উৎপল বিশ্বাস এর তিনটি কবিতা
[এক]
নদীর হাহাকার
বহুকাল ধরে গাঙ্গেয় এই বাংলায়
পদ্মা মেঘনা যমুনা মধুমতির বলুচর ধরে
আমি হেঁটে চলেছি-
আমার এই দেহ নদী বিধৌত পলিমাটিতে গড়া।
ডুবসাঁতারে কাটিয়েছি দুরন্ত শৈশব কৈশোর,
নদীর সাথে আমার আজন্ম চলাচল।
জলতরঙ্গে মিলিয়েছি কতো আনন্দ বেদনার ছন্দ,
ভাটিয়ালি সুরে হারিয়েছি পার্থিব জীবন।
এখন তীব্র দহন নিয়ে মৃতপ্রায় নদীরা বয়ে যায়
আবহমান এই বাংলায় নেই জীবনের প্রস্রবণ।
বণিক বাণিজ্যে এপাড়-ওপাড় পারাপারের সেতু,
ড্রেজারের হিংস্র আঁচড়ে মানব-দানবের মন্থন।
পলিমাটির এই দেহে হাজারো জীবাণুর বসবাস,
শুনি ধর্ষিতা নারীর মতো নদীর হাহাকার!
---------------------------
[দুই]
ভাঙনের শব্দ শুনি
ভেঙেছে আগেই
মুক্তিযুদ্ধের চেতনা,
বাঙালি সত্তা, সমাজতন্ত্র
ধর্মনিরপেক্ষতা।
হাতুড়ি-শাবলের শব্দে নিশুতি রাতে
আবার ফিরে আসে পঁচিশে মার্চ!
চেতনা হত্যায় মত্ত ধর্মের মুখোশধারী,
পাকিস্তানের প্রেতাত্মারা হাসে অট্টহাসি।
এই রক্তাক্ত সবুজ প্রান্তরে এখনও শুনি
তাদেরই জয়ধ্বনি!
এবার ভাঙবে শহীদ মিনার, স্মৃতিসৌধ,
অপরাজেয় বাংলা, স্বাধীনতার স্তম্ভ।
শুধু ভাস্কর্য কিংবা মূর্তি নয়-
এইভাবে সমস্ত বিবেক, ন্যায়বিচার ও বিশ্বাস
ভাঙতে ভাঙতে, ফণা তোলে কালসাপ।
এক সাগর রক্তের বিনিময়ে অর্জিত
এই বাংলাদেশে আজও প্রতিটি মুহূর্তে
আমি শুনি ভাঙনের শব্দ।
---------------------------
[তিন]
এই হাত এখনও মানুষের
চারিদিকে ধ্বংসলীলা-
হিংসা আর বিদ্বেষে উত্তাল সময়,
বিশ্বাস-প্রেম, সাম্য-মৈত্রী পুড়ে পুড়ে ছারখার।
তবুও বহুদিন ধরে পৃথিবীর এই পথে হেঁটে হেঁটে
আমি ভালোবাসার দাবি নিয়ে এসেছি।
নয়নতারা হাতটি বাড়াও-
বিশ্বস্ত এই হাত এখনও মানুষের।
এই পথে চলতে চলতে কোথাও শুনেছি
সুমধুর আজানের আহ্বান,
শুনেছি শাঁখের শব্দ, কাঁসরঘণ্টা, উলুধ্বনি,
শুনেছি গির্জায় প্রার্থনার গান।
সমস্ত উপাসনার মর্ম থেকে
নয়নতারা, তোমার জন্য এনেছি প্রেম।
দেখ এখনও ওঠে পূর্ণিমার চাঁদ,
চরাচর ভেসে যায় আলোকিত জ্যোৎস্নায়
ফসলের মাঠ ভরে ওঠে সম্ভাবনায়।
এসো, সমস্ত হিংসা-বিভেদ ভুলে
একসাথে করি নবান্ন উৎসব!
এসো, অন্ধকার ছেড়ে আলোতে
ধবধবে জ্যোৎস্নায় দেই সাঁতার।
---------------------------
মন্তব্য করুন