• ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
logo

‘সঙ্গে’ না ‘সাথে’ শব্দ নিয়ে বিতর্ক

অনলাইন ডেস্ক
  ১৯ অক্টোবর ২০২১, ২০:৫০
‘সঙ্গে’ না ‘সাথে’ শব্দ নিয়ে বিতর্ক

‘সঙ্গে’ বলুন, ‘সাথে’ নয়। দীর্ঘদিন ধরে দুটি শব্দ নিয়ে বিতর্ক চলছে। দুটি শব্দের বিতর্ক দূরীকরণে কলকাতায় একটি ব্যানার বানানো হয়েছে। সেই ব্যানারের বড় অক্ষরে লেখা ‘সঙ্গে’ বলুন, ‘সাথে’ নয়। ব্যানারটি কলকাতার অনেক নাগরিকের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। তবে ব্যানারটি কারা লাগিয়েছেন, মঙ্গলবার দিনভর খুঁজেও বের করা যায়নি।

পাঁচ ফুট বাই দুই ফুট সেই ব্যানারে অফ হোয়াইটের ওপর খয়েরি রঙে লেখা দুটি লাইন- ‘সঙ্গে’ বলুন সাথে নয়/সাথের ব্যবহার শুধু গানে ও কবিতায়। তার নিচে একটু ছোট অক্ষরে, ‘আচার্য সুনীতি কুমার চট্টোপাধ্যায়/রামকৃষ্ণ মিশন, গোলপার্ক বক্তৃতায়।’

অর্থাৎ এই বাক্য আচার্য সুনীতিকুমারের। তিনি বলেছিলেন, গোলপার্কে রামকৃষ্ণ মিশন ইনস্টিটিউট অব কালচারে দেওয়া একটি বক্তৃতায়। লাইনগুলি স্পষ্ট পড়া গেলেও জানা যাচ্ছে না, কে বা কারা ওই ব্যানার টাঙিয়েছেন। এ নিয়ে শুরু হয়েছে আলোচনা। বাংলা ভাষার ব্যবহারিক প্রয়োগ নিয়ে এই সচেতনতা কাদের উদ্যোগে? তবে কি বাঙালি মাতৃভাষা চর্চার ক্ষেত্রে এবং তার শুদ্ধ প্রয়োগরীতি নিয়ে সচেতন হতে চাইছে?

ভাষাবিদরা দীর্ঘদিন ধরেই ‘সাথে’ নয়, ‘সঙ্গে’ লেখার পক্ষপাতী। ভাষাবিদ পবিত্র সরকারের মতে, ‘সাথে’ কথাটি পূর্ব বাংলায় বহুল প্রচলিত। আগে পশ্চিমবঙ্গে বিশেষ করে কলকাতার মানুষ ওই শব্দটি সেই অর্থে ভাষায় ব্যবহার করতেন না। কারণ, তখনকার মান্য চলিত বাংলায় ‘সাথে’ চলত না। কিন্তু সারা পূর্ববঙ্গের (এখন বাংলাদেশ) ভাষা অঞ্চলে ‘সাথে’ কথাটি ‘সঙ্গে’ অর্থে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।

সেই সময় ‘সাথে’ শব্দটি নিয়ে যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও আপত্তি করেছিলেন, সেই কথাও মনে করিয়ে দিচ্ছেন পবিত্র। এখন সাথে শব্দটি সব জায়গায় ব্যবহার হচ্ছে। তবে সাহিত্যিক প্রমথ চৌধুরী এবং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘সাথে’ শব্দটি নিয়ে আপত্তি করেছিলেন।’

অধুনা প্রয়াত নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী তার ‘বাংলা কী লিখবেন, কেন লিখবেন’ বইয়েও লিখেছেন, ‘সাথে লিখবেন না। পদ্যেও আজকাল বড় কাউকে সাথে লিখতে দেখা যায় না, গদ্যে তো একেবারেই অচল।’ সেই সুর শোনা গেল বাংলা ভাষার গবেষক বারিদবরণ ঘোষের গলায়। তিনি বললেন, ‘সহিত থেকে কাব্যিক প্রয়োগে সাথে কথাটি এসেছে। কিন্তু গদ্যে কাব্যিক প্রয়োগ মানানসই নয়। আবার যেহেতু আমরা গদ্যের ভাষায় কথা বলি, তাই বলার সময় সাথে কথাটি না বলাই ভালো। তবে লঘু অর্থে এর প্রয়োগ করা যেতে পারে।’

পবিত্রের অবশ্য অভিমত, ‘সাথে’র ব্যবহার যেভাবে ছড়িয়ে পড়েছে, তাতে তাকে আটকানো কঠিন। তার বক্তব্য, ‘ভাষা বিজ্ঞানের দিক থেকে বলি, লোকের মুখে যেটা এসে যায়, সেটাই শেষ পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। কাজেই ‘সাথে’ শব্দটিকে এখন আর বঞ্চিত বলতে পারব না। এটা চলবে, একে আটকানো যাবে না।’বিভিন্ন অভিধানে ‘সাথে’ শব্দটির উল্লেখ রয়েছে। সেখানেও অব্যয় পদ হিসাবে দেখানো ‘সাথে’র পাশে ‘গ্রাম্য এবং আঞ্চলিক’ লেখা থাকে। শুধু তা-ই নয়, অভিধানে ‘সাথে’র সঙ্গে ‘কাব্যে ব্যবহৃত’ বলেও উল্লেখ করা হয়। সমার্থক শব্দ হিসাবে সেখানে দেওয়া থাকে ‘সঙ্গে’ এবং ‘সহিত’। তবে হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বঙ্গীয় শব্দকোষে ‘সাথে’ শব্দের কোনো উল্লেখ নেই। বাংলাদেশ সরকার সে দেশে ‘সরকারি কাজে প্রমিত বাংলা ব্যবহারের নিয়ম’ শীর্ষক একটি বই প্রকাশ করেছে ২০১৭ সালে। সেখানে স্পষ্ট লেখা রয়েছে, ‘সাথে কথ্য এবং কাব্যিক বা সাহিত্যিক রূপ। প্রমিত রূপ ‘সঙ্গে’। আনুষ্ঠানিক বা দাপ্তরিক ব্যবহারে ‘সঙ্গে’ লেখাই সমীচীন।’

‘সাথে’ বনাম ‘সঙ্গে’র এই বিতর্কে আপাতত মজেছে বাঙালি। কৌতূহল এ নিয়েও যে, উৎসবের এই মরসুমে এত সুচারুভাবে কে বা কারা মাতৃভাষার এই শুদ্ধতার প্রচারে মন দিল! দক্ষিণ কলকাতার বাসিন্দা অসীম রায় যেমন বলছেন, ‘খবরের কাগজ বা টেলিভিশনে ‘সাথে’ তেমনভাবে চোখে পড়েনি কখনও। কিন্তু সিরিয়ালে বা সাহিত্যে ‘সাথে’র ব্যবহার প্রচুর হয়। কয়েক দিন ধরেই এই ব্যানারটি এখানে দেখে কৌতূহল হচ্ছে, কারা এমন প্রচার করছে! চারদিকে তো শুধু রাজনৈতিক আর বিজ্ঞাপনী ব্যানার দেখেই আমরা অভ্যস্ত। তবে এই ব্যানার যদি বাংলা ভাষার শুদ্ধতায় সদর্থক ভূমিকার কারণে টাঙানো হয়ে থাকে, তবে তা সাধুবাদযোগ্য।’

অনেক সময় জন পরিষেবামূলক বিজ্ঞাপনের ক্ষেত্রেও আমরা এমন লিখে থাকি। কিন্তু বাংলা ব্যাকরণ বা ভাষা শেখানোর জন্য কেউ বিজ্ঞাপন করছে, এমন দেখিনি কখনও। শুনিওনি। ফলে এই ব্যানারের সঙ্গে বিজ্ঞাপনী কোনো বার্তা আছে বলে প্রাথমিকভাবে আমার অন্তত মনে হচ্ছে না। যদি টিজার অ্যাডভারটাইজমেন্ট হয়, তা হলে পরবর্তী ব্যানারের জন্য অপেক্ষা করা উচিত।’

সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা

এফএ/টিআই

মন্তব্য করুন

daraz
  • শিল্প-সাহিত্য এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
জালে ধরা পড়ল ৪০০ কেজি ওজনের ‘তলোয়ার’ মাছ
সাজেকে শ্রমিকবাহী ট্রাক খাদে, নিহত বেড়ে ৯ 
ঝিনাইদহে বৃষ্টির জন্য ইসতিসকার নামাজ আদায়
বিরল এক মহাজাগতিক ঘটনার সাক্ষী হলো দেশ
X
Fresh