• ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
logo

হৃদয়ে চিরভাস্বর একুশ

আরটিভি অনলাইন ডেস্ক

  ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১৬:৫৮

ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিবহ মহান শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ২১ ফেব্রুয়ারি। জাতির জীবনে অবিস্মরণীয় ও চিরভাস্বর একটি দিন।

১৯৫২ সালের এই দিনে মাতৃভাষা বাংলার মর্যাদা রাখতে গিয়ে বুকের রক্ত ঢেলে দিয়েছিলেন রফিক, সালাম, বরকত, শফিউর, জব্বাররা। তাদের রক্তে শৃঙ্খলমুক্ত হয়েছিল দুঃখিনী মায়ের বাংলা ভাষা।

২০০০ সাল থেকে এই দিনটি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবেও সুপরিচিত সারাবিশ্বে। জাতিসংঘের ইউনেস্কো কর্তৃক ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ঘোষণা করায় বাঙালি জাতির জন্য এই দিনটি বাড়তি এক গর্ব বয়ে আনে।

ঘটনার শুরু ১৯৪৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে। তমদ্দুন মজলিস পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা কী হবে? বাংলা নাকি উর্দু? এমন শিরোনামে একটি বই প্রকাশ করে যেখানে সর্বপ্রথম বাংলাকে পাকিস্তানের একটি রাষ্ট্রভাষা হিসাবে ঘোষণা করার দাবি করা হয়। এরপর পাকিস্তানের তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী ফজলুর রহমানের উদ্যোগে পশ্চিম পাকিস্তানে ‘পাকিস্তান এডুকেশনাল কনফারেন্সে’ পূর্ব-পাকিস্তান হতে আগত প্রতিনিধিরা উর্দুকে একমাত্র রাষ্ট্রীয় ভাষা হিসাবে প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করেন এবং বাংলাকেও সম-অধিকার প্রদানের দাবি জানান। ৭ নভেম্বর পূর্ব পাকিস্তান সাহিত্য সংসদের সভায় বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি উত্থাপিত হয়। ১৭ নভেম্বর পূর্ব পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলাকে ঘোষণা দেয়ার জন্য শত শত নাগরিকের স্বাক্ষর সম্বলিত স্মারকপত্র প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমউদ্দিনের কাছে পেশ করা হয়।

এরপর ১৯৪৭ সালের ডিসেম্বরে শিক্ষামন্ত্রী ফজলুর রহমানের উদ্যোগের বিপক্ষে ঢাকায় তমদ্দুন মজলিশের নেতৃত্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাবেশ এবং মিছিল হয়। ৮ ডিসেম্বর একটি সমাবেশ হতে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি উত্থাপিত হয়। ডিসেম্বরের শেষের দিকে গঠিত হয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ এবং তমদ্দুন মজলিশের আহ্বায়ক অধ্যাপক নুরুল হক ভূইয়া এর প্রধান নিযুক্ত হন।

বাংলাভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে যে আন্দোলন শুরু হয় ১৯৪৭ সালের নভেম্বর-ডিসেম্বরে। ১৯৪৮ সালের মার্চে এ নিয়ে সীমিত পর্যায়ে আন্দোলন হয় এবং ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি তার চরম প্রকাশ ঘটে। ঐদিন সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা ১৪৪ ধারা অমান্য করে রাজপথে বেরিয়ে এলে পুলিশ তাদের ওপর গুলি চালায়। এতে আবুল বরকত, আবদুল জব্বার, আবদুস সালামসহ কয়েকজন ছাত্রযুবা হতাহত হন। এ ঘটনার প্রতিবাদে ক্ষুব্ধ ঢাকাবাসী ঢাকা মেডিকেল কলেজ হোস্টেলে সমবেত হয়। নানা নির্যাতন সত্ত্বেও ছাত্রদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষ প্রতিবাদ জানাতে পরের দিন ২২ ফেব্রুয়ারি পুনরায় রাজপথে নেমে আসে। তারা মেডিকেল কলেজ হোস্টেল প্রাঙ্গণে শহিদদের জন্য অনুষ্ঠিত গায়েবি জানাজায় অংশগ্রহণ করে।

ভাষা শহিদদের স্মৃতিকে অমর করে রাখার জন্য ২৩ ফেব্রুয়ারি এক রাতের মধ্যে মেডিক্যাল কলেজ হোস্টেল প্রাঙ্গণে গড়ে ওঠে একটি স্মৃতিস্তম্ভ, যা সরকার ২৬ ফেব্রুয়ারি গুঁড়িয়ে দেয়। একুশে ফেব্রুয়ারির এই ঘটনার মধ্য দিয়ে ভাষা আন্দোলন আরও বেগবান হয়।

১৯৫৪ সালে প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট জয়লাভ করলে ৯ মে অনুষ্ঠিত গণপরিষদের অধিবেশনে বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়।

এ ঘটনার পর ১৯৯৮ সালে কানাডার ভ্যানকুভার শহরে বসবাসরত দু’ বাঙালি রফিকুল ইসলাম এবং আবদুস সালাম প্রাথমিক উদ্যোক্তা হিসেবে একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণার আবেদন জানিয়েছিলেন জাতিসংঘের মহাসচিব কফি আনানের কাছে। ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর প্যারিসে অনুষ্ঠিত ইউনেস্কোর অধিবেশনে একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয় এবং ২০০০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে দিবসটি জাতিসংঘের সদস্যদেশসমূহে যথাযথ মর্যাদায় পালিত হচ্ছে।

১৯৫২-এর ২১ ফেব্রুয়ারির বিকেলে ঠিক ক’জন গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন, ক'জনইবা মারা গিয়েছিলেন তা না জেনেই তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় কলম ধরেছিলেন চট্টগ্রামের সীমান্ত পত্রিকার সম্পাদক কবি মাহবুব উল আলম চৌধুরী। তার সেদিনের লেখা কাঁদতে আসিনি ফাঁসির দাবি নিয়ে এসেছি-ই একুশের প্রথম কবিতা।

`আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো’ গানটি একুশে ফেব্রুয়ারি নিয়ে রচিত প্রথম গান। ১৯৫২ সালের ফেব্রুয়ারি ২১ তারিখে সংঘটিত বাংলাভাষা আন্দোলনের করুণ ইতিহাস ফুটে উঠেছে এই গানে। সাংবাদিক ও লেখক আবদুল গাফফার চৌধুরী ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারিতে গানটি রচনা করেন। প্রথমে আবদুল লতিফ গানটি সুরারোপ করেন। তবে আলতাফ মাহমুদের করা সুরটিই অধিক জনপ্রিয়তা লাভ করে এবং এটিই এখন গানটির প্রাতিষ্ঠানিক সুর।

১৯৬৯ সালে জহির রায়হান তার ‘জীবন থেকে নেওয়া' চলচ্চিত্রে গানটি ব্যবহার করেন। বর্তমানে এই গানটি ইংরেজি, ফ্রেঞ্চ, সুইডিশ, জাপানিসহ পাঁচটি ভাষায় গাওয়া হয়।

একুশে ফেব্রুয়ারি চেতনাকে ধারণ করতে ফ্যাশন হাউসগুলো বাজারে প্রতিবছর পোশাক এনে থাকে। কখনো বর্ণমালা, কখনো একুশের কবিতা নিয়ে ডিজাইন করা হয়ে থাকে এসব পোশাকে। পাশাপাশি সাদা-কালোর আবহ রেখে ফ্যাশন হাউসগুলো ভিন্ন ভিন্ন ডিজাইন করে থাকে পোশাকে।

আরকে/ এমকে

মন্তব্য করুন

daraz
  • অন্যান্য এর পাঠক প্রিয়
X
Fresh