সরোজ মোস্তফার কবিতা
কী খেতে দেবো
রোহিঙ্গাদের কী খেতে দেবো
নিজেরাই নিথর হয়ে আছি।
বর্মি আর্মিদের কী বলবো!
কামিনী গাছেরাই দাঙ্গার প্রস্তুতি নিচ্ছে
সোমেশ্বরীর বালিতে রামদা ধারাচ্ছে।
দু'চোখ ভাত খেতে চাইছে।
চীনা নারীর চোখের মতো ছোট ছোট ভাত।
শুধু লবণ মাখানো ভাত।
রশিদ ভাইয়ের গোদামে পবিত্র চালের গন্ধ।
আমি বেতন চাই না।
শুধু ভাইয়ের গুদামের ভেতরে বসে থাকতে চাই।
প্রত্যকের লগোটাই একটা খাঁচা।
এই লগোটা মুছে দিতেই মা আসছেন।
মা নিশ্চয়ই চাল নিয়ে আসবেন।
উখিয়ার ভেজা পূর্ণিমায় চাল ঢেলে ঢেলে
মর্তের সন্তানকে হাত বুলিয়ে যাবেন।
আমি আর আলাওল
প্রদোষের ঐ আলোতে দুর্গা আসছেন।
বারুদ মাখানো রোহিঙ্গা নারীকে তিনি কী বলেন
এ কথা শুনতে আমি আর আলাওল একত্রে হাঁটছি।
চোখের সামনে মাছ আর রোহিঙ্গা নারীকে
তাড়া করছে হাঙর, গজার আর চীনা রাইফেল।
দেখি এ আশ্বিনে মা কী করেন।
মা-কি রোহিঙ্গার ভূমি ফিরিয়ে দেবেন
না-কি সুকির লাবণ্যে চন্দন ঢালবেন
এই দৃশ্যের জন্য আমি আর আলাওল
দশমীর বিসর্জন পর্যন্ত অপেক্ষা করবো।
রুটিতে অনেক মুখ
একটুকরা রুটিতে অনেকের মুখ।
নাফের ঐ পাড় থেকে পদ্মাবতীরা আসছে।
আগুন মাখানো দেহে
শাহ পরান দ্বীপের মাটিতে বসেছে।
পাহাড়ের পাদদেশে আলাওল কবির কবর।
তৃতীয় বিশ্বের কবির ভিটায়
পদ্মাবতীরা আসবে।
চীন রাশিয়ার মহাজনেরা চালের দাম বাড়াবে।
চোখের নিবন্ধনকে অস্বীকার করবে বর্মী আর্মি।
একহাতে শিশু একহাতে পাউরুটি
ভাতের থালায় বর্মি আর্মি।
চীনা জাহাজের সাইরেনে
শরীরটাকে ঠাণ্ডা রাখতে
কফিনের ঠাণ্ডা বরফ গিলছি।
ভূমি উচ্ছেদের এজিদকে দেখে
ধান পাতায় কাঁপছি।
মাংস ও জিহবায়
আমার নারীকে
ওরা কুমিরের খাঁচায় ফেলে দিয়েছে।
একহাতে শিশু
একহাতে পাউরুটি।
জোড়া-তালি দেয়া ঘাড় নিয়া
নাফ নদীর ইনসান হতে চাইছি।
হাসরের মাঠ
রোহিঙ্গাদের দেখে মনে হচ্ছে
হাসরের মাঠ।
ঈশ্বর বিচার করবেন
না-কি,
ভাতের থালায় ইউরোনিয়াম ঢেলে দেবেন,
এটা নির্ধারণ করবেন
ভারত, চীন ও রাশিয়া।
ভাষা হারিয়ে ফেলা ইনসানেরা
পলিথিনে মোড়ানো এ হাসরের মাঠে
ওদের পাঠানো ত্রাণ খেয়ে বেঁচে আছে।
তাড়া খাওয়া মানুষের বর্ডার থাকে না
নাফনদী সাঁতরে ছোট দেশে আশ্রয় চাইছে
খুলি হারানো মানুষ।
দুপুর গড়ানো পৃথিবীতে
কোনো খুলিতেই অপরাধ থাকে না।
তাড়া খাওয়া মানুষের কোনো বর্ডার থাকে না।
শিশুর থালায় ইউরেনিয়াম।
পিতার ভুনা মাংস। মায়ের মাথার পোড়া ক্লিপ।
বড় বোনকে টুকরো টুকরো করে নিয়া যাওয়া বর্মি আর্মিরা
আজকে তেমন মজা পায়নি। জাতি নিধনের পিতল বুলেটে
আর্মিদের কোনো পাপ হয় না। ওরা আবার ফুর্তি করবে।
জেবি
মন্তব্য করুন