• ঢাকা বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১
logo

বিইউবিটি'তে সুচিন্তা'র জঙ্গিবাদবিরোধী সেমিনার

আরটিভি অনলাইন রিপোর্ট

  ০৫ মার্চ ২০১৯, ১৫:৫৫

রাজধানী মিরপুরে `বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজি’ (বিইউবিটি) -তে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল সুচিন্তা ফাউন্ডেশনের জঙ্গিবাদবিরোধী সেমিনার। ‘জাগো তারুণ্য রুখো জঙ্গিবাদ’ শিরোনামে সোমবার (৪ ফেব্রুয়ারি) এর আয়োজন করা হয়।

এবারের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিইউবিটি ট্রাস্টি প্রফেসর ড. সফিক আহমেদ সিদ্দিক, বিইউবিটি -এর উপাচার্য প্রফেসর মো. আবু সালেহ, নারায়ণগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সংস্য নজরুল ইসলাম বাবু, চিত্রনায়ক রিয়াজ আহমেদ ও ‘মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম সংসদ’ -এর সভাপতি একেএম আজম খান।

অনুষ্ঠানের সূচনা বক্তব্যে বিইউবিটি’র ট্রাস্টি প্রফেসর ড. সফিক আহমেদ সিদ্দিক বলেন, এই উপমহাদেশে ইসলাম তলোয়ারের নির্দেশে আসেনি, এসেছে সুফিবাদের মধ্য দিয়ে। হযরত শাহজালাল (র.), হযরত শাহ পরান (র.) আমানত শাহ (র.), নিজামউদ্দিন আউলিয়া প্রত্যেকেই এই উপমহাদেশে ইসলাম ধর্মের গোড়াপত্তনে অবদান রেখেছেন। ইসলামের যে শান্তি ও শীতলতা, মানবিকতা ও ঔদার্য্য, তাতে আকৃষ্ট হয়ে আমাদের পূর্ব-পুরুষেরা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। কোনো ধরনের জঙ্গিবাদের সুযোগ সেখানে ছিল না। আমাদের নবীজীর (সা.) মদিনা সনদের দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যায়, সেখানে অন্য ধর্মের মানুষ কত নিরাপদ ছিল।

তিনি বলেন, আমার ছেলে ববি (রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি) একবার সিরিয়া ঘুরে এসে বললো, ‘বাবা এত সুন্দর দেশ, মসজিদের পাশে গির্জা, গির্জার পাশে প্যাগোডা। যে যার মত ধর্ম পালন করছে।’ সেই সিরিয়া, লিবিয়া, ইরানের মত ঐতিহ্যবাহী ইসলামী দেশগুলোকে পরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করা হয়েছে। বাংলাদেশেও মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিষ্ঠান পাশাপাশি থেকেছে। কিন্তু আজকে কারা ধর্মীয় উগ্রবাদ তৈরি করতে চাচ্ছে, তা তরুণদের বুঝতে হবে। পাশাপাশি জঙ্গিবাদকে রুখতে হবে তরুণদেরই।

চিত্রনায়ক রিয়াজ আহমেদ বলেন, বাঙালি জাতির জন্য মার্চ মাসটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ মাসেই আমরা প্রথম স্বাধীনতার স্বাদ পেয়েছিলাম, ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ভাষণের মধ্য দিয়ে।

তারুণ্য সম্পর্কে জনপ্রিয় এই অভিনেতা বলেন, তারুণ্য মানে নতুনকে আলিঙ্গন করা, এগিয়ে যাওয়া, নিয়ম ভেঙে নতুন নিয়ম করা, ন্যায়ের পক্ষে প্রতিবাদ করা, প্রগতির পথে চলা, ক্রিকেট-ফুটবলের মাঠে ঝড় তোলা, গিটার হাতে গান গেয়ে মঞ্চ মাতানো, ভালবাসা; সবকিছু মিলিয়েই তারুণ্য। জীবনের শিশু, কিশোর, তরুণ ও বৃদ্ধ এই ধাপগুলোর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হচ্ছে তারুণ্য। তারুণ্যের আলোয় আলোকিত হয় সমাজ ও রাষ্ট্র। কিন্তু কিছু বিপদগামী,স্বার্থান্বেষী মানুষের প্ররোচনায় এই তারুণ্য হারিয়ে যাচ্ছে জঙ্গিবাদের অন্ধকারে। তাই সঠিক পথে থাকতে হবে।

রিয়াজ বলেন, ২০০২ সালে ময়মনসিংহে একসাথে চারটি হলে বোমা হামলা হয়েছিল, দু’টি হলে আমার সিনেমা চলছিল। ২৭ জন মারা যায় ওই ঘটনায়। আহতদের দেখতে গিয়েছিলাম ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। আমি কোনো দিন ভুলব না, সবুর নামে একজন ব্যক্তি বোমা বিষ্ফোরণে, যিনি দুই পা হারিয়েছেন, তার পাশে দাঁড়ানোর পর সে বললো, ‘দুই পা হারাইছি তো কি হইসে! আপনি আমাকে একটা অটোগ্রাফ দেন।’’ এ কথা শোনার পর আমি আর নিজেকে ধরে রাখতে পারিনি। সেখানে দাঁড়িয়ে অঝোরে কেঁদেছিলাম।

বাঙালিরা অনেক সহজ-সরল উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের এই সরলতার সুযোগ নিয়ে ধর্মের মিথ্যা ভয় ও বেহেশতের প্রলোভন দেখিয়ে তরুণদের জঙ্গিবাদের দিকে নিতে যাচ্ছে একটি মহল। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) -এর বাণী বিকৃত করে পবিত্র কোরআনের ভুল তর্জমা করে জঙ্গিবাদের দিকে ঠেলে দিয়ে এসব নৃশংস হামলা করা হচ্ছে। ভুল পথ থেকে সরে আসতে হবে তরুণদের। পাশাপাশি সমাজের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। আলেম সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে, কোরআন হাসিদের সঠিক ব্যাখ্যা ও তর্জমা নিয়ে। তাহলেই এই সমস্যার সমাধান হবে।

তিনি বলেন, ইতোমধ্যেই সরকারপ্রধানের জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতির কারণে বাংলাদেশ জঙ্গিমুক্ত হয়েছে। তবে শকুনের দল বসে নেই, তাই আমাদেরও সচেতন থাকতে হবে।

নারায়ণগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম বাবু বলেন, শেখ হাসিনার জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি সফলতার সাথে এদেশ থেকে জঙ্গিবাদের অস্তিত্ব নিমূর্ল করেছে। যে চেতনার উপর ভর করে এদেশে জঙ্গিবাদ দানা বাঁধতে শুরু করেছিল, সেই চেতনাকে রুখতে এবং এর ভয়ঙ্কর পরিণতি সম্পর্কে সামাজিক জাগরণ সৃষ্টিতে সুচিন্তা ফাউন্ডেশন যে কাজ করে যাচ্ছে, সেজন্য তাদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। সমাজের সকল শ্রেণীর মানুষের উচিৎ, এই ধরণের সামজিক সচেতনতা গড়ে তোলা।

‘মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম সংসদ’র সভাপতি একেএম আজম খান বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়নের জন্য হাজার কোটি টাকার কাজ নিয়ে এসেছিল জাপানের কিছু প্রতিনিধি। হলি আর্টিজানে তাদের জবাই করে হত্যার পর কতটা কষ্ট করে আবার ফিরিয়ে আনা হয়েছে, তা সরকারই ভালো বলতে পারবে। এই হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিল দেশের শত্রুরা। তারা ইসলামের শত্রু। পরবর্তীতে সরকারের জিরো টলারেন্স নীতির সফলতার পর এখন বিশ্বে বাংলাদেশের জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে এই অবস্থান প্রশংসিত হয়েছে। জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে তাই সোচ্চার হতে হবে সবাইকে।

সবশেষে বিইউবিটি’র উপাচার্য প্রফেসর মো. আবু সালেহ তার বক্তব্যে বলেন, ধর্ম প্রত্যেকের ব্যক্তিগত বিশ্বাস এবং অধিকার। সেই বিশ্বাস ও অনুভূতির জায়গাটিতে তারা আঘাত করছে ক্ষমতা ও বাণিজ্যিক স্বার্থের লোভে, যার সঙ্গে ধর্মের আদৌ কোনো সম্পর্ক নেই। জঙ্গিবাদের ফলে ইসলামকে ক্ষতিগ্রস্থ করা হচ্ছে। তারা যে ইসলামের কত বড় শত্রু, তা আমাদের বোঝা দরকার।

সুচিন্তা’র গবেষণা সেলের পক্ষ থেকে আশরাফুল আলম শিক্ষার্থীদের প্রশ্ন-উত্তরের মাধ্যমে ইসলাম ধর্মে জঙ্গিবাদ সমর্থন-অসমর্থন বিষয়ে মতবিনিময় করেন।

অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ‘আজ সারাবেলা’র সম্পাদক জব্বার হোসেন।

এসজে

মন্তব্য করুন

daraz
  • শিক্ষা এর পাঠক প্রিয়
X
Fresh