• ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
logo

বাংলাদেশে কৃষিতে জলবায়ু পরিবর্তনের অশনি অভিঘাত, তারপরও সুখবর

রাফিয়া চৌধুরী, আরটিভি অনলাইন

  ২৭ মার্চ ২০১৯, ২০:০২

যদি বর্ষে মাঘের শেষ, ধন্য রাজার পুণ্য দেশ। এই কথার অর্থ হলো, মাঘের শেষের বৃষ্টিপাতে রাজা ও দেশের কল্যাণ হয়। আষাঢ় শ্রাবণে টুটে পানি, তার মর্ম পাছে জানি। এটির অর্থ আষাঢ় শ্রাবণ মাসে বর্ষা কম হলে পরে বন্যা হয়। বহুকাল ধরে গ্রামগঞ্জে এরকম খনার বচন প্রচলিত আছে। খনার বচন মূলত কৃষি তত্ত্ব ভিত্তিক ছড়া। আনুমানিক ৮ম থেকে ১২শ শতাব্দীর মধ্যে রচিত।

কিংবদন্তী অনুসারে খনা মিহিরের স্ত্রী। এই দাবির স্বপক্ষে প্রমাণ খনার বচনেই আছে- খনা তার বচনে নিজেকে মিহিরের স্ত্রী এবং বরাহকে শ্বশুর বলে সম্বোধন করেছেন। খনার স্বামী মিহিরও ছিলেন বিখ্যাত জ্যোতিষী, শ্বশুর বিক্রমাদিত্যের রাজ দরবারের নবরতের অন্যতম সদস্য।

খনার ভবিষ্যৎবাণীর কারণে বরাহের খ্যাতি ম্ল্যান হতে থাকে, এর ফলশ্রুতিতে খনাকে হত্যা অথবা জিহ্বা কর্তন করা হয়। দুঃখ হয় খনা

আজকের যুগে বেঁচে থাকলে তার ভবিষ্যৎ বাণী মিথ্যা হয়ে যেত। তাই তো হচ্ছে। কৃষি কাজের প্রথা ও কুসংস্কার নিয়ে ফলিত যে জ্যোতির্বিজ্ঞান তিনি করে গেছেন। তার কোনোটায় এখন আর ফলে না।

তার যে আবহাওয়া জ্ঞান থেকে তিনি যে খনার বচনগুলো করে এসেছেন সেগুলো আজ আর কোনোটায় ফলে না। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপতা সর্বব্যাপী। পরিবেশ থেকে মানবস্বাস্থ্যসহ সব ক্ষেত্রে এ বিরূপতার শিকার। বাদ নেই কৃষি খাতও। কৃষিতে জলবায়ু পরিবর্তনের সম্ভাব্য প্রভাব সারা বিশ্বে একটি বহুল আলোচিত বিষয়ে পরিণত হলেও বাংলাদেশে এ সংক্রান্ত আলোচনা এখনো সীমিত পর্যায়ে আছে। স্বাভাবিকভাবে ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণেই জলবায়ু পরিবর্তন বাংলাদেশের কৃষি উৎপাদনের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলবে।

বলা হচ্ছে, জলবায়ু রিবর্তনের ফলে যে কয়টি স্বল্পোন্নত বা উন্নয়নশীল দেশ বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে, তার মধ্যে বাংলাদেশ প্রথম কাতারে অবস্থান করছে। কাজেই জলবায়ু পরিবর্তন আমাদের খাদ্য নিরাপত্তা যে ভীষণ হুমকিতে ফেলবে, তা বলা বাহুল্য। সুতরাং পরিবর্তিত বাস্তবতায় কৃষি উৎপাদন ও সংশ্লিষ্ট খাতে প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রাখতে এ সংক্রান্ত আলোচনা বাড়ানো, নীতিনির্ধারণী মহলের নীতি হস্তক্ষেপ এবং সময়োপযোগী কৌশল গ্রহণ জরুরি। এক্ষেত্রে ন্যূনতম শিথিলতাও দেশের জন্য মারাত্মক বিপর্যয় নিয়ে আসতে পারে।

আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থা অক্সফামের সাম্প্রতিক এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কেবল জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে খাদ্যশস্যের দাম

আগামী ২০ বছরে ৫০ শতাংশ বাড়বে। এতে দরিদ্র মানুষের পক্ষে স্বাভাবিক জীবনযাপন করা অসম্ভব হয়ে পড়বে। সুতরাং কৃষিতে জলবায়ু

পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবেলা কতটা জরুরি হয়ে পড়েছে, তা সহজেই অনুমেয়।

দেখা যাচ্ছে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ব্যাহত হচ্ছে সঠিক সময়ে জমি চাষ, বীজ বপন, ফসল পরিচর্যা, ফসল সংগ্রহ, বীজ সংগ্রহ ও সংরক্ষণ। এতে উৎপাদন হ্রাসের পাশাপাশি সময়মতো পরবর্তী ফসল ফলানো কঠিন হয়ে পড়ছে। কৃষি বিশেষজ্ঞদের মতে, জলবায়ুর ক্রমাগত পরিবর্তনের লাগাম টেনে ধরতে না পারলে কৃষির উৎপাদন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাই সময় এসেছে পরিবর্তনশীল জলবায়ু নিয়ে ভাবার, তা না হলে আমাদের কৃষির গতি শ্লথ হবে।

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে দেশে অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, ঘূর্ণিঝড়সহ অনেক ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ বাড়ছে। এতে একদিকে ফসলের ফলনচক্র ব্যাহত হচ্ছে, অন্যদিকে কৃষিজমি হারাচ্ছে চাষের স্বাভাবিক উপযুক্ততা, উর্বরা শক্তি। সংশ্লিষ্ট এক গবেষণার ফল বলছে, ২১০০ সাল নাগাদ সাগরপৃষ্ঠ সর্বোচ্চ এক মিটার পর্যন্ত উঁচু হতে পারে। ফলে বাংলাদেশের মোট আয়তনের প্রায় ১৮ দশমিক ৩ শতাংশ এলাকা নিমজ্জিত হতে পারে। এ পূর্বাভাস সত্য হলে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের অনেক এলাকা সমুদ্রে বিলীন হয়ে যাবে এবং সেখানে লবণাক্ততা বাড়বে।

ফলে সেখানে স্বাভাবিক ফসল ফলানো অসম্ভব হয়ে পড়বে। কয়েক লাখ হেক্টর জমি ফসল চাষের উপযুক্ততা হারাবে। এটা দীর্ঘ মেয়াদে খাদ্য নিরাপত্তায় ঝুঁকি তৈরি করবে। এতো সব হতাশার কথার মধ্যে সুখবর হলো বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদপ্তর ও কৃষি অধিদপ্তর যৌথভাবে আবহাওয়ার খবর কৃষকের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে। ডিজিটাল বাংলাদেশে মানুষের হাতের মুঠোয় এখন ইন্টারনেটের ব্যবস্থা করেছে সরকার। মানুষ এখন স্মার্টফোন ব্যবহার করে।

আবহাওয়া অধিদপ্তর প্রতিদিন তাদের নিজস্ব ওয়েবসাইটে আবহাওয়া বার্তা দেয়। সেইসঙ্গে এখন কৃষকদের জন্য কৃষিবার্তা দেয়। এছাড়া প্লেস্টোরে গিয়ে বিএমডি দিয়ে স্বার্চ দিলে আবহাওয়া অফিসের অ্যাপস পাওয়া যায়। সেখানে সবসময় তথ্য আপডেট করা হয়। এছাড়া বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের সহযোগিতায় কৃষি অধিদপ্তর আবহাওয়া বার্তা কৃষকদের মুঠোফোনে এসএমএসের মাধ্যমে পৌঁছে দিচ্ছে। কৃষি অধিদপ্তরের সাথে যে কৃষকদের যোগাযোগ রয়েছে।

যারা কৃষকদের সমন্বয় করে বিভিন্ন পরামর্শ দেন, তারা এই ক্ষুদে বার্তা পেয়ে থাকেন। সেখানে ঝড়-বৃষ্টি জলচ্ছাস সব ধরনের আবহাওয়ার খবর আগাম দেওয়া হয়। তাদের মুঠোফোনে বার্তার ধরন থাকে, আগামী ২৪ শে মার্চ থেকে ২৭ শে মার্চ পর্যন্ত বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। সেচ, সার ও কীটনাশক প্রয়োগ ও আলু সংগ্রহ আপাতত বন্ধ রাখুন। এই আবহাওয়ার গমে ব্লাস্ট দেখা দিতে পারে। প্রতি শতাংশ জমিতে নাটিভো ৬ গ্রাম বা ১০ লিটার অথবা এমিস্টারপট ১০ মিলি বা ১০লিটার হারে প্রয়োগ করুন।

আবহাওয়া বার্তা বলে দেয় এবং সেইসঙ্গে চলতি সময়ে জমিতে কী কী ফসল আছে, সেটার উপর ফসলের জন্য করণীয় কী, ফসলের কী কী ক্ষতি হতে পারে- সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে এবং এসব ব্যবহার করতে হবে। এছাড়া কৃষি অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে প্রায় দুই-একদিন পর পর প্রতিটি বিভাগের আবহাওয়া কেমন থাকবে, সেটা ওয়েবসাইটের কৃষি আবহাওয়ায় দেওয়া থাকে।

সেখানে বিভাগীয় অঞ্চলগুলোকে ভাগ করে কোন অঞ্চলে কী ধরনের ফসল হতে পারে। সে ব্যাপারে আলাদা আলাদা তথ্য দেওয়া থাকে। যেমন- চৈত্র মাসে রাজাশাহী অঞ্চলে বোরো ধান কুশি থেকে থোড়/ফুল পর্যায় থাকে। এই সময় ফসলের কিভাবে যত্ন নিতে হবে। এছাড়া এ সময় মসুরের ডাল বা ছোলা বোনা হয়। ভুট্টা, গম , চীনাবাদাম ও আম হতে পারে সেই ধরনের ফসলে কী হতে পারে। এই ব্যাপারে ফসলের অবস্থা অনুযায়ী তাদের পরামর্শ দেওয়া হয়।

আরো পড়ুন:

মন্তব্য করুন

daraz
  • অন্যান্য এর পাঠক প্রিয়
X
Fresh