• ঢাকা বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১
logo

শতভাগ পাসের সাফল্যে ডিঙাপোতা হাওরে আনন্দের ঝিলিক

আরটিভি অনলাইন রিপোর্ট, নেত্রকোনা

  ২৩ জুলাই ২০১৭, ১৮:৪৮

হাওরের ভয়াবহ দুর্যোগ আর অনিশ্চিত জীবনকে পাশ কাটিয়ে নেত্রকোনা জেলার মোহনগঞ্জ উপজেলার শহীদ স্মৃতি মহাবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা শতভাগ পাসের কৃতিত্ব অর্জন করেছেন।

কলেজ সূত্রে জানা যায়, কলেজটি থেকে ২৬ জন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে সবাই পাস করেন। তবে কেউ এ প্লাস পাননি। এ নিয়ে আক্ষেপ রয়েছে শিক্ষকদের।

রসায়ন বিভাগের প্রভাষক অসীম কুমার রায় আরটিভি অনলাইনকে জানান, কলেজের শিক্ষার্থীরা শতভাগ পাস করেছে। তবে ৩ থেকে ৪ জন এ প্লাস পাবে বলে আশা করেছিলাম। তা না হওয়াতে মন খারাপ হয়েছে। তবে সব মিলিয়ে ভালো লাগছে।

ডিঙ্গাপোতা হাওরের কূল ঘেঁষে অবস্থিত আদর্শনগর বাজারে ২০১৫ সালে কলেজটি প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রথমবারের মতো এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে শতভাগ পাস করায় এলাকায় ছোট-বড় সবার মাঝে দেখা দিয়েছে বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস।

তবে হাওরের যাতায়াত ব্যবস্থা দুর্গম ও কঠিন হওয়ায় কৃতী শিক্ষার্থীরা কলেজ ক্যাম্পাসে আনন্দ উল্লাসে যোগ দিতে পারেননি। সোমবার তারা কলেজে একত্রিত হবার কথা রয়েছে।

এদিকে, রোববার দুপুরে ফল প্রকাশের পর কলেজ ক্যাম্পাসে উপস্থিত শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা নিজেদের মধ্যে আনন্দ-উল্লাস করেছেন।

গেলো কয়েক বছর আগেও ডিঙ্গাপোতা হাওরাঞ্চলের শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা করার জন্য থানা শহর ও জেলা শহরে যেতে হতো। এতে করে স্কুল থেকে বের হবার পর অনেক শিক্ষার্থীকেই ঝরে পড়তে হয়েছে। এসব দিক বিবেচনা করে এলাকার সচেতন নাগরিকদের সহায়তায় শহীদ স্মৃতি মহাবিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়।

এতে সার্বিকভাবে সহায়তা করেন এলাকার কৃতি সন্তান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একান্ত সচিব সাজ্জাদুল হাসান। কলেজটি এমপিওভুক্ত না হলেও শিক্ষকবৃন্দ আন্তরিকতার সহিত পাঠদান করে আসছেন।

এ বিষয়ে হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক মো. খায়রুজ্জামান মনি আরটিভি অনলাইনকে বললেন, প্রাথমিক শ্রেণির শিক্ষার্থীদের যেভাবে পাঠদান করা হয়, ঠিক সেভাবেই আমরা ছাত্রদের কেয়ার করেছি। তারা বাড়িতে কি করছে না করছে সে খোঁজ-খবরও নিয়েছি। টেস্ট পরীক্ষার পর তাদের সার্বক্ষণিক যত্ন নেয়া হয়েছে। সেইসঙ্গে আমাদের কলেজের সভাপতি জেলা প্রশাসক মহোদয় ও অধ্যক্ষের বিচক্ষণতায় এই ফলাফল সম্ভব হয়েছে।

পাহাড়ি ঢল আর অকাল বৃষ্টির কারণে দেশের অন্যান্য হাওরের মতো ডিঙ্গাপোতা হাওরের ফসলও তলিয়ে যায়। মুহূর্তের মধ্যে ডুবে যায় হাজার হাজার হেক্ট্রর জমি। পরে পানি বিষাক্ত হয়ে মারা যায় মাছ। সেইসঙ্গে শেষ সম্বল হাঁসগুলোও মরে যায়।

এরপর থেকেই ডিঙ্গাপোতা হাওর পারের মানুষের কোনো উৎসব ছিলো না। এই ফলাফল তাদেরকে উৎসবের আনন্দ দিয়েছে। তবে তাদের দুশ্চিন্তাও কম নয়। ঘরে খাবার নেই, পকেটে টাকা নেই, এসব কৃতী শিক্ষার্থীদের উচ্চ শিক্ষা কিভাবে সম্ভব হবে?

অধ্যক্ষ জীবন কৃষ্ণ সরকারের মুখেও সেই শঙ্কার কথা শোনা গেলো। তিনি বলেন, কলেজ শতভাগ পাসের সাফল্য পেয়েছে। এটা শুধু শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আনন্দ নয়, এ আনন্দ সারা হাওরবাসীর। দিনের পর দিন নিয়মতান্ত্রিকভাবে কঠোর অনুশীলনের কারণেই ছেলেমেয়েরা এই সাফল্য পেয়েছে।

তিনি বলেন, ভালো ফলাফলের মূল চাবিকাঠি হলো শৃঙ্খলা ও নিবিড় পরিচর্যা। কলেজের প্রতিষ্ঠাতা, শিক্ষক ও অভিভাবকদের বাড়তি নজর থাকায় এবং ছাত্র-শিক্ষকদের চমৎকার সম্পর্কের কারণে এ সাফল্য এসেছে। একইসঙ্গে জেলা প্রশাসক স্যার ও সাজ্জাদ স্যারের আন্তরিক সহযোগিতায় এ ফলাফল সম্ভব হয়েছে।

জেবি/এসজে

মন্তব্য করুন

daraz
  • শিক্ষা এর পাঠক প্রিয়
X
Fresh