কাজল রশীদ শাহীন এর কবিতা ‘ঋষিজ বটবৃক্ষের নান্দীপাঠ’
লাটিম-ঘুড়ির কৈশোরক দুপুর
নারা’ন মাস্টারের স্কুল পালানোর
অমৃত মোহন ক্ষণ
ডাংগুলি খেলার সরস ব্যস্ততায়
পাড়াত বুবুদের সাথে পাঁচবাড়ি বেড়ানো,
মাজবাপের রূপকথার গল্প-
উপেক্ষার ঢিল ছুড়ে ছুটে যেতাম
মুরগী ছানার মতো ওম্ নিতে
এক বটবৃক্ষের কাছে।
কী অপরূপ সেই বটবৃক্ষ!
আর কত কত শত স্বজন তার,
(আমি ছিলাম তার ক্ষুদে এক স্বজন)
আকাশ পথিক, ভূমি পথিকের চতুষ্পদ প্রাণীদের মতো
গাছপালারাও ছিল বন্ধুবর
আকাশ পাতালে ছিল নিরন্তরের মিতালী,
মিতালী ছিল স্বজন
বুড়ীর মা'র সঙ্গে।
বটবৃক্ষ; বুড়ীর মা এখন কেমন আছে?
একচালা টিনের ঘরের দাওয়ায়-
এখনো কি সে বসে থাকে?
কার অপেক্ষায় কেন এই বসে থাকা!
বটবৃক্ষ তুমি কি সংখ্যাগুরু-সংখ্যালঘু বোঝ,
সম্প্রদায়, ধর্ম, বর্ণ, গোত্র, জাত-পাত বোঝ,
তুমি যুদ্ধ বোঝ বটবৃক্ষ-
স্বৈরতন্ত্র, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, সাম্যবাদ
হিরোশিমা থেকে নাগাসাকি-
গ্লোবালাইজেশন, কিংবা রাজনীতি বোঝো।
সেই রাজনীতিবিদগণ-
জনগণের খেদমতের বয়ানে যাদের প্রাণ ওষ্ঠাগত
জনগণের হাড়-মাংসের কাবাব খেয়ে খেয়ে
যারা চাঁদমারি জোছনায় নষ্ট স্বপ্নের বীজ রোপণ করে।
(ঐসব রাজনীতিবিদগণ নিয়ে বৃথা বাক্য ব্যয় করার চেয়ে লজেন্স চোষা ঢের ভাল)
বটবৃক্ষ, তুমি জান কিনা জানি না
কিশোর বেলায় দেখা স্বপ্নসাধ
আমাকে আজও তাড়া করে ফেরে,
আমি বটবৃক্ষ হবো,
ঠিক ঠিক তোমার মতো
সর্বংসহা পরহিতে ব্রত।
অনন্তকাল ধরে ধ্যানমগ্ন এক ঋষি,
দুর্যোগ দূর্বিপাকে, আচার কিংবা অনাচারে
তোমার মতো কোনো বাদ নেই, প্রতিবাদ নেই।
বটবৃক্ষ
তুমি কোন স্কুলে এই বিদ্যা শিখেছো
নারা’ন বাবুর ছাত্র ছিলে কি তুমি?
বটবৃক্ষ
তোমার বর্ণমালা, তোমার ধারাপাত
আমায় শেখাবে?
আমিও যে হতে চাই তোমারই মতো
ড. কাজল রশীদ শাহীন: কবি, সাংবাদিক ও গবেষক
মন্তব্য করুন