জাবি শিক্ষক নেটওয়ার্কের সংবাদ সম্মেলন
গত ১৮ সেপ্টেম্বর গণপিটুনির শিকার হয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) সাবেক ছাত্রলীগ নেতার মৃত্যুর ঘটনার প্রসঙ্গ ও তার অনুবর্তীতে পর্যবেক্ষণ নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছে জাহাঙ্গীরনগর শিক্ষক নেটওয়ার্ক।
রোববার (২৯ সেপ্টেম্বর) কলা ও মানবিক অনুষদের শিক্ষক লাউঞ্জে সংবাদ সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হয়।
এ সময় লিখিত বিবৃতিতে বলা হয়, গত ১৮ সেপ্টেম্বর নৃশংস হত্যাকাণ্ডটির পরের দিনই উপাচার্যের দপ্তরে আমরা আমাদের উদ্বেগ, ক্ষোভ ও প্রতিবাদ জানাতে গিয়েছিলাম। আমাদের এই ভূমিকার বিষয়ে তখন বা এখন আমরা একই রকম সজাগ আছি। ঘটনাচক্রে তিনি দায়িত্বগ্রহণের পর এটা ছিল আমাদের প্রথম সাক্ষাৎ। ওই সাক্ষাতে উপাচার্যকে আমাদের আন্তরিক মনে হয়েছিল এবং তদন্ত কমিটি গঠন করার প্রসঙ্গে তিনি আমাদের পরামর্শ আহ্বান করেছিলেন। আমরাও পরামর্শ দিয়েছিলাম। আমরা স্পষ্টভাবে প্রক্টরিয়াল অফিসের শৈথিল্য বিষয়ে তার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলাম এবং উপাচার্যের ও রেজিস্ট্রারের পদের সীমানার বিষয়েও সজাগ থাকতে সুপারিশ করেছিলাম।
এ ঘটনায় মামলার বিষয়টি এনে বলা হয়, যে মামলাটা করা হলো সেটার ভাষিক দুর্বলতা ছাড়াও, সেখানে একজন শিক্ষার্থীকে ভুলবশত আসামি হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয় যা ছিল গাফিলতির সামিল। তারপরের দিনই আসামিদের তালিকাক্রম বদলানো হয়, যা আমাদের কাছে দুরভিসন্ধিমূলক বলেই মনে হয়েছে। পরবর্তীতে তদন্ত কমিটিতে প্রক্টরিয়াল বডির একজন সদস্যকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। অথচ, বাস্তবে প্রক্টর অফিস সংলগ্ন নিরাপত্তা শাখাতেই নিহত ব্যক্তি উপুর্যপুরি আঘাতের সম্মুখীন হন। এবং এতকিছুর পর পত্রিকার বরাতে জানতে পারলাম, আমরা নাকি উপাচার্যের অফিসে আসামিদের তালিকাও দিয়ে এসেছি, যা ছিল সর্বৈব মিথ্যা একটি প্রচারণা।
এতে বলা হয়, ঘটনার সুষ্ঠু সুরাহা করতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এখনও পর্যন্ত বিচক্ষণতা এবং সংবেদনশীলতার পরিচয় দিতে ব্যর্থ হয়েছে। এই প্রেক্ষিতে সাতটি পর্যবেক্ষণ তুলে ধরা হয়।
পর্যবেক্ষণগুলো হত্যাকাণ্ডে নেতৃত্ব দেওয়া আবু সাঈদ ভূঁইয়া আসামির তালিকায় নেই। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের তরফ থেকেও তার বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয় তার সনদ বাতিল বা স্থগিত করতে পারত। তদন্তের শর্তাবলিতে দুটি প্রসঙ্গের উল্লেখ আছে, নির্দেশদাতা এবং আঘাতকারী খুঁজে বের করা, কারও দায়িত্বে অবহেলাজনিত কারণে এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে কি না, সেটা অনুসন্ধানের কোনো অপশন রাখা হয়নি। কিন্তু ঘটনা ঘটছে একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে, প্রক্টর এবং নিরাপত্তা শাখার অফিসে, যেখানে একটা নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকার কথা। বিশ্ববিদ্যালয়, বিভাগে পাঠদান, মূল্যায়নপ্রক্রিয়া, পরীক্ষা পদ্ধতিসমেত সংস্কারের যে দাবিগুলো শিক্ষার্থীদের তরফ হতে উত্থাপিত হয়েছে তার মধ্যে থেকে যৌক্তিক দাবিগুলো কোন প্রক্রিয়ার পূরণ করা যাবে সেই বিষয়ে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সুস্পষ্ট বক্তব্য থাকা দরকার। নাহলে চলমান শিক্ষা কার্যক্রমে নৈরাজ্য ও বিশৃঙ্খলা তৈরি হতে পারে; শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রতিপক্ষতা তৈরি হবে। প্রয়োজনে বিভিন্ন বিষয়ে পরিবর্তন নিয়ে শিক্ষাপর্ষদে ও সিন্ডিকেটে আলোচনা করা জরুরি।
সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে দর্শন বিভাগের অধ্যাপক রায়হান রাইন বলেন, পুলিশের হেফাজতে থাকা অবস্থায় শামীম মোল্লার মৃত্যু হয়েছে কি না, বিষয়টি আমরা জানি না। তবে এ বিষয়টি নিয়ে একটি ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়েছে। সে ক্ষেত্রে বিষয়টি তদন্তের দাবি রাখে। আমরা আশা করছি সঠিক তদন্তের মাধ্যমে মূল ঘটনাটি বেরিয়ে আসবে।
আরটিভি/এমকে
মন্তব্য করুন