• ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
logo

অরুণ কুমার বিশ্বাস এর ধারাবাহিক ‘আমাদের ব্যোমকেশ বক্সী’

অরুণ কুমার বিশ্বাস

  ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১৮:১৯
Arun Kumar Biswas's series 'Amader Byomkesh Bokshi'
ব্যোমকেশ বক্সীর স্রষ্টা কথাসাহিত্যিক শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়

ব্যোমকেশ বলতেই মনে পড়ে এক বাঙালিকে, যে নিজেকে সত্যান্বেষী বলতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। একটা সময় টেলিভিশনে রজত কাপুরকে ব্যোমকেশের ভূমিকায় দেখে উচ্ছ্বসিত ছিল আসমুদ্রহিমাচল। তার আগে উত্তমকুমার ব্যোমকেশের ভূমিকায় নেমেছিলেন। তবে সিলভার স্ক্রিনে ব্যোমকেশের জনপ্রিয়তা তুঙ্গে উঠেছে সম্প্রতি। হাল আমলে ওয়েব সিরিজেও ব্যোমকেশ রূপে আত্মপ্রকাশ ঘটেছে। ব্যোমকেশ হুজুগে সাড়া দিয়েছে বলিউডও। সাহিত্যের পাতা থেকে বেরিয়ে বড় পর্দায় ক্রমশ জনপ্রিয় হয়েছে শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের ব্যোমকেশ বক্সী। যার মাদকতায় আজও আচ্ছন্ন আট থেকে অশীতিপর। সেই আলোচিত চরিত্রটির বিশ্লেষণ করেছেন কথাসাহিত্যিক অরুণ কুমার বিশ্বাস

[পর্ব-১]

সত্যান্বেষী ব্যোমকেশ বক্সী। অনুপ্রাসে ভরপুর নামটিই যেন পাঠকের কাছে এক অপার বিস্ময়। একথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, বাংলা সাহিত্যে প্রথম সফল গোয়েন্দা লেখক পাঁচকড়ি দে হলেও শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের সৃষ্ট চরিত্র ব্যোমকেশ বক্সী দীর্ঘদিন ভিন্ন এক স্বাদে ও মহিমায় বাঙালি পাঠকদের আচ্ছন্ন করে রাখেন। সত্যি বলতে, ব্রিটিশ লেখক আর্থার কোনান ডয়েলের পেশাদার গোয়েন্দা শার্লক হোমস পাঠে অভ্যস্ত পাঠক মনে মনে চাইছিলেন যেন বাংলা ভাষায় এমন একটি ডিটেকটিভ চরিত্র উঠে আসে, যাকে নিয়ে সত্যি সত্যি গর্ব করা যায়। যশখ্যাত লেখক শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় অবশেষে তাদের সেই প্রত্যাশা পূরণ করলেন, বিংশ শতকের গোড়ার দিকে স্বমহিমায় আবির্ভূত হলেন তাঁর সত্যান্বেষী শ্রী ব্যোমকেশ বক্সী। বাংলা ১৩৩৯ সালে (১৯৩২ খ্রিস্টাব্দ) প্রকাশিত হয় শরদিন্দুর ‘সত্যান্বেষী’, মতান্তরে ‘পথের কাঁটা’। একই বছর তাঁর আরো একটি আখ্যান প্রকাশিত হয় যার শিরোনাম ‘সীমন্ত-হীরা’।

কে এই ব্যোমকেশ বক্সী
শ্রী ব্যোমকেশ বক্সীর পরিচয় আমরা মোটামুটি গোড়াতেই পাই। শুরুর গল্প অর্থাৎ ‘সত্যান্বেষী’তে অজিত বন্দ্যোপাধ্যায়ের জবানিতে জানিতে পারি, ‘আমিও উঠি উঠি করিতেছি, এমন সময় একটি লোক আসিয়া প্রবেশ করিল। তাহার বয়স বোধ করি তেইশ-চব্বিশ হইবে, শিক্ষিত ভদ্রলোক বলিয়া মনে হয়। গায়ের রঙ ফরসা, বেশ সুশ্রী সুগঠিত চেহারা, ‘মুখে চোখে বুদ্ধির একটা ছাপ আছে।’

ব্যোমকেশ বক্সীর বয়সের কথা যখন উঠলোই, তখন একটা বিষয় না বলে পারছি না। সম্ভবত অনবধানতাবশত শ্রী শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় অজি ও ব্যোমকেশ দুজনের বয়স নির্ধারণের ক্ষেত্রে একটা ভুল করে ফেলেছেন। নইলে ১৯৩২ সালে রচিত সত্যান্বেষী গল্পে আমরা যাকে তেইশ বা চব্বিশ বছরের যুবক দেখি, ঠিক তার পরের বছর অর্থাৎ ১৯৩৩ সালে রচিত (বাংলা ১৩৪০) ‘অর্থমনর্থম্’ গল্পে কী করে তার বয়স ঊনত্রিশ বছর দুমাস এগারো দিন হয়! ‘অর্থমনর্থম্’গল্পে ব্যোমকেশ কথা প্রসঙ্গে জানতে চান, ‘ভাল কথা, অজিত, তোমার বয়স কত হল বল দেখি?’

আমি (অর্থাৎ অজিত) মনে মনে গণনা করিয়া বলিলাম, আমার বয়স হল ঊনত্রিশ বছর পাঁচ মাস এগারো দিন।’ অমনি ব্যোমাকেশ বললেন, ‘যাক তুমি আমার চেয়ে তিন মাসের বড়। বাঁচা গেল। কথাটা কিন্তু মনে রেখো।’ অর্থাৎ শরদিন্দু এখানে সত্যিই কোনো দুর্দৈব ঘটিয়ে বসেছেন। নইলে এক বছরে বক্সীর বয়স তেইশ বা চব্বিশ থেকে কী করে ঊনত্রিশ বছরে উন্নীত হল। বিষয়টি এইজন্য গুরুত্বপূর্ণ যে, গোয়েন্দাগিরির ক্ষেত্রে তেইশে আর ঊনত্রিশে যথেষ্ট পার্থক্য হতে পারে। কোনান ডয়েলের শার্লক হোমস অবশ্য তেত্রিশ বছর বয়সে গোয়েন্দাগিরি শুরু করেন, আর সত্যজিৎ রায়ের ফেলুদার শুরুর বয়সটা ছিল সাতাশ, তোপসের তখন চোদ্দ।

বাংলা সাহিত্যের এক অতি প্রিয় চরিত্র ব্যোমকেশ বক্সী। ধারালো নাক, লম্বা চেহারা, নাতিস্থূল অবয়ব। অসামান্য তার পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা, অনবদ্য বিশ্লেষণী দক্ষতা। বলতে গেলে শুধু বুদ্ধি দিয়েই যাবতীয় জটিল রহস্যের জট ছাড়ান ব্যোমকেশ।

আবার ‘সীমন্ত-হীরা’ গল্পে ব্যোমকেশের মক্কেল কুমার ত্রিদিব রায়ের কাকা শ্রী দিগিন্দ্রনারায়ণ রায় ব্যোমকেশের বর্ণনা দেন এভাবে, ‘তুমি ছেলেমানুষ বটে, কিন্তু তোমার করোটির গঠন দেখে বুঝতে পারছি তোমার মাথায় বুদ্ধি আছে। খুলির মধ্যে অন্তত পঞ্চান্ন আউন্স ব্রেন-ম্যাটার আছে। তবে ব্রেন-ম্যাটার থাকলেই শুধু হয় না, কনভল্যুশনের উপর সব নির্ভর করে। হনু আর চোয়াল উঁচু, মৃদঙ্গ-মুখ, বাঁকা নাক, হুঁ। ত্বরিতকর্মা, কূটবুদ্ধি একগুঁয়ে। ইনটুইশন খুব বেশি, রিজনিং পাওয়ার মন্দ ডেভেলপ্ড নয়, কিন্তু এখনও ম্যাচুওর করেনি। তবে মোটের উপর বুদ্ধির শৃঙ্খলা আছে- ‘বুদ্ধিমান বলা চলে।’

এখানে উল্লেখ্য যে, ব্যোমকেশ নিজেকে কখনও গোয়েন্দা পরিচয় দিতেন না, অন্য কেউ দিলেও স্বচ্ছন্দ বোধ করতেন না। নিজেকে বরং তিনি ‘সত্যান্বেষী’ বলেই দাবি করতেন। কলকাতার হ্যারিসন রোডের একটা বাড়ির তেতলায় পিতলের ফলকে লেখা ছিল ‘ব্যোমকেশ বক্সী/সত্যান্বেষী’। বন্ধু অজিত এ বিষয়ে জানতে চাইলে ব্যোমকেশ বললেন, ‘ডিটেক্টিভ কথাটা শুনতে ভাল নয়, গোয়েন্দা শব্দটা আরও খারাপ। তাই নিজের খেতাব দিয়েছি ‘সত্যান্বেষী। ঠিক হয়নি?’

অজিত অবশ্য তাকে প্রথমে ব্যোমকেশ নামে জানতেন না, তার নাম ছিল অতুলচন্দ্র মিত্র। ছদ্মনাম আর কি! ‘সত্যান্বেষী’ গল্পের শেষদিকে ব্যোমকেশ খুনি ডাক্তার অনুকূলের উদ্দেশে বলেন, ‘আপাতত ব্যোমকেশ বক্সী সত্যান্বেষীকে আপনি খুন করার চেষ্টা করেছেন, এই অপরাধে আপনাকে পুলিশে সোপর্দ করছি।’অতএব একথা নির্দ্বিধায় বলা যায়, ব্যোমকেশ বক্সী নিজেকে কখনও গোয়েন্দা বলে দাবি করেননি, নিজেকে তিনি ‘সত্যান্বষী’ বলেই পরিচয় দিতেন। এডগার অ্যালান পো’র চরিত্র আগস্ত দ্যুঁপা’র সঙ্গে এক্ষেত্রে তাঁর মিল পাওয়া যায়। দ্যুঁপাও নিজেকে ‘ট্রুথ-সিকার’ বলতেন, ডিটেকটিভ নয়। স্রেফ সত্য অনুসন্ধানের কাজেই নিজেকে নিবৃত্ত রেখেছিলেন। ওটা তার পেশা বা অর্থোপার্জনের তরিকা ছিল না। সত্যি বলতে, প্রফেশনাল ডিটেকটিভ শব্দটি তখনও (১৮৪১ খ্রিস্টাব্দ) সেভাবে চলুই হয়নি।

বস্তুত, রহস্যের গন্ধ পেলেই তা ভেদ করতে মন আনচান করে ওঠে ব্যোমকেশের। ‘শৈলরহস্য’ (আষাঢ়, ১৩৬৬) গল্পে ব্যোমকেশ নিজের মুখে বলেন, ‘অজিত, তুমি তো জানো, আমি রহস্য ভালোবাসি না; রহস্য দেখলেই আমার মন তাকে ভেঙেচুরে অন্তর্নিহিত সত্যটি আবিষ্কার করতে লেগে যায়।’

রোম্যান্টিক ব্যোমকেশ
সত্যানুসন্ধান বা গোয়েন্দাগিরি করার জন্য রোম্যান্টিক হওয়া কতটা জরুরি সেটা বড় কথা নয়, তবে আমাদের সত্যান্বেষী ব্যোমকেশ বক্সী কিন্তু সত্যিই রোম্যান্টিক ছিলেন। তার রসবোধও ছিল প্রবল। ‘অর্থমনর্থম্’ গল্পে করালীবাবুর খুনের তদন্ত করতে গিয়ে একপলক দেখেই সত্যবতীর প্রতি আকৃষ্ট হন ব্যোমকেশ। অবশ্য তিনি তা হতেই পারেন, ব্যোমকেশ তখনও ব্যাচেলর, কিন্তু তাই বলে খুনের অভিযোগে অন্যতম অভিযুক্ত ডাক্তারিপড়ুয়া সুকুমারের ছোটোবোনকে দেখেই তিনি আবেগে একেবারে গদগদ হয়ে যাবেন একটা বোধ হয় আশা করা যায় না। এ যেন অনেকটা সেই রথ দেখা আর কলাবেচা দুটো এক সঙ্গে করবার মতো। সত্যবতীর চেহারার ‘ইনোসেন্স’তাকে আকৃষ্ট করেছিল।
এখানে আমরা একজন অভিমানী ব্যোমকেশকেও দেখতে পাই। সত্যবতী কিছুতেই যখন করালীবাবুর খুনের বিষয়ে পুরো সত্যিটা খুলে বলছে না, ব্যোমকেশ তখন কান্নারত সত্যবতীর কাছে গিয়ে অভিমানী গলায় নরম সুরে বললেন, ‘ভাল করলেন না, আমাকে বললে পারতেন। আমি পুলিস নই’ শুনেছেন তো। বললে হয়তো আপনাদের সুবিধা হত ‘চল অজিত।’

ব্যোমকেশের ভূমিকায় উত্তমকুমার

আবার তার দাদা সুকুমারকে নির্দোষ প্রমাণের অনুরোধ জানাতে সত্যবতী ব্যোমকেশের হ্যারিসন রোডের বাসায় গেলে মনে মনে কিছুটা পুলকিতই হন তিনি। অজিতের ভাষায়, ‘প্রথম মিনিট দুই-তিন সত্যবতী চোখে আঁচল দিয়া খুব খানিকটা কাঁদিল, আমরা নির্বাক লজ্জিত মুখে অন্য দিকে চোখ ফিরাইয়া রহিলাম। আমাদের বৈচিত্র্যপূর্ণ জীবনেও এমন ব্যাপার পূর্বে কখনও ঘটে নাই।’ সত্যবতীতে নিবিড়ভাবে দেখলেন ব্যোমকেশ এবং এই মর্মে প্রতিশ্রুতি দিলেন, ‘আপনার দাদা যদি সত্যই নির্দোষ হন, আমি প্রাণপণে তাঁকে বাঁচাবার চেষ্টা করব।’ সুকুমারকে নির্দোষ প্রমাণের ব্যোমকেশের এই সানুগ্রহ প্রয়াস কতখানি তার পেশাদারিত্ব, আর কতটা সত্যবতীর প্রতি তাঁর ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ, এ নিয়ে প্রশ্ন তোলাই যায়। তবে আমি মনে করি, ব্যোমকেশের নিরস যুক্তিতক্কের মাঝেও এই যে প্রাণের পরশ, ভালোলাগা ভালোবাসা- এটা বরং তাকে আরো বেশি জীবনঘনিষ্ঠ ও মানুষ হিসেবে মানবীয় করে তুলেছে। তাতে তার ‘সত্যান্বেষী’ চরিত্র মোটেও খর্ব বা খাটো হয়ে যায়নি।

তাদের বিয়ের ব্যাপারটা অনেকটা ডরোথি সেয়ার্সের গোয়েন্দা পিটার উইম্সির সঙ্গে মেলে। অদ্ভুত এক রহস্য ঘাঁটতে গিয়ে উইমসির সঙ্গে পরবর্তীতে তার স্ত্রী হ্যারিয়েট ডেনের আলাপ। হ্যারিয়েট অবশ্য সেই কেসে সন্দেহভাজনদের একজন ছিলেন। পিটার উইম্সি তাকে নির্দেষ প্রমাণ করেন। আর ব্যোমকেশের ক্ষেত্রে সাসপেক্ট ছিলেন সত্যবতীর দাদা সুকুমার। বলা বাহুল্য, সত্যবতীর অনুনয় বিনয়ের কারণেই ব্যোমকেশ করালীবাবুর খুনের কেসটা অত গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করেছিলেন বলে অনুমেয়।

সত্যবতীর প্রতি ব্যোমকেশের মুগ্ধতা বা দুর্বলতা যাই বলি, তা কিন্তু মোটেও চাপা ছিল না। সুকুমারের পক্ষে ওকালতি করতে গিয়ে সত্যবতী তাকে নানা রকম অনুনয়-বিনয় করে। এরই এক পর্যায়ে ব্যোমকেশ সত্যবতীর দিকে বিমুগ্ধ চোখে তাকিয়ে বললেন, ‘আপনার মত অসাধারণ মেয়ে আমি দেখিনি। অন্য কেউ হলে চেঁচামেচি করে মূর্ছা’ হিস্টিরিয়ার ঠেলায় বাড়ি মাথায় করত ‘আপনি’।

রোম্যান্টিকতা অবশ্য ব্যোমকেশের স্ত্রী সত্যবতীরও কিছু কম ছিল না। ‘হেঁয়ালির ছন্দ’ গল্পের প্রথম দিকে আমরা জানতে পারি বিশেষ কাজে কলকাতার বাইরে গেছেন ব্যোমকেশ বক্সী। এদিকে মেসবাড়ির বাসিন্দা নটবর নস্কর খুনের কেস নিয়ে বিপাকে পড়েছে অজিত। পুলিশ বিদ্বেষবশত তাকে নজরবন্দী করে রেখেছে। ঠিক তখনই কাজে ইস্তফা দিয়ে বাসায় ফেরেন ব্যোমকেশ। তখন অজিতের বক্তব্য অনেকটা এরকম, ‘সতবতী ভিতর হইতে ব্যোমকেশের কণ্ঠস্বর শুনিতে পাইয়াছিল, আঁচলে হাত মুছিতে মুছিতে ছুটিয়া আসিল। তাহাদের দাম্পত্যজীবন নূতন নয়, কিন্তু এখনও ব্যোমকেশকে অপ্রত্যাশিতভাবে কাছে পাইলে সত্যবতীর চোখে আনন্দবিহ্বল জ্যোতি ফুটিয়া ওঠে।’

পাঁড়পাঠক ব্যোমকেশ
ব্যোমকেশের পাঠ্যাভ্যাস ছিল বেশ। তিনি সুযোগ পেলেই বই পড়তেন, যাকে বলে পাঁড়পাঠক। কবিতা থেকে শুরু করে নানা বিষয়ে তার বিস্তর জানাশোনা। ‘রক্তের দাগ’ গল্পের শুরুতেই দেখতে পাই ব্যোমকেশ বাংলা সাহিত্যের পুরানো কবিদের নিয়ে পড়েছেন। অজিতের ভাষায়, ‘ভারতচন্দ্র হইতে আরম্ভ করিয়া সমস্ত কবিকে একে একে শেষ করিতেছিল। ভয় দেখাইয়াছিল, অতি আধুনিক কবিদেরও সে ছাড়িবে না। আমি সন্ত্রস্ত হইয়া উঠিয়াছিলাম, কোন দিন হয়তো নিজেই কবিতা লিখিতে শুরু করিয়া দিবে।’ অর্থাৎ সত্যান্বেষী হলেও কবিতার প্রতি একরকম মোহ বা আগ্রহ ছিল ব্যোমকেশ বক্সীর।

‘সীমন্ত-হীরা’ গল্পের শুরুতেও আমরা ব্যোমকেশকে একজন নিবিষ্ট পাঠক রূপে দেখতে পাই। অজিতের ভাষ্যমতে, হাতে কাজ না থাকলেই পত্রিকা মুখস্থ করতে শুরু করেন ব্যোমকেশ বক্সী। বাকী সময়টুকু তিনি তার পড়া ঘরে দরজা বন্ধ করে কাটান অর্থাৎ খুব মনোযোগ দিয়ে বই পড়েন ব্যোমকেশ। এই কাজটি অবশ্য বাংলা-ইংরেজি উভয় সাহিত্যের খ্যাতনামা সব গোয়েন্দারা করে থাকেন। পত্রিকা পড়ার অভ্যেস ছিল অ্যালান পো’র গোয়েন্দা অগস্ত দ্যুঁপার। সত্যি বলতে, পত্রিকার কাটিং থেকেই দ্যুঁপা তার তিনটি কেসেরই মালমসলা জোগাড় করেছিলেন। ‘দ্য মিস্ট্রি অফ মেরি রোজি’র কেসে বলতে গেলে পত্রিকার খবর ছাড়া দ্যুঁপার হাতে আর কোনো ক্লু-ই ছিল না।

শার্লক হোমসও পাঁড়পাঠক ছিলেন। বোটানি থেকে শুরু করে টক্সিকোলজি অর্থাৎ বিষবিজ্ঞান- সব পড়তেন তিনি। বন্ধু ডা. ওয়াটসনকে তিনি একবার এও বলেছেন যে, পড়াশুনো না করে তুমি বাগানের মালি হতে পার, কিন্তু গোয়েন্দাগিরি করতে পারবে না। ফেলুদাও প্রচুর পড়তেন। নানান বিষয়ে তার ছিল বিস্তর জানাশোনা। আর যখন কোনো বিষয়ে আটকে গেলে ফেলুদা অমনি ছুটে যেতেন তার সিধু জ্যাঠার কাছে। যিনি কিনা তাঁর কাছে ছিলেন একজন প্রকৃত সর্বজ্ঞ।

অরুণ কুমার বিশ্বাস: কথাসাহিত্যিক

মন্তব্য করুন

daraz
  • শিল্প-সাহিত্য এর পাঠক প্রিয়
X
Fresh