• ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১
logo

পাখি মেলা যাদের নিয়ে তারাই ক্যাম্পাসে বিলুপ্ত

শাহিনুর রহমান, শাহিন

  ১৬ জানুয়ারি ২০১৯, ১৪:০০

‘পাখ-পাখালি দেশের রত্ন, আসুন করি সবাই যত্ন’ এই স্লোগানকে ধারণ করে গেল ১০ জানুয়ারি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে ১৯তম পাখিমেলা।

পাখি সংরক্ষণে গণসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য ২০০১ সাল থেকে ধারাবাহিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এই ব্যতিক্রমধর্মী মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। কিন্তু মেলার আয়োজন যে অতিথি পাখিদের নিয়ে তারাই আজ ক্যাম্পাসে বিলুপ্তির পথে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ক্যাম্পাসের প্রধান জলাশয়গুলো এখন পাখিশূন্য। গত কয়েকদিন আগেও সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অতিথি পাখিদের পদাচারণায় মুখর ছিল পুরো ক্যাম্পাস এলাকা। বর্তমানে কোনও ধরনের পাখিই চোখে পড়ে না।

জানা গেছে, শীতের শুরুতেই হিমালয়ের উত্তরে সুদূর সাইবেরিয়া, মঙ্গোলিয়া আর তিব্বতের হিমশীতল এলাকা থেকে দলে দলে অতিথি পাখি আসা শুরু করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে।

প্রতিবছর অক্টোবর থেকে পাখির পরিযান শুরু হয় সবুজে ঘেরা দৃষ্টিনন্দন এই ক্যাম্পাসে। নভেম্বর আর ডিসেম্বরে অতিথি পাখির পরিযানের হার সবচেয়ে বেশি থাকে।

জানুয়ারি আর ফেব্রুয়ারিতে শীতের ছোঁয়া গায়ে লাগিয়ে আবারও অতিথি পাখিগুলো চলে যায় নিজ আবাসস্থলে। কিন্তু এ বছর জানুয়ারি মাস আসার অনেক আগেই বিশ্ববিদ্যালয়ের লেকগুলোতে আশঙ্কাজনক হারে অতিথি পাখি বিলুপ্ত হতে দেখা গেছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরাতন প্রশাসনিক ভবনের সামনের লেক, জাহানারা ইমাম, প্রীতিলতা হল সংলগ্ন লেক, সুইমিং পুল সংলগ্ন লেকসহ কয়েকটি জলাশয় থেকে অতিথি পাখিরা চলে গেছে।

এই বিষয়ে একাধিক শিক্ষার্থী জানান, দর্শনার্থীদের ভিড়, গাড়ির হর্ন, ছুটির দিনে ক্যাম্পাস ইকো পার্কে পরিণত হওয়া, ঢাকঢোল বাজানো ও লেকের সুষ্ঠু সংরক্ষণের অভাবে অতিথি পাখিরা মুখ ফিরিয়ে চলে গেছে। প্রশাসনের উদাসীনতার কারণেও পাখিরা চলে গেছে বলে অভিযোগ করছেন অনেক শিক্ষার্থী।

সপ্তাহজুড়ে ক্যাম্পাসজুড়ে ছড়িয়ে থাকা ভ্রাম্যমাণ দোকানপাটের কোলাহল, শাড়ি, জামা-কাপড় বিক্রি, খেলনা, পিঠা-পুলি কেনাকাটা, জন্মদিন পালন বা সাপ্তাহিক ও অন্যান্য ছুটির দিনে তা রীতিমতো হাটে রূপ নেয়। অন্যদিকে ছুটির দিনে ক্যাম্পাসে থাকে দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড়। তাদের ব্যবহৃত খাবার মোড়ক, ঠোঙা ও পলিথিন জলাশয়ের পানিতে ফেলায় পরিযায়ী পাখির বিচরণের অনুপযোগী হয়ে উঠছে। ফলে পাখিরা তাদের অনুকূল আবাসস্থল না পেয়ে বিরক্ত হয়ে চলে যাচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের চতুর্থবর্ষের শিক্ষার্থী মোজাহিদুল ইসলাম বলেন, অতিথি পাখিরা চলে যাচ্ছে ভাবতেই খারাপ লাগছে। প্রশাসনের উদাসীন ভূমিকার কারণে এমনটি ঘটছে।

আইন ও বিচার বিভাগ বিভাগের শিহাব শাহরিয়ার বলেন, অতিথি পাখিরা শান্ত পরিবেশ ভালোবাসে। দর্শনার্থীরা তাদের বিরক্ত করে। তাদের আবাসস্থলে যেয়ে হইচই করে। ঢিল ছুঁড়ে শান্তিময় পরিবেশ নষ্ট করে। যে কারণে অতিথি পাখিরা এখানে আসা দিনে দিনে বন্ধ করে দিচ্ছে।

পাখি বিলুপ্তির বিষয়ে প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক মো. মনোয়ার হোসেন আরটিভি অনলাইনকে বলেন, তাপমাত্রা, জলবায়ুর তারতম্য হয়েছে। সেজন্য পাখি অন্যত্র যেতে পারে। যে হারে বহিরাগত ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে, তাতে এ ক্যাম্পাসে পাখিদের জন্য স্বাভাবিক পরিবেশ থাকে না। গাড়ির হর্ন এবং কোলাহলের কারণেই লেকগুলো থেকে পরিযায়ী পাখি চলে গেছে।

জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টার রহিমা কানিজ আরটিভি অনলাইনকে বলেন, ক্যাম্পাস থেকে এভাবে অতিথি পাখির চলে যাওয়া আমরা মানতে পারছি না। ক্যাম্পাসে বহিরাগতরা অবাধে প্রবেশ করছে। তাদেরকে কোনোভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছি না। বিভিন্ন শিক্ষকের রেফারেন্স দিয়ে বহিরাগতরা গাড়ি নিয়ে ভেতরে আসে। ক্যাম্পাসের সার্বিক নিরাপত্তা অক্ষুণ্ণ রেখে শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ বজায় রাখতে অবাধে বহিরাগত প্রবেশ নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। আমরা জরুরি ভিত্তিতে বিকল্প উপায় হাতে নিব। যতদ্রুত সম্ভব অতিথি পাখিদের সঠিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

জেবি

মন্তব্য করুন

daraz
  • অন্যান্য এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
ঈদে তোমার শাড়ি দিয়ে পাঞ্জাবি বানিয়ে পরেছি মা : শুভ
ঘুঘুর চোখ সেলাই করে ফাঁদ পেতে পাখি শিকার
ছেলেদের ঈদ ফ্যাশনে পাঞ্জাবি
জালে ধরা পড়ল ৩ মণ ওজনের চারটি পাখি মাছ
X
Fresh