• ঢাকা শুক্রবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
logo

ক্যাম্পাস বিনির্মাণে উপাচার্য বরাবর ৫২ প্রস্তাবনা শাবিপ্রবি ছাত্রশিবিরের

শাবিপ্রবি প্রতিনিধি, আরটিভি নিউজ

  ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১৩:৩৪
ক্যাম্পাস বিনির্মাণে উপাচার্য বরাবর ৫২ প্রস্তাবনা শাবিপ্রবি ছাত্রশিবিরের
ছবি: আরটিভি

জুলাই অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষার আলোকে ফ্যাসিবাদমুক্ত ক্যাম্পাস বিনির্মাণের লক্ষ্যে উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপিতে ১৩টি বিষয়ে ৫২টি প্রস্তাবনা তুলে ধরেছে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির।

বুধবার (২৭ নভেম্বর) সকালে শাবিপ্রবি শাখা ছাত্রশিবিরের ফেসবুক পেজে একটি পোস্টের মাধ্যমে এ বিষয়টি তুলে ধরা হয়। মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) শাবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এম সরওয়ারউদ্দিন চৌধুরীর কাছে এ প্রস্তাবনাসমূহ উপস্থাপন করেন শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি তারেক মনোয়ার ও সেক্রেটারি মাসুদ রানা তুহিন।

স্মারকলিপিতে উল্লেখিত প্রস্তাবনাসমূহ আরটিভি নিউজের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।

ফ্যাসিবাদ মূলোচ্ছেদ সংক্রান্ত

১. জুলাই অভ্যুত্থানে বিশ্ববিদ্যালয়ের যেসব ছাত্র-শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী ফ্যাসিবাদের দোসর হিসেবে কাজ করেছে দ্রুত তদন্ত কমিটি গঠন করে তাদেরকে চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে একাডেমিক, প্রশাসনিক ও আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
২. ফ্যাসিবাদের আইকনদের নামে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে যে সকল স্থাপনা ও কর্নারের নামকরণ করা হয়েছে তা পরিবর্তন করতে হবে।
৩. গত ১৬ বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামবিদ্বেষসহ নানাবিধ নিপীড়ন ও বৈষম্যের ঘটনার তদন্ত করে নিপীড়ন ও নির্যাতনের শিকার সকল শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে যৌক্তিক ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
৪. জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ রুদ্র সেনের পরিবারের সদস্যদের জন্য যথাযথ কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। একই সাথে আহতের তালিকা করে তাদের যথোপযুক্ত চিকিৎসার ব্যবস্থা এবং তাদের পরিবারকে সার্বিক সহযোগিতা করতে হবে।
৫. জুলাই অভ্যুত্থান ও শেখ মুজিব-শেখ হাসিনার স্বৈরাচারী শাসনামল সম্পর্কে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদে বিশেষ গবেষণা ও থিসিসের ব্যবস্থা করতে হবে।
৬. ক্যাম্পাসে একটি জুলাই অভ্যুত্থান স্মৃতি কর্নার স্থাপন করতে হবে।

প্রশাসনিক কার্যক্রম সংক্রান্ত

১. বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কার্যক্রম (বিভিন্ন ধরণের আবেদন, টাকা জমা দেওয়া, সার্টিফিকেট-মার্কশীট প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট উত্তোলন) আধুনিকায়ন করে সকল কার্যক্রম অনলাইনে নিয়ে এসে প্রশাসনিক জটিলতা এবং শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগ দূর করতে হবে।
২. একাডেমিক পরীক্ষার ফলাফল ওয়েবসাইটে প্রকাশের ব্যবস্থা করতে হবে।
৩. ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের ভর্তি ফি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্রতিটি বিভাগে বর্ষভিত্তিক ভর্তি ফি, ক্রেডিট ফি কমাতে হবে। বিভাগের উন্নয়ন ফি এবং আইআইসিটি-এর ইস্টিটিটিউট ফি-এর যৌক্তিক সংস্কার করতে হবে।
৪. নিপীড়নমূলক ফ্লোর কালচার বিলুপ্ত করে ডিপার্টমেন্টের পক্ষ থেকে সকলের নৈতিক মূল্যবোধকে ধারণ করে ফ্রেশারস রিসিপশনের আয়োজন করতে হবে।

একাডেমিক কার্যক্রম সংক্রান্ত

১. ড্রপ সিস্টেম বাতিল করে ইম্প্রুভ সিস্টেম চালু করতে হবে।
২. যেসব বিভাগে একাডেমিক কার্যক্রমের জন্য ল্যাপটপ প্রয়োজন সেসব বিভাগের শিক্ষার্থীদের ল্যাপটপ ক্রয়ের জন্য শিক্ষাঋণের ব্যবস্থা করতে হবে।
৩. সকল শিক্ষার্থীর জন্য থিসিসের সুযোগ রাখতে হবে।
৪. যে সকল ডিপার্টমেন্টের ক্লাসরুম ও ল্যাবের সংকট আছে তা নিরসন করতে হবে। প্রত্যেক ডিপার্টমেন্টে সমৃদ্ধ সেমিনার লাইব্রেরি নিশ্চিত করতে হবে এবং সেমিনার লাইব্রেরিতে পড়াশোনার উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।
৫. যেসকল ডিপার্টমেন্টের ফিল্ডওয়ার্ক কোর্সের অন্তর্ভুক্ত, সেসকল ফিল্ডওয়ার্কের পুরো ব্যয়ভার ডিপার্টমেন্টকে বহন করতে হবে।

আবাসন সংক্রান্ত

১. চলমান আবাসন সংকট নিরসন করে শতভাগ আবাসিক ক্যাম্পাস বিনির্মাণ করতে হবে। আবাসন সংকট নিরসনের পূর্ব পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের আবাসন খরচ বাবদ উপযুক্ত পরিমাণ মাসিক বৃত্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
২. হল পরিচালনা, সিট বন্টনসহ সকল প্রশাসনিক কর্মকান্ড পরিচালনায় যাতে কোন রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ না থাকে তা নিশ্চিত করতে হবে।
৩. নারী শিক্ষার্থীদের অগ্রাধিকারভিত্তিতে প্রত্যেককেই প্রথম বর্ষ থেকে আবাসিক সিট বরাদ্দ দিতে হবে। সিট সংকট সমাধানের সাময়িক পদক্ষেপ হিসেবে নারী শিক্ষার্থীদের জন্য ক্যাম্পাসের নিকটবর্তী এলাকায় ছাত্রী হোস্টেলগুলোর ভাড়া কমানোসহ যাবতীয় সমস্যা নিরসন করতে হবে।
৪. আবাসিক হলগুলোর ডাইনিং, ক্যান্টিন ও দোকানগুলোতে খাবারের যথাযথ মান নিশ্চিত করতে হবে এবং খাবারের উচ্চমূল্য নিয়ন্ত্রণে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রয়েজনীয় ভর্তুকির ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
৫. হলগুলোতে সার্বিক কার্যক্রমে হাউজ টিউটরদের সক্রিয় ভূমিকা নিশ্চিত করতে হবে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে হলভিত্তিক কো- কারিকুলার কার্যক্রম বৃদ্ধি করতে হবে।

পরিবহন সংক্রান্ত

১. বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন সংকট দূর করতে নতুন বাসের ব্যবস্থা করতে হবে।
২. পরিবহনের রুট বৃদ্ধি করতে হবে।
৩. হল থেকে যাতায়াতের জন্য পরিবহনের ব্যবস্থা করতে হবে।
৪. ক্যাম্পাসের রাস্তাগুলোর সংস্কার করতে হবে। বিশেষ করে ছাত্র হলে যাওয়ার রাস্তা সংস্কার করে রাস্তা দুপাশে ছায়াদার বৃক্ষরোপন করে পর্যাপ্ত যত্নের ব্যবস্থা করতে হবে।

নিরাপত্তা সংক্রান্ত

১. পড়ালেখার পরিবেশ সংরক্ষণে একাডেমিক এরিয়ায় দীর্ঘসময় উচ্চস্বরে মাইক বাজিয়ে কনসার্টসহ সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করতে হবে।
২. ক্যাম্পাসের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ পয়েন্টে প্রক্টরিয়াল টিমের সার্বক্ষণিক নজরদারী নিশ্চিত করতে হবে।
৩. ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে এবং পার্শ্ববর্তী এরিয়ায় মাদক ও নেশায় আসক্তদের উৎখাত করতে হবে।
৪. ক্যাম্পাসের সকল জায়াগায় রাতে পর্যাপ্ত আলো এবং সিসিটিভির ব্যবস্থা করতে হবে।

গবেষণার মানোন্নয়ন সংক্রান্ত

১. গবেষণার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ সংস্থানের জন্য সরকারের কাছে জোরালো আবেদন ও প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া গবেষণা কাজে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক অর্থপ্রদানকারী সংস্থা থেকেও অর্থ সংগ্রহের উদ্যোগ নিতে হবে।
২. প্রত্যেক বিভাগে মৌলিক গবেষণার উপর কোর্স অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
৩. শিক্ষার্থীদের গবেষণায় উৎসাহিত করতে গবেষণার জন্য আর্থিক প্রণোদনা দিতে হবে। শিক্ষকদের অধীনে গবেষণা সহকারী (রিসার্চ এসিস্ট্যান্ট) হিসেবে কাজ করার বৈতনিক সুযোগ তৈরি করতে হবে।
৪. গবেষণায় আগ্রহীদের গবেষণার সুযোগ করে দিতে হবে।
৫. প্রতি বছর বিশ্ববিদ্যালয়ে 'গবেষণা সপ্তাহ' পালন করতে হবে। যেখানে দেশ-বিদেশের গবেষকদের আমন্ত্রণ জানিয়ে বিভিন্ন সেশন আয়োজন, নবীন গবেষকদের গবেষণা প্রদর্শন, মৌলিক গবেষণা কোর্স ইত্যাদির আয়োজন করে গবেষণার নেটওয়ার্কিং বৃদ্ধি করতে হবে।
৬. বিদেশে উচ্চশিক্ষায় আগ্রহীদের জন্য শিক্ষা ঋণের ব্যবস্থা করতে হবে।

ইউসি সংক্রান্ত

১. ইউসি ভবন সংস্কার এবং আধুনিকায়নের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।
২. সুস্থ ধারার সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর জন্য রুম বরাদ্দ করতে হবে। একই সাথে ফ্যাসিবাদের সহযোগী সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর বরাদ্দকৃত রুম বাতিল করতে হবে।
৩. ইউসিতে ছেলে ও মেয়েদের জন্য আলাদাভাবে নামাজের সুব্যবস্থা করতে হবে।

লাইব্রেরি সংক্রান্ত

১. লাইব্রেরীকে আধুনিকায়ন করে বইয়ের সংখ্যা বৃদ্ধি করতে হবে। ক্যাটালগকে আধুনিকায়ন করে সহজে বই খুঁজে বের করার ব্যবস্থা করতে হবে।
২. লাইব্রেরী থেকে বঙ্গবন্ধু কর্নার বাতিল করতে হবে।
৩. লাইব্রেরীতে একটি ইসলামী কর্নার স্থাপন করতে হবে। একইসাথে শাহজালাল রহঃ জীবন ইতিহাস ও আদর্শ জানার জন্য প্রয়োজনীয় বইয়ের ব্যবস্থা করতে হবে।
৪. বাহির থেকে বই নিয়ে পড়ার জন্য রিডিং রুমের ব্যবস্থা করতে হবে।

শিক্ষক নিয়োগ সংক্রান্ত

১. মেধা, যোগ্যতা ও দক্ষতার ভিত্তিতে শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে।
২. শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করতে হবে।

ধর্মীয় উপাসনালয় সংক্রান্ত

১. কেন্দ্রীয় মসজিদ এবং হল মসজিদ সংস্কার করে মসজিদে একটি সমৃদ্ধ পাঠাগার এবং ইসলামিক সেন্টার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
২. প্রত্যেক একাডেমিক ভবন এবং লাইব্রেরী ভবনে ছেলে ও মেয়েদের জন্য আলাদাভাবে নামাজের সুব্যবস্থা করতে হবে।
৩. সকল শিক্ষার্থীর নিজ নিজ ধর্ম পালনের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।

শারীরিক শিক্ষা কেন্দ্র সংক্রান্ত

১. কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ, হ্যান্ডবল গ্রাউন্ডের সংস্কার করতে হবে। কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে গ্যালারী সংখ্যা বৃদ্ধি করতে হবে।
২. শারীরিক শিক্ষা কেন্দ্রকে আধুনিকায়ন করে সকল সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। একই সাথে সার্বক্ষণিক অভিজ্ঞ ট্রেইনারের ব্যবস্থা করতে হবে।
৩. একটি আধুনিক সুইমিংপুল নির্মাণ করে ছেলে ও মেয়েদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা রাখতে হবে। সাঁতারের প্রশিক্ষণের জন্য ট্রেইনারের ব্যবস্থা করতে হবে।
৪. টেনিস কোর্টের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে শিক্ষার্থীদের জন্যও টেনিস কোর্ট উন্মুক্ত করে দিতে হবে।

মেডিকেল সেন্টার সংক্রান্ত

১. সার্বক্ষণিক ও দ্রুত চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে হবে এবং ভালো মানের ঔষধ সরবরাহ করতে হবে।
২. অদক্ষ ডাক্তারদের অপসারণ করে মেধাবী ও বিভাগ ভিত্তিক বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে।

মন্তব্য করুন

Bangal
rtv Drama
Radhuni
  • শিক্ষা এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
হাইকমিশনে হামলার প্রতিবাদে শাবিপ্রবিতে মানববন্ধন
জুলাই বিপ্লবে শহীদদের স্মরণে শাবিপ্রবিতে রক্তদান কর্মসূচি
জাবিতে ছাত্রশিবিরের শীতবস্ত্র বিতরণ
আগরতলায় বাংলাদেশ হাইকমিশনে হামলার প্রতিবাদ শাবিপ্রবি জিয়া পরিষদের