• ঢাকা বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১
logo

ছাত্র রাজনীতির মধ্যে সুবিধাবাদ ঢুকে গেছে

সিয়াম সারোয়ার জামিল

  ১৯ জানুয়ারি ২০১৭, ২৩:০৮

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান একজন মুক্তিযোদ্ধাও। বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস নিয়ে তার গবেষণা সবর্জনবিদিত। বাংলা একাডেমির চেয়ারম্যান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। ১৯৮৫ সালে পেয়েছেন একুশে পদক। বর্ণাঢ্য জীবনে পেয়েছেন অনেক আন্তর্জাতিক স্বীকৃত। এর মধ্যে ভারতের তৃতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা ‌‌’পদ্মভূষণ’অর্জন করেছেন। ছাত্ররাজনীতির সেকাল-একাল, সমাজ-সংস্কৃতির নানা দিক নিয়ে ড. আনিসুজ্জামান কথা বলেছেন আরটিভি অনলাইনের সঙ্গে। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন সিয়াম সারোয়ার জামিল।

আরটিভি অনলাইন: আপনি পঞ্চাশের দশকের ছাত্ররাজনীতি খুব কাছ থেকে দেখেছেন। এখনকারটাও দেখছেন। কেমন পার্থক্য দেখতে পান?

ড. আনিসুজ্জামান : পঞ্চাশের দশকে জাতীয়তাবাদের ঢেউ সবে আসছে। সেসময় ছাত্রদের অনেকেই ন্যায়পরায়ণ সমাজব্যবস্থা, অনেকে সাম্যবাদ, অনেকে সমাজকল্যাণ মূলক রাষ্ট্রের কথা বলতেন। তবে এ কথা স্পষ্ট সবারই সমাজ পরিবর্তনের আকাঙ্খা ছিল। এখন মনে হয়না, সেটা কাজ করে। দল বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলে যা হয়, সেটাই হয়েছে। আদর্শের বিচ্যুতি ঘটেছে। তাছাড়া এখন ছাত্র রাজনীতির মধ্যেও সুবিধাবাদ ঢুকে গেছে। পঞ্চাশের দশকে মানুষ ছাত্র শুনলেই মনে করত নিঃস্বার্থ, বিবেকবান। এখন ছাত্র শুনলেই মানুষ ভয় পায়, চাঁদাবাজি করবে, জোরজবরদস্তি করবে। তার মানে সাধারণ মানুষের কাছে রাজনীতির মান কমে গেছে। ছাত্র রাজনীতির এ পতনের ফলে যারা সুস্থ্য রাজনীতি করছে তারা তো মাথা তুলে দাড়াতে পারছেনা। তার মানে সাধারণ ছাত্র সমাজের কাছে সুস্থ্য রাজনীতির কদর কমে গেছে। এটা একটা বড় পরিবর্তন।

আরটিভি অনলাইন : সেসময়ের রাজনীতির মূল অংশই ছিল বামপন্থীরা। তাদের সেসময়ের কর্মকাণ্ডকে কীভাবে দেখেন?

ড. আনিসুজ্জামান: বামপন্থী রাজনীতির উজ্জলতম দিক হলো অনেকগুলো ত্যাগী নেতার জন্ম দেয়া। আমাদের সময়ে যারা বামপন্থী রাজনীতির নেতৃত্বে ছিলেন তারা সকলে ত্যাগী এবং নিঃস্বার্থ বলে পরিচিত ছিলেন। যারা এই রাজনীতিটা অনুমোদন করতেন না, এই পথে হাটতেন না, তারাও মনে করতেন যে এরা মানুষের মঙ্গল চাইছেন। এটিই আমার মনে হয়- বামপন্থী রাজনীতির সবচে’ উজ্জলতম দিক ছিল। মানুষের শ্রদ্ধা এবং আস্থা অর্জন করা- সেই জায়গাটা এখন অনেকটা নষ্ট হয়ে গেছে। মণি সিংহ থেকে ফরহাদ পর্যন্ত বা অনেকের নাম বলতে পারি যারা জীবনের অনেক সময়কাল আত্মগোপন করে থেকেও মানুষের কাছে শ্রদ্ধেও নাম হিসেবে সমাদৃত হয়েছেন। কিন্তু এখন সেই জায়গাটা আগের মত নেই।

আরটিভি অনলাইন: বাংলাদেশে এখন কুড়িটির বেশি বামপন্থী রাজনৈতিক দল আছে। অথচ একসময় একটিই পার্টি ছিল। এই বিভেদের কারণ কী?

ড. আনিসুজ্জামান: মতাদর্শিক কারণে বিভেদ হয়েছে, আবার নেতৃত্বের প্রশ্নেরও। সবটাই আদর্শিক ব্যাপার নয়। যারা সশস্ত্র সংগ্রাম করেছিলেন, পরে অনুতপ্ত হয়েছেন- আরে না তো সেটা তো ঠিক হয়নি। যারা সংসদীয় রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বা প্রকাশ্য রাজনীতিতে ছিলেন। তারা একসময় কৃষকদের, শ্রমিকদের, বিশেষ করে ছাত্রদের সংগঠিত করতে পেরেছিলেন। পরে কিন্তু সেই সংগঠন থাকল না। সংগঠিত শক্তির বিভক্তি হলো। এবং বিভক্তির ফলে বামপন্থীর রাজনীতিই ক্ষতিগ্রস্থ হলো। আমার মনে হয় যে, এই সংকট এখনো বিদ্যমান।

আরটিভি অনলাইন: সমাজতন্ত্র ও জাতীয়তাবাদ-দু’টো দুই মেরুর চিন্তা। সাংঘর্ষিকও। কিন্তু বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধে এর ব্যতিক্রম দেখেছি। সেটা কীভাবে সম্ভব হলো?

ড. আনিসুজ্জামান: আওয়ামী লীগ সমাজতন্ত্রকে তাদের একটা লক্ষ্য বলে গ্রহণ করেছিল। এটা কিন্তু একদিনে হয়নি। অন্যপক্ষে বামপন্থীরাও প্রথমে জাতীয়তাবাদী ধারাকে গ্রহণ করেনি। কিন্তু পরে দু'পক্ষই উপলদ্ধি করে, জাতীয়তাবাদ কিংবা সমাজতন্ত্র উপেক্ষনীয় নয়, দু’টোকে মিলিয়ে নেয়া দরকার। যার ফল হলো, দেশের প্রধান বামপন্থী দলগুলো মুক্তিযুদ্ধে গেছে। এতে বামপন্থী এবং মধ্যপন্থীদের ঐক্য হলো, যা দেশের বড় উপকারে এসেছিল। সে ঐক্য এখন নেই। ধরে রাখা যায়নি।

আরটিভি অনলাইন : একসময় সাম্রাজ্যবাদী শক্তিকেই বাংলাদেশের মূলশত্রু বিবেচনা করা হতো। এখন কী এটা বদলেছে?

ড. আনিসুজ্জামান : সাম্রাজ্যবাদী শক্তি এখনো সক্রিয়। আরো নতুন শক্তির উদ্ধব হয়েছে। আমরা এটা মোকাবেলা করার চাহিদা আগে অনুভব করিনি। যেমন এখন ধর্মীয় জঙ্গিবাদ দেখা গেছে। এটা অন্তত বড় রকমের বিপদে সামনে দেশকে ফেলে দিয়েছে, দেশের মানুষকে ফেলে দিয়েছে। কাজেই এইটা কিভাবে আমরা মোকাবেলা করবো। আমাদের ভাবা দরকার। তার জন্য হয়তো মানুষের মধ্যে ঐক্য গড়ে তোলা দরকার।

এসজে/জেএইচ

মন্তব্য করুন

daraz
  • অন্যান্য এর পাঠক প্রিয়
X
Fresh