• ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
logo

খান চমন-ই-এলাহির তিনটি কবিতা

আরটিভি নিউজ

  ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২০, ২৩:১০
Three poems by Khan Chaman-i-Elahi
শরতের আকাশ

ফিরে দেখা

আমি কয়েকবার গান্ধী হয়েছি
আমিও হেঁটেছি স্বপ্ন কিংবা কল্পনায় অহিংস পথে
আমার সাথে মৌলানা অজাদ, আলী, শরৎ বসু
এবং শহীদ সোহরাওয়ার্দীর বহুবার দেখা হয়েছে
আমরা দিল্লি গুজরাট কলকাতা লাহোর লখনৌয়ে মিলিত হয়েছি
চায়ের ধোঁয়ার সাথে স্বাধীনতার রঙিন স্বপ্নরা ভাসতো
ব্রিটিশ খেদাবার কী অপূর্ব যুক্তি সব নেতাদের?
সবাই তেজস্বী, ক্ষীপ্র, বাগ্মী আর ভালোবাসায় ভারতীয়?
ভারত মানেই মানুষের রাষ্ট্র
তখন ভারত মানেই ব্রিটিশ থেকে স্বাধীন ভারত

হঠাৎ আমিও আর গান্ধী থাকতে পারলাম না
এমনকি শরৎ-সোহরাওয়ার্দীও না
এমনকি কোনো বাঙালি পর্যন্ত না
আমি গান্ধীর এক উত্তরসূরি হিসেবে
কিংবা কোনো মানুষের দর্শন জ্ঞান নিয়ে দেখলাম
পাকিস্তান প্রজাতন্ত্রের পতাকা উড়ছে, সোহরাওয়ার্দী নেই
খণ্ডিত ভারতের পতাকা উড়ছে, প্রিয় গান্ধীও নেই
কোথায় সোহরাওয়ার্দী? কোথায় গান্ধী? কোথায় নির্লোভ জননেতা?
কোথায় মানুষের মুক্তি? কোথায় স্বাধীনতা?
দাঙাবিক্ষুব্ধ কলকাতার রক্ত গঙ্গার জলে মিশে আগুন
মানুষের মুক্তি হয়ে যায় ধর্মের মুক্তি
মানুষের স্বাধীনতা হয়ে যায় ধর্মের স্বাধীনতা
এবং বিমূর্ত পড়ে থাকে শরৎ বসু
অথচ জালিয়ানওয়ালাবাগ কিংবা নোয়াখালি সে শিক্ষা দেয় না

তবু এই ভারতে গান্ধী হারেন
হেরে যান শেখ মুজিবও একদিন
কখনো যে বাংলা এমন অখন্ড স্বাধীন ছিল না
সে-ও শেখ মুজিবের আঙুল নির্দেশে স্বাধীন হলো
উড়লো পতাকা, ফুটলো ফুল, গাইলো জয়গান
তারপর পুরোনো পথে আবার হাঁটলো সময়
এবং থমকে দাঁড়ালো বিবেক!


শরতে

একদিন শরতে মেঘদের ওড়াউড়ি দেখে
তোমার নাকি স্থির বিশ্বাস হয়েছিল
ভালোবাসার মানুষ উড়তে পারে
জলীয়বাষ্প থেকে মেঘ কিংবা মেঘ থেকে
এক পসলা কাইতান বৃষ্টি হয়ে
বুকের গভীরে গাইতে পারে
আকাশের চাঁদ-জোছনা এবং মেঘঢাকা জোছনায়ও
অভিসারের গান।

তুমি কাশফুলের মতো নরম মন
বহুবার খুঁজেছো নাকি ভাদ্র-আশ্বিনে
একবার তো শপথ করে বলেই ফেললে-
মাইরি, তোমার মনটা অনায়াসে যেতে পারে
আমার মনের ভেতর, চাইলে শরীরে, অঙ্গের ভাঁজে...

তালপাকা ভ্যাঁপসা গরম তবু নেই কোন
উৎকট গন্ধ বরং চাষার নাকে
সোঁদা মাটির গন্ধ যেমন, ঠিক ঠিক
তেমন একটা ঘ্রাণ ছড়িয়ে ছিল।

উঠোনে কিংবা নগরবাড়ির ছাদে
শারদীয় মৌনতা খুঁজে জল হয়রান
এমন সময়ে শুকতারা গল্পের ফাঁদ পাতে
আমাকে নির্জনে স্মৃতির নৌকোয় তোলে।


প্রস্তাব

একাকী হাঁটলে বিশ্রী মনে হয়
তাই বলিÑ
ব্রিটিশ রাজত্ব নেই, নীল চাষের প্রশ্নও ওঠে না
ভয়ঙ্কর আইন তোমাকে মানতে হবে না
বরং তামাদি জিজ্ঞাসার আগে
রেজিস্ট্রেশন করো
বেশি কিছু তো নয়, সামান্য
সামান্য এক টুকরো ভূমি চাই
দৃশ্যত তার জন্য সাক্ষীরও প্রয়োজন নেই
তুমি সম্মত হলে
ও হৃদয়ে খুঁজে নেবো সেই টুকরো ভূমি!

তুমি জানো, শান্তি চুক্তির পথ ধরে
পাহাড়ি ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য
রাঙামাটি, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি জনপদে
পৃথক পৃথক পর্ষদ-কমিশন আছে,
নবাব, ভাওয়াল রাজ এস্টেটের জন্য
অফিস, কর্মকর্তা-কর্মচারী আছে,
সমগ্র দেশের ভূমি ব্যবস্থাপনায়
নিজস্ব মন্ত্রণালয়, রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা আছে,
ফিলিস্তিনি আরব ভূমি গ্রাসের জন্য
ইহুদি ইসরাইল আগ্রাসন আছে,
আন্তঃরাষ্ট্র সংঘাত আছে
পতাকা বৈঠক আছে
যুদ্ধ আছে, আবার শান্তি প্রার্থনায়
দ্বিপাক্ষিক, বহুপাক্ষিক আলাপ-আলোচনা আছে
জাতিসংঘের তদবীর কিংবা হুমকি আছে
অথচ তোমার হৃদয়ে এক টুকরো ভূমির জন্য
এত সব বায়না নেই, যুক্তি নেই
ভয়-ভীতি, রক্তপাতের গল্প নেই
অন্য কারো হস্তক্ষেপ নেই
যদি তুমি সম্মত হও
প্রস্তাব গ্রহণ করো
দখল দাও
দখল।


পি


মন্তব্য করুন

daraz
  • শিল্প-সাহিত্য এর পাঠক প্রিয়
X
Fresh