরিস্থিতিতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সম্পূর্ণ বেতন-ভাতা পরিশোধ করার দাবি জানানো হয়। খুব দ্রুততম সময়ের মধ্যে এই অর্থ পরিশোধ করার কথা জানায় সংগঠনটি।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শিক্ষার্থীদের থেকে টিউশন ফি নিতে না পারায় বা নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ থাকায় আর্থিক সংকটে রয়েছে বলে বিশ্ববিদ্যালয় পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে। অথচ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্ষিক আর্থিক বিবরণী অনুযায়ী ন্যূনতম এক বছর শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতন-ভাতা দেয়ার মতো আর্থিক সক্ষমতা রয়েছে।


এ বিষয়ে ইউজিসির বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিভাগের পরিচালক ড. মো. ফখরুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি আরটিভি অনলাইনকে বলেন, শুধু লিখিত অভিযোগই নয় বহু শিক্ষক ফোন করে আমাকে বলেছেন বেতন বোনাসের বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য। আমরা মনে করি সবচেয়ে পুরোনো বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে এবং প্রচুর ছাত্রছাত্রী বিবেচনায় তাদের সামর্থ্য আছে বেতন ও বোনাস দেয়ার। করোনাকাল এবং মানবিক দিক চিন্তা করে সবার বেতন বোনাস দিয়ে দেয়া উচিত। প্রায় ৯৯ ভাগ বিশ্ববিদ্যালয় বেতন বোনাস ১৪ মে এর ভেতরে দিয়ে দিয়েছেন শুধু এই এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ছাড়া। এমনকি নতুন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও তেমন বাকি রাখেনি।
এ বিষয়ে এশিয়ান ইউনিভার্সিটির কথিত ভিসি ড. আবুল হাসান মুহাম্মদ সাদেকের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ধরেননি। পরে জনসংযোগ কর্মকর্তা জনাব সোহেলের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি কথিত ভিসি ড. আবুল হাসান মুহাম্মদ সাদেকের সঙ্গে কথা বলে জানাবেন বললেও পরে তিনিও আর ফোন ধরেননি।
বেশ কয়েকজন শিক্ষক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে এই প্রতিবেদককে ফোন করে বলেন, করোনা মহামারির এই দুর্যোগে মাত্র ১০/১২ হাজার করে টাকা দিয়েছেন অথচ তিনি দুর্নীতির মাধ্যমে সার্টিফিকেট জালিয়াতি করে হাজার হাজার কোটি টাকা মানি লন্ডারিং করেছেন মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া ও কানাডায়। আমরা চাই এই বিশ্ববিদ্যালয়ে যত দ্রুত সম্ভব সরকারি প্রশাসক বসানো হোক, সাদেকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির তদন্ত শুরু হোক এবং দুর্নীতিবাজ যেন দেশের বাইরে যেতে পারে সে ব্যাপারেও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হোক।


সি/

মন্তব্য করুন

daraz
  • শিক্ষা এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
ট্রুডোর নামে ভুয়া জন্মসনদ : ইউপি চেয়ারম্যান ও সচিবকে শোকজ
রাজশাহী-৪ আসনের এমপি আবুল কালামকে শোকজ
ইউজিসিতে অবস্থান নেওয়ার ঘোষণা ডিইউজের
জাবির ধর্ষণকাণ্ডে ইউজিসির আট সুপারিশ
X
Fresh