ঘূর্ণিঝড় ও বৃষ্টি নিয়ে যা জানাল অফিস
পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন উত্তর আন্দামান সাগর এলাকায় একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়েছে। এটি সোমবার (২১ অক্টোবর) নিম্নচাপ, মঙ্গলবার গভীর-নিম্নচাপ এবং বুধবার ঘূর্ণিঝড় ডানায় পরিণত হতে পারে।
সোমবার (২১ অক্টোবর) ঘূর্ণিঝড়ের বিষয়ে আবহাওয়াবিদ মো. ওমর ফারুক গণমাধ্যমকে বলেছেন, ঘূর্ণিঝড়টি ভারতের ওড়িশা ও পশ্চিমবঙ্গের দিকে আঘাত হানতে পারে। তবে গতিপথ পরিবর্তন করে বাংলাদেশেও আঘাত হানার শঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
এদিকে এদিন সকালে আবহাওয়ার ৭২ ঘণ্টার পূর্বাভাস জানিয়েছে অধিদপ্তর। এতে বিভিন্ন বিভাগে বৃষ্টি ও তাপমাত্রা হ্রাস-বৃদ্ধির খবর জানানো হয়েছে।
সংস্থাটি জানায়, মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) সকাল ৯টা পর্যন্ত চট্টগ্রাম বিভাগের দু-এক জায়গায় বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এ ছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। সারাদেশে দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে।
বুধবার (২৩ অক্টোবর) সকাল ৯টা পর্যন্ত শুধুমাত্র চট্টগ্রাম বিভাগে বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। সারাদেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা ১ থেকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে।
বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) সকাল ৯টা পর্যন্ত খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের অনেক জায়গায় এবং রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ী দমকা হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সারাদেশে দিনের এবং রাতের তাপমাত্রা ১ থেকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস হ্রাস পেতে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা সামান্য হ্রাস পেতে পারে।
বর্ধিত পাঁচ দিনের আবহাওয়ার অবস্থায় বলা হয়েছে, এ সময়ের শেষের দিকে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা হ্রাস পেতে পারে।
অন্যদিকে আমেরিকা ও ইউরোপিয়ান আবহাওয়ার পূর্বাভাস মডেল থেকে জানা গেছে, দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপ সৃষ্টি হয়েছে যা ঘূর্ণিঝড় আকারে বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত করার প্রবল আশঙ্কা রয়েছে। ঘূর্ণিঝড় ‘ডানা’ আগামী ২৩ অক্টোবর রাত ১২টার পর থেকে ২৪ অক্টোবর সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের খুলনা বিভাগের ওপর দিয়ে সরাসরি তীব্র ঘূর্ণিঝড় (ঘণ্টায় ৮৯-১১ কিলোমিটার) হিসাবে স্থলভাগে আঘাত করার প্রবল সম্ভাবনা আছে। স্থলভাগে আঘাতের সময় বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১১০ থেকে ১২০ কিলোমিটার; দমকা হাওয়া সহ যা ঘণ্টায় ১৪০ কিলোমিটার পর্যন্ত উঠতে পারে।
ঘূর্ণিঝড়টি যদি জোয়ারের সময় উপকূলে আঘাত হানে তবে সাতক্ষীরা, খুলনা ও বাগেরহাট জেলার উপকূলীয় এলাকাগুলোতে স্বাভাবিকের চেয়ে ৬ থেকে ৮ ফুট বেশি উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তবে ভাটার সময় আঘাত হানে তবে এসব এলাকায় স্বাভাবিকের চেয়ে ২ থেকে ৪ ফুট বেশি উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হতে পারে।
ভারতের আবহাওয়া বিভাগ (আইএমডি) জানিয়েছে, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপটি ক্রমেই ঘনীভূত হয়ে ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিচ্ছে বলে জানিয়েছে। আগামী ২৩ অক্টোবর ঘূর্ণিঝড়টির সৃষ্টি হবে।
আইএমডি সবশেষ বুলেটিনে বলা হয়েছে, আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পূর্বমধ্য বঙ্গোপসাগর এবং তৎসংলগ্ন উত্তর আন্দামান সাগরের ওপরে তৈরি হবে নিম্নচাপ। সেই সিস্টেমটি মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) আরও ঘনীভূত হয়ে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হবে। এরপর বুধবার (২৩ অক্টোবর) পূর্বমধ্য বঙ্গোপসাগরেই সেটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে।
সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমস জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড়টি এরপর উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে উত্তরপশ্চিম বঙ্গোপসাগরে এসে পৌঁছাবে। পরে ২৪ অক্টোবর সকালে ঘূর্ণিঝড় ‘ডানা’ আছড়ে পড়তে পারে ওড়িশা এবং পশ্চিমবঙ্গ উপকূলে। এর জেরে আগামী ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত বঙ্গোপসাগর উত্তাল থাকবে। এই ঘূর্ণিঝড়ের জেরে সাগরে ১১০ থেকে ১২০ কিমি প্রতি ঘণ্টা বেগে ঝোড়ো হাওয়া বইতে পারে।
আরটিভি/এসএপি/এসএ
মন্তব্য করুন