• ঢাকা রোববার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৩১ ভাদ্র ১৪৩১
logo

ঢাবিতে বহিরাগত প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা

আরটিভি নিউজ

  ১৬ জুলাই ২০২৪, ১৮:৫৭
ঢাবি
ছবি: সংগৃহীত

কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে উত্তাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি)। কোটা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের সংঘর্ষ হয়েছে কয়েক দফা। এ সংঘর্ষে বহিরাগতরাও জড়িয়ে গেছে। এর একদিন পর বহিরাগত প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) দুপুরে প্রক্টরিয়াল কমিটির জরুরি সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। একই সঙ্গে আরও কয়েকটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রশাসন। ঢাবির জনসংযোগ দপ্তর সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এসব নিশ্চিত করেছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামালের সভাপতিত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল কমিটির এক জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ, প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. সীতেশ চন্দ্র বাছার, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমেদ এবং প্রক্টরিয়াল কমিটির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তিপূর্ণ শিক্ষার পরিবেশ বজায় রাখতে কয়েকটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে- ১৬ জুলাই থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বহিরাগত প্রবেশ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ এবং শিক্ষার্থীদের বৈধ পরিচয়পত্র সঙ্গে রাখতে হবে।

ক্যাম্পাসে সন্দেহজনক কাউকে চিহ্নিত করা গেলে সে ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জানাতে পরামর্শ দেওয়া হলো।

শিক্ষার্থীদের সমাবেশে কোনো ধরনের অস্ত্রশস্ত্র; যেমন- লাঠিসোঁটা, ইট, আগ্নেয়াস্ত্র ইত্যাদি বহন নিষিদ্ধ।

সবাইকে নাশকতামূলক কাজ থেকে বিরত থাকার নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে এবং কেউ নাশকতামূলক কাজে জড়িত হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে যেকোনও ধরনের গুজব ছড়ানো এবং উসকানিমূলক বক্তব্য প্রদান থেকে বিরত থাকার জন্য সবাইকে অনুরোধ করা হলো।

একই সঙ্গে সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখা এবং শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা বিধানে সংশ্লিষ্ট সবাইকে দায়িত্বশীল আচরণ করার আহ্বান জানানো হয়।

এদিকে, গত কয়েক দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) কোটা সংস্কারে আন্দোলন করে আসছে শিক্ষার্থীরা। কিন্তু গতকাল সোমবার (১৫ জুলাই) থেকে তা সংঘর্ষ রূপ নেয়। গতকাল দিনভর দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে ঢাবিতে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের সংঘর্ষে ৩০০ শিক্ষার্থী আহত হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। তাদের মধ্যে দুই নারী শিক্ষার্থী ও গুলিবিদ্ধ এক ছাত্রলীগ নেতাসহ ১৩ জন বর্তমানে সেখানে চিকিৎসাধীন আছেন।

জানা গেছে, সোমবার দুপুরে এই ঘটনার শুরু হয় বিজয় একাত্তর হলে। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা টিএসসিতে সমাবেশ করার পর বেলা আড়াইটার দিকে তাদের একটি অংশ মিছিল নিয়ে আরও শিক্ষার্থীদের আনতে হলপাড়ার দিকে যায়। হলপাড়ায় গিয়ে তারা প্রথমে মিছিল নিয়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল প্রাঙ্গণে প্রবেশ করেন। হলের ভেতরের ফটকের সামনে গিয়ে মাইকে ‘বঙ্গবন্ধু হলের ভয় নাই, রাজপথ ছাড়ি নাই’সহ নানা স্লোগান দিতে থাকেন। কয়েকজন হলের ভিতর থেকে শিক্ষার্থীদের আনতে গেলে মাইক থেকে ‘বাধা দিলে বাধবে লড়াই’সহ নানা স্লোগান দেন তারা। এরপর আন্দোলনকারীরা মাইকে ঘোষণা করেন কয়েকজন আন্দোলনকারীকে মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলে আটকে রাখা হয়েছে। এরপর তারা জিয়া হলে প্রবেশ করে ‘দালালদের কালো হাত, ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও’সহ নানা স্লোগান দেন। কয়েকজন ভেতরে থাকা শিক্ষার্থীদের আনতে হলে প্রবেশ করেন। এ সময় বাইরের মাইকে ‘সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ডাইরেক্ট অ্যাকশন’সহ নানা স্লোগান দেওয়া হয়।

কিছুক্ষণের মধ্যেই আন্দোলনকারীদের মাইক থেকে ঘোষণা দেওয়া হয় বিজয় একাত্তর হলে আন্দোলনকারীদের কয়েকজনকে আটক রাখা হয়েছে। তখন আন্দোলনকারীদের মিছিলটি একাত্তর হলের ভেতরে ঢুকে যায়। এ সময় মাইক থেকে বলা হয় ‘সন্ত্রাসীদের ধরে নিয়ে আসুন।’ একপর্যায়ে আন্দোলনকারীরা হলের বাগানে ঢুকে নিচ থেকে ইট ও পাথরের টুকরা, ছেঁড়া জুতা প্রভৃতি হলের বিভিন্ন তলায় থাকা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের লক্ষ্য করে ছুড়তে থাকেন। ওপর থেকে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরাও প্লাস্টিকের বোতল, ঢিল প্রভৃতি ছুড়ছিলেন। দুই পক্ষই পরস্পরকে অকথ্য গালিগালাজ করছিল। এর মধ্যে হলের বাগানে ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা-কর্মীর সঙ্গে আন্দোলনকারীদের মারামারি বেধে যায়।

এরপর বিজয় একাত্তর হল থেকে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা লাঠিসোঁটা, কাঠ, লোহার পাইপ ও বাঁশ নিয়ে দল বেঁধে নিচে নেমে আন্দোলনকারীদের ধাওয়া দেন। আন্দোলনকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে জসীমউদ্‌দীন হলের ভেতরে প্রবেশ করে। এরপর ছাত্রলীগের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। বিজয় একাত্তর হলে ঘটনার শুরু হলেও আশপাশের হলগুলোর ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরাও সংঘর্ষে যোগ দেন। সংঘর্ষ চলাকালে দুই পক্ষ পরস্পরের দিকে ইট ও পাথরের টুকরা ছুড়তে থাকে।

আন্দোলনকারীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে ছাত্রলীগ নেত্রীর পদত্যাগ
দুই পক্ষের নেতা-কর্মীরা লাঠিসোঁটা ও বাঁশ নিয়ে পরস্পরকে ধাওয়া দিচ্ছিল। বেলা সোয়া তিনটার দিকে টিএসসি থেকেও আন্দোলনকারীরা এসে সংঘর্ষে যোগ দেন। তারা একজোট হয়ে ইট-পাথর নিক্ষেপসহ ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের ধাওয়া দিলে টিকতে না পেরে তারা হলের ভেতরে ঢুকে পড়েন। এ সময় উত্তেজিত আন্দোলনকারীরা বিজয় একাত্তর হলের ফটকে নিরাপত্তাপ্রহরীদের বসার কক্ষ ভাঙচুর করেন। হলের ফটকে থাকা বেশ কিছু মোটরসাইকেলও ভাঙচুর করেন তারা। এরপর জসীমউদ্‌দীন হলের ছাদে থাকা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের সঙ্গেও আন্দোলনকারীদের পাল্টাপাল্টি ইট-পাথর নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে।

বেলা সাড়ে তিনটার দিকে আবার পাল্টাপাল্টি ধাওয়া শুরু হয়। এ সময় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা আন্দোলনকারীদের বেশ কয়েকজনকে কাঠ ও বাঁশ দিয়ে বেদম পেটান। কিছুক্ষণ পর বঙ্গবন্ধু হলের ছাত্রলীগের কিছু নেতা-কর্মী হলের ফটকে লাঠিসোঁটাসহ অবস্থান নেন। তাদের লক্ষ্য করে আন্দোলনকারীরা ইট-পাথরের টুকরা নিক্ষেপ করেন। তবে তারা তখন মারামারিতে জড়াননি। এরপর আরও দুবার দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া হয়। পরে বিকেল পৌনে চারটার দিকে আন্দোলনকারীরা পিছু হটেন। এর মধ্যে বঙ্গবন্ধু হলের পেছনের পকেট গেট দিয়ে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের ছাত্রলীগের কিছু নেতা-কর্মীকে প্রবেশ করতে দেখা যায়।

একই কলাভবনের সামনের এলাকায়ও আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের আরেক দল নেতা-কর্মীর পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। একপর্যায়ে আন্দোলনকারীরা পিছু হটে ফুলার রোড ও নীলক্ষেত মোড়ের দিকে ছুটতে থাকেন। তখন সামনে যাকে পান, তাকেই মারধর করেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। এ সময় আন্দোলনে যুক্ত অনেক ছাত্রীও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের মারধরের শিকার হন। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা ছত্রভঙ্গ হওয়ার পর আহত ব্যক্তিদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। আর ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা মিছিল নিয়ে টিএসসি এলাকায় জড়ো হন। বিকেল চারটার পর ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের একটি অংশ ঢাকা মেডিকেলের আশপাশে অবস্থান নেন। সেখানে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তাদের আবার পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষ শুরু হয়।

এরপর আন্দোলনকারী টিকতে না পেরে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হলে গিয়ে অবস্থান নেন। আর হলের বাইরে অবস্থান নেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। সেখানেই নিজেদের অবস্থান থেকে প্রতিপক্ষকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকেন। সেখানে কয়েক দফা বিস্ফোরণ-জাতীয় শব্দ শোনা যায়। ছাত্রলীগের অবস্থানের সম্মুখভাগে এক তরুণকে আগ্নেয়াস্ত্রসহ দেখা যায়। রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত দুই পক্ষের এই সংঘর্ষ দেখা যায়।

এরপর সোমবার রাত সাড়ে ৯টার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দোয়েল চত্বরে কোটাবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদুল ইসলাম নতুন কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছেন। কোটা আন্দোলনকারীদের ওপর ছাত্রলীগের ন্যাক্কারজনক হামলার প্রতিবাদে মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) বিকাল ৩টায় দেশের প্রত্যেক ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করার ঘোষণা দেন তিনি।

এদিকে এর কিছুক্ষণ পর বাঙালির মহান স্বাধীনতাকে কটাক্ষ, একাত্তরের ঘৃণিত গণহত্যাকারী রাজাকারদের প্রতি সাফাই, আন্দোলনের নামে অস্থিতিশীলতা তৈরি এবং সাধারণ শিক্ষার্থী ও নেতাকর্মীদের ওপর বর্বর হামলার প্রতিবাদে মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দিয়েছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। ওইদিন দুপুর দেড়টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এ বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।

মন্তব্য করুন

Radhuni
  • শিক্ষা এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
ঢাবির উপ-উপাচার্য হলেন অধ্যাপক মামুন আহমেদ
ঢাবিতে বিনা খরচে গণবিয়ের আয়োজন, পাত্রপাত্রীর সন্ধানে শিক্ষার্থীরা
ঢাবিতে ছাত্রলীগের ‘অপকর্মের’ ন্যায়বিচার নিশ্চিতে ছাত্রদলের সেল গঠন
ঢাবিতে গণরুম বিলুপ্ত