• ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
logo

মীর কাসেমের যত অপরাধ

অনলাইন ডেস্ক
  ৩০ আগস্ট ২০১৬, ১৫:৩০

একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে জামায়াতের নেতা মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনাল অপহরণ, গুম, খুন ও নির্যাতনসহ ১৪টি অভিযোগ গঠন করে। ২০১৪ সালের ২ নভেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়ে ১১ ও ১২ নম্বর অভিযোগে জসিমসহ মোট আটজনকে হত্যার দায়ে এ আলবদর নেতার মৃত্যুদণ্ড দেন।

সর্বোচ্চ আদালত তার আপিল আংশিক মঞ্জুর করে ১২ নম্বর অভিযোগ থেকে আসামিকে খালাস দেন। তবে ১১ নম্বর অভিযোগে জসিম হত্যার দায়ে সর্বোচ্চ সাজার রায়ই বহাল রাখেন। রিভিউ আবেদন খারিজ হওয়ায় এ অপরাধেই তার ফাঁসি বহাল থাকে। বাকি আছে শুধু রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণ ভিক্ষার আবেদন। সেটি না করলে বা আবেদন নাকচ হলে মীর কাসেমের রায় কার্যকরে কোন বাধা নেই।

১১ নম্বর অভিযোগে বলা হয়, মীর কাসেম আলীর নেতৃত্বে একাত্তরে ঈদুল ফিতরের দিনে মুক্তিযোদ্ধা জসিম উদ্দিনকে অপহরণ করে আলবদর বাহিনী। তাকে চট্টগ্রামের ডালিম হোটেলে নিয়ে নির্যাতন ও হত্যা করা হয়। সেখানে আরো পাঁচজনকে হত্যা করা হয়। এর পর লাশগুলো গুম করে আলবদররা।

১, ৫, ৮ ও ১৩ নম্বর অভিযোগ থেকে ট্রাইব্যুনালের রায়েই খালাস পান তিনি। ৪ ও ৬ নম্বর অভিযোগে সাত বছর করে সাজার রায় থেকেও মীর কাসেম খালাস পান। তবে আপিল নাকচ করে ২, ৩, ৭, ৯, ১০ ও ১৪ নম্বর অভিযোগে মোট ৫৮ বছর কারাদণ্ডের সাজা বহাল থাকে।

১২ নম্বর অভিযোগে বলা হয়, একাত্তরের নভেম্বরে জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, রণজিৎ দাস লুথু ও টনটু সেন রাজুকে চট্টগ্রামের হাজির লেন থেকে অপহরণ ও নির্যাতন করে আলবদর বাহিনী। জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীকে ডালিম হোটেল থেকে কয়েকদিন পর মুক্তি দেয়া হলেও লুথু ও রাজুকে কাসেমের নির্দেশে হত্যা করা হয়। তাদের লাশও গুম করা হয়। এ অভিযোগও প্রমাণিত হওয়ায় ট্রাইব্যুনালে ফাঁসির আদেশ হয় মীর কাসেমের বিরুদ্ধে। তবে আপিলে সেটি প্রমাণিত না হওয়ায় খালাস পান তিনি।

এক নজরে মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে অভিযোগ ও চূড়ান্ত রায়:

১. ১৯৭১ সালের ৮ নভেম্বর ওমরুল ইসলাম চৌধুরীকে চাকতাইঘাট থেকে অপহরণ। এরপর কয়েক দফায় চট্টগ্রামের আন্দরকিল্লার ডালিম হোটেল, পাঁচলাইশ থানার সালমা মঞ্জিল এবং একটি চামড়ার গুদামে নিয়ে নির্যাতন। ট্রাইব্যুনালের দেয়া খালাস চূড়ান্ত রায়েও বহাল।

২. ১৯৭১ সালের ১৯ নভেম্বর চাকতাই থেকে লুৎফর রহমান ফারুককে অপহরণ করে ডালিম হোটেলে নেয়া হয়। সেখানে নির্যাতন এবং বাড়িঘরে আগুন দেয়া হয়। এ অপরাধে ২০ বছরের কারাদণ্ড চূড়ান্ত রায়েও বহাল।

৩. ২২ অথবা ২৩ নভেম্বর আসামির নেতৃত্বে জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীকে তার কদমতলার বাসা থেকে ধরে নিয়ে ডালিম হোটেলে নির্যাতন। এর দায়ে ট্রাইব্যুনালের সাত বছরের কারাদণ্ড চূড়ান্ত রায়েও বহাল।

৪. ডবলমুরিং থানার সালাহউদ্দিন খানকে তার নিজ বাসা থেকে ধরে নিয়ে ডালিম হোটেলে আলবদর বাহিনী কর্তৃক নির্যাতন। এ অপরাধে সাত বছরের কারাদণ্ড দেয়া হলেও চূড়ান্ত রায়ে খালাস পান মীর কাসেম।

৫. ২৫ নভেম্বর আনোয়ারা থানার আবদুল জব্বারকে তার নিজ বাসা থেকে ধরে নিয়ে ডালিম হোটেলে মীর কাসেম আলীর সামনে হাজির করা হয়। এরপর তাকে নির্যাতন করে ছেড়ে দেয়া হয়। অফিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় ট্রাইব্যুনালের দেয়া খালাস চূড়ান্ত রায়েও বহাল।

৬. চট্টগ্রাম শহরের একটি চায়ের দোকান থেকে হারুন-উর রশিদ নামে একজনকে ধরে নিয়ে ডালিম হোটেল এবং সালমা মঞ্জিলে নির্যাতন। এর দায়ে সাত বছরের কারাদণ্ড দেয়া হলেও চূড়ান্ত রায়ে খালাস।

৭. মীর কাসেম আলীর নেতৃত্বে ৭-৮ জন যুবক ডবলমুরিং থানা থেকে সানাউল্লাহ চৌধুরীসহ দু’জনকে ধরে নিয়ে ডালিম হোটেলে নির্যাতন। এতে সাত বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়, যা চূড়ান্ত রায়েও বহাল থাকে।

৮. ২৯ নভেম্বর রাতে নুরুল কুদ্দুসসহ চারজনকে অপহরণ করে ডালিম হোটেলে নিয়ে নির্যাতন। প্রমাণ না হওয়ায় খালাস চূড়ান্ত রায়েও বহাল।

৯. ২৯ নভেম্বর সৈয়দ মো. এমরানসহ ৬ জনকে অপহরণ ও নির্যাতন। এর দায়ে সাত বছরের কারাদণ্ড চূড়ান্ত রায়েও বহাল।

১০. আসামির নির্দেশে মো. জাকারিয়াসহ চারজনকে অপহরণ ও নির্যাতন। এ অপরাধে সাত বছরের কারাদণ্ড চূড়ান্ত রায়েও বহাল।

১১. শহীদ জসিম উদ্দিনসহ ৬ জনকে অপহণের পর নির্যাতন করা হয়। এতে জসিমসহ পাঁচজন নিহত হন এবং পরে লাশ গুম করা হয়। ঈদের পরদিন জসিমকে অপহরণ করে ডালিম হোটেলে নিয়ে নির্যাতন করা হয়। সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়, যা শেষ পর্যন্ত রিভিউতেও বহাল রাখা হয়।

১২. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীসহ তিনজনকে অপহরণ করে নির্যাতন। পরে দু’জনকে হত্যা লাশ গুম। এটি প্রমাণিত হওয়ায় ট্রাইব্যুনাল মৃত্যুদণ্ড দিলেও চূড়ান্ত রায়ে খালাস দেয়া হয়।

১৩. সুনীল কান্তিকে অপহরণ ও নির্যাতন। প্রমাণিত না হওয়ায় খালাস চূড়ান্ত রায়েও বহাল।

১৪. নাসির উদ্দিন চৌধুরীকে অপহরণ ও নির্যাতন। অপরাধ প্রমাণ হওয়ায় দশ বছরের কারাদণ্ড চূড়ান্ত রায়েও বহাল।


মন্তব্য করুন

daraz
  • অন্যান্য এর পাঠক প্রিয়
X
Fresh