খোলা আকাশের নিচে ক্লাস করছে শিক্ষার্থীরা!
দীর্ঘ দেড় বছর করোনার কারণে বন্ধ থাকা সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যে খুলে দেয়া হয়েছে। গত ১২ সেপ্টেম্বর থেকে সারাদেশের ন্যায় শরীয়তপুরেও একযোগে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়েছে ৯০২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। তবে বন্যার কারণে বিদ্যালয়ের নিজস্ব ভবন ও শ্রেণিকক্ষে ক্লাস করতে পারছে না নড়িয়া উপজেলার ৩টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ৩১৫ জন শিক্ষার্থী।
মঙ্গলবার (১৪ সেপ্টেম্বর) সকালে ১৮নং চর জপসা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায় ওই বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা খোলা আকাশের নিচে ক্লাস করছে। বিদ্যালয়ের পাশেই স্থানীয় সোনামিয়া ফকিরের বাড়ির উঠোনে মাটিতে বসিয়ে খোলা আকাশের নিচে পাঠ দেয়া হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। বিদ্যালয়ের মাঠে হাঁটুর ওপরে পানি এবং ভবনে যাওয়ার মতো কোনো রাস্তা বা ব্যবস্থা না থাকায় এভাবেই শিক্ষা কার্যক্রম চালানো হচ্ছে।
এছাড়া মালতকান্দি আন্ধার মানিক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে পানি থাকায় নতুন ভবনে শিক্ষা কার্যক্রম চালানো যাচ্ছে না। পুরাতন ভবনে চলছে পাঠদান।
এদিকে, মৃধাকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিশু থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থী রয়েছে ১৪৩ জন। এদেরকে স্কুলের পাশেই আকরাম আলী সিকদারের বাড়িতে পাঠদান করা হচ্ছে। পূর্ব নড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের সংখ্যা রয়েছে ৯২ জন। আজকে পর্যন্ত এই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পাশের একটি বাড়িতে খালি ঘরে পাঠদান করা হয়েছে।
চর জপসা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু বক্কর সিদ্দিক জানায়, বিদ্যালয়ে পানি থাকায় শ্রেণিকক্ষে ক্লাস করতে পারছে না তারা। খোলা আকাশের নিচে ক্লাস করতে হচ্ছে, এজন্য তার মন ভীষণ খারাপ।
১৮নং চর জপসা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খাদিজা আক্তার পপি বলেন, ‘আমাদের বিদ্যালয়ের মাঠে হাঁটুর ওপরে পানি তাই আমরা ও ছাত্র-ছাত্রীরা বিদ্যালয়ে যেতে পারছি না। তাই বিদ্যালয়ের পাশে সোনা মিয়া ফকিরের বাড়ির উঠোনে বিকল্প ব্যবস্থায় পাঠদান চালিয়ে যাচ্ছি। আমাদের বিদ্যালয়ের ৮০ শিক্ষার্থীর পড়াশোনায় যাতে ব্যাঘাত না ঘটে, তাই আমরা আপাতত এভাবেই পাঠদান করছি।’
১৮নং চর জপসা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আরেক সহকারী শিক্ষক আকলিমা আক্তার বলেন, সারাদেশে একযোগে দীর্ঘ দেড় বছর পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলেছে। সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক শিক্ষার্থীরাই নিজস্ব বিদ্যালয় ভবনে ক্লাস করছেন। আমাদের বিদ্যালয়ের পানি থাকায় আমরা খোলা আকাশের নিচে পাশে একটি বাড়িতে ছাত্র-ছাত্রীদের পাঠদান করছি। আমরা নিজ বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের নিয়ে ক্লাস করতে পারছি না। এজন্য খুব খারাপ লাগছে। কারণ অন্যান্য বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা তাদের শিক্ষাঙ্গনে গিয়ে ক্লাসরুমে পাঠদান করছেন। অনেক সময় বৃষ্টি আসলে পড়াশোনায় ব্যাঘাত ঘটে।
স্থানীয় সোনা মিয়া ফকির বলেন, রাস্তা থেকে আমাদের বিদ্যালয়ের মাঠ অনেক নিচু। তাই সেখানে একটু বৃষ্টি হলেই পানি জমে যায়। এছাড়া প্রতি বছরেই বর্ষা আসলে মাঠসহ স্কুলটি তলিয়ে থাকে, তখন এই স্কুলের ছাত্র-ছাত্রী লেখাপড়া বেশ কিছুদিনের জন্য বন্ধ হয়ে যায়। তাই সরকারের কাছে আমাদের দাবি- এই বিদ্যালয় মাঠটি যদি ভরাট করে দেয়া হয় তাহলে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার কোনও সমস্যা হতো না।
মৃধা কান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক লায়লা আরজুমান বলেন, প্রতিবছরই আমাদের বিদ্যালয় বন্যার পানিতে নিমজ্জিত হয়। সেসময়টা অনেক কষ্ট করে আমাদের এখানে ওখানে বা কারো বাড়িতে খোলা আকাশের নিচে ক্লাস করতে হয়। ছাত্র-ছাত্রীরা অনেক সময় আসতে চায় না। এ বছর দীর্ঘদিন পরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলেছে। কিন্তু আমাদের বিদ্যালয় পানি থাকায় সেখানে ক্লাস করা সম্ভব হচ্ছে না। তাই বিদ্যালয়ের পাশে আকরাম আলী সিকদারের বাড়িতে অস্থায়ীভাবে প্যান্ডেল টাঙিয়ে আপাতত ক্লাস চালিয়ে যাচ্ছি।
পূর্ব নড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আসমা আক্তার বলেন, ইতোমধ্যে আমাদের স্কুল থেকে বন্যার পানি নেমে গেছে। আশা করছি আগামী কাল থেকে আমরা আমাদের বিদ্যালয়ের ক্লাসরুমে পাঠদানসহ শ্রেণি কার্যক্রম চালাতে পারব। সেইভাবে বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করেছি।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ বলেন, করোনার শুরু থেকে দীর্ঘ ১৭ মাস বন্ধ ছিল শরীয়তপুর জেলার ৬৯৮ প্রাথমিক বিদ্যালয়। গত ১২ সেপ্টেম্বর সারাদেশের ন্যায় একযোগে সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্বাস্থ্যবিধি মেনে খোলা হয়েছে। তবে বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়ে নড়িয়া উপজেলার তিনটি বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম কিছুটা ব্যাহত হচ্ছে। তবে বিকল্প ব্যবস্থায় আমরা শিক্ষার্থীদের পাঠদান চালু রেখেছি। চর জপসা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পাশের একটি বাড়িতে ঘরের মধ্যে ক্লাস করতে বলেছি তাদের। বাহিরে খোলা আকাশের নিচে ক্লাস করার কথা না। যদি করে থাকে তাহলে তারা এটা ভুল করেছে।
এনএইচ/এমএন
মন্তব্য করুন