অবশেষে রাবি রেজিস্ট্রারের পদত্যাগ
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) উপাচার্য অধ্যাপক এম আব্দুস সোবহান দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্বে আসার পর থেকেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম, দুর্নীতি এবং স্বজনপ্রীতির অভিযোগ উঠে। পরবর্তীতে প্রশাসনের বিরুদ্ধে ৩০০ পৃষ্ঠার একটি অভিযোগপত্র ইউজিসি, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এবং দুর্নীতি দমন কমিশনে দাখিল করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজের একাংশ। সেই অভিযোগগুলো আমলে নিয়ে ইউজিসি একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে।
তদন্ত চলাকালে রেজিস্ট্রার অধ্যাপক এম এ বারী বিভিন্নভাবে অসহযোগিতা করে বলে জানান ইউজিসি। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে ২৫টি অভিযোগের সত্যতা পায় ইউজিসি। ইউজিসির সেই তদন্ত প্রতিবেদন সংশ্লিষ্ট চার দপ্তরে প্রেরণ করা হয়। পরে তদন্ত প্রতিবেদনটি আমলে নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর গত ১৩ ডিসেম্বর একটি পত্রের মাধ্যমে রেজিস্ট্রারকে অব্যাহতির নির্দেশ দেয়।
পত্রে উল্লেখ করে বলা হয়, ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ নীতিমালা-২০১৫ এর শিক্ষাগত যোগ্যতা শিথিল করে ২০১৭ সালে পরিবর্তিত নীতিমালা অনুযায়ী উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। উক্ত নীতিমালা পরিবর্তন এবং শিক্ষক নিয়োগের প্রক্রিয়ায় অনিয়মের অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করার জন্য বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন কর্তৃক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার প্রফেসর আবদুল বারী তদন্ত কমিটিকে বিভিন্ন পর্যায়ে অসহযোগিতা করেছেন, যা অসদাচরণের সামিল। তদন্ত কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী তাকে রেজিস্ট্রারের পদ থেকে অব্যাহতি প্রদানের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।’
তবে বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্ট্রারকে অব্যাহতি না দিয়ে ভর্তি কমিটির সভা আহ্বান করেন উপাচার্য। সভায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ অমান্য করে রেজিস্ট্রারকে উপস্থিত রাখায় শিক্ষকদের একাংশ আপত্তি জানায়। অবশেষে আপত্তির মুখে এক পর্যায়ে সভাটি স্থগিত করেন উপাচার্য। এসময় যতক্ষণ না রেজিস্ট্রারকে অব্যাহতি দেওয়া হবে ততক্ষণ পর্যন্ত আর কোনও সভায় অংশগ্রহণ করবে না বলে জানিয়ে দেয় শিক্ষকরা। উপাচার্য পরে রেজিস্ট্রারকে কৌশলে ছুটিতে পাঠায় বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়।
সম্প্রতি শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে রাবি প্রশাসনের সকল অভিযোগের বিষয়ে এক সপ্তাহের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানান।
এমন পরিস্থিতিতে রেজিস্ট্রার ‘শারীরিক অক্ষমতার’ কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করেন। বৃহস্পতিবার (৩১ ডিসেম্বর) বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এম আব্দুস সোবহানের সভাপতিত্বে ৫০৫তম সিন্ডিকেট সভায় তার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করা হয়। সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক আব্দুল আলিম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
অধ্যাপক আলিম বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী রেজিস্ট্রারকে অব্যাহতি দেওয়ার বিষয়টি আলোচনা করতেই জরুরি সভা আহ্বান করা হয়। এর আগে বুধবার বিকেলে রেজিস্ট্রার পদত্যাগপত্র জমা দেন। তাই বিষয়টি সিন্ডিকেটে গৃহীত হয়েছে। পহেলা জানুয়ারি থেকে পদত্যাগের বিষয়টি কার্যকর হবে।
পদত্যাগের বিষয়ে জানতে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে রেজিস্ট্রার অধ্যাপক এম এ বারীর ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
জিএ
মন্তব্য করুন