• ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
logo

রজতজয়ন্তীর একদিন আগে এশিয়ান ইউনিভার্সিটির ৭টি প্রোগ্রাম স্থগিত করলো ইউজিসি

আবদুল হাকিম চৌধুরী, আরটিভি নিউজ

  ০৯ জানুয়ারি ২০২১, ১৮:২৭

গত ৪ জানুয়ারি ছিল এশিয়ান ইউনিভার্সিটির ২৫ বছর পূর্তি। অথচ ঠিক তার আগের দিনই কঠোর কিছু বিশেষ নির্দেশনার সঙ্গে ৭টি প্রোগ্রাম সাময়িক স্থগিত করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিভাবক প্রতিষ্ঠান ইউজিসি। নির্দেশনাগুলোর মধ্যে আরও আছে- ৩১ জানুয়ারির মধ্যে ভিসি, প্রোভিসি ও ট্রেজারারের প্যানেল মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে হবে। একই সময়ের মধ্যে ইউজিসির ডিজিটাল লাইব্রেরির সদস্য হওয়ার আবেদন করতে হবে। ট্রাস্টি বোর্ডের বর্তমান চেয়ারম্যান জাফর সাদেক নিয়মবহির্ভূতভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন পদে থাকায়, তাকে ১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে সেসব পদ থেকে সরে যেতে হবে।

তবে নির্দেশনায় যে বিষয়টি সতর্ক করা হয়েছে, তা হলো- গ্রহণযোগ্য কারণ ছাড়া কোনো শিক্ষক, কর্মকর্তা এবং কর্মচারীকে বহিষ্কার করা যাবে না। ইউজিসির বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিভাগের পরিচালক ড. মোহাম্মদ ফখরুল ইসলামের ৩ জানুয়ারি ২০২১ তারিখে স্বাক্ষরিত চিঠিতে এসব নির্দেশনা দেয়া হয়।

সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়টির বিরুদ্ধে আর্থিক দুর্নীতি, সনদ বাণিজ্য, প্রশাসনিক ও একাডেমিকসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ ওঠায় গত ১ নভেম্বর পরিদর্শনে যান ইউজিসির পাঁচ সদস্যের একটি দল। সরেজমিন তদন্ত এবং সংশ্লিষ্ট তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে সম্প্রতি একটি প্রতিবেদন জমা দেয় পরিদর্শক দল। সেই প্রেক্ষিতে গত রোববার ইউজিসির বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিভাগ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়টির রেজিস্ট্রারকে এ বিষয়ে একটি চিঠি পাঠানো হয়।

গত বছরের জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত এসব অভিযোগ ইউজিসি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দেন প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা।

তদন্তে গিয়ে দেখা গেছে- শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদেরকে যে বেতন প্রদান করা হয় তা এতো নগন্য যে, বর্তমান আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে চলা অসম্ভব। এজন্য অসন্তোষ প্রকাশ করেছে তদন্ত কমিটি। নির্দেশনায় বলা হয়েছে- বাস্তবসম্মত বেতন কাঠামো নির্ধারণ করে তা যথাযথভাবে বাস্তবায়ন এবং ইলেক্ট্রিক ফান্ড ট্রান্সফারের মাধ্যমে বেতন ও ভাতাদি পরিশোধ নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে।

এশিয়ান ইউনিভার্সিটির পরিদর্শনে গিয়ে একাডেমিক কার্যক্রমের কিছু তথ্য উঠে এসেছে যা খুবই দুঃখজনক। বেশিরভাগ প্রোগ্রামেই ন্যূনতম যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতাসম্পন্ন শিক্ষক নেই। যেখানে ইউজিসির নীতিমালা অনুযায়ী প্রতিটি প্রোগ্রামে প্রতি ৫০ জন শিক্ষার্থীর বিপরীতে একজন অধ্যাপক বা সহযোগী অধ্যাপক এবং তিনজন প্রভাষকসহ কমপক্ষে চারজন স্থায়ী শিক্ষক থাকার কথা, সেখানে বিএড ও এমএড প্রোগ্রামে প্রায় ১০০ শিক্ষার্থীর জন্য শিক্ষক রয়েছেন মাত্র একজন। তাও আবার ওই শিক্ষকের শিক্ষাগত যোগ্যতা রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি।

এছাড়া বাংলা বিভাগে পাঁচ শতাধিক এবং ইংরেজি বিভাগের পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী থাকলেও প্রতিটিতে শিক্ষক রয়েছেন মাত্র একজন করে। ইনফরমেশন সায়েন্স অ্যান্ড লাইব্রেরি ম্যানেজমেন্ট বিভাগেও শিক্ষক মাত্র একজন।

মূলত এসব কারণেই পাঁচটি বিভাগের সাতটি প্রোগ্রাম স্প্রিং সেমিস্টার থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ রাখতে বলেছে ইউজিসি। প্রোগ্রামগুলো হলো- বিএ (অনার্স) ইন বাংলা, এমএ ইন বাংলা, এমএসএস ইন ইনফরমেশন সায়েন্স অ্যান্ড লাইব্রেরি ম্যানেজমেন্ট, বিএ (অনার্স) ইন ইসলামিক হিস্ট্রি অ্যান্ড সিভিলাইজেশন, এমএ ইন ইসলামিক হিস্ট্রি অ্যান্ড সিভিলাইজেশন, বিএড ও এমএড।

সবচেয়ে আশ্চর্য হওয়ার মতো ঘটনা হচ্ছে- ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ জাফর সাদেক একইসঙ্গে যেমন ইন্টারন্যাল কোয়ালিটি অ্যাসুরেন্স এর পরিচালক, তেমনি স্কুল অব সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং এর ডিন আবার কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগেরও নিয়মিত শিক্ষক! যা নিয়মানুসারে কোনো গ্রহণযোগ্যতা নেই।

অভিযোগ পাওয়া গেছে যে, ট্রাস্টি বোর্ডের (বিওটি) সদস্যরা কর্তৃত্ব ধরে রাখতে স্থায়ী কাউকে নিয়োগ দিচ্ছেন না। উল্টো নিজেরাই প্রতিষ্ঠানটির গুরুত্বপূর্ণ অনেক পদ দখলে নিয়েছেন। কখনো পরিচালক, কখনো ডিন, কখনো বিভাগীয় শিক্ষক।

রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিযুক্ত ভিসি নেই গত সাড়ে ৯ বছর ধরে। প্রতিষ্ঠার ২৫ বছর হয়েছে গেছে অথচ একবারের জন্যও প্রোভিসি ও ট্রেজারার নিয়োগ দেননি। এছাড়া হিসাব পরিচালক, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, প্রক্টরসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদেও নেই কোনো কর্মকর্তা।

পরিদর্শন কমিটির প্রধান ও ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক ড. আবু তাহের বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়টিতে গিয়ে দেখা গেছে তারা আর্থিক, প্রশাসনিক ও একাডেমিক বিষয়ে কোনো নিয়মই অনুসরণ করেন না। উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে বেসরকারি আইন ও নীতিমালা পরিপালনের জন্য যে নেতৃত্ব দরকার, তা দেখার পূর্ণকালীন কাউকে নিয়োগই দেয়া হয়নি। বরং সেখানে অনিয়ম করে বিভিন্ন পদে বসে আছেন ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্যরা। বছরের পর বছর কোনো অডিট নেই, নেই কোনো নিয়ম-শৃঙ্খলা। তবে মন্ত্রণালয় এবং ইউজিসির যৌথ তদন্তে প্রাথমিকভাবে সনদ বাণিজ্যের বিষয়টির প্রমাণ পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে অধিকতর তদন্ত করতে বলেছে মন্ত্রণালয়।

যেখানে ২৫ বছরই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন মেনে চলেনি, সেক্ষেত্রে এসব নির্দেশনা কি মানবেন? আর যদি না মানেন তাহলে ইউজিসির করণীয় কী? জানতে চাইলে ইউজিসির বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিভাগের পরিচালক ড. মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম বলেন, এ বিষয়ে তারা যদি মনোযোগী না হন তাহলে ইউজিসি বা শিক্ষা মন্ত্রণালয় আবার তদন্তের জন্য একটি উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন কমিটি গঠন করতে পারে এবং তারপরে সুপারিশটি পরবর্তী পদক্ষেপের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় বা চ্যান্সেলর মহামান্য রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠাতে পারে। এ বিষয়ে সাবেক ভিসি আবুল হামান মু. সাদেকের সঙ্গে বেশ কয়েকবার যোগযোগ করা হয় কিন্তু কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি।

এমকে

মন্তব্য করুন

daraz
  • শিক্ষা এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
ঢাবিতে ছাত্রলীগের ‘গেস্টরুমে’ অচেতন শিক্ষার্থী, তদন্ত কমিটি গঠন
‘ইনস্যুরেন্স পাঠ্যক্রম যুগোপযোগীকরণে অংশীজনের ভূমিকা’ শীর্ষক গোলটেবিল
ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভে উত্তাল মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়গুলো, গণগ্রেপ্তার
ঢাবির সুইমিং পুলে ছাত্রের মৃত্যু, তদন্ত কমিটি গঠন
X
Fresh