• ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
logo

অরুণ কুমার বিশ্বাসের ধারাবাহিক ‘আমাদের ব্যোমকেশ বক্সী’

অরুণ কুমার বিশ্বাস

  ০৭ অক্টোবর ২০২০, ১৯:৩৯
Arun Kumar Biswas's series 'Amader Byomkesh Bokshi'
ব্যোমকেশ বক্সীর ভূমিকায় যীশু সেনগুপ্ত

[তৃতীয় পর্ব]
১৯৬৯ সালে প্রকাশিত ‘লোহার বিস্কুট’ গল্পে আমরা অন্যরকম এক পরিণত ব্যোমকেশ বক্সীকে দেখতে পাই। তার মেধা ও মননের চরম পরাকাষ্ঠা সেখানে লক্ষ্য করা যায়। সোনার চোরাকারবারী অক্ষয় মণ্ডলকে পুলিশ কিছুতেই ধরতে পারছিল না। ইন্সপেক্টর রাখাল সপারিষদ দিনের পর দিন আড়ি পাতছেন। কিন্তু পাখি আর খাঁচায় ঢোকে না। অথচ আমাদের চৌকস ব্যোমকেশ ঘোড়ার নালের মতোন দেখতে একটা জিনিস দেখেই বুঝে নিলেন এটা কোনো নাল নয়, এর সাথে লাগানো আছে চুম্বকখণ্ড যা দিয়ে স্মাগলার অক্ষয় মণ্ডল পানির ট্যাংকিতে লুকিয়ে রাখা সোনার তাল তুলে আনেন। কিন্তু প্রশ্ন হলো কীভাবে! চুম্বক তো সোনা আকর্ষণ করে না। তা করে না বটে, তবে সেই সোনার বিস্কুট যদি লোহার প্যাকেটে মুড়ে পানির ট্যাংকে ফেলা হয়, তাহলে চুম্বক দিয়ে তা তোলাই যায়। এই যে দূরদৃষ্টি ও প্রত্যুৎপন্নমতিত্ব- এ কেবল আমি সত্যান্বেষী ব্যোমকেশের মাঝেই লক্ষ্য করি। সেই বিচেনায় তিনি অনন্য বটে।

‘দুষ্টচক্র’ (১৯৬৩) গল্পে ব্যোমকেশের পর্যবেক্ষণশক্তি সবকিছুকে ছাড়িয়ে যায়। মজার ব্যাপার এই, এখানে কিন্তু মক্কেল নিজেই অপরাধী। অর্থাৎ শুরু থেকেই পুলিশ ও ব্যোমকেশকে ভুল বোঝানো হয়েছে, যাকে বলে উল্টোপথে পরিচালিত করা হয়েছিল। সুরেশ ডাক্তারকে সঙ্গী করে সুদখোর মহাজন বিশু পাল একজনকে খুনের পরিকল্পনা করে। সেই মোতাবেক বিশু পালকে পক্ষাঘাতের রোগী সাজানো হয়। তাদের টার্গেট অভয় ঘোষাল। অথচ সুরেশ ডাক্তার বরাবরই বলে এসেছে যে অভয় ঘোষাল স্বয়ং বিশুকে মারতে চায়, যে কিনা প্যারালিসিসে আক্রান্ত, সে উঠে দাঁড়াতে পারে না। কিন্তু বিশুর সেই সম্ভাব্য খুনি অভয় যখন খুন হয়, পুলিশ তখন একেবারে যাকে বলে কিংকর্তব্যবিমূঢ়, অবশ্য চিন্তিত ব্যোমকেশ নিজেও কিছু কম হননি। কিলার নিজে কিলড্ হয়ে গেলে কার না মগজ ঘামে!

ব্যস, অমনি মগজে পাক দেয় ব্যোমকেশের। তিনি বিশুর বাড়ি ছুটে যান, যে কিনা পক্ষাঘাতগ্রস্ত। তাঁর মনে পড়ে ‘পোকেন’ নামে একরকম ওষুধ আছে যা পুশ করলে পাঁচ-ছ’ঘণ্টার জন্য কাউকে পক্ষাঘাতের রোগী বানিয়ে দেয়া যায়। তথ্যটি অবশ্য ব্যোমকেশ তার এক পরিচিত ডাক্তার অসীম সেনের কাছে জেনেছেন। এই ‘পোকেনবিদ্যা’ই তাকে অভয় খুনের আসল রহস্য উদ্ধারে সাহায্য করেছিল।

‘রুম নম্বর দুই’ (১৯৬৪) গল্পে ব্যোমকেশ তার পূর্বের সকল রেকর্ড ছাপিয়ে যান বলে আমি ধারণা করি। গড়িয়াহাটের কাছে হোটেল নিরুপমায় আচমকা একজন বোর্ডার খুন হন, তার নাম রাজকুমার ওরফে সুকান্ত সোম। লোকটি একসময় সিনেমায় হিরোর পার্ট করতেন। পরে বিশেষ কারণে মুখমণ্ডলে বীভৎস কাটা দাগ পড়লে তার হিরোগিরি চলে যায়। সে ব্ল্যাকমেলিং শুরু করে। এমন লোক যে খুন হবে তাতে আর আশ্চর্য কী! কিন্তু যে খুনি তার পরিচয় পেতে তখন মরিয়া ব্যোমকেশ বক্সী। পুলিশ-সত্যান্বেষী একাট্টা হলে খুনির খোঁজ করছে, অথচ খুনি তাদের হাতের কাছে ক্রাইম স্পটের ঠিক পাশের ঘরে মুখ লুকিয়ে আছে।

একটু সময় লেগেছিল বটে, তবে সেই খুনির একটা মাত্র বেফাঁস মন্তব্য তাকে ফাঁসিয়ে দিল। আর এখানেই ব্যোমকেশের শ্রেষ্ঠত্ব। তিনি সাসপেক্ট হোক বা উইটনেস- তাদের কথা খুব মনোযোগ দিয়ে শুনতেন, যা কিনা একজন চৌকস গোয়েন্দার সবচে বড় গুণ। লেডি ডাক্তার মিসেস শোভনা কিন্তু ভিকটিম সুকান্ত সোমকে আগে কখনও দেখেনি বলে পুলিশের কাছে আগেই বয়ান দিয়েছিল। অথচ ব্যোমকেশের এক ক্রস এগজামিন প্রশ্নের জবাবে মিসেস শোভনা বলে বসলো, ‘ওই মুখ আগে দেখলে আমি কখনওই ভুলতাম না’। কথা সে কিছু মিছে বলেনি। সুকান্ত সোমের মুখটা সত্যি ভয়ংকর। বীভৎস দেখতে। কিন্তু তিনি তো আগে তাকে দেখেনইনি, তাহলে কী করে বললেন যে ভিকটিমের চেহারা এতই ভয়ংকর যে ‘আগে দেখলে কখনওই তিনি ভুলতেন না’। ব্যস, সেই একটি কথার সূত্র ধরেই আসল খুনিকে পাকড়াও করেন ব্যোমকেশ বক্সী।

ব্যতিক্রমী ব্যোমকেশ
প্রসঙ্গত, একটি বিষয় উল্লেখ করা যায়। সত্যান্বেষী ব্যোমকেশকে আমরা শুধু অন দ্য স্পট নয়, দূরে থেকেও গোয়েন্দাগিরি করতে দেখেছি, যা কিনা অগস্ত দ্যুঁপাকে বাদ দিলে আরো কারো ক্ষেত্রে ঘটেনি। অর্থাৎ অজিত কিংবা অন্যদের মুখে ঘটনার বিবরণ শুনেও সমস্যার সমাধান বাতলে দেন ব্যোমকেশ। যেমন ‘মাকড়সার রস’ গল্পে ব্যোমকেশ বক্সী অসামান্য মেধার পরিচয় দেন। গল্পের নন্দদুলাল বসুর ছিল এক অদ্ভুত নেশা। তিনি ট্যারান্টুলার বিষ খেয়ে নেশানিবৃত্তি ঘটাতেন, আর কোনো নেশাদ্রব্য তাকে ধরতোই না। কিন্তু পরিবারের সকলে চায় নন্দবাবু আর যেন মাকড়সার রস না খান। তাই তার উপর চব্বিশ ঘণ্টা নজরদারি শুধু নয়, সদর দরজায় গুর্খা দারোয়ানও বসানো হলো। কিন্তু তারপরও নন্দদুলালের নেশার নিবৃত্তি নেই। তিনি মাকড়সার সর খেয়েই যাচ্ছেন। কিন্তু কীভাবে? মনোযোগ দিয়ে অজিতের কাছে ঘটনার বিবরণ শুনলেন ব্যোমকেশ। জানা গেল যে নেশাখোর নন্দদুলাল আবার লেখেনও। দুরকম কালি ব্যবহার করেন, কালো আর লাল। লাল কালির কলম ব্যবহারের সময় তিনি তার নিব চুষছেন। ব্যস, অমনি ব্যোমকেশ ধরে ফেললেন যে ওই লাল কালিতেই ছিল মাকড়সার বিষ। একজন পিয়নের সঙ্গে তার চুক্তিও হয়েছিল। সে মাসে মাসে এসে সাদা কাগজের ডাক পৌঁছে দেয় নন্দদুলালের হাতে। পার্সেলের আড়ালে লালকালি অর্থাৎ মাকড়সার রসের দোয়াত।

‘অদ্বিতীয়’ গল্পে চিন্তামণি কুণ্ডুর একটি নাতিদীর্ঘ চিঠি আর বারকয়েক ফোনে কথা বলার সূত্রেই ব্যোমকেশ প্রকৃত ঘটনা আঁচ করতে পারেন। চেরা চেরা কণ্ঠে একজন পুরুষ কথা বলছে, এই সামান্য ক্লু ধরেই তিনি অজিতকে বললেন, মনে করো কেসের কিনারা আমি করেই ফেলেছি, শুধু কয়েকটা বিষয়! অবশ্য ঝানু পাঠকের মনে হতেই পারে, এখানে সত্যান্বেষী ব্যোমকেশের কৃত্বিত্ব কিছু নেই, আসল কাজটি করেছেন স্বয়ং শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি তার নিজের মতো করে গল্পটা লিখে দিয়েছেন। ব্যোমকেশ সেখানে নিমিত্ত মাত্র। কিন্তু আমি তা মানতে রাজি নই। ভাড়াটে তপন আর ছদ্মবেশী শান্তা যে একই মানুষ, স্রেফ মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ ব্যোমকেশ তা কীভাবে বুঝলেন, তাও কিন্তু তিনি যুক্তিসহকারে বুঝিয়ে বলেছেন। পুরোটাই তিনি মগজাস্ত্র ব্যবহার করে উদ্ধার করেছেন, তাই কৃতিত্ব ব্যোমকেশেরই, অন্য কারো নয়।

ব্যোমকেশ ও অজিত দুজনেই বড্ড রহস্যপ্রিয়। দীর্ঘ সময় হাতে যুতসই কেস না এলে জীবনটা যেন তাদের আলুনির মতো মনে হয়। ‘সীমন্ত-হীরা’ (অগ্রহায়ণ, ১৩৩৯) গল্পে অজিত যেমনটি বলেছে, ‘অবৈতনিক হলেও চোর-ধরার যে একটা অপূর্ব মাদকতা আছে, তাহা অস্বীকার করিবার উপায় নাই। নেশার বস্তুর মত এই উত্তেজনার উপাদান যথাসময় উপস্থিত না হইলে মন একেবারে বিকল হইয়া যায় এবং জীবনটাই লবণহীন ব্যঞ্জনের মত বিস্বাদ ঠেকে।’

পরিহাসপ্রিয় ব্যোমকেশ
ব্যোমকেশ বক্সীর রসবোধ প্রবল। রহস্যের অনুসন্ধান তিনি ‘সিরিয়াসলি’ করেন, বাকি সময় তাঁর মতো ফূর্তিবাজ মানুষ আর হয় না। তিনি শুধু একজন গোয়েন্দা থুক্কু, সত্যান্বেষী নন, সময়মতো তিনি উচ্ছ্বসিত হয়ে ওঠেন। বিশেষ করে অজিতের সঙ্গে তার সম্পর্কটা নিছক ভালোবাসার। বন্ধু বললে বরং কম বলা হয়, তারা দুজন মাণিকজোড়। বয়সের ফারাকও খুব কম-মাত্র তিন মাস। ‘অর্থমনর্থম’ গল্পের একেবারে শেষে বন্ধু অজিতকে তিনি রসম্ভর খোঁচা মেরে বলেন, ‘লেখক জাতটাকেই আমি ঘোর সন্দেহের দৃষ্টিতে দেখি।’ শুধু কি তাই, সত্যবতীকে নিয়ে অজিত একটু প্রগলভ হলেই ব্যোমকেশ তাকে মনে করিয়ে দেন যে, অজিত কিন্তু তার দাদা, বয়সে বড়, অর্থাৎ সত্যবতী সম্পর্কে তার ভ্রাতৃবধূ। তাই তাকে নিয়ে কোনো প্রকার হাসি-মশকরা করা তার পক্ষে রীতিমতো অনুচিত।

ব্যোমকেশ বক্সীর স্রষ্টা কথাসাহিত্যিক শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়

ব্যোমকেশ মোটেও ভারিক্কি চালের মানুষ নন, বয়স তাকে অমন হতে দেয়নি। রহস্য তার প্রাণ, একথা তিনি প্রায়ই বলতেন। ‘লোহার বিস্কুট’ গল্পের শুরুতে মক্কেল কমলবাবু তার জীবনের ছোট্ট সমস্যা নিয়ে ব্যোমকেশের কেয়াতলার বাসায় এলে ব্যস্ত হয়ে ওঠেন তিনি। সাগ্রহে বললেন, ‘বলুন, বলুন কমলবাবু, অনেকদিন ও বস্তুর মুখদর্শন করিনি।’ একই গল্পে কমলবাবু যখন বাসা খালি রেখে তীর্থযাত্রা করতে চাইলেন, কিন্তু মন ঠিক করতে পারছেন না পাছে তার বাসাখানি বেদখল হয়ে যায়। ব্যোমকেশ সমঝদারের ভঙিতে হেসে উঠলেন। বললেন, ‘তাহলে আর দেরি করবেন না, টিকিট কিনে ফেলুন। কোন ভয় নেই, আপনার বাসা বেদখল হবে না, আমি জামিন রইলাম।’

একবার এক কেসের সূত্রে বাড়ির বাইরে রাত কাটাতে হয় তাকে। ব্যোমকেশ তাতে ভয়ে-ভাবনায় রীতিমতো তটস্থ। তাঁর স্ত্রী সত্যবতী রেগেমেগে কৈফিয়ত তলব করলেন, ভাল চাও তো বলো, তুমি কোথায় রাত কাটালে? তাতে মুচকি হাসেন ব্যোমকেশ। তারপর নাটুকে গলায় বললেন, ‘দোহাই ধর্মাবতার, রাখাল সাক্ষী (ইন্সপেক্টর রাখাল)- আমি জ্ঞানত কোনো কুকার্য করিনি।’ এসবই তার পরিহাসপ্রিয় ভালমানুষির পরিচয় বহন করে।

রসবোধ অবশ্য অজিতের কিছু কম ছিল না। এ প্রসঙ্গে ‘শৈলরহস্য’ গল্পে ব্যোমকেশকে লেখা অজিতের একটি চিঠির কথা উল্লেখ করতে পারি। চিঠির শেষপাতে অজিত মজা করে লিখেছে, ‘দেখা যাচ্ছে ব্যোমকেশ, তুমি নিজেকে যতটা বিখ্যাত মনে কর, ততটা বিখ্যাত তুমি নও।’

সত্যবতীর কথাও তাহলে একটু বলি। সম্পর্কে ভাশুর হলেও অজিতের সঙ্গে তার সম্পর্ক ছিল অনেকটা বন্ধু বা ভাইয়ের মতো। ‘শৈলরহস্য’ গল্পে প্রচণ্ড শীতে ব্যোমকেশ আর সত্যবতী যখন একই আলোয়ানের মাঝে ঘেঁষাঘেঁষি করে বসে, অজিত তখন ফোড়ন কেটে বলে, বুড়ো বয়সে লজ্জা করে না! উত্তরে ব্যোমকেশ বললেন, তোমাকে আবার লজ্জা কী! তুমি তো অবোধ শিশু! ব্যস, মওকা পেয়ে সত্যবতীও অমনি অজিতকে উদ্দেশ্য করে বলল, ‘নয়তো কী! যার বিয়ে হয়নি সে তো দুধের ছেলে!’

বলে রাখা ভালো, ব্যোমকেশের সঙ্গে তার স্ত্রী সত্যবতীর সম্পর্ক অম্ল-মধুর নয়, বেশ ভালোই ছিল বলতে হবে। প্রণয়ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তাদের। এমনকি, খোকা জন্মানোর পরেও স্ত্রীর প্রতি তার ভালোবাসা একটুও কমেনি। তবে স্ত্রী-জাতির প্রতি তিনি কি একটু নেতিবাচক ধারণা পোষণ করতেন বোধ হয়। ‘লোহার বিস্কুট’ (নামখানা যদিও ‘সোনার বিস্কুট’ হলেই ভালো হতো) গল্পে কথা প্রসঙ্গে ব্যোমকেশ সত্যবতীতে উদ্দেশ্য করে ফোড়ন কাটেন, ‘তোমরা স্ত্রী-জাতি সারা গায়ে এত সোনা বয়ে বেড়াও, কিন্তু সোনার ভার কত বুঝতে পারো না। দশ হাত কাপড়ে কাছা নেই।’

আমরা যদি আর্থার কোনান ডয়েলের শার্লক হোমসের সঙ্গে তাঁর তুলনা করি, তাহলে বলতে হয় ব্যোমকেশ বরং নারীদের প্রতি তিনি বেশ শ্রদ্ধাশীল ছিলেন। তেমন অমর্যাদা কখনও করেননি। শার্লক হোমস রীতিমতো ‘মিসোজিনিস্ট’ ছিলেন। নারীকুলকে তিনি দেখতেই পারতেন না। ‘দ্য সাইন অফ ফোর’ গল্পে শার্লক হোমস বলেন, মেয়েদেরকে কখনও পুরোপুরি বিশ্বাস করা যায় না। ডা. ওয়াটসন মেয়েদের প্রতি তাঁর এই মনোভাবকে ‘নৃশংস অনুভূতি’ বলে উল্লেখ করেছেন। আবার ‘দ্য অ্যাডভেঞ্চার অফ দ্য লাইয়্যান’স মেইন’ গল্পে হোমস অভিমত প্রকাশ করেন, মেয়েরা আমার কাছে মোটেও চিত্তাকর্ষক নয়, কারণ মগজ আমার মনকে নিয়ন্ত্রণ করে। সেখানে মেয়েদের কোনো জায়গা নেই’।

এডগার অ্যালান পো’র চরিত্র অগস্ত দ্যুঁপা ব্যাচেলর শুধু নয়, রীতিমতো বোহেমিয়ান ছিলেন। তিনিও মেয়েদের প্রতি বিশেষ শ্রদ্ধা পোষণ করতেন বলে জানা যায় না। তবে ‘দ্য পারলয়ন্ড লেটার’ গল্পে তার মক্কেল ফ্রেঞ্চ রানির প্রতি তাকে বেশ সহানুভূতিশীল হতে দেখা যায়। সেটা তার মক্কেল বলেই হয়তো। অবশ্য সত্যজিৎ রায়ের ফেলুদাকেও সেভাবে নারীকুলের প্রতি বিপ্রতীপ ধারণা পোষণ করতে দেখা যায়নি।

স্বাস্থ্যসচেতন মানুষ ছিলেন ব্যোমকেশ বক্সী। কাজ না থাকলেই তিনি অজিতকে নিয়ে হাওয়া খেতে বেরোতেন। খুব বেশি রসনাবিলাস করতেন বলেও জানা যায় না। ‘ছলনার ছন্দ’ গল্পে ইন্সপেক্টর রাখালের আমন্ত্রণে ব্যোমকেশ নিজেই বলেন, ‘চলুন, যাই তবে। বাড়িতে বেকার বসে থাকার চেয়ে ঘুরে বেড়ালে স্বাস্থ্য ভাল থাকে।’ তবে তিনি ধূমপান করতেন। দুষ্টচক্র-এ অজিত যেমনটি বলেন, ‘সেদিন সারা দুপুর ব্যোমকেশ উদ্ভ্রান্ত চক্ষে কড়িকাঠের দিকে চাহিয়া তক্তপোশে পড়িয়া রহিল এবং অসংখ্য সিগারেট ধ্বংস করিল।’ তখনকার দিনে সম্ভবত সিগারেট পান একরকম স্ট্যাটাসের ‘মানদণ্ড’ বলে বিবেচিত হয়ে থাকবে।

অরুণ কুমার বিশ্বাস: কথাসাহিত্যিক

মন্তব্য করুন

daraz
  • শিল্প-সাহিত্য এর পাঠক প্রিয়
X
Fresh