জাবিতে তীব্র বাস সংকট, ভোগান্তিতে শিক্ষার্থীরা
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে চরম বাস সংকটে ভোগান্তির কবলে পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টির হাজারও শিক্ষার্থী। ফলে প্রতিনিয়ত জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে করে যাতায়াত করছে অধিকাংশ শিক্ষার্থী।
দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষার্থীদের বাস সংকট থাকলেও তা সমাধানে দৃশ্যমান কোনও পদক্ষেপ নেয়নি বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রশাসন।
বিশ্ববিদ্যালয় পরিবহন সূত্রে জানা যায়, শিক্ষার্থীদের জন্য বাস আছে মোট ১৪টি। এর মধ্যে বর্তমানে ১২টি বাস রাজধানী ঢাকা-মিরপুর-উত্তরা-এয়ারপোর্ট-বঙ্গবাজার-মানিকগঞ্জ-কাকরাইলসহ অন্যান্য রুটে চলাচল করে।
আর বাকি দুটি বাস প্রায় দুই বছর ধরে অকেজো অবস্থায় পড়ে আছে। অকেজো অবস্থায় পড়ে থাকা বাস দুটি গাবতলী বাস ডিপুতে (ঢাকা মেট্রো-ছ ০৮০০১৯ ও ঢাকা মেট্রো-চ ০৮০০২০) মেরামত কাজ চলছে।
মেরামত করতে এই দুটি বাসের পেছনে খরচ লেগেছে প্রায় ১২ লাখ টাকা। এদিকে বাস সংকটের বিষয়টি প্রশাসনকে বারবার অবগত করলেও এখন পর্যন্ত কোনও ব্যবস্থা নেয়নি বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের।
গেল বৃহস্পতিবার, শুক্রবার ও শনিবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ঢাকা-মিরপুর-উত্তরা ও বঙ্গবাজার রুটে ছেড়ে যাওয়া ছয়টি বাসে আসনের চেয়ে অতিরিক্ত শিক্ষার্থী উঠছে। এর মধ্যে সকাল সাড়ে নয়টায় বঙ্গবাজার রুটের বাস দুটিতে প্রায় দুই শতাধিক শিক্ষার্থী উঠে। যার মধ্যে একশ’ জন শিক্ষার্থী বসে ছিল আর বাকি শতাধিক শিক্ষার্থীকে দাঁড়িয়ে বাদুরঝোলা অবস্থায় দেখা যায়। দুইতলা এই দুটি বাসের উপরতলা ও নিচতলায় শিক্ষার্থীরা জট বেধে অবস্থান করছে।
আবার অনেকে কোনও উপায় না পেয়ে দরজার পাশে অবস্থান নেন। এতে যেকোনো সময় ঘটতে পারে দুর্ঘটনাসহ নানা অনাকাঙ্খিত ঘটনা। বিশেষ করে মেয়ে শিক্ষার্থীদের ভিড় ঠেলে বাসে দাঁড়িয়ে যাতায়াত করতে দেখা যায়। যা তাদের জন্য অসহনীয় ও বিব্রতকর বলে জানান।
শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে প্রায় ১৫ হাজার শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছে। অনেক শিক্ষার্থী পরিবারের সঙ্গে ঢাকা ও অনেকে নগরীর বিভিন্ন প্রান্তে বাসা বা মেসে অবস্থান করেন। এছাড়াও অনেক শিক্ষার্থী একাডেমিক কাজসহ বিভিন্ন কাজে ক্যাম্পাসের বাহিরে নিয়মিত যাতায়াত করেন। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ন্যূনতম সুবিধা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন তারা।
শিক্ষার্থীরা জানান, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত অধিকাংশ শিক্ষার্থীকে নিজেদের পড়াশোনার খরচ চালাতে টিউশন করতে হয়। প্রতিদিন টিউশন করতে রাজধানীর বিভিন্ন প্রান্তে যেতে হয়। কিন্তু যাতায়াতের জন্য শিক্ষার্থীদের যে বাস চালু রয়েছে তা অত্যন্ত কম।
বাসগুলোর ধারণক্ষমতা সর্বোচ্চ ৭০-৮০ জন করে। কিন্তু এই বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থীর পরিবহনের জন্য মাত্র ১২টি বাস চালু রেখেছে প্রশাসন। যা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। আবার চালু থাকা বাসগুলোর সিডিউল ও রুট নিয়ে রয়েছে নানা প্রশ্ন।
অনেক সময় নির্দিষ্ট রুটে দাঁড়িয়ে হাত তুললেও বাসগুলো থামে না বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের। এছাড়াও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা শিক্ষার্থীদের বাসে নিয়মিত যাতায়াত করলেও তাদের (কর্মকর্তা-কর্মচারী) বাসে কোনও শিক্ষার্থীকে উঠতে দেয় না এমন অভিযোগও রয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র মৃধা মোহাম্মদ বেলাল আরটিভি অনলাইনকে বলেন, বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন সংকটের কারণে বাধ্য হয়ে দরজার পাশে ঝুলে ঝুলে যাতায়াত করতে হয়। ন্যূনতম পরিবহন সুবিধা পাচ্ছি না।
জার্নালিজম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের ছাত্রী বুশরা মেহেজাবিন এশা আরটিভি অনলাইনকে বলেন, আমি প্রতিদিন মিরপুর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে যাতায়াত করি। সকালে যখন ক্লাসে যাই তখন সিটে বসে যেতে পারি। কিন্তু ক্লাস শেষে বিকেল বেলা বাসায় ফেরার পথে বাসে সিটতো দূরের কথা মাঝে মধ্যে দাঁড়ানোর জায়গাও পাই না।
অর্থনীতি বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র আসিফ ইকবাল বলেন, দ্রুত বাস সংখ্যা বাড়ানো প্রয়োজন। মেরামত করা বাস ও নতুন কিছু বাস চালু করা গেলে শিক্ষার্থীরা উপকৃত হবে।
জেবি
মন্তব্য করুন