ইএসকেএলের অনিয়ম-দুর্নীতিতে দুর্ভোগে মালয়েশিয়া প্রবাসীরা
বিগত সরকারের আমলে মালয়েশিয়ায় প্রবাসীদের পাসপোর্ট সেবা প্রদানে কোনরকম নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে দরপত্র ছাড়াই ট্রাভেল পাস, ই-পাসপোর্ট এবং এনআইডির মতো স্পর্শকাতর কাজের দায়িত্ব পায় ইএসকেএল নামে বেসরকারি একটি কোম্পানি। দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগে তড়িঘড়ি করে ভিডিও কলের মাধ্যমে কোম্পানিটির উদ্বোধন করেন তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল মোমেন। অথচ, ট্রাভেল পাস, ই-পাসপোর্ট এবং এনআইডি সংক্রান্ত সেবাদানের পূর্ব কোন অভিজ্ঞতাই ছিল না কোম্পানিটির।
জানা গেছে, উদ্বোধনের পর থেকেই আর্থিক দুর্নীতি ও চুক্তির লঙ্ঘনসহ বিভিন্ন অনিয়মের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে প্রতিষ্ঠানটি। অতিরিক্ত অর্থ খরচ করেও কাঙ্খিত সেবা পেতে ব্যর্থ হচ্ছেন অনেক প্রবাসী। ন্যাশনাল আইডি বা জন্মনিবন্ধনের সঙ্গে পাসপোর্টের তথ্যের মিল না থাকায় ই-পাসপোর্টের দিকে ইতোমধ্যে আগ্রহ হারিয়েছেন মালয়েশিয়ায় বসবাসকারী প্রবাসীরা। অভিযোগ আছে, জালিয়াতির মাধ্যমে দালালদের সঙ্গে যোগসাজশ করে মালয়েশিয়া থেকে বহু রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে প্রবেশেও সহায়তা করেছেন ইএসকেএলের কর্মকর্তারা। যেন দূরপ্রবাসে বসে বাংলাদেশি দূতাবাসের পাসপোর্ট ডিপার্টমেন্টকে অকার্যকর করার এক নীল নকশা চলছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল মোমেনের দোহাই দিয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার করে ইএসকেএলকে অবৈধ সুবিধা দিয়েছেন খোদ দূতাবাসের ডেপুটি হাইকমিশনার খোরশেদ আলম খাস্তগীর। দূতাবাসের কর্মকর্তাদের বরাদ্দ দেয়া পাসপোর্টের ইউজার আইডি এবং পাসওয়ার্ড ইএসকেএলকে পাইয়ে দেন তিনি। পরবর্তীতে পাসপোর্ট অধিদপ্তর চিঠির মাধ্যমে জানায়, পাসপোর্টের মতো স্পর্শকাতর সার্ভিসের ইউজার আইডি এবং পাসওয়ার্ড ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারী এবং বিদেশি নাগরিকদের কাছে দেয়ার সুযোগ নাই। পরে আবার অদৃশ্য কোন কারণে সেই চিঠি স্থগিত করা হয়।
এদিকে সম্প্রতি অনুমতি ছাড়াই দূতাবাসের পাসপোর্ট সার্ভিস সেন্টার থেকে জোরপূর্বক সরকারি মেশিন ইএসকেএল অফিসে নিয়ে যাওয়া হয়। খবর পেয়ে দূতাবাসের কর্মকর্তারা উপস্থিত হলে অবশিষ্ট মালামাল রেখে সটকে পড়েন ইএসকেএলের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। ঢাকা থেকে মালয়েশিয়ায় আসা ই-পাসপোর্ট টেকনিক্যাল রেজুলেশন বুকে স্বাক্ষর করা থেকে বিরত থাকে টিম অনিয়ম দেখতে পেয়ে। শুধু তাই নয়, ইএসকেএলে সেবা নিতে গিয়ে মারধরের শিকার হওয়া রেমিটেন্সযোদ্ধাদের বক্তব্য নিতে গেলে শারিরিকভাবে লাঞ্ছিত হন বেসরকারি ২ টিভি চ্যানেলের প্রতিনিধি।
দূতাবাস সংশ্লিষ্ট অনেকের দাবি, মূলত দূতাবাসের পাসপোর্ট শাখাকে অকার্যকর করা এবং রোহিঙ্গাদের নির্বিঘ্নে বাংলাদেশে প্রবেশের সুযোগ করে দিতেই ইএসকেএলকে অবৈধ সুবিধা দিয়েছে দূতাবাসের কিছু অসাধু কর্মকর্তা। আর এ কারণেই প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে কোন ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো তাদের সাফাই গাওয়া হয়। কিন্তু, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর প্রতিষ্ঠানটির বিভিন্ন অনিয়মের খবর গণমাধ্যমে এলে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে মন্ত্রণালয় । অথচ, তদন্ত কমিটির মালয়েশিয়া যাওয়ার দিনক্ষণ ঠিক হলেও শেষ মুহুর্তে রহস্যজনকভাবে স্থগিত হয়ে যায় সে সফর। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে ইএসকেএলকে বাঁচাতে ঢাল হয়ে দাঁড়িয়েছে বিএনপির কিছু নেতা।
জানা গেছে, কোন প্রকার সরকারি ফি ছাড়া প্রবাসীদের যে এনআইডি সেবা প্রদান করার কথা, সেই সেবা নিতে প্রবাসীদের থেকে ৭৫ রিঙ্গিত আদায় করছে ইএসকেএল। চুক্তি বহির্ভূতভাবে জোরপূর্বক অতিরিক্ত চার্জ আদায়ও করা হচ্ছে প্রবাসীদের কাছ থেকে। এ কাজে নির্লিপ্তভাবে সহায়তা করেন এনএসআই কর্মকর্তা ও কাউন্সেলর জিএম রানা, যিনি ডেপুটি হাইকমিশনারের অত্যান্ত আস্থাভাজন হিসেবে মালয়েশিয়ায় প্রবাসীদের কাছে পরিচিত ছিলেন। চুক্তি বহির্ভূত ও অন্যায়ভাবে ইএসকেএল অফিসে এসব কর্মকান্ডের প্রতিবাদ করার কারণে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে দূতালয় প্রধান হিসেবে পদায়ন পাওয়া অত্যন্ত মেধাবী, সৎ ও কর্তব্যপরায়ন কর্মকর্তা কাউন্সেলর (রাজনৈতিক) ফারহানা আহমেদকে তার পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হয়। সেই পদে দায়িত্ব দেওয়া হয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিজস্ব সিস্টেমের বাইরে গিয়ে বিগত সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়নকারী কাউন্সেলর প্রণব কুমার ভট্টাচার্যকে। দায়িত্ব পেয়েই দূতালয় প্রধান ও তদন্তকারী কর্মকর্তা হিসেবে আলোচিত কোটি টাকার দুর্নীতির কেলেঙ্কারী থেকে ডেপুটি হাইকমিশনার খোরশেদ আলম খাস্তগীর ও শ্রম উইংয়ের প্রথম সচিব সুমন চন্দ্র দাসকে নিরাপরাধ প্রমাণে ব্যস্ত হয়ে পড়েন তিনি। সেই ধারাবাহিকতায় তাদের নির্দোষ দাবি করে তদন্ত রিপোর্ট জমা দেন মন্ত্রণালয়ে। প্রণব কুমার ভট্টাচার্য দূতালয় প্রধানের দায়িত্ব নেওয়ার পরে কোন প্রকার চুক্তি না করে ইসএকেএলকে এমআরপি পাসপোর্টের আবেদন জমা নেয়ার দায়িত্ব দিয়ে হাইকমিশনের ফেসবুকে পেইজে বিজ্ঞপ্তিও প্রকাশ করেন।
ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য মোতাবেক, এমআরপি পাসপোর্ট সার্ভিস দেয়ার নামে প্রবাসীদের নিকট থেকে ২০ রিঙ্গিত আদায় করছে ইএসকেএল । কোন কোন ক্ষেত্রে অতিরিক্ত অর্থ আদায়েরও অভিযোগ পাওয়া গেছে। চুক্তির শর্ত অনুসারে প্রতিটা পাসপোর্ট আবেদনের বিপরীতে ফি সরাসরি দুতাবাসের ব্যাংক একাউন্টে জমা করার কথা থাকলেও তা না করে নিজেদের কাউন্টারে ফি জমা নিয়েছে ইএসকেএল। এতে করে প্রবাসীদের কষ্টার্জিত অর্থ ও সরকারের রাজস্ব বেসরকারি কোম্পানির একাউন্টে চলে যাচ্ছে।
উল্লেখ্য, ইতোমধ্যে ইএসকেএল কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ এর সঙ্গে জড়িত সকল ব্যবসায়িক অংশীদারদের বিরদ্ধে কোম্পানির নাম ভাঙিয়ে হাজার কোটি টাকা বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ায় পাচারের অভিযোগ উঠেছে। ই-পাসপোর্ট ও ভিসা সার্ভিসের আড়ালে হুন্ডি ব্যবসার সঙ্গেও জড়িত থাকার তথ্য পাওয়া গেছে ইএসকেএলের বিরুদ্ধে।
অভিযোগ আছে, ইএসকেএলের নামে দেশ থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা পাচার করেছে। ইএসকেএল এর অনিয়ম নিয়ে বিগত সরকারের আমলে প্রতিবাদ করেছিলেন মালয়েশিয়া আওয়ামী লীগের নেতা মকবুল হোসেন মুকুল, যার ফলশ্রুতিতে তাকে নোংরা ভাষায় গালাগালি করে ইএসকেএল থেকে নজর সরিয়ে নিতে নির্দেশ দেন নিক্সন চৌধুরীর ভাই, যিনি তৎকালীন সংসদের চীফ হুইপ ছিলেন।
অনুসন্ধানে দেখা যায় যে, প্রবাসীদের সেবা দেওয়ার জন্য ইএসকেএকের সঙ্গে যে চুক্তি করেছে বিগত সরকার, আর যে পরিমাণ টাকা বিনিয়োগ করছে, তার কোনো সঠিক হিসাব নাই। এতো টাকা কীভাবে তারা মালয়েশিয়াতে নিয়েছে এবং এই টাকার উৎস কোথায় তার কোনো সঠিক জবাব ইএসকেএল কর্তৃপক্ষ দিতে পারেনি। প্রতিষ্ঠানটি যেখানে অফিস ভাড়া নিয়েছে সেখানকার ভাড়া এবং সেখানে যতজন কর্মচারী কাজ করে, তাদের বেতনাদি হিসাব করলে দেখা যায়, প্রতিমাসে লোকসান গুনতে হচ্ছে প্রাইভেট এই কোম্পানিকে।
এই লোকসানের হিসাব নিজ মুখে স্বীকার করেছেন ইএসকেএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক গিয়াসউদ্দিন আহমেদ এবং অভিনেতা আরমান পারভেজ মুরাদ। প্রশ্ন উঠেছে, কী কারণে একটা প্রাইভেট কোম্পানি লোকসান দিয়ে প্রবাসীদের সেবা প্রদান করবেন। এ যেন শস্যের মধ্যে ভুত লুকিয়ে আছে।
তথ্য বলছে, ইএসকেএল এর মার্কিটিং এন্ড ডেভলপমেন্ট অফিসের আরমান পারভেজ মুরাদ মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত কিছু সাংবাদিকদের দিয়ে বিভিন্ন সময় আসল সত্য গোপন রেখে প্রবাসীদের মিথ্যে ভোগান্তির সংবাদ প্রকাশ করেছেন। কিছুদিন আগে দূতাবাসের পাসপোর্ট ও ভিসা কনস্যুলার মিয়া মোহাম্মদ কিয়ামুদ্দিন একজন দালালের জামার কলার ধরেছিলেন। পরবর্তীতে দেখা যায়, সেই ব্যক্তি আসলে পাসপোর্টের দালাল আব্দুল কাদের। দালালের কলার ধরার মুহুর্তে মোবাইল দিয়ে ছবি তোলেন ইএসকেএল এর মার্কেটিং ডিরেক্টর আরমান পারভেজ এবং তিনি সেই ছবি কিছু সাংবাদিকদের দিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে মিথ্যা সংবাদ প্রকাশ করান । দেশ পুনর্গঠনে জন্য এখনও যারা স্বৈরাচার ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের এজন্ডা বাস্তবায়ন করছে, ছাত্র-জনতার রক্তের সঙ্গে যারা বেঈমানি করছে, তাদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন প্রবাসীরা।
জানা গেছে, ইএসকেএল প্রতিষ্ঠানটি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছোটবোন শেখ রেহানা ও তাদের শেখ ফুপাতো ভাই ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরীর ছেলে এবং সাবেক চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী লিটনের মালিকানাধীন। অভিযোগ রয়েছে, এই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে শেখ পরিবার হাজার হাজার কোটি টাকা মালয়েশিয়া হয়ে লন্ডন এবং আমেরিকায় পাচার করেছে।
কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে আছেন মাওয়া হিলসা প্রজেক্ট এর মালিক গিয়াসউদ্দিন আহমেদ, মার্কেটিং ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে অভিনেতা আরমান পারভেজ মুরাদকে। সাবেক পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের ঘনিষ্ট কর্মকর্তা বাংলাদেশ হাইকমিশন, মালয়েশিয়ার ডেপুটি হাইকমিশনার মোহাম্মদ খোরশেদ আলম খাস্তগীরের সহায়তায় টেন্ডার বিহীন ইএসকেএল কোম্পানিকে মালয়েশিয়ার ই-পাসপোর্ট ও ভিসা প্রসেসিং এর দায়িত্ব প্রদান করে বাংলাদেশ হাইকমিশন। এ কাজে সহায়তা করেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বেশ কয়েকজন দুর্নীতিবাজ উর্ধ্বতন কর্মকর্তা। তাদের মধ্যে অন্যতম শাহ মোহাম্মদ তানভির মনসুর, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব আব্দুল্লাহ আল মাসুদ চৌধুরী, যাকে সম্প্রতি ওএসডি করা হয়েছে এবং অতিরিক্ত সচিব মোঃ আলী রেজা সিদ্দীকি, যাকে গত ১৭ অক্টোবর একটি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে সুরক্ষা সেবা বিভাগ থেকে পরিকল্পনা বিভাগে বদলি করা হয়েছে।
এই চক্রের সঙ্গে আরও জড়িত রয়েছেন ইএসকেএল এর পরামর্শদাতা ই-পাসপোর্ট প্রকল্প পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহম্মদ নুরুস ছালাম, যিনি বিগত সরকার প্রধানের খুবই ঘনিষ্ঠজন ও তার একান্ত সহযোগী ডেপুটি প্রজেক্ট ডিরেক্টর লেফটেনেন্ট কর্নেল মোহাম্মদ ফয়সাল ।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুসরণ না করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার প্রেক্ষিতে তড়িঘরি করে গত বছরের ২২ সেপ্টেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়াই ইএসকেএলের সঙ্গে চুক্তি সম্পাদন করে বাংলাদেশ হাইকমিশন, মালয়েশিয়া। ডেপুটি হাইকমিশনারের তত্ত্বাবধানে এই চুক্তি সম্পাদন করা হয়। চুক্তি সম্পাদনে ডেপুটি হাইকমিশনারের একান্ত সহযোগী হিসেবে কাউন্সিলর প্রণব কুমার ভট্টাচার্য দায়িত্ব পালন করেন। এই প্রণব কুমার ভট্টাচার্যকে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর পারিবারিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ইএসকেএল কোম্পানিকে সফল করার দায়িত্ব প্রদান করে মালয়েশিয়ায় পদায়ন করা হয়। ডেপুটি হাইকমিশনার খাস্তগীর ও কাউন্সেলর প্রণব কুমার ভট্টাচার্যের তত্ত্বাবধানে চুক্তি সম্পাদন করে ই-পাসপোর্ট ও ভিসা সেবা কার্যক্রমের দায়িত্ব হস্তান্তর করা হয় ইএসকেএলকে।
চলতি বছরের ১৮ এপ্রিল মালয়েশিয়ায় বসবাসরত বাংলাদেশিদের ই-পাসপোর্ট ও ভিসা সেবা প্রদান কার্যক্রম ইএসকেএল অফিস, সাউথগেইট কমার্সিয়াল সেন্টারে উদ্বোধন করা হয়। উদ্বোধনের পরেই দূতাবাসের পাসপোর্ট সার্ভিস সেন্টার থেকে সরকারি সার্ভারসহ যাবতীয় যন্ত্রপাতি ইএসকেএল কোম্পানির অফিসে স্থানান্তর করা হয়। চুক্তি অনুসারে, ইএসকেএল কোম্পানির কর্মচারী কর্তৃক পাসপোর্ট সার্ভিস সেন্টারে ই-পাসপোর্ট আবেদন জমা ও বায়োমেট্রিক সম্পন্ন করার কথা থাকলেও ডেপুটি হাইকমিশনার খাস্তগীরের সহযোগিতায় চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করে ইএসকেএল কোম্পানি ই-পাসপোর্ট সার্ভারসহ যাবতীয় যন্ত্রপাতি তাদের অফিসে খুলে নিয়ে যায়। এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, পাসপোর্ট সার্ভিস সেন্টার গত বছরের আগস্ট মাসে আম্পাং থেকে বর্তমান নতুন অফিসে স্থানান্তর করে আনা হয়।
বর্তমান ভবনের মালিকপক্ষ সূত্রে জানা যায়, ভবনটি তিন বছরের চুক্তিতে নেওয়া হলেও সম্প্রতি হাইকমিশন থেকে ভবন ছেড়ে দেয়ার জন্য নোটিশ প্রদান করা হয়েছে। বর্তমানে দূতাবাসের পাসপোর্ট সার্ভিসের যাবতীয় কার্যক্রম ইএসকেএল অফিসে স্থানান্তর করা হয়েছে। পাসপোর্ট সার্ভিস সেন্টার পুরাতন ভবন থেকে নতুন ভবনে পরিবর্তনের সময় অভ্যন্তরীন কাঠামো তৈরিতে প্রচুর সরকারি অর্থ ব্যয় করা হয়। ভবনটিকে মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট, ই-পাসপোর্ট সেবা ও এনআইডি সেবার জন্য প্রস্তুত করতে ৩০-৩৫ লাখের বেশি সরকারি অর্থ ব্যয় করা হলেও ইএসকেএল কোম্পানির স্বার্থ রক্ষার জন্য ভবনটি ছেড়ে দেওয়া হয়েছে চলতি মাসের ১৫ তারিখে। বর্তমানে ই-পাসপোর্ট সেবা এবং এনআইডি সেবার যাবতীয় যন্ত্রপাতি ও সার্ভার ইতোমধ্যে ইএসকেএল অফিসে নিয়ে স্থাপন করে সেখান থেকেই ই-পাসপোর্ট, ভিসা, ট্রাভেল পাস ও এনআইডি সেবা দেয়া হচ্ছে। পাসপোর্ট সার্ভিস সেন্টারের বর্তমান ভবনের চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই ছেড়ে দেয়ার কারণে হাইকমিশনকে গুনতে হয়েছে পুরো তিন বছরের চুক্তির মাসুল। যা শুধুমাত্র ইএসকেএল কোম্পানিকে অবৈধ সুবিধা প্রদানের লক্ষ্যেই করা হচ্ছে। ৪৫ রিঙ্গিতের বিনিময়ে হাইকমিশন থেকে ট্রাভেল পাসের জন্য সাধারণ প্রবাসীদের অতিরিক্ত ২০ রিঙ্গিতের চার্জ আদায় করা হচ্ছে কোন প্রকার চুক্তি ছাড়া।
অভিযোগ আছে, হাইকমিশনার, ডেপুটি হাইকমিশনার ও তার অনুসারী কর্মকর্তাদের ভয়ে তাদের অপকর্মের বিরুদ্ধে হাইকমিশনের কোন কর্মকর্তা-কর্মচারী কথা বলারও সাহস পায় না। দেশে ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন হলেও হাইকমিশন এখনো সেই সরকারের মদদপুষ্টদের নিয়ন্ত্রণে। ইএসকেএলের চুক্তির মেয়াদ গত ২১ সেপ্টেম্বর শেষ হয়ে গেলেও বিগত সরকারের দোসর আমলারা আবারও নতুন করে তাদের সঙ্গে চুক্তি নবায়ন করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। চুক্তি নবায়নের জন্য সাবেক প্রধানমন্ত্রীর পারিবারিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ইএসকেএল কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক গিয়াসউদ্দিন আহমেদকে দিয়ে আওয়ামী মদদপুষ্ট দুর্নীতিবাজ আমলাদের কাছে তদবির করে চলেছে। একইসঙ্গে বিদেশস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস আরব আমিরাতের আবুধাবি, দুবাই, কাতারের দোহা, কুয়েত, সৌদি আরবসহ অন্যান্য সকল দূতাবাসের কাজও হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে এই ইএসকেএল। তাদের এসব কাজে সহায়তা করছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ।
আরটিভি/এসএইচএম
মন্তব্য করুন