ইবিতে এক রাতের অতিথি ‘নাইট কুইন’
সারাবিশ্বে পরিচিত ‘নাইট কুইন’ হিসেবে। মিষ্টি মেনাহারিণী সুবাস, দুধসাদা, স্নিগ্ধ ও পবিত্র পাপড়ি আর সৌভাগ্যের প্রতীক হিসেবে এলেও রাতের রানী সে। কিন্তু যে রাতে নিজেকে মেলে ধরে প্রকৃতির কাছে, সে রাতেই আবার ঝড়ে পরে। এই একটি ফুলের জন্য বছরের পর বছর অপেক্ষা করতে হয় ফুলপ্রেমীদের। আমাদের দেশে দুর্লভ প্রজাতির ফুল হিসেবেই গণ্য করা হয় ‘ নাইট কুইনকে’।
মঙ্গলবার রাতে এই দুর্লভ ফুলটিরই দেখা মিলল ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাদ্দাম হোসেন হলের ৪০২ রুমের শিক্ষার্থীদের লাগানো টবে। ২০০২ সালে সাদ্দাম হোসেন হলের ৪০২ নম্বর রুমের সামনে ইবি সাংবাদিক সমিতির সাবেক সভাপতি শেখ রিয়াজ উদ্দিন গাছটি লাগান। দীর্ঘ ৬ বছর পরিচর্যা করেন। ২০০৪ সালে প্রথমবার গাছটিতে দেখা মেলে নাইট কুইন। পরের বছরও একসাথে ৩টি ফুল ফুটে। এরপর একে একে কেটে গেছে প্রায় ১৪ বছর। দীর্ঘ এই সময় পর আবারও মঙ্গলবার রাতে তৃতীয়বার ফুটল ফুল। নাইট কুইনকে সৌভাগ্যের প্রতীক মনে করেন অনেকেই। তাই এই ফুলটি দেখতে আগ্রহী ছিলেন হলটির শিক্ষার্থীরা। বর্তমানে ফুল গাছগুলোর পরিচর্যা করেন ইবি সাংবাদিক সমিতির সদস্যরা।
এ বিষয়ে গাছের চারা রোপণকারী শেখ রিয়াজ উদ্দিন বলেন, নাইট কুইন খুবই দুষ্প্রাপ্য ফুল। সৌন্দর্যের প্রতীক হিসেবে গাছটি লাগিয়ে ছিলাম। ফুলের সৌন্দর্য আমাকে খুব আকৃষ্ট করে। আমাদের সকলের উচিত গাছ লাগিয়ে পরিবেশের ভারসাম্য ফিরিয়ে আনা।
নাইট কুইনের বৈজ্ঞানিক নাম পেনিওসিরাস গ্রেজ্জি। বিরল ক্যাকটাস জাতীয় এ ফুলটির বৈশিষ্ট্য অন্যান্য ফুলের তুলনায় একটু আলাদা। বছরের মাত্র একদিনে এবং মধ্যরাতে পূর্ণ বিকশিত হয়। আর শেষরাতেই জীবনাবসান ঘটে। পাথরকুচির মতো পাতা থেকেই এ ফুলগাছের জন্ম হয়। আবার পাতা থেকেই প্রস্ফুটিত হয় ফুলের গুটি। ১৫ দিন পর গুটি থেকে কলি হয়। যে রাতে ফুলটি ফুটবে, সেই বিকেল থেকেই কলিটি অদ্ভুত সুন্দর রূপে সাজে। যেন বুকে থাকা পদ্মফুল। ধীরে ধীরে অন্ধকার যখন চারিদিকে ঘিরে ধরে, ঠিক তখনি নিজের সৌন্দর্যে স্বমহিমায় প্রকাশিত হয় ফুলটি। এর সুবাসে তীব্রতা না থাকলেও অদ্ভুত মিষ্টি আছে, যা পুষ্পপ্রেমীদের সবসময়ই টানে।
নাইট কুইনকে নিয়ে নানা কাহিনী আছে সারা দুনিয়ায়। সর্বাধিক প্রচলিত হলো, দুই হাজার বছর আগে বেথলেহেমে যিশুখ্রিস্টের জন্মের রাতে নগরীর প্রতিটি বাড়িতে নাইট কুইন ফুটেছিল বলে কৌতূহল ছড়িয়ে পড়ে। এ কারণে একে ‘বেথেলহাম ফ্লাওয়ার’ নামেও ডাকা হয়। এছাড়া একে সৌভাগ্যের প্রতীকও বলা হয়। তবে সৌভাগ্য আর কাহিনী যাই থাকুক ফুলটির অপার সৌন্দর্যরে কারণে তাকে ‘রানী’ উপাধি দেয়া হয়েছে।
এসএস
মন্তব্য করুন