জাবি ক্যাম্পাস যেন এক টুকরো ফুলের রাজ্য
রাত পেরিয়ে সকাল! শনশন বাতাস! সকালের সূর্যি মামার উঁকিতে কোকিলের কুহুকুহু ডাক! পাখির কিচিরমিচিরে বিছানায় শুয়ে থাকা যায় না। দরজা খুলে বারান্দায় পা বাড়াতেই চোখে পড়ে বাহারি রঙের ফুলের হাতছানি।
সকালের শীতের হাওয়ায় দুলছে বিভিন্ন রকমের ফুল। কোনোটা লাল, কোনোটা হলুদ, কোনোটা নীল আবার কোনোটা খয়েরি। যেদিকে চোখ যায় শুধুই ফুলের সমাহার। যেন প্রকৃতি তার আপন সৌন্দর্যের ডালি নিয়ে বসেছে এখানে।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরুপ লীলাভূমি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বাহারি রঙের ফুলের গল্পকথা। শুধু আবাসিক হলের আঙিনায় নয় বরং ক্যাম্পাসের আনাচে-কানাচে জায়গা করে নিয়েছে বাহারি রঙের মনোমুগ্ধকর ফুলের সারি। যেদিকে তাকানো যায় বিচিত্র সব ফুলের সমারোহ। ফুলের গন্ধে মাতোয়ারা ক্যাম্পাস যা এক ভিন্নমাত্রা যোগ করেছে।
ক্যাম্পাস ঘুরে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয় ও হল প্রশাসনের উদ্যোগে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে গড়ে তোলা হয়েছে বিভিন্ন ধরনের ফুলের বাগান। বিশেষ করে পুরাতন ও নতুন প্রশাসনিক ভবনসহ সব প্রশাসনিক ভবন, বিভিন্ন বিভাগ, ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের (টিএসসি) ভেতর, বোটানিক্যাল গার্ডেনের ভেতরে, ওয়াজেদ মিয়া বিজ্ঞানাগারের সামনে, সমাজবিজ্ঞান অনুষদ ভবনের সামনে, বিবিএ অনুষদের ভেতরে, আ ফ ম কামালউদ্দিন, মওলানা ভাসানী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, শহীদ রফিক-জব্বার, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, জাহানারা ইমাম, প্রীতিলতা, নওয়াব ফয়জুননেসা হলের সামনে, শেখ হাসিনা হলের ভিতরসহ ক্যাম্পাসের প্রায় প্রতিটি স্থানে গড়ে তোলা হয়েছে সুন্দর সুন্দর ফুলের বাগান।
এসব বাগানে ফুটেছে নানান প্রকৃতির ফুল। তার মধ্যে বিভিন্ন ধরনের গাঁদা, ডালিয়া, জিনিয়া, গোলাপ, আকাশি সাদা স্নোবল, চন্দ্রমল্লিকা, মোরগ ঝুঁটি, কসমস, জুঁই, চামেলি, টগর, বেলি, সাইকাস, ক্রিসমাস, জবা ও পাতাবাহার অন্যতম।বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তো বটেই সঙ্গে প্রাকৃতিক শোভা টেনে আনছে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে থেকেও ঘুরতে আসা বিভিন্ন বয়সের মানুষদের।
ঢাকার ইট পাথর ও ধূলিকণার আস্তরণ থেকে হাফ ছেড়ে বাঁচতে প্রতিদিন হাজারো দর্শনার্থী ছুটে আসে প্রকৃতির নির্মলতায় সিক্ত হতে। ক্যাম্পাসের সবুজ প্রকৃতিও তার সৌন্দর্যের ডালি নিয়ে পরতে পরতে পাখা মেলে থাকে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ফুল দেখতে স্বজনদের নিয়ে বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত মানুষের পদচারণায় মুখরিত থাকে সবুজ ক্যাম্পাস।
ঢাকার বনানী এলাকা থেকে পরিবার নিয়ে ঘুরতে এসেছেন মোস্তফা হাসান। ক্যাম্পাসের মনমাতানো অনাবিল সৌন্দর্য দেখে তিনি বলেন, 'ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে ফুলের বাগান গড়ে তোলা হয়। যা আসলে ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য বহুগুণে বৃদ্ধি করে। তাই সময় পেলেই চলে আসি ঘুরতে। সাভার এলাকা থেকে মা-বাবার সঙ্গে ঘুরতে এসেছে পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী নবনিতা রায়। প্রকৃতি আমার কাছে ভালো লাগে। তাই ছুটির দিনে মা-বাবাকে নিয়ে ঘুরতে আসি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের রুবেল খান বলেন, চারদিকে ফুল আর ফুল। ফুল কে না পছন্দ করে! ক্যাম্পাসে এলেই যেন মন ভরে যায়। এর মাঝে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডায় ক্যাম্পাসে বেশ ভালো সময় কাটে আমাদের।
প্রকৃতি যেখানে সেঁজেছে অপরুপ সৌন্দর্যে সেখানে তো দর্শনার্থীদের ভিড় জমবেই। প্রতিবছরের ন্যায় এবছরও তার ব্যতিক্রম নয়। ফুলে ফুলে নতুন সাজে ভরপুর সবুজ এ ক্যাম্পাস। সবুজ এই ক্যাম্পাসের মনোমুগ্ধকর স্নিগ্ধতায় মুগ্ধ ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থী ও দর্শনার্থীরা। তাই বলতেই হয় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস যেন এক টুকরো ফুলের স্বর্গরাজ্য।
জেবি
মন্তব্য করুন