• ঢাকা বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৪ বৈশাখ ১৪৩১
logo

জাবিতে ফের আন্দোলনে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা, কড়াকড়ি অবস্থানে প্রশাসন

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সংবাদদাতা

  ১২ নভেম্বর ২০১৯, ২২:০৪
জাবিতে ফের আন্দোলনে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর একাংশ, কড়াকড়ি অবস্থানে প্রশাসন
জাবিতে ফের আন্দোলনে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর একাংশ, কড়াকড়ি অবস্থানে প্রশাসন

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলামের অপসারণের দাবিতে চলমান আন্দোলন দু’দিন বন্ধ থাকার পর মঙ্গলবার দিনব্যাপী নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে আবারও আন্দোলন শুরু করেছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

এদিন পটচিত্র প্রদর্শন ও বিকেলে সংহতি সমাবেশ করেছেন আন্দোলনকারীরা। অন্যদিকে আন্দোলনকে ঘিরে আবারও কড়াকড়ি অবস্থানে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। জোরদার করা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা। আন্দোলনকে ঘিরে বহিরাগত কেউ যেন ক্যাম্পাসে অপ্রীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি করতে না পারে সেজন্য নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের তৎপর থাকতে দেখা গেছে।

আজ সকাল থেকে নিরাপত্তা শাখার কর্মকর্তারা প্রত্যেকটি প্রবেশ ফটকে কড়া নজরদারিতে ছিল। এসময় তারা ক্যাম্পাসে আগত সকলের পরিচয় সনাক্ত করেন এবং শিক্ষার্থী ব্যতীত কাউকেই প্রবেশ করতে দেয়নি।

এদিকে কর্মকর্তারা আজ সকাল থেকে প্রশাসনিক কার্যক্রম পুরোপুরিভাবে চালু করলেও দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে আন্দোলনকারীরা পুরাতন প্রশাসনিক ভবনের ভেতরে গিয়ে কর্মকর্তা ও কর্মচারীদেরকে কাজ বন্ধ করে বের হয়ে যেতে বলেন। এসময় তারা বলেন, ‘আমাদের আন্দোলন শেষ হয়নি আপনারা বের হয়ে যান।’

কর্তব্যরত এক কর্মকর্তা বলেন, ‘আমিসহ অনেকেই সকাল থেকে কাজ করছিলাম। আন্দোলনকারীরা দুপুরের দিকে এসে আমাদেরকে বের করে দিয়েছে।’

অন্যদিকে আন্দোলনকারী শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের বাসায় পুলিশী হয়রানির অভিযোগ করেছেন আন্দোলনকারীরা। তবে সব বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করে আন্দোলন চালিয়ের যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। তারা ‘উপাচার্য অপসারণ’ না হওয়া পর্যন্ত সরবেন না বলে জানিয়েছেন।

পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে মঙ্গলবার সকাল ১১টা থেকে পুরাতন প্রশাসনিক ভবনের সামনে জড়ো হতে থাকেন আন্দোলনকারীরা। পরে ভবনের সামনে ‘উপাচার্যের দুর্নীতি’, আন্দোলনকারীদের উপর ছাত্রলীগের হামলাসহ নানা বিষয়ে পটচিত্র প্রদর্শন করা হয়। এরপর দিনের কর্মসূচির অংশ হিসেবে বিকেল চারটায় আন্দোলনকারীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার নিন্দা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করে আন্দোলনকারীরা।
এসময় ঢাকা থেকে আগত অতিথিরা পুরাতন প্রশাসনিক ভবনের সামনে আন্দোলনে সংহতি প্রকাশ করেন।

সংহতি সমাবেশে তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এখন খুবই দুঃখজনক পরিস্থিতির মধ্যে আছে। বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ, হল বন্ধ, ক্লাস বন্ধ, অনেকগুলো পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা ছিল সেগুলোও বন্ধ। শিক্ষার্থীরে জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সময়গুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এরকম একটি পরিস্থিতির জন্য কে দায়ী? আমরা সবাই জানি এর জন্য দায়ী বর্তমান উপাচার্য।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের সহ-সভাপতি (ভিপি) নুরুল হক নুর বলেন, ‘এই বিশ্ববিদ্যালয়ের নৈতিক স্খলন ও দুর্নীতিতে অভিযুক্ত উপাচার্যকে অপসারণের দাবিতে যখন আন্দোলন হচ্ছে, তখন ছাত্রলীগ গিয়ে হামলা চালিয়েছে। এসব ঘটনার পরও রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আশ্রয় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও যখন অভিযুক্ত উপাচার্যের পক্ষ নেয় সেটি খুবই দুঃখজনক হয়ে ওঠে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের পিঠ যখন দেয়ালে ঠেকে যায়, তখনও আপনারা সেখানে ষড়যন্ত্রের গন্ধ খুঁজে পান। গোপালগঞ্জের ভিসিও আন্দোলন ঠেকানোর জন্য স্বৈরাচারী কায়দায় ক্যাম্পাস বন্ধ করে দিয়েছিল। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এই আন্দোলন শুধু ভিসির বিরুদ্ধে আন্দোলন নয়, এটি অন্যায়ের বিরুদ্ধে আন্দোলন, এটি দুর্নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলন।’

এসময় ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সাধারণ সম্পাদক লিটন নন্দী বলেন, ‘জাবি উপাচার্যের বক্তব্যেই প্রমাণ হয় তিনি দুর্নীতি করেছেন। তিনি নিজেই বলেছেন ছাত্রলীগ আমার কাছে প্রকল্পের থেকে ৬ শতাংশ চেয়েছিল। এখানে ২ শতাংশ অনেক কম? তারা মানে হলো উপাচার্য ২ শতাংশ দিতে চেয়েছেন। সেটিই তো প্রমাণ করে তিনি দুর্নীতি করেছেন। এছাড়া সেদিন আন্দোলনকারী শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের উপর যে হামলা হলো তার জন্য জাবি উপাচার্যের পদত্যাগ করা উচিত।’

বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম বলেন, ‘আপনারা যে দাবি তুলেছেন সেটি ন্যায় দাবি। আমাদের সর্বাত্মক সমর্থন থাকবে। ১৯৫২ সাল থেকে ১৯৭১ সাল বাংলাদেশের ছাত্র সমাজের ঐতিহ্য হিমালয় তুল্য। এখন সেই ঐতিহ্য ভূলুণ্ঠিত হচ্ছে। শুধু জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে নয় সারাদেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ সকল স্থানে দখলদারিত্ব চলছে।

সংহতি সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন বাসদের কেন্দ্রীয় বর্ধিত কমিটির সদস্য বজলুর রশীদ ফিরোজ ও জহিরুল ইসলাম, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট (মাক্সবাদী) সভাপতি মাসুদ রানা, ছাত্রফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন প্রিন্স, বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্য মোহাব্বত হোসেন খান, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক অনিক রায়, ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি গোলাম মোস্তফা, রাখাল রাহা (রাষ্ট্রচিন্তা), গলসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি প্রমুখ।

পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী বুধবার ক্যাম্পাসে উপাচার্যের অপসারণের দাবিতে সকাল ১১টায় বিক্ষোভ মিছিল করার কথা রয়েছে আন্দোলনকারীদের।

এসএস

মন্তব্য করুন

daraz
  • শিক্ষা এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
যৌন হয়রানির অভিযোগে ঢাবি শিক্ষকের নিয়োগ স্থগিত
জাবিতে বেড়াতে যাওয়া চার কিশোরকে আটকে টাকা আদায়ের অভিযোগ 
জাবিতে নিপীড়নবিরোধী মঞ্চের মানববন্ধন
জাবিতে হলের তালা ভেঙে কক্ষ দখলের চেষ্টা, শিক্ষার্থীকে মারধর
X
Fresh