• ঢাকা শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
logo

তাকে ভুলে থাকার সাধ্য কার

এ এইচ মুরাদ

  ০৯ জানুয়ারি ২০১৭, ১৯:৫০

স্বাধীনতার প্রেক্ষাপট তৈরি করেছিলেন। প্রস্তুত করেছিলেন সমগ্র বাঙালি জাতিকে। ঘোষণা দিলেন আর নয়। এবার শুরু হবে স্বাধীনতার সংগ্রাম। কিন্তু রক্তপিপাসু শাসকগোষ্ঠী মুক্তিযুদ্ধের প্রথম প্রহরেই তুলে নেন স্বাধীনতার স্বপ্নদ্রষ্টা হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে।

কারাগারের অন্ধকারে ৯ মাসে একটিবারের জন্যও শাসকগোষ্ঠীর সঙ্গে আপোষ করেননি জাতির পিতা। নরখেকো ইয়াহিয়া খানের খোঁড়া নিজের কবরের পাশেই কাটিয়েছেন ২৯০ দিন। অবশেষে মুক্তি পেয়ে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি পা রাখেন সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে।

সেদিন বিমানবন্দরে লাখো মানুষের সামনে নিজে কেঁদেছেন, কাঁদিয়েছেন সবাইকে। প্রিয়নেতাকে ফিরে পেয়ে ৭ কোটি বাঙালি মাঠে-ময়দানে, ঘরে, মন্দির বা মসজিদে অঝরে কেঁদেছে। এ কান্না আপন মানুষকে ফিরে পাবার, এ কান্না আনন্দের কান্না।

বঙ্গবন্ধু জানতেন এদেশের মানুষ সোনার বাংলাকে শোষকের হাত থেকে মুক্ত করবে। কিন্তু জানতেন না তিনি ফের এই বাংলায় ফিরে আসতে পারবেন। দুঃখী মানুষের সেবায় নিয়োজিত করতে পারবেন নিজেকে। বন্দি হবার আগে (২৫ মার্চ ১৯৭১ সালে) একবার্তায় লিখেছিলেন, ‘এটাই হয়তো আমার শেষ বার্তা। আজ হতে বাংলাদেশ স্বাধীন। বাংলাদেশের জনগণের প্রতি আমার আহ্বান, আপনারা যে যেখানেই থাকুন এবং যার যা কিছু আছে তা দিয়ে শেষ পর্যন্ত দখলদার সেনাবাহিনীকে প্রতিহত করুন। বাংলাদেশের মাটি থেকে পাকিস্তান দখলদারবাহিনীর শেষ সৈন্যটি বিতাড়িত এবং চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত আপনাদের এ লড়াই চালিয়ে যেতে হবে।’

নিজ ভুবনে ফিরে ৭ কোটি বাঙালিকে বললেন, ‘যে মাটিকে আমি এতো ভালবাসি, যে মানুষকে আমি এতো ভালবাসি, যে জাতিকে আমি এতো ভালবাসি, আমি জানতাম না সে বাংলায় আমি যেতে পারবো কিনা। আজ আমি বাংলায় ফিরে এসেছি বাংলার ভাইদের কাছে, মায়েদের কাছে, বোনদের কাছে। বাংলা আমার স্বাধীন, বাংলাদেশ আজ স্বাধীন।’ আমি কারাগারে বন্দি ছিলাম। ফাঁসিকাষ্ঠে যাবার জন্য প্রস্তুত ছিলাম। কিন্তু আমি জানতাম, আমার বাঙালিকে কেউ দাবিয়ে রাখতে পারবে না।

বিশ্বকবির ওপরে ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি সেদিন বলেছিলেন, কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন ৭ কোটি বাঙালির হে বঙ্গজননী রেখেছো বাঙালি করে, মানুষ করোনি। কবিগুরুর কথা মিথ্যা প্রমাণিত হয়ে গেছে। আমার বাঙালি আজ মানুষ, আমার বাঙালি আজ দেখিয়ে দিয়েছে দুনিয়ার ইতিহাসে স্বাধীনতা সংগ্রামে এতোলোক আত্মাহুতি দেয় নাই।

পাকিস্তানিরা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার সাহস করেনি। কিন্তু আপন ভূমিতেই ১৯৭৫ সালে ১৫ আগস্ট রাতের শেষভাগে রক্তনেশায় হিংস্র খুনির দল বাঙালি জাতির পিতা, স্বাধীনতার স্বপ্নদ্রষ্টা, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করে। সেদিন খুনিরা শুধু বঙ্গবন্ধুকেই খুন করেনি, খুন করেছে তার পরিবার ও স্বজনদেরও। ধানমন্ডি ৩২ নম্বর বাড়ির রক্তবন্যা ছিল কিছু মহলের সুদূরপ্রসারী ভাবনার ফসল।

কিন্তু যার হাত ধরে এদেশের মানুষ স্বাধীন দেশ পেয়েছে। বিশ্বদরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর মর্যাদা পেয়েছে। তাকে ভুলে থাকার সাধ্য কার। বাংলার আকাশে বাতাসে মিশে আছেন বঙ্গবন্ধু। এদেশের মানুষের হৃদয়ে আজো উজ্জ্বল তার কৃতিত্ব।

কবি অন্নদাশঙ্কর রায়ের ভাষায় বলতে হয়,

যতদিন রবে পদ্মা, যমুনা, গৌরি, মেঘনা বহমান,

ততদিন রবে কীর্তি তোমার, শেখ মুজিবুর রহমান।

দিকে দিকে আজ রক্তগঙ্গা, অশ্রুগঙ্গা বহমান,

তবু নাহি ভয়, হবে হবে জয়, জয় মুজিবুর রহমান।

যতদিন রবে পদ্মা, যমুনা, গৌরি, মেঘনা বহমান,

ততদিন রবে কীর্তি তোমার, শেখ মুজিবুর রহমান।

দিকে দিকে আজ রক্তগঙ্গা, অশ্রুগঙ্গা বহমান,

তবু নাহি ভয়, হবে হবে জয়, জয় মুজিবুর রহমান।

এইচএম/এমকে

মন্তব্য করুন

daraz
  • অন্যান্য এর পাঠক প্রিয়
X
Fresh