বইমেলায় হানিফ রাশেদীনের কাব্যগ্রন্থ ‘শেকলের নূপুর’
দীর্ঘ সাত বছর পর প্রকাশিত হল হানিফ রাশেদীনের দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ ‘শেকলের নূপুর’।
একুশে গ্রন্থমেলা ২০২০-এ প্রতিকথা থেকে প্রকাশিত এ বইটির প্রচ্ছদ করেছেন কামরুজ্জোহা।
এর আগে ২০১২ সালে প্রকাশিত হয়েছিল ‘নিকাশের দায় রেখে’। সূচিপত্র প্রকাশনী থেকে।
হানিফ রাশেদীন এই সময়ের কবি। তিনি কবিতা চর্চায় নিয়োজিত আছেন এক দশকেরও অধিক সময় ধরে। দ্রোহ ও প্রেমকে একীভূত করার একটি প্রয়াস লক্ষণীয় হানিফ রাশেদীনের কবিতায়। তার কবিতার সমস্ত পরিসর জুড়ে ছড়িয়ে আছে দেশ ও মানুষ আর মুক্ত হতে চাওয়ার এক সুনিপুণ বাসনা। বইটি পাওয়া যাচ্ছে মেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের প্রতিকথা স্টলে।
জেবি
মন্তব্য করুন
বুকার পুরস্কারের সংক্ষিপ্ত তালিকা প্রকাশ
সাহিত্যজগতের সম্মানজনক ম্যান বুকার পুরস্কারের সংক্ষিপ্ত তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। সংক্ষিপ্ত এ তালিকায় স্থান পেয়েছে ছয়টি বই। মঙ্গলবার (৯ এপ্রিল) বুকারের অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তালিকা থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তালিকায় দেখা যায়, এতে আর্জেন্টিনার সেলভা আলমাদার লেখা ও অ্যানি ম্যাকডারমটের অনুদিত ‘নট আ রিভার’ বইটি স্থান পেয়েছে। এছাড়া কায়রোস উপন্যাসের জন্য তালিকায় স্থান পেয়েছেন জার্মান লেখক জেনি এরপেনবেক। বইটি অনুবাদ করেছেন মাইকেল হফম্যান।
তালিকায় আরও যে বইগুলো স্থান পেয়েছে তাহলো ব্রাজিলের ইটামার ভিয়েরা জুনিয়রের লেখা ও জনি লরেঞ্জের অনুদিক ‘ক্রুকড প্লো’, দক্ষিণ কোরিয়ার হোয়াং সোক ইয়ংয়ের লেখা ও সোরা কিম রাসেল এবং ইয়ংজাই জোসেফাইন অনুদিত ‘ম্যাটার ২-১০’, নেদারল্যান্ডের জেন্টে পোস্টহুমার লেখা ও সারাহ টিমার হার্ভের অনুদিত ‘হোয়াট আই উড র্যাদার নট থিংক অ্যাবাউট’ এবং সুইডেনের ইয়ো জেনবার্গের লেখা ও রাইরা ইউসেফসনে অনুবাদ করা ‘দ্য ডিটেইলস’।
প্রসঙ্গত, ২০০৫ সালে সাহিত্যে সম্মানিত এ পুরস্কারের প্রবর্তন করা হয়েছে। যুক্তরাজ্য বা আয়ারল্যান্ড থেকে প্রকাশিত, কিংবা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের লেখকদের ইংরেজিতে অনূদিত বই এ পুস্কারের জন্য বিবেচিত হয়। এ পুরস্কারের আর্থিক মূল্য ৫০ হাজার পাউন্ড। যা লেখক ও অনুবাদকের মধ্যে সমানভাবে ভাগ করে দেওয়া হয়।
আগামী ২১ মে লন্ডনের টেট মর্ডানে আন্তর্জাতিক বুকার পুরস্কার ২০২৪ বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হবে।
স্মৃতিকথা / ‘চান উইল্ল্যে চান উইল্ল্যে, হালিয়ে ঈদ’
আমার গ্রামের নাম গুনাগরী। চট্টগ্রাম শহর থেকে দুইটা মোটামুটি বিখ্যাত নদী পার হয়ে যেতে হয়। প্রথমটা কর্ণফুলী। দ্বিতীয়টা সাঙ্গু বা শঙ্খ। দুই নদীর সৌন্দর্য দেখতে দেখতে একসময় আপনার চোখ প্রবেশ করবে দুইপাশে সবুজের ছড়াছড়ি আর সর্পিলদেহী একটা মোটামুটি সংকীর্ণ হাইওয়েতে। যার পুবে উঁচু পাহাড় আর কোল ঘেঁষে গড়ে উঠছে বসতবাড়ি ও খেতখামার। আর পশ্চিমে বিস্তীর্ণ সবুজ মাঠ। সবজি আর ধানের মাঠ। যেখানে প্রায় সারা বছরই চাষ হয়। খিল নেই কোনো জমি। আরও পশ্চিমে গেলে, কয়েক কিলোমিটার জনবহুল এলাকা ফেলে, বঙ্গোপসাগর; যার পাড়ে দাঁড়িয়ে আপনি আকাশ আর জলরাশি ছাড়া আর কিছুই দেখবেন না। আসলে ওদিকটাতে আর কোনো বসতির চিহ্ন নেই। পাড়ের কোনো নিশানা নেই। আমার নানারা বলতেন, আমাদের পশ্চিমে বেমান সাইগর!
আমি জীবনের প্রথম ষোলো বছর কাটিয়ে এসেছি এই বাঁশখালী উপজেলায়। একসময় রাস্তাঘাট তেমন পাকা ছিলো না। শুধু মেইন রোড বাদ দিলে আর সব রাস্তাই বর্ষাকালে কাদামাটির দমদমা হয়ে যেতো। শীতকালে অবশ্যই সুন্দর লাগতো সবকিছু। বিল পাতাড়ি হাঁটাই ছিলো যোগাযোগের অন্যতম সহজ উপায়। শহর থেকে যেতে গেলেও পড়তে হতো বিড়ম্বনায়। সাঙ্গুর উপর দিয়ে ফেরি পার হয়ে। মিস হলে সাম্পান। সাম্পানওয়ালার সেই বিখ্যাত গান তো দেশের প্রায় সবাই জানেন। ‘বাঁশখালী -মহেশখালী, পাল উড়াইয়া দিলে সামপান/গুরগুরাই টানে/তোরা হন হন যাবি আঁর সাম্পানে!’
আমাদের ছোটো বেলায় ঈদ হতো শীতকালে। সেসময় স্কুলের প্যারা থাকতো না। নিরবচ্ছিন্ন অবসর যাকে বলে। তো, রোজা আর ঈদ ছিলো আমাদের ছিলো বিশাল এক উপলক্ষ। রোজার আগে আগে মক্তবের মিজ্জি আমাদেরকে রোজার প্রস্তুতি নিতে উদ্বুদ্ধ করতেন। দলবেঁধে সুরা তারাবি, রাতে কেয়ামুল লাইল, সেহেরির আগে গজল পরিবেশনে আমাদের কয়েকজনের দায়িত্ব ছিলো বেশি। বিশেষ করে হুজুর যাদেরকে তাঁর পাঠশালার মেধাবী ছাত্র মনে করতেন! সৌভাগ্যক্রমে আমি ছিলাম হুজুরের প্রিয়। তাই আমার অংশগ্রহণ ছিলো অগ্রভাগে।
সেহেরিতে উঠে খাওয়ার আগে মসজিদে গিয়ে ‘রোজাদার অক্কল ঘুমত্তুন উড়ি যনগুই’ কয়েকবার বলে লোকজনকে ডেকে দিয়ে শুরু করতাম গজল গাওয়া। ‘ওহে সকালের বাতাস তুমি কোথায় চলে যাও?/ মদিনার খুশবু তুমি আমায় দিয়ে যাও’, ‘ওগো মদিনা মনোয়ারা হে,/ ওগো মদিনা মনোয়ারা’, ইত্যাদি গজল গাইতাম। রোজা শেষ হওয়ার আগে আগে আমরা ঈদের প্রস্তুতি সেরে নিতাম।
তবে অন্য দশজনের মতো ঈদ ছিলো না আমার। আমাদের স্কুলে একটা প্রবন্ধ বা নিবন্ধ ছিল এতিমদের নিয়ে। ঈদের দিন তাদের দুঃখী মুখে রাসুল (সা.) হাসি ফুটাতে বলেছিলেন। আমার বাবা-মা দুইজন থাকলেও নিজেকে আমি এতিম মনে করতাম। কারণ, আমি তাদের কারো ঘরে থাকতাম না। থাকতাম নানা বাড়িতে।
স্বাভাবিকভাবে আমার মনে সবসময় একটা ভয় কাজ করত। কারো কাছে ঈদেও জামা চাইতে পারতাম না! ঈদের আগের দিন দেখা যেতো আমার মা তার নতুন সংসার থেকে একটা শার্ট পাঠাত। আর বাবা এলাকার এক লোককে দিয়ে চাঁদরাতে বা তার আগের দিন একটা কী দুইটা শার্ট পাঠাতেন। দুয়েকবার বাঁশিসহ জুতো। অবশ্যই নানাভাইও একটা কিনে দিতেন। সেটা কোনো মার্কেট থেকে নয়। হকার থেকে। আমরা তখন হকারকে নিলামি টাল বলতাম! ঈদ তবুও খুশির উপলক্ষ ছিল।
মসজিদের হুজুর তার খুতবা পূর্ববর্তী ওয়াজে প্রায়ই বলতেন ঈদ আসলে রোজাদারের জন্য। অন্যরা সেদিন ঈদ মানে খুশি সেটা বুঝতে পারে না। এই বুঝ নিয়ে চাঁদ ওঠা সন্ধ্যায় রাজ্যের যত আগ্রহ নিয়ে মাগরিবের নামাজ কোনো রকম ফরজটুকু পড়ে আমরা মিছিলে চলে যেতাম। ‘চান উইল্ল্যে, চান উইল্ল্যে’, ‘আঁজিয়ে রোজা/হালিয়ে ঈদ, তোর মা কাঁদের ফিইতফিইত!’ তারপর বাড়ির পশ্চিমে আদ্দুনী বিলের মোহনায় গিয়ে নতুন চাঁদ দেখে গড়্গড়িয়ে পড়তাম, নতুন চাঁদ উঠিলে এই দোয়া পড়িতে হয়- আল্লাহুম্মা আহিল্লাহু আলাইনা বিল আমনি ওয়াল ঈমানি, ওয়াস সালামাতি ওয়াল ইসলাম, রাব্বি ওয়া রাব্বুকাল্লাহ।’
ঈদের দিন খুব ভোরে আমার ঘুম ভেঙে যেত খিদেয়; যা এখনো ঘটে। দীর্ঘ ত্রিশ দিন সেহেরি খাওয়ার অভ্যাসের কারণে এইদিন খিদে লেগে যায় ভোরে। আযানের সাথে সাথে মসজিদে যেতাম। নামাজ সেরে আবারো গজল ধরতাম। যা চলতো দিন শুরু পর্যন্ত। ঈদের জামাতেও আগে আগে যেতাম। নামাজের আগে যদি আরেকবার গজল গাওয়ার সুযোগ পাই! এবং, সেটা জুটতো। আরো দুয়েকটা গজল গাওয়ার সুযোগ পেতাম!
জামাত শেষে শুরু হয়ে যেতো আমাদের ঈদচলা। পুরো গ্রাম ঘুরে ঘুরে বেড়াতাম। সন্ধ্যা নামার আগে ঘরে ফিরতাম। আমাদের দল ছিলো মোটামুটি আট দশ জনের। দলের তেমন কারো সাথে এখন যোগাযোগ নেই অবশ্যই।এদের অধিকাংশই মধ্যপ্রাচ্যে এখন। তো, আমরা ঘরে ঘরে গিয়ে সবাইকে কদমবুসি করতাম। লাল সেমাই, জর্দাসেমাই, মুরাব্বা, লাচ্ছাসেমাই আর বোম্বে সেমাই ছিলো ঈদের খাবার। যাদের কৃষি ছিলো, তাদের ঘরে ঘুরাপিঠা বা চুটকি বানানো হতো। গুড়, দুধ আর নারিকেল দিয়ে বানানো হতো এই পিঠা। ঘনিষ্ঠ আত্মীয়ের বাসা হলে আমরা দেশি মুরগী অথবা গরু মাংস দিয়ে ভাত খেতাম! তবে সেমাই আর পানিতে সেদিন আমাদের পেট হয়ে উঠতো একেকটা চালের মটকা!
তখন সেলামীর অত চল ছিলো না। তবুও আমাদের কিছু নির্দিষ্ট টার্গেট থাকতো। আমার মার কাছে গেলে পাঁচ টাকা পেতাম! আরো কিছু কিছু আত্মীয় বা পরিচিত মানুষের ঘরে গেলো আমাদেরকে দোয়েলপাখির ছবিসহ দুই টাকার নতুন নোট দিতেন! এক টাকার হরিণমার্কা নোটও ছিলো আমাদের আগ্রহের তালিকায় । ঈদে সাকুল্যে দশ বারো টাকা পেতাম। সেটা দিয়ে নানারকম প্ল্যান করতাম। আর দিনশেষে আইস্ক্রিমওয়ালার পকেটে যেতো এর একটা অংশ। অবশ্যই প্রায়সময় আমি কলম কিনে রাখতাম এই টাকা দিয়ে।
একসময় গ্রামের ঈদ মানে ছিলো অনাবিল আনন্দ। আমার এক বন্ধু ঈদ কার্ড দিতো আমাকে। সেখানে লেখা থাকতো, ঈদ আপনার জীবনে নিয়ে আসুক অনাবিল আনন্দ। আর উপরে সে লিখে দিতো, ঈদ মানে খুশির দিন।আসতে হবে ঈদের দিন! ঈদের আগে আমার টার্গেট থাকতো বাণী সম্বলিত ছোটো ছোটো কার্ডের দিকে। দুই টাকার এসব কার্ড লাগিয়ে ঘরের সৌন্দর্য একটু বাড়াতে চাইতাম। কারণ স্কুলে আমার বন্ধুদের প্রায় সবারই বাবা চাকুরিজীবী ছিলেন। ওদের স্বচ্ছলতার গল্প শুনে ভয়ে কুঁকড়ে থাকতাম আমাদের ঘরে আসলে কি ভাববে! অবশ্যই আমার নানুর আন্তরিকতা যাবতীয় সব শংকা দূর করে দিতো। তবে আমার বন্ধুদের মধ্যে একটা বোঝাপড়া ছিলো। তারা আমাকে কখনো বাবা মা কোথায় সেটা জানতে চাইতো না।
আমার কাছে গ্রামের ঈদের প্রতি আজো একটা মোহ কাজ করে। ঈদ মানে প্রায় কয়েক হাজার মানুষের সাথে দেখা হওয়া। বছরে একবারের জন্য হলেও প্রায় শ’খানেক বাড়িতে গিয়ে কুশল বিনিময় করা। ভালো মন্দ কিছু খেতে পারা। একটা হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলা পরস্পরের মধ্যে৷ সারা বছরের যাবতীয় সব গ্লানি অনায়াসে ভুলে গিয়ে এই একটা দিনে আমরা সকল ভেদাভেদ অতিক্রম করে কাঁধে কাঁধ রেখে দাঁড়িয়ে যেতাম ঈদের নামাজে৷ বেরিয়ে পরস্পর কুশল বিনিময় ও কোলাকুলি। সেমাই খাওয়া দিন ভর। যার ছিঁটফোটাও নেই শহুরে নাগরিক জীবনে।
ঈদ মানে আমার কাছে গ্রামে যাওয়া। যেখানে বেড়ে উঠেছি। যাদের সাথে বড় হয়েছি সুখ, দুঃখ, ক্লেদ ও আনন্দে। বছর শেষে আবারো সবার সাথে হাসি বিনিময়। সালাম বিনিময়। অধুনা প্রচলিত সেলামি তো আছেই! ঈদ সবার জীবনে এক দিনের জন্য হলেও হাসি ফোটাক। দুঃখ, মান-অভিমান ভুলে সবাই গেয়ে উঠুক, ঈদ মোবারক, ঈদ মোবারক!
লেখক : শিক্ষক ও অনুবাদক, ইংরেজি বিভাগ, বাংলাদেশ আর্মি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি, কুমিল্লা
ধ্রুব এষ আইসিইউতে
শারীরিক অসুস্থতাজনিত কারণে দেশের প্রখ্যাত প্রচ্ছদ শিল্পী ধ্রুব এষকে রাজধানীর একটি হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) বিকেলে তাকে রাজধানীর পান্থপথের হেলথ অ্যান্ড হোপ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
প্রচ্ছদশিল্পী চারু পিন্টু বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
প্রচ্ছদশিল্পী হিসেবে দেশজুড়ে তার বিশেষ খ্যাতি রয়েছে। তিনি প্রায় সাড়ে ৩ হাজার গ্রন্থের প্রচ্ছদপটের নকশা করেছেন। নকশার পাশাপাশি লেখালেখিও করেন তিনি। ১৯৯০ সালের পর কথাসাহিত্যক হুমায়ূন আহমেদের অধিকাংশ গ্রন্থের প্রচ্ছদ এঁকেছেন এ খ্যাতিমান প্রচ্ছদশিল্পী।